<p>প্রকাশ্য ঘোষণা, আন্তরিক বিশ্বাস, ত্রুটিহীন ও পরিপূর্ণ আমলদার ব্যক্তিই প্রকৃত বা ‘কামিল মুমিন’।</p> <p>বিশ্বাস ও কর্মগত কারণে ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষের পরিভাষা হয়। যেমন—১. মুহসিন তথা পূর্ণতা ও উৎকর্ষ অর্জনকারী, ২. মুমিন তথা বিশ্বাসী, ৩. মুসলিম তথা আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণকারী, ৪. ফাসিক তথা অধার্মিক, লঘুপাপী, দুশ্চরিত্র, ৫. ফাজির তথা পাপাচারী, অনিষ্টকারী, ৬. মুনাফিক তথা কপট, ধর্মের ধ্বজাধারী, ৭. কাফির তথা গোপনকারী, অস্বীকারকারী, প্রত্যাখ্যানকারী, ৮. মুশরিক তথা পৌত্তলিক, বহু ঈশ্বরবাদী, আল্লাহর সঙ্গে শরিককারী, ৯. জিন্দিক তথা ধর্মদ্রোহী, ১০. মুরতাদ তথা ধর্মত্যাগী, ১১. মুলহিদ তথা নাস্তিক, অবিশ্বাসী।</p> <p>আরবি ‘কুফর’ শব্দটি অবিশ্বাস, অস্বীকার, অকৃতজ্ঞতা ইত্যাদি অর্থে ব্যবহৃত হয়। শব্দটির মূল অর্থ ‘আবৃত করা।’</p> <p>ইবনু ফারিস (রহ.) বলেন, ‘ঈমান বা বিশ্বাসের বিপরীত অবিশ্বাসকে কুফর বলা হয়; কারণ অবিশ্বাস অর্থ সত্যকে আবৃত করা।’</p> <p><strong>কুফরি দুই ধরনের </strong></p> <p>এক. বড় কুফরি, এ কুফরি ব্যক্তিকে মুসলিম মিল্লাত থেকে বের করে দেয়।</p> <p>দুই. ছোট কুফরি, একে কর্মগত কুফরি বা আমলি কুফরিও বলা হয়।</p> <p>মহান আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে কোনো বিষয়ে তাঁর সমতুল্য বা সমকক্ষ কিংবা তুলনীয় বলে বিশ্বাস করার মাধ্যমে যে কুফরি হয় তাই শিরক।</p> <p>একটি শিরকি কাজ ঈমান ও যাবতীয় সৎকর্ম নিষ্ফল করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। মহান আল্লাহ বলেন, ‘(হে রাসুল) আর তোমার কাছে আর তোমার পূর্ববর্তীদের কাছে এই মর্মে ওহি নাজিল করা হয়েছে যে তুমি যদি (আল্লাহর) শরিক স্থির করো, তাহলে তোমার কর্ম অবশ্য অবশ্যই নিষ্ফল হয়ে যাবে। আর তুমি অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (সুরা : ঝুমার, আয়াত : ৬৫)</p> <p>পবিত্র কোরআনের অনেক আয়াতে শিরকের ভয়াবহতা সম্পর্কে বলা হয়েছে, যেমন—সুরা : বাকারা, আয়াত ২২; সুরা : নিসা, আয়াত ১১৬; সুরা : মায়েদা, আয়াত ৭২; সুরা : আনআম, আয়াত : ৮৮।</p> <p>ইমাম রাবেগ ইস্পাহানি (রহ.) ‘মুফরাদাত’ গ্রন্থে লিখেছেন, শিরকের অর্থ দুই স্বত্বাধিকারের সংমিশ্রণ, সমকক্ষ স্থির করা ইত্যাদি।</p> <p><strong>শিরক প্রধানত দুই প্রকার </strong></p> <p>এক. শিরকে আকবর তথা বড় শিরক। শিরকে আকবর চার প্রকার : ক. সত্তাগত অংশীদারি, খ. গুণাবলিতে শিরক, গ. আইনগত অধিকারে কাউকে শরিক করা, ঘ. ইবাদতের মধ্যে আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করা।</p> <p>দুই. শিরকে আসগর তথা তুলনামূলক ছোট শিরক। এটি প্রকারভেদে সীমিত করা যায় না। তবে উল্লেখযোগ্য হলো : ক. কথাগত, খ. কার্যগত, গ. বস্তুগত শিরক।</p> <p>প্রত্যেক মুসলমানকে অবশ্যই এসব বিষয়ে বিশ্বাসী হতে হবে যে সব কিছু মহান আল্লাহর নিয়ন্ত্রণাধীন। যেমন—দিবারাত্রি, ঋতুচক্রের পরিবর্তন, তাঁরই হাতে আমাদের জীবনচক্রের নিয়ন্ত্রণ, চেহারার সৌন্দর্য, পুত্র-কন্যর জন্ম, হেদায়াত ও সুস্থতা, ক্ষমতা, সম্পদ-সামর্থ্য সব কিছুর ফায়সালা মহান আল্লাহর কাছে—মানুষের হাতে নয়। পবিত্র কোরআনে আছে—‘তাঁরই কাছে আছে অদৃশ্যের চাবি!... তিনি জানেন যা কিছু আছে স্থলে ও জলে। গাছের একটি পাতাও ঝরে না তাঁর অজ্ঞাতসারে। কোনো শস্যকণা মাটির গভীর আঁধারে অঙ্কুরিত হয় না অথবা ভেজা আর শুকনো কোনো জিনিস নেই, যার স্পষ্ট বিবরণ তাঁর লিখনীতে (কিতাব বা বিধানে) নেই।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ৫৯)</p> <p>আর কোনো কিছু হয় না আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে আছে কিয়ামত সম্পর্কে জ্ঞান এবং তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন আর তিনিই জানেন যা কিছু আছে মাতৃগর্ভে। কেউ জানে না আগামীকাল সে কী উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন স্থানে সে মারা যাবে।’ (সুরা : লুকমান, আয়াত : ৩৪)</p> <p>মহান আল্লাহ আমাদের খাঁটি মুমিন হওয়ার তাওফিক দান করুন।</p> <p><em>লেখক : বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ, কাপাসিয়া, গাজীপুর</em></p> <p> </p>