<p>পবিত্র কোরআনে বিজয় বোঝাতে প্রধানত ‘ফাতহুন’ বা ‘ফাতহ’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। আরবি ভাষায় এই শব্দেই সাধারণত বিজয়কে ব্যক্ত করা হয়। তবে পবিত্র কোরআনে ‘নাসরুন’ বা ‘নাসর’ শব্দ দ্বারাও বিজয় বোঝানো হয়ছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় এবং তুমি মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দ্বিনে প্রবেশ করতে দেখবে।’ (সুরা : নাসর, আয়াত : ১-২)</p> <p><strong>কোরআনে ফাতহ শব্দের অর্থ</strong></p> <p>পবিত্র কোরআনে ফাতহ শব্দটি ৩৮ বার এসেছে। আল্লাহ এই নামে একটি সুরাও অবতীর্ণ করেছেন। ফাতহ দ্বারা বিজয় বোঝালেও এর আরো তিনটি অর্থ রয়েছে। তা হলো- সাহায্য করা, উন্মুক্ত করা ও অবারিত করে। আবার ফাতহ শব্দ দ্বারা কেবল মক্কা বিজয়কেও বোঝানো হয়েছে। যেমন–</p> <p><strong>১. বিজয় ও ফায়সালা : </strong>ফাতহ শব্দটি বিজয় ও বিবদমান দুটি পক্ষের ভেতর চূড়ান্ত ফায়সালার অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমি তোমাদের দিয়েছি সুস্পষ্ট বিজয়।’ (সুরা : ফাতহ, আয়াত : ১)</p> <p><strong>২. সাহায্য : </strong>মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা তোমাদের অমঙ্গলের প্রতীক্ষায় থাকে তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে সাহায্য এলে বলে, আমরা কি তোমাদের সঙ্গে ছিলাম না?’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১৪১)</p> <p><strong>৩. অবারিত করা : </strong>মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ মানুষের প্রতি কোনো অনুগ্রহ অবারিত করলে কেউ তা নিবারণকারী নেই।’ (সুরা : ফাতির, আয়াত : ২)</p> <p><strong>জয়-পরাজয় আল্লাহর হাতে</strong></p> <p>জয়-পরাজয় মহান আল্লাহই নির্ধারণ করেন এবং এ ক্ষেত্রে তাঁর ইচ্ছা অপরিহার্য। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করলে তোমাদের ওপর জয়ী হওয়ার কেউ  থাকবে না। আর তিনি তোমাদের সাহায্য না করলে, তিনি ছাড়া কে এমন আছে যে তোমাদের সাহায্য করবে? মুমিনরা আল্লাহর ওপরই নির্ভর করুক।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৬০)</p> <p><strong>বিজয় শক্তিমত্তার ওপর নির্ভর করে না</strong></p> <p>জয়-পরাজয় আল্লাহর ইচ্ছা ও অনুগ্রহের ওপর নির্ভরশীল, তা শক্তি বা জনবলের ওপর নির্ভরশীল নয়। এ জন্য বদরে মুসলমান সংখ্যায় ক্ষুদ্র হয়েও বিজয়ী হয়েছিল এবং হুনাইনে সংখ্যায় বেশি হয়েও বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছিল। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আল্লাহ তোমাদেরকে বদর যুদ্ধে সাহায্য করেছিলেন। সে সময় তোমরা ছিলে অসহায়।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১২৩)</p> <p>অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘হুনাইনের যুদ্ধের দিন যখন তোমাদের উৎফুল্ল করেছিল তোমাদের সংখ্যাধিক্য; কিন্তু তা তোমাদের কোনো কাজে আসেনি।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ২৫)</p> <p><strong>বিজয় চিরস্থায়ী নয়</strong></p> <p>পৃথিবীতে জয় বা পরাজয় কোনোটিই চিরস্থায়ী নয়, বরং তা মানুষের ভেতর আবর্তনশীল। ইরশাদ হয়েছে, ‘যদি তোমাদের আঘাত লেগে থাকে, অনুরূপ আঘাত তাদেরও লেগেছিল। মানুষের মধ্যে এই দিনগুলো (বিজয় ও বিপর্যয়) পর্যায়ক্রমে আমি আবর্তন ঘটাই।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৪০)</p> <p><strong>বিজয় যাদের জন্য</strong></p> <p>কোরআনে আল্লাহ যাদের জন্য বিজয়ের অঙ্গীকার করেছেন, তারা হলো :</p> <p><strong>১. ধৈর্যশীল মুমিনদের জন্য :</strong> আল্লাহ ধৈর্যশীল ও দৃঢ় প্রত্যয় মুমিনদের বিজয়ী করেন। আল্লাহ বলেন, ‘কিন্তু যাদের প্রত্যয় ছিল আল্লাহর সঙ্গে তাদের সাক্ষাৎ ঘটবে তারা বলল, আল্লাহর হুকুমে কত ক্ষুদ্র দল কত বৃহৎ দলকে পরাভূত করেছে। আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২৪৯)</p> <p><strong>২. আল্লাহর পথে সংগ্রামরতদের জন্য :</strong> যারা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করে আল্লাহ তাদের বিজয়ী করেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য করো, আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করবেন এবং তোমাদের অবস্থান দৃঢ় করবেন।’ (সুরা : মুহাম্মদ, আয়াত : ৭)</p> <p><strong>যেভাবে বিজয় ত্বরান্বিত হয়</strong></p> <p>আল্লাহ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সাহায্যের মাধ্যমে মুমিনদের বিজয় নিশ্চিত করেন। যেমন :</p> <p><strong>১. মুমিনদের মাধ্যমে :</strong> আল্লাহ মুমিনদের মাধ্যমে অপর মুমিনের বিজয় নিশ্চিত করেন। আল্লাহ বলেন, ‘যদি তারা তোমাকে প্রতারিত করতে চায়, তবে তোমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। তিনি তোমাকে স্বীয় সাহায্য ও মুমিনদের দ্বারা শক্তিশালী করেছেন। এবং তিনি তাদের পরস্পরের হৃদয়ের মধ্যে প্রীতি স্থাপন করেছেন।’ (সুরা : আনফাল, আয়াত : ৬২-৬৩)</p> <p><strong>২. ফেরেশতা ও প্রাকৃতিক শক্তির মাধ্যমে :</strong> আল্লাহ প্রাকৃতিক শক্তি ও ফেরেশতাদের মাধ্যমে মুমিনের বিজয় ত্বরান্বিত করেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন শত্রুবাহিনী তোমাদের বিরুদ্ধে সমাগত হয়েছিল এবং আমি তাদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করেছিলাম ঝঞ্ঝাবায়ু ও এক বাহিনী, যা তোমরা দেখনি।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৯)</p> <p><strong>৩. শত্রুর মনে ভয় সৃষ্টি করে : </strong>আল্লাহ শত্রুর মনে ভয় সৃষ্টির মাধ্যমে মুমিনদের সাহায্য করেন। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা কল্পনাও করোনি যে তারা নির্বাসিত হবে এবং তারা মনে করেছিল তাদের দুর্গগুলো তাদেরকে রক্ষা করবে আল্লাহ থেকে। কিন্তু আল্লাহর শাস্তি এমন এক দিক থেকে এলো, যা ছিল তাদের ধারণাতীত এবং তাদের অন্তরে তা ত্রাসের সঞ্চার করল।’ (সুরা : হাশর, আয়াত : ২)</p> <p><strong>বিজয়ের সুযোগ সন্ধানী যারা</strong></p> <p>যাদের ঈমান ঠিক নেই, যারা অবিশ্বাসী ও মুনাফিক তারা সুযোগ অপেক্ষায় থাকে। যে পক্ষই বিজয়ী হোক তারা সুবিধা ভোগ করতে চায়। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা তোমাদের অমঙ্গলের প্রতীক্ষায় থাকে তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের জয় হলে বলে, আমরা কি তোমাদের সঙ্গে ছিলাম না? আর যদি অবিশ্বাসীদের কিছু বিজয় হয়, তবে তারা বলে, আমরা কি তোমাদের পরিবেষ্টন করে রেখেছিলাম না? এবং আমরা কি তোমাদেরকে মুমিনদের থেকে রক্ষা করিনি?’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১৪১)</p> <p><strong>বিজয়ের পর করণীয়</strong></p> <p>মুমিন যদি আল্লাহর অনুগ্রহে বিজয়ী হয়, তবে তারা আল্লাহ কৃতজ্ঞতা ও প্রশংসা করে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় এবং তুমি মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দ্বিনে প্রবেশ করতে দেখবে, তখন তুমি তোমার প্রতিপালকের প্রশংসাসহ তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, তিনি তো তাওবা কবুলকারী।’ (সুরা : নাসর, আয়াত : ১-২)</p> <p><strong>বিজয়ের পর আনুগত্যের মূল্য</strong></p> <p>যারা সংকটের সময় ঈমান আনে ও আল্লাহর আনুগত্য করে, যারা দেশ ও উম্মাহর মুক্তির জন্য সংগ্রাম করে তারা এবং যারা বিজয়ের পর আনুগত্যের ঘোষণা দেয় তারা সময় নয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা মক্কা বিজয়ের আগে ব্যয় করেছে ও যুদ্ধ করেছে, তারা ও পরবর্তীরা সমান নয়। তারা মর্যাদায় শ্রেষ্ঠ তাদের চেয়ে যারা পরবর্তীতে ব্যয় করেছে ও যুদ্ধ করেছে।’ (সুরা : হাদিদ, আয়াত : ১০)</p> <p>আল্লাহ সবাইকে কোরআনের মর্ম অনুধাবনের তাওফিক দিন। আমিন।<br />  </p>