<p>আরব জাতি ছিল যুদ্ধবাজ। যুগ যুগ ধরে তাদের মধ্যে যুদ্ধবিগ্রহ চলে আসছিল। এটা তাদের কাছে সাধারণ ব্যাপার ছিল। ঐতিহাসিক আসহাবুল ফিলের ঘটনার পর তাদের প্রসিদ্ধ একটি যুদ্ধের নাম ‘হারবুল ফিজার’। এই যুদ্ধ কুরাইশ ও বনু কায়স গোত্রের মধ্যে সংঘটিত হয়। প্রথম দিকে বনু কায়স কুরাইশের ওপর প্রাধান্য লাভ করে। পরে কুরাইশ বনু কায়সের ওপর জয়লাভ করে। সবশেষে সন্ধিচুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। এই যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অংশগ্রহণ করেন, কিন্তু সরাসরি যুদ্ধ করেননি। তিনি স্বীয় চাচাদের তীর-ধনুক উঠিয়ে দিতেন। বিভিন্নভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেন। কেননা এ যুদ্ধ আল্লাহর অবাধ্য মানুষদের যুদ্ধ ছিল। এবং এটি যুদ্ধবিগ্রহ হারাম মাসের সংঘটিত হয়েছিল। ইবনে ইসহাক (রহ.)-এর মতে, তখন নবীজি (সা.)-এর বয়স ছিল ২০ বছর। অন্য বর্ণনায় ১৫ বছর। (রাওজুল উনুফ : ১/১২০, সিরাতুল মুস্তফা : ১/৮৮)</p> <p><strong>আবার হিলফুল ফুজুল প্রতিষ্ঠা</strong></p> <p>রক্তক্ষয়ী ফিজার যুদ্ধে নিহত হয় উভয় পক্ষের অসংখ্য মানুষ। বিনষ্ট হয় প্রচুর ধন-সম্পত্তি। অবস্থা দর্শনে আরবের চিন্তাশীল প্রবীণ লোকেরা দারুণভাবে বিচলিত হয়ে পড়েন। সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা ও জনজীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কিছু লোকের মনে আগের হিলফুল ফুজুলের কথা জাগ্রত হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পিতৃব্য জুবায়ের ইবনে আব্দুল মুত্তালিবের অনুপ্রেরণায়  বনু হাশেম, বনু মুত্তালিব,বনু আসাদ ইবনে আব্দুল উজ্জা, বনু জুহরা ইবনে কিলাব এবং বনু তামিম ইবনে মুররা আবদুল্লাহ ইবনে জুনআনের বাড়িতে হিলফুল ফুজুল পুনর্গঠন করেন। এটা ছিল মহানবী (সা.)-এর নবুয়ত লাভের ২০ বছর আগে জিলকদ মাসের ঘটনা। পুনর্গঠিত সংগঠনটি আরবদের মধ্যে সর্বাধিক সম্মানিত ও প্রসিদ্ধ চুক্তি হিসেবে বিবেচিত ছিল।‌ (সিরাতুন নাবাবিয়া : ১/১৩৯; আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া : ২/২৭০)</p> <p>নবগঠিত হিলফুল ফুজুলের সক্রিয় সদস্য কিংবা আহ্বায়ক ছিলেন মহানবী (সা.)। (মুস্তাদরাক হাকেম : ২/২২০, মুসনাদে আহমদ : ১/১৯০)</p> <p>হিলফুল ফুজুলের প্রচেষ্টায় সমাজে অন্যায়-অবিচার, জুলুম-নির্যাতন অনেক কমে যায়। মানুষ নিরাপদে যাতায়াত করতে শুরু করে। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া : ২/২৯১; সিরাত বিশ্বকোষ : ৪/২৮৬)</p> <p><strong>হিলফুল ফুজুলের প্রতিজ্ঞা</strong></p> <p>এক. আমরা দেশ থেকে অশান্তি দূর করব।</p> <p>দুই. আমরা বহিরাগতদের রক্ষা করব।</p> <p>তিন. আমরা নিঃস্বদের সাহায্য করব।</p> <p>চার. আমরা শক্তিহীনদের ওপর শক্তিমানদের অত্যাচার প্রতিহত করব। (রাহমাতুল্লিল আলামিন : ৪৩)</p> <p>হিলফুল ফুজুলের কার্যক্রম ইসলামের প্রাথমিক যুগ পর্যন্ত ছিল।‌ ইসলামের আলো ছড়িয়ে পড়ায় সমাজে শান্তি চলে আসে। সবাই নিরাপত্তা লাভ করে।</p> <p><strong>যুবসমাজের প্রয়োজন নতুন হিলফুল ফুজুল</strong></p> <p>বর্তমানে জুলুম-নির্যাতন বন্ধ, গরিব-দুঃখীদের সহায়তা ও মানবিক কাজের জন্য হিলফুল ফুজুলের মতো কল্যাণধর্মী সংঘের প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় এ ধরনের সামাজিক সংগঠন গড়ে উঠলে সমাজ থেকে পাপাচার, অনৈতিকতা ও অনিরাপত্তা দূর হবে। পাশাপাশি সমাজের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর প্ল্যাটফরম তৈরি হবে। মহান আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।</p> <p><em>লেখক : আলেম ও কবি</em></p>