<p>ইসলামী শরিয়তে রাষ্ট্রবিরোধী কাজ ও ষড়যন্ত্রকে ‘খিয়ানাতুল ওয়াতান’ শব্দ দ্বারা ব্যক্ত করা হয়েছে। দেশ, জাতি ও রাষ্ট্রের স্বার্থপরিপন্থী যেকোনো কাজ এর অন্তর্ভুক্ত। যেমন একজন ঘুষ নিয়ে রাষ্ট্রীয় পদে অযোগ্য ব্যক্তিকে নিয়োগ দিল এবং আরেকজন বিদেশি শত্রুর সঙ্গে আঁতাত করল, তারা উভয়ে রাষ্ট্রবিরোধী কাজে লিপ্ত। ইসলাম দেশ, জাতি, সমাজ ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডকে নিষিদ্ধ করেছে।</p> <p><strong>রাষ্ট্রবিরোধী কাজ নিষিদ্ধ</strong></p> <p>ইসলামী শরিয়ত দেশ, জাতি ও রাষ্ট্রের স্বার্থবিরোধী কাজগুলোকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! জেনে-শুনে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সঙ্গে বিশ্বাস ভঙ্গ করবে না এবং তোমাদের পরস্পরের আমানত সম্পর্কেও বিশ্বাস ভঙ্গ কোরো না।’ (সুরা : আনফাল, আয়াত : ২৭)</p> <p><strong>রাজনীতিকদের রাষ্ট্রবিরোধী কাজ গুরুতর অপরাধ</strong></p> <p>ইসলাম সাধারণভাবে সবাইকে ষড়যন্ত্র, বিশ্বাসঘাতকতা ও রাষ্ট্রবিরোধী কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছে। তবে যারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার নিয়ন্ত্রক তাদের বিশ্বাসঘাতকতা বেশি গুরুতর। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, জেনে রাখো! কিয়ামতের দিন প্রত্যেক বিশ্বাসঘাতকের জন্য তার বিশ্বাসঘাতকতার পরিমাণ অনুযায়ী একটি করে পতাকা স্থাপন করা হবে। মুসলিম রাষ্ট্রনায়কের বিশ্বাসঘাতকতার চেয়ে ভীষণ কোনো বিশ্বাসঘাতকতা নেই। তার এই পতাকা তার নিতম্বের কাছে স্থাপন করা হবে। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২১৯১)</p> <p><strong>রাষ্ট্রবিরোধী কাজে সমর্থন নিষিদ্ধ</strong></p> <p>ইসলামে শুধু রাষ্ট্রবিরোধী কাজই নিষিদ্ধ নয়, বরং রাষ্ট্রবিরোধী ও ষড়যন্ত্রকারীদের সমর্থন করাও নিষিদ্ধ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি তো তোমার প্রতি সত্যসহ কিতাব অবতীর্ণ করেছি, যাতে তুমি আল্লাহ তোমাকে যা জানিয়েছেন সে অনুসারে মানুষের মধ্যে বিচার-মীমাংসা করো এবং বিশ্বাস ভঙ্গকারীদের সমর্থনে তর্ক কোরো না।...যারা নিজেদের প্রতারিত করে তাদের পক্ষে বাদ-বিসম্বাদ কোরো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ বিশ্বাস ভঙ্গকারী পাপীকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১০৫ ও ১০৭)</p> <p><strong>রাষ্ট্রবিরোধীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব নয়</strong></p> <p>যারা বন্ধুত্বের অঙ্গীকার ভেঙে রাষ্ট্রবিরোধী কাজে লিপ্ত হয়, তাদের সঙ্গে অঙ্গীকার ও বন্ধুত্ব রক্ষা করা আবশ্যক নয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যদি তুমি কোনো সম্প্রদায়ের চুক্তি ভঙ্গের আশঙ্কা করো, তবে তোমার চুক্তিও তুমি যথাযথভাবে বাতিল করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ চুক্তি ভঙ্গকারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা : আনফাল : ৫৮)</p> <p><strong>রাষ্ট্রবিরোধীদের প্রতিহত করা আবশ্যক</strong></p> <p>যখন কেউ রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কাজে লিপ্ত হয়, তাকে প্রতিহত করা আবশ্যক। রাসুলুল্লাহ (সা.) মক্কা অভিযানের প্রস্তুতি শুরু করলে হাতেব ইবনে আবি বালতা (রা.) ব্যক্তিগত অপারগতার কারণে যুদ্ধের প্রস্তুতির খবর জানিয়ে কুরাইশদের চিঠি লেখেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বিষয়টি জানতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে চিঠির বাহক নারীকে গ্রেপ্তার করতে আলী ও জুবায়ের (রা.)-কে পাঠান এবং তারা সে নারীকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসেন। (নবীয়ে রহমত, পৃষ্ঠা ৩৩২)</p> <p><strong>প্রতিহত না করার ক্ষতি</strong></p> <p>রাষ্ট্রবিরোধী কাজ সম্পর্কে অবগত হওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে তা প্রতিহত করা আবশ্যক। কেননা ষড়যন্ত্র দেশ ও জাতিকে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি করতে পারে। যেমন ইহুদি ষড়যন্ত্র মুসলমানদের আরবের সম্মিলিত আক্রমণের মুখোমুখি করেছিল। সে দিকে ইঙ্গিত দিয়ে ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন তারা তোমাদের বিরুদ্ধে সমাগত হয়েছিল তোমাদের ওপর দিক থেকে এবং নিচের দিক থেকে, তোমাদের চোখ বিস্ফারিত হয়েছিল এবং ভয়ে তোমাদের প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়েছিল আর তোমরা আল্লাহ সম্পর্কে নানাবিধ ধারণা পোষণ করছিলে, তখন মুমিনরা পরীক্ষিত হয়েছিল এবং তারা ভীষণভাবে প্রকম্পিত হয়েছিল।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ১০-১১)</p> <p><strong>রাষ্ট্রবিরোধী কাজের শাস্তি</strong></p> <p>ইসলামী শরিয়তে রাষ্ট্রবিরোধী কাজ ও ষড়যন্ত্র শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যারা এমন কাজ করবে তারা কঠোর শাস্তি ভোগ করবে। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অপরাধে বনু কুরাইজা ও বনু মুস্তালিককে কঠোর শাস্তি প্রদান করেন। তবে কোরআন ও সুন্নাহতে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো শাস্তির বর্ণনা আসেনি। তাই শরিয়ত বিষয়টি শাসক ও বিচারব্যবস্থার ওপর ন্যস্ত করেছে। অপরাধের মাত্রা, অপরাধীর অংশগ্রহণ, দেশ ও জাতির ক্ষতি ইত্যাদি বিবেচনা করে তারা শাস্তির মাত্রা নির্ধারণ করবে। শর্ত হলো- অপরাধীদের প্রতি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। মহান আল্লাহর নির্দেশ হলো, ‘তোমরা যখন মানুষের মধ্যে বিচারকাজ পরিচালনা করবে, তখন ন্যায়পরায়ণতার সঙ্গে বিচার করবে।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৫৮, দস্তুর ডটঅর্গ)</p> <p><strong>অপারগের জন্য ক্ষমা</strong></p> <p>কেউ যদি নিতান্ত অপারগ হয়ে রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কাজ করে ফেলে, তবে সে ক্ষমার যোগ্য। যেমন রাসুলুল্লাহ (সা.) হাতেব ইবনে আবি বালতা (রা.)-এর অপারগতা গ্রহণ করেছিলেন এবং তাঁকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। (নবীয়ে রহমত, পৃষ্ঠা ৩৩৩)</p> <p><strong>ষড়যন্ত্র টের পেলে করণীয়</strong></p> <p>কেউ যদি রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কাজ সম্পর্কে জানতে পারে, তবে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে তা জানানো আবশ্যক; যেন ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হতে না পারে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন শান্তি বা শঙ্কার কোনো সংবাদ তাদের কাছে আসে, তখন তারা তা প্রচার করে থাকে। যদি তারা তা রাসুল বা তাদের মধ্যে যারা ক্ষমতার অধিকারী তাদের গোচরে আনত, তবে তাদের মধ্যে যারা তথ্য অনুসন্ধান করে, তারা তার যথার্থতা নির্ণয় করতে পারত। তোমাদের প্রতি যদি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকত, তবে তোমাদের অল্পসংখ্যক ছাড়া সবাই শয়তানের অনুসরণ করত।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৮৩)</p> <p><strong>দেশবিরোধী তৎপরতা বন্ধে করণীয়</strong></p> <p>প্রাজ্ঞ আলেমরা দেশবিরোধী তৎপরতা প্রতিহত করতে নিম্নোক্ত কাজগুলো করার পরামর্শ দেন :</p> <p>১. ঈমানি শিক্ষার বিস্তার : কেননা ঈমান মানুষকে অন্যায় থেকে বিরত রাখে।</p> <p>২. জাতীয় ঐক্য : কেননা জাতি ঐক্যবদ্ধ হলে সব ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়।</p> <p>৩. সচেতনতা বৃদ্ধি : কেননা দেশবিরোধীরা যাতে সরলমনাদের বিভ্রান্ত করতে না পারে।</p> <p>৪. দেশপ্রেম জাগ্রত করা : কেননা ইসলাম মাতৃভূমিকে ভালোবাসতে অনুপ্রাণিত করে।</p> <p>৫. শত্রু-মিত্রের পরিচয় প্রকাশ করা : যেন মানুষ শত্রুর কবল থেকে রক্ষা পায়।</p> <p>আল্লাহ সবাইকে দেশবিরোধী কাজ থেকে বাঁচার তাওফিক দিন। আমিন।</p>