<p> নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ও অ্যাডভোকেট চন্দন সরকারসহ সাত খুনের সঙ্গে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)-১১-এর সাবেক অধিনায়ক তারেক সাঈদ, কর্মকর্তা আরিফ এবং এম এম রানা ছাড়াও আরো ২১ সদস্য জড়িত ছিলেন বলে র‌্যাবের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। র‌্যাবের তদন্ত কমিটি গত রবিবার এই প্রতিবেদন অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে জমা দিয়েছে।<br /> তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, তারেক সাঈদসহ র‌্যাব-১১-এর তিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সরাসরি নারায়ণগঞ্জের নির্মম হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তবে র‌্যাব সদর দপ্তরের সঙ্গে এই খুনের কোনো সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায়নি।<br /> হত্যাকাণ্ডের পর হাইকোর্টের নির্দেশে র‌্যাব সদর দপ্তরের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। প্রায় সাত মাস তদন্তের পর হাইকোর্টে উপস্থাপনের জন্য অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে প্রতিবেদনটি দাখিল করা হয়।<br /> গত ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ থেকে কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারসহ সাতজন অপহৃত হন। ৩০ এপ্রিল তাঁদের মরদেহ শীতলক্ষ্যা নদীতে ভেসে ওঠে। এ ঘটনায় র‌্যাব-১১-এর সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠে। পরে ৫ মে হাইকোর্টের বিচারপতি রেজাউল হক ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র দাসের বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে র‌্যাব-১১-এর তিন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে র‌্যাব সদর দপ্তরকে এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। পরে ওই তিন কর্মকর্তাসহ অন্যরা গ্রেপ্তার হন।<br /> হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী, গত ৮ মে র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডিআইজি আফতাব উদ্দিনকে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে র‌্যাব। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন র‌্যাব-১০-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল খন্দকার গোলাম সারওয়ার, মেজর মোহাম্মদ সাদিক ও এসপি সাজ্জাদ।<br /> দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, তদন্তের সময় কমিটি শতাধিক র‌্যাব কর্মকর্তা, সাধারণ মানুষ, প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ সদস্য ও ঘটনার শিকার পরিবারের সদস্যসহ শতাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছে। তাদের জবানবন্দি নিয়েছে। অপহরণের স্থান, খুনের জায়গা, লাশ পানিতে ফেলাসহ সংশ্লিষ্ট সব ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা। বিভিন্ন আলামতও পরীক্ষা করা হয়।<br /> তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হত্যাকাণ্ডে যেসব র‌্যাব সদস্য অংশ নিয়েছেন তাঁরা নিজস্ব বুদ্ধি-বিবেচনায় কাজটি করেছেন। ১৬৪ ধারায় তাঁরা জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দি দিয়ে আসামিরা তাদের অপরাধ স্বীকার করলেও র‌্যাব সদর দপ্তরকে জড়িয়ে যেসব কথা বলা হয়েছে, তা ভিত্তিহীন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।<br /> তদন্ত প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, কাউন্সিলর নজরুল ও চন্দন সরকারসহ সাতজনকে অপহরণের সংবাদ পাওয়ার পর অপহৃতদের উদ্ধারে র‌্যাব সদর দপ্তরের কঠোর নির্দেশ ছিল। এমনকি অপহরণকারীদের খুঁজে বের করারও নির্দেশ ছিল সদর দপ্তর থেকে। কিন্তু এ ব্যাপারে র‌্যাব-১১-এর কর্মকর্তা ও সদস্যদের তেমন কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। এমনকি তাঁরা এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কিছু জানানওনি। এটাকে নির্দেশ অমান্য করা বলে প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়।<br /> তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জের আরেক কাউন্সিলর নূর হোসেনই নজরুল ইসলামকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন। আর সে কাজটি করতে তিনি র‌্যাবের কর্মকর্তাদের ব্যবহার করেন।</p>