<p>রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি দরুদ-সালাম পাঠ করা একটি স্বতন্ত্র ইবাদত। তাঁর নাম শুনলে দরুদ পাঠ করা তাঁর প্রতি ভালোবাসার অন্যতম নিদর্শন। উম্মতের পঠিত দরুদ-সালাম তাঁর কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। তিনি শোনেন ও জবাব দেন।</p> <p><strong>দরুদ-সালাম পাঠের নির্দেশনা : </strong>নামাজ, রোজা, হজ, জাকাতসহ অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগির মতো নবী (সা.)-এর প্রতি দরুদ-সালাম পাঠ করার নির্দেশনা কোরআন-হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। মহান আল্লাহ রাসুলের প্রতি দরুদ-সালাম পাঠের নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ নবীর প্রতি রহমত নাজিল করেন এবং তাঁর ফেরেশতারাও নবীর জন্য রহমতের দোয়া করে। হে ঈমানদারগণ! তোমরাও নবীর প্রতি রহমতের দোয়া করো এবং তাকে যথাযথভাবে সালাম জানাও।’ (সুরা : আহযাব, আয়াত : ৫৬)</p> <p><strong>দরুদ-সালাম পাঠের ফজিলত :</strong> রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি দরুদ-সালাম পাঠের ফজিলত ও মর্যাদা অনেক বেশি। দুনিয়া ও পরকালে দরুদ-সালাম পাঠকারীর জন্য সৌভাগ্যের সব দুয়ার খুলে যায়। দরুদ-সালাম পাঠের বিভিন্ন মর্যাদার কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরুদ প্রেরণ করে, মহান আল্লাহ তার ওপর ১০ বার রহমত বর্ষণ করেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৪০৮)</p> <p><strong>দূরবর্তীদের দরুদ-সালাম পৌঁছানো হয় :</strong> রাসুল (সা.)-এর যেকোনো উম্মত, পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে তাঁর প্রতি দরুদ-সালাম পাঠ করলে ফেরেশতারা তা তাঁর কাছে পৌঁছে দেন। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মহান আল্লাহর নির্ধারিত একদল ফেরেশতা রয়েছেন, যাঁরা দুনিয়ায় ঘুরে বেড়ান এবং আমার উম্মতের সালাম আমার কাছে পৌঁছে দেন।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৯১৪)</p> <p>আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা তোমাদের ঘরগুলোকে কবরে পরিণত কোরো না। আর আমার কবরে উৎসব কোরো না। আমার ওপর দরুদ পাঠাও। কেননা তোমরা যেখানেই থাক, তোমাদের দরুদ আমার কাছে পৌঁছবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২০৪২; শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৩৮৬৫)</p> <p><strong>নিকটবর্তীদের দরুদ-সালাম শোনেন :</strong> নবী (সা.)-এর কবরের পাশ থেকে দরুদ-সালাম পেশ করলে তিনি তা শোনেন। মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করার মাধ্যমে নবীদের দুনিয়ার জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটেছে। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি তো মরণশীল এবং তারাও মরণশীল’ (সুরা : জুমার, আয়াত : ৩০);</p> <p>তবে মৃত্যুর পর তাঁরা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে এক বিশেষ জীবন লাভ করেন। নবীদের কবরের জীবনের বৈশিষ্ট্য হলো কবরে সাধারণ মুমিন ও শহীদদের জীবন থেকে নবীদের জীবন পূর্ণাঙ্গ ও উন্নত। এ ছাড়া দুনিয়ার জীবনের সঙ্গে কবরের জীবনের কিছু সাদৃশ্য রয়েছে। যেমন—কবরে তাঁদের দেহ সুরক্ষিত রয়েছে। (আবু দাউদ, হাদিস : ১০৪৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১৬১৬২)</p> <p>তাঁরা কবরে নামাজ আদায় করেন। (মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদিস : ৩৪২৫)</p> <p>মুসা (আ.) তাঁর কবরে স্বশরীরে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করার বিষয়টি নবী (সা.) উল্লেখ করেছেন। (মুসলিম, হাদিস : ২৩৪৭)</p> <p>আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁরা বিশেষ রিজিকপ্রাপ্ত। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৬৩৭)</p> <p>তাঁদের কবরের কাছে গিয়ে দরুদ-সালাম পেশ করলে তাঁরা তা সরাসরি শোনেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে আমার কবরের পাশে আমার ওপর দরুদ পেশ করে, আমি তা শুনি। আর যে দূরে থেকে আমার ওপর দরুদ পড়ে, তা আমার কাছে পৌঁছানো হয়।’ (ফাতহুল বারি, ৬/৬০৫, আল-কাওলুল বাদি, পৃষ্ঠা ১৬০)</p> <p><strong>রাসুলুল্লাহ (সা.) সালামের জবাব দেন :</strong> কেউ নবী (সা.)-কে সালাম দিলে তিনি উত্তর দেন। দিনরাত সর্বাবস্থায়ই কবরের কাছ থেকে ও দূর থেকে নবী (সা.)-এর ওপর সালাত ও সালাম অব্যাহত থাকে। সারাক্ষণ কেউ না কেউ কোনো না কোনোভাবে দরুদ-সালাম পেশ করতে থাকে, আর নবী (সা.) এর উত্তর দিতে থাকেন। আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যেকোনো ব্যক্তি যখন আমার ওপর সালাম পেশ করে, তখন আল্লাহ আমার মধ্যে আমার আত্মা ফিরিয়ে দেন। ফলে আমি তার সালামের জবাব দিই।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২০৪১)</p> <p>পরিশেষে বলা যায়, মহান আল্লাহ নবী (সা.)-কে বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছেন। তিনি উম্মতের প্রতি অত্যন্ত দয়ার্দ্র ও স্নেহশীল ছিলেন। উম্মতের কল্যাণে তিনি সদা ব্যাকুল থাকতেন। এই উম্মতের ওপর তাঁর অবারিত অনুগ্রহ রয়েছে। এর অন্যতম দাবি হলো—তাঁর প্রতি দরুদ-সালামের নাজরানা পেশ করা। তাঁর প্রতি পঠিত দরুদ-সালাম তাঁর কাছে পৌঁছে যায়।</p> <p><em>লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়</em></p> <p> </p>