<p>রমজানের প্রথম দশক রহমতের। দ্বিতীয় দশক মাগফিরাতের। তৃতীয় দশক নাজাতের। প্রথম দশকে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাকে রহমতের বারিধারা বর্ষণ করে মাগফিরাত ও ক্ষমার উপযোগী করেন। দ্বিতীয় দশকে ক্ষমা করে তৃতীয় দশকে বান্দার জন্য নাজাতের ফায়সালা করেন। হাদিস শরিফে এই দশককে ‘ইতক্বুম মিনান নার’ বা জাহান্নাম থেকে মুক্তির দশক বলা হয়েছে। </p> <p>মাহে রমজানের প্রথম ২০ দিনের তুলনায় রাসুলুল্লাহ (সা.) শেষের ১০ দিন বেশি ইবাদত করতেন। দিনে সিয়াম ও রাতে কিয়ামের পাশাপাশি নফল ইবাদতের মাধ্যমে রাত জাগরণ করতেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যখন রমজানের শেষ ১০ রাত আসত, তখন নবী করিম (সা.) কোমরে কাপড় বেঁধে নেমে পড়তেন (বেশি বেশি ইবাদতের প্রস্তুতি নিতেন) এবং রাত জেগে থাকতেন। আর পরিবার-পরিজনকেও তিনি জাগিয়ে দিতেন। (বুখারি শরিফ, হাদিস : ১০৫৩)</p> <p>শেষ দশকের সূচনা হয় ইতিকাফ দ্বারা। রমজানের পুরোপুরি রহমত ও বরকত লাভের জন্য ইতিকাফের গুরুত্ব অপরিসীম। আমাদের প্রিয় নবী (সা.) ইতিকাফ করেছেন, সাহাবায়ে কেরামও করেছেন, তাই ইতিকাফ করা সুন্নত। আয়েশা (রা.) বলেন, ইন্তেকাল পর্যন্ত রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করেছেন, এরপর তাঁর স্ত্রীরও ইতিকাফ করেছেন। (বুখারি, হাদিস : ১৮৬৮)</p> <p>আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) প্রতি রমজানে ১০ দিন ইতিকাফ করতেন, তবে যে বছর তিনি পরলোকগত হন, সে বছর তিনি ২০ দিন ইতিকাফে কাটান। (বুখারি, হাদিস : ১৯০৩)</p> <p>এ সময় তিনি আল্লাহর ইবাদতে মসজিদে নির্জন বাস করতেন। দুনিয়াবি সব ধরনের সম্পৃক্ততা থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ করতেন, ইবাদতে মশগুল থাকতেন। অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে মহানবী (সা.) রমজানের শেষ দশকে বেশি ইবাদত করতেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) অন্য সময়ের তুলনায় রমজানের শেষ দশকে বেশি পরিমাণে এমনভাবে সচেষ্ট থাকতেন, যা অন্য সময়ে থাকতেন না। (মুসলিম, হাদিস : ২৬৭৮)</p> <p>এই দিনগুলোতে অনেকটা নিদ্রাবিহীন রাত পার করতেন মহানবী (সা.)। রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রথম ২০ দিন সালাত আদায় করতেন এবং ঘুমাতেন। কিন্তু শেষ ১০ দিন ঘুমাতেন না, বরং পরিধেয় বস্ত্রকে মজবুত করে বেঁধে সালাতে মনোনিবেশ করতেন। (মুসনাদে আহমাদ : ৬/৬৮, ১৪৬)</p> <p>সারকথা হলো রমজানের শেষ ১০ দিন মহানবী (সা.) অন্য সময়ের চেয়ে বেশি আমল করতেন। এই ১০ দিন সব ধরনের ইবাদত তথা সালাত, কোরআন তিলাওয়াত, জিকির ও সদাকা ইত্যাদি বেশি করতেন।</p> <p>এ ছাড়া আল্লাহর রাসুল (সা.) এ সময় সারা রাত জাগ্রত থেকে মন, জিহ্বা ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দ্বারা জিকির, তিলাওয়াত ও সালাতে অতিবাহিত করতেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) এটা করতেন রাতগুলোর সম্মানার্থে এবং লাইলাতুল কদরের সন্ধানে। কেননা  লাইলাতুল কদর এমন এক রাত, যে রাতে ঈমান ও সওয়াবের আশায় কেউ সালাত আদায় করলে, আল্লাহ তার আগের গোনাহ ক্ষমা করে দেন।</p> <p>মহান আল্লাহ আমাদের সেই সৌভাগ্য নসিব করুন।</p>