<p>মহান আল্লাহ তাআলার ভালোবাসা, রাব্বুল আলামিনের প্রিয়পাত্র হওয়া বান্দার জন্য বিরাট সৌভাগ্যের বিষয়। আমাদের মধ্যে যদি আল্লাহ তাআলার ভালোবাসা থাকে, যদি আমরা আল্লাহর প্রকৃত বন্ধু হয়ে থাকি, তাহলে এটা আমাদের দুনিয়া ও পরকালের সফলতার অন্যতম সোপান। আমরা যদি মনে করি আল্লাহ তাআলা আমাকে ভালোবাসেন, তিনি আমার সব কিছু সব বিষয় অবলোকন করেন, তাহলে আমাদের জীবনের গতি এক রকম হবে। কিন্তু মনের মধ্যে আল্লাহর ভালোবাসা ও মহব্বত জাগিয়ে তোলা এত সহজ বিষয় নয়, আবার খুব কঠিন এমনও নয়।</p> <p>আমাদের সমাজে কজন এমন পাওয়া যাবে, যারা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তাআলাকে ভালোবাসে! মনের মধ্যে আল্লাহ তাআলার ভালোবাসা কাজ করে এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে। অথচ আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা যার যত বেশি হবে, পরকালে তারা ততই সৌভাগ্যবান হবে। এখানে আমরা আলোচনা করব কিভাবে আমাদের মধ্যে আল্লাহর ভালোবাসা বৃদ্ধি করতে পারি।</p> <p><strong>দুনিয়ার মোহ দূর করা</strong></p> <p>ধোঁকার দুনিয়া, রংবেরঙের দুনিয়া, যার রূপ পাল্টায়, রং বদলায় ক্ষণে ক্ষণে, সেই দুনিয়ার সঙ্গে আমার সম্পর্ক যত কমাব ততই আমার জন্য কল্যাণ। যে জায়গায় আমি চিরকাল থাকতে পারব না, যে জায়গা আমার নয়, সেই জায়গার সঙ্গে এত বেশি সখ্য রেখে কী লাভ! বরং যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই এর সঙ্গে সম্পর্ক রাখব। তাই নিজের মধ্য থেকে দুনিয়ার আসক্তি কমাতে হবে। দুনিয়ার ঘনিষ্ঠতা যত কমাব, ততই আল্লাহর ভালোবাসা ও মহব্বত অন্তরে বৃদ্ধি পাবে।</p> <p>হাদিসে এসেছে, হুজাইফা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, একবার তিনি এক ভাষণে বলেন, মদ হলো পাপের সমষ্টি। নারী সম্প্রদায় শয়তানের ফাঁদ। আর দুনিয়ার মহব্বত সব পাপের মূল। (আত-তারগিব ওয়াত তারহিব, হাদিস : ৩৫৭১)</p> <p>নবীজি (সা.)-এর এই ছোট্ট হাদিস আমাদের জন্য বিশাল দিকনির্দেশিকা। আমরা যত পাপাচার করে বেড়াই তার অন্যতম কারণ হচ্ছে দুনিয়ার মোহ, দুনিয়ার প্রতি অত্যধিক আসক্তি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই দুনিয়ার আসক্তি মন থেকে কিভাবে দূর করব? শুধু বলে দিলাম, এর দ্বারাই তো দূর হয়ে যাবে।</p> <p>না, দুনিয়ার মোহ দূর করার অন্যতম উপায় হচ্ছে দুনিয়ার বাস্তবতা নিয়ে একটু নীরবে-নিভৃতে চিন্তা করা। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন দুনিয়াকে নিয়ে কোরআনুল কারিমে কী বলেছেন! দুনিয়ার চাকচিক্য—এগুলো সব ধোঁকা ছাড়া কিছুই না। বান্দাকে আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার এই জীবন সম্পর্কে বিভিন্নভাবে বুঝিয়েছেন। আমরা যদি সেসব বিষয় নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করি, তাহলে ইনশাআল্লাহ ধীরে ধীরে দুনিয়ার মোহ আমাদের অন্তর থেকে বের হতে থাকবে। </p> <p>আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘জেনে রেখো, পার্থিব জীবন তো কেবল খেলাধুলা, বাহ্যিক সাজসজ্জা, তোমাদের পারস্পরিক অহংকার প্রদর্শন এবং ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে একে অন্যের ওপরে থাকার প্রতিযোগিতারই নাম। তার উপমা হলো বৃষ্টি, যা দ্বারা উদগত ফসল কৃষকদের মুগ্ধ করে দেয়, তারপর তা তেজস্বী হয়ে ওঠে। তারপর তুমি দেখতে পাও তা হলুদ বর্ণ হয়ে গেছে। অবশেষে তা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। আর আখিরাতে (এক তো) আছে কঠিন শাস্তি এবং (আরেক আছে) আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। পার্থিব জীবন প্রতারণার উপকরণ ছাড়া কিছুই নয়। (সুরা : আল-হাদিদ. আয়াত : ৫৭)</p> <p><strong>আল্লাহর পরিচয় লাভ করা</strong></p> <p>মহান আল্লাহ তাআলার ক্ষমতা, তাঁর শক্তিমত্তা, তিনি সবজান্তা, তাঁর আদেশ ছাড়া কিছুই হয় না। তিনি সব কিছু পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করেন, সব কিছুর একচ্ছত্র ক্ষমতা একমাত্র তাঁরই হাতে। তিনি প্রভু, সেই প্রতিপালক সম্পর্কে আমরা যত বেশি চিন্তা করব, তত বেশি আমার মধ্যে আল্লাহর ভালোবাসা তৈরি হবে।</p> <p>আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃজনে, রাত-দিনের একটানা আবর্তনে, সেই সব নৌযানে যা মানুষের উপকারী সামগ্রী নিয়ে সাগরে বয়ে চলে, সেই পানিতে যা আল্লাহ আকাশ থেকে বর্ষণ করেছেন এবং তার মাধ্যমে ভূমিকে তার মৃত্যুর পর সঞ্জীবিত করেছেন এবং তাতে সর্বপ্রকার জীবজন্তু ছড়িয়ে দিয়েছেন এবং বায়ুর দিক পরিবর্তনে এবং সেই মেঘমালাতে যা আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে আজ্ঞাবহ হয়ে সেবায় নিয়োজিত আছে, বহু নিদর্শন আছে সেই সব লোকের জন্য, যারা নিজেদের জ্ঞান-বুদ্ধিকে কাজে লাগায়।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৬৪)</p> <p>আল্লাহ তাআলা কোরআনের বিভিন্ন স্থানে বিশ্বজগতের এমন সব অভিজ্ঞানের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন, যা আমাদের চোখের সামনে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। যৌক্তিকভাবে চিন্তা করলে দেখা যায়, সেগুলো আল্লাহ তাআলার অস্তিত্ব ও একত্বের প্রতি সুস্পষ্ট নির্দেশ বহন করে। প্রতিদিন দেখতে দেখতে আমাদের চোখ যেহেতু তাতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে, তাই তাতে আমাদের কাছে বিস্ময়কর কিছু অনুভূত হয় না। না হলে তার একেকটি বস্তু এমন বিস্ময়কর বিশ্বব্যবস্থার অংশ, যার সৃজন আল্লাহ তাআলার অপার কুদরত ছাড়া মহাবিশ্বের আর কোনো শক্তির পক্ষে সম্ভব নয়। আসমান-জমিনের সৃষ্টিরাজি নিরবধি যেভাবে কাজ করে যাচ্ছে, চন্দ্র-সূর্য যেভাবে বাঁধাধরা সময়সূচি অনুযায়ী দিন-রাত পরিভ্রমণরত, অফুরন্ত পানির ভাণ্ডার সাগর যেভাবে নৌযানের মাধ্যমে স্থলভাগের বিভিন্ন অংশকে পরস্পর জুড়ে রাখছে এবং তাদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী স্থান থেকে স্থানান্তরে পৌঁছে দিচ্ছে এবং মেঘ ও বায়ু যেভাবে মানুষের জীবনসামগ্রীর ব্যবস্থা করে দেয়, এই সব কিছু আল্লাহর ক্ষমতা আর বড়ত্বকে ফুটিয়ে তোলে।</p> <p><strong>কোরআন বুঝে পড়া</strong></p> <p>পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা মানবজাতির জন্য অনেক দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। মানুষ যখন কোরআন পড়বে এবং বোঝার চেষ্টা করবে, বুঝে বুঝে পড়তে চেষ্টা করবে, তখন তার মধ্যে আল্লাহর ভালোবাসা-মহব্বত বৃদ্ধি পেতে থাকে। সে জন্য শুধু কোরআন তিলাওয়াত নয়, কোরআনুল কারিম বুঝে বুঝে পড়ার চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এবং তারা কাঁদতে কাঁদতে থুতনির ওপর লুটিয়ে পড়ে এবং এটা (অর্থাৎ কোরআন) তাদের অন্তরের বিনয় আরো বৃদ্ধি করে।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ১০৯)</p> <p><strong>নিয়মিত জিকির করা</strong></p> <p>কষ্ট হলেও প্রতিনিয়ত আল্লাহর জিকির করতে হবে।  আবদুল্লাহ ইবনে বিশর (রা.) থেকে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসুল! ইসলামে তো অনেক বিষয় আছে (সবগুলোর ওপর আমল করা হয়তো আমার পক্ষে সম্ভব হবে না), সুতরাং আমাকে এমন কোনো আমলের কথা বলে দিন, যাতে আমি সব সময় লেগে থাকতে পারি। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমার জিহ্বা যেন সর্বদা আল্লাহর জিকিরে সিক্ত-সতেজ থাকে।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস : ৩৩৭৫)</p> <p> </p>