<p>নবীজি (সা.)-এর অন্যতম ঘনিষ্ঠ সাহাবি আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.)। তিনি ছিলেন রাসুল (সা.)-এর ভায়রা। জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত ১০ জন সাহাবির একজন। ইসলামের তৃতীয় খলিফা নির্বাচনের জন্য ওমর (রা.) কর্তৃক গঠিত ছয় সদস্যের শুরা কমিটির অন্যতম সদস্য। ইসলামের প্রথম দিকে যাঁরা ইসলাম গ্রহণ করেছেন আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) তাঁদেরই একজন। আবু বকর (রা.)-এর সঙ্গে ছিল তাঁর গভীর বন্ধুত্ব। তাঁর আহ্বানেই তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন (আত তাবকাতুল কুবরা : ৩/৯২)।</p> <p>নিজের জীবন বাজি রেখে বদর, ওহুদ, খন্দকসহ সব যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং অত্যন্ত সাহস ও দৃঢ়তার পরিচয় দেন। ওহুদ যুদ্ধে মুসলমানদের সাময়িক বিপর্যয় মুহূর্তে রাসুল (সা.)-কে রক্ষা করার জন্য যে ১৪ জন সাহাবি নিজেদের মানবঢালরূপে ব্যবহার করেছেন, আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) তাঁদেরই একজন। (আত তাবকাতুল কুবরা : ৩/৯৫)</p> <p>মহান আল্লাহ নবীজি (সা.)-এর এই সাহাবি অঢেল সম্পদ দান করেছিলেন। তিনি তা আল্লাহর রাস্তায়ই ব্যয় করেছেন। প্রত্যেক ধনী ব্যক্তির উচিত সম্পদ পরিচালনায় আব্দুর রহমান ইবনে আউফ (রা.)-এর জীবনীকে সামনে রাখা। প্রথম দিকে আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) ছিলেন একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। রাসুল (সা.) তাঁর সম্পদ বৃদ্ধির জন্য দোয়া করেছিলেন এবং সে দোয়া আল্লাহ তাআলা কবুল করেছেন। যার ফলে তিনি একসময় অঢেল সম্পদের মালিক হন। তবে ধন-সম্পদের প্রাচুর্য তাঁকে এক মুহূর্তের জন্যও আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন করতে পারেনি। তিনি মহান আল্লাহর দেওয়া সম্পদ আল্লাহর পথেই দান-সদকা করতে বেশি ভালোবাসতেন।</p> <p>নবীজি (সা.)-এর জীবদ্দশায় একবার তিনি তাঁর সমুদয় সম্পদের অর্ধেক সদকা করে দেন। এরপর ৪০ হাজার দিনার সদকা করেন। এরপর ৫০০ ঘোড়া আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের জন্য প্রস্তুত করে দেন। এরপর ৫০০ উট। এসব তাঁর ব্যবসায় অর্জিত সম্পদ। কথিত আছে যে এক দিনেই তিনি ৩০টি গোলাম মুক্ত করেছেন। মৃত্যুকালে তিনি বদরি সাহাবিদের জন্য জনপ্রতি ৪০০ দিনারের অসিয়ত করে যান। তখন ১০০ বদরি সাহাবি জীবিত ছিলেন। সবাই ৪০০ দিনার করে লাভ করেছেন। (আল-ইসাবাহ : ৪/২৯১, ২৯৩, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া : ৭/১৬৩)</p> <p>একবার তাঁর বিশাল এক বাণিজ্য কাফেলা ৭০০ উট বোঝাই করা ছোলা, আটা ও অন্য মুদিসামগ্রী নিয়ে মদিনায় প্রবেশ করে। বিশাল এই বাণিজ্য কাফেলা মদিনাজুড়ে যথেষ্ট আলোড়ন সৃষ্টি করে। এই খবর আয়েশা (রা.)-এর কাছে পৌঁছার পর তিনি বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, আবদুর রহমান হামাগুড়ি দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আবদুর রহমান এ কথা শোনামাত্রই আম্মাজান আয়েশা (রা.)-এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে আরজ করলেন, আমি আপনাকে সাক্ষ্য করে বলছি, আমার এ বিশাল বাণিজ্য কাফেলা এবং সব পণ্য, এমনকি উট ও তার হাওদাসহ সব কিছুই মহান আল্লাহর জন্য ওয়াকফ করে দিলাম। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া : ৭/১৬৪)</p> <p>ইবনে সাদ (রহ.)-এর বর্ণনামতে, আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) ৭৫ বছর বয়সে, আর ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.)-এর বর্ণনামতে ৭২ বছর বয়সে ৩২ হিজরি সনে ইন্তেকাল করেন। তাঁকে মদিনার জান্নাতুল বাকিতে দাফন করা হয়।</p> <p> </p>