<p>আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আপনি তাদের উপদেশ দিতে থাকুন, কেননা উপদেশ মুমিনদের উপকারে আসবে।’ (সুরা : জারিয়াত, আয়াত : ৫৫)</p> <p>জারির ইবনে আবদুল্লাহ আল-বাজালি (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর কাছে বাইয়াত গ্রহণ করেছি নামাজ কায়েম করার, জাকাত প্রদান করার এবং সব মুসলিমের মঙ্গল কামনা করার। (বুখারি, হাদিস : ৫৭ )</p> <p>একজন মানুষকে উপদেশ দেওয়ার আগে নিজেকে সংশোধন করা আবশ্যক। তখনই তার সাহচর্য থেকে অন্যরা পরিবর্তন হবে, ইনশাআল্লাহ। নিম্নে উপদেশ ফলপ্রসূ হওয়ার পদ্ধতি বর্ণনা করা হলো—</p> <p><strong>বিশুদ্ধ নিয়ত</strong></p> <p>সর্বপ্রথম যে শর্ত তা হচ্ছে ইখলাসের সঙ্গে নসিহত করা। কারণ ইখলাসবিহীন কোনো আমল আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। অর্থাৎ আমি যে তাকে উপদেশ দিচ্ছি তা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, দুনিয়ার কোনো পার্থিব স্বার্থ হাসিলের জন্য নয়।</p> <p><strong>হিংসা-বিদ্বেষ নয় </strong></p> <p>দায়ী ব্যক্তি নিজের অন্তরে বিদ্বেষ রেখে দাওয়াত দেবে না। ব্যক্তির প্রতি তার কোনো ক্ষোভ, ঘৃণা ও কুধারণা থাকবে না। কারণ হিংসা মানুষকে তিলে তিলে ক্ষয় করে শেষ করে দেয়। যারা হিংসুক, তারা ইহকাল ও পরকাল উভয় জগতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, নবী (সা.) বলেছেন, তোমরা ধারণা করা থেকে বিরত থাকো। ধারণা বড় মিথ্যা ব্যাপার। তোমরা দোষ তালাশ কোরো না, গোয়েন্দাগিরি কোরো না, পরস্পর হিংসা পোষণ কোরো না, একে অন্যের প্রতি বিদ্বেষভাব পোষণ কোরো না এবং পরস্পর বিরোধে লিপ্ত হয়ো না; বরং তোমরা সবাই আল্লাহর বান্দা, ভাই ভাই হয়ে যাও। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬০৬৪)</p> <p><strong>নিজের ডানা কোমল রাখা</strong></p> <p>রাসুল (সা.)-এর প্রতি মহান আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘(হে নবী! এসব ঘটনার পর) আল্লাহর রহমতই ছিল, যদ্দরুন তাদের প্রতি তুমি কোমল আচরণ করেছ। তুমি যদি রূঢ় প্রকৃতির ও কঠোর হৃদয় হতে, তবে তারা তোমার আশপাশ থেকে সরে বিক্ষিপ্ত হয়ে যেত। সুতরাং তাদের ক্ষমা করো, তাদের জন্য মাগফিরাতের দোয়া করো এবং (গুরুত্বপূর্ণ) বিষয়ে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করতে থাকো। অতঃপর তুমি যখন (কোনো বিষয়ে) মনস্থির করবে, তখন আল্লাহর ওপর নির্ভর কোরো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওয়াক্কুলকারীদের ভালোবাসেন।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৫৯)</p> <p>তাই অন্যকে উপদেশ আর নসিহতের জন্য নম্রতা ও কোমলতার বিকল্প নেই।</p> <p><strong>আমলহীন নসিহত</strong></p> <p>যে বিষয়ে নসিহত করবে সে বিষয়ে নিজেই আমল করা। এমন যেন না হয় যে অন্যকে নসিহত করে নিজে তা থেকে বেমালুম থাকা। এমন ব্যক্তির জন্য আল্লাহ তাআলা ভর্ত্সনা করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা কি মানুষকে সৎকাজের নির্দেশ দাও, আর নিজেদের কথা ভুলে যাও! অথচ তোমরা কিতাব অধ্যয়ন করো। তবে কি তোমরা বুঝ না?’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ৪৪)</p> <p>হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, কিছুসংখ্যক জান্নাতবাসী অন্য কিছু জাহান্নামবাসীকে অগ্নিদগ্ধ হতে দেখে জিজ্ঞেস করবেন যে তোমরা কিভাবে জাহান্নামে প্রবেশ করলে, অথচ আল্লাহর কসম, আমরা তো সেসব সৎকর্মের জন্য জান্নাত লাভ করেছি, যা তোমাদের কাছে শিখেছিলাম? জাহান্নামবাসীরা বলবে, আমরা মুখে অবশ্য বলতাম কিন্তু নিজে তা কাজে পরিণত করতাম না। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩২৬৭)</p> <p><strong>নসিহতে ধৈর্য ধারণ</strong></p> <p>সঠিক পদ্ধতিতে দাওয়াত দেওয়ার পর যদি কোনো বিপদ আসে তাহলে ধৈর্য ধারণ করা। সব নবী দাওয়াত দিয়েছেন এবং ধৈর্য ধরেছেন। কারণ দাওয়াতের ময়দান অনেক বিস্তৃত। আর যে ময়দান যত বেশি বিস্তৃত হবে বাধা-বিপত্তি তত বেশি আসবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে আমার প্রিয় বৎস! সালাত কায়েম করো, সৎকাজের নির্দেশ দাও এবং অসৎ কাজে নিষেধ করো, আর তোমার ওপর যা আপতিত হয় তাতে ধৈর্য ধারণ করো। নিশ্চয়ই এটা অন্যতম দৃঢ় সংকল্পের কাজ।’ (সুরা : লোকমান, আয়াত : ১৭)</p> <p><strong>কোরআনের কথা বলা</strong></p> <p>নসিহতের সময় ওই ব্যক্তিকে কোরআনের বাণী শোনানো উচিত। নবী ও আগের মুসলিম মনীষীদের ঘটনা বর্ণনা করবে। আজগুবি, অহেতুক কথাবার্তা ও শুনতে রসালো উদ্ভট কথা বলে দাওয়াত দেবে না।</p> <p>আল্লাহ তাআলা সবাইকে সুন্দরভাবে দাওয়াত দেওয়ার তাওফিক দান করুন।</p> <p> </p> <p> </p>