<p> চট্টগ্রামে অপহরণের নাটক সাজিয়ে পুলিশ ও পরিবারকে বিভ্রান্তিতে ফেলায় এবার বাবার দায়ের করা মামলায় ছেলেকে জেলেহাজতে পাঠিয়েছেন আদালত। নগরীতে একাধিক সাজানো অপহরণের ঘটনার রহস্য উন্মোচন হলেও এত দিন পুলিশ মানবিক কারণে 'নাটক' সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়নি। কিন্তু সাজানো অপহরণের ঘটনা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাওয়ায় পুলিশ এখন কঠোর অবস্থান নিয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় প্রবাসী বাবা মোহাম্মদ হোসেনের দায়ের করা মামলায় গত বুধবার আদালতে পাঠানো হয় ছেলে হাফেজ মো. শাহেদ হোসেনকে। চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম সৈয়দ মাশফিকুল ইসলামের আদালতে হাজির করার পর শাহেদ ১৬৪ ধারার জবানবন্দি দেয়। পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।</p> <p> অপহরণের নাটক সাজানো ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এখন থেকে কঠোর প্রদক্ষেপ নেওয়া হবে জানিয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) বনজ কুমার মজুমদার বলেন, 'নগরীর ১৬ থানায় অতীতে এক ডজনের বেশি ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর ভিকটিমকে উদ্ধারের পর দেখা গেছে, সবই সাজানো নাটক। তাই এখন থেকে পুলিশ সাজানো নাটককারীদের বিরুদ্ধেই মামলা দেবে।'</p> <p> বনজ কুমার বলেন, 'পরিবার থেকে টাকা আদায়ের কৌশল হিসেবে অপহরণ নাটক সৃষ্টি করা হচ্ছে, কিন্তু কথিত অপহৃত ব্যক্তিকে উদ্ধার করতে গিয়ে পুলিশকে হিমশিম খেতে হচ্ছে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্বাভাবিক কার্যক্রম বিঘি্নত হচ্ছে। এ কারণেই এখন থেকে সংশ্লিষ্ট ভ্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'</p> <p> সর্বশেষ সাজানো অপহরণ নাটক সৃষ্টিকারী কিশোরের নাম মো. শাহেদ হোসেন (১৭)। তার বাবা মো. হোসেন কাতারপ্রবাসী ব্যবসায়ী। শাহেদ হোসেন নগরীর একটি মাদ্রাসা থেকে কোরআনে হাফেজ শিক্ষা শেষ করেছে এবং এখন সপ্তম শ্রেণিতে পড়ছে। এই শাহেদ হোসেনকে নিয়েই পুলিশকে সাত দিন ব্যস্ত সময় পার করতে হয়। অন্যদিকে ছেলে অপহরণের কথা শুনে কাতার থেকে দেশে ফিরে আসেন ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হোসেন। প্রথমে তিনি থানায় সাধারণ ডায়েরি ও পরে অপহরণ মামলা করেন। এই মামলায়ই পুলিশ অন্য চার আসামির সঙ্গে তাঁর ছেলেকেও আসামি করে আদালতে পাঠায়।</p> <p> সাজানো অপহরণ নাটকের পর পুলিশি অভিযানের মুখে নিজে থেকেই বাড়িতে ফিরে আসার পর শাহেদ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলে, 'আমি নিজেকে নিজে অপহরণ করেছি।' নিজকে নিজে অপহরণ করার ইচ্ছা হলো কেন?- এম প্রশ্নের জবাবে শাহেদ বলে, 'আমার বন্ধুরা আমার চেয়ে অনেক বেশি ভালো চলাফেরা করে। তারা দামি মোবাইল ফোন ব্যবহার করে, ডিজে পার্টিতে যায়, আমি যেতে পারি না। তাই বন্ধুদের সঙ্গে পরামর্শ করে নিজে আত্মগোপন করে বাবার কাছ থেকে টাকার নিতে চেয়েছিলাম।' কালের কণ্ঠের প্রশ্নের জবাবে শাহেদ হোসেন আরো জানায়, 'গত ১০ আগস্ট আমি, মিজান ও আসিফ পরিকল্পনা করি। একপর্যায়ে মিজান অপহরণের সঙ্গে যোগ দেওয়ার জন্য আরাফাত নামের একজনকে ঠিক করে। এরপর ১৩ আগস্ট আমি ঘর থেকে বের হয়ে তাদের সঙ্গে যোগ দিই। এরপর নগরীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে রাতে বহদ্দারহাটের একটি আবাসিক হোটেলে রাত কাটাই। পরদিন হাটহাজারী হয়ে ফটিকছড়ির একটি চা বাগানে চলে যাই। সেখানে যাওয়ার পর আরাফাত আমার মোবাইল ফোন থেকে আমার পরিবারের কাছে ফোন করে। আমি নিজেও অপহরণের বিষয়টি জানাই। এ সময় মুক্তিপণের জন্য ৫০ লাখ টাকা দাবি করা হয়। পরে তা কমে পাঁচ লাখ টাকায় নেমে আসে।' শাহেদ হোসেন আরো জানায়, 'চা বাগানে থাকতেই ব্লেড দিয়ে আমার পিঠ রক্তাক্ত করে আরাফাত। পরে মোবাইল ফোনে ছবি তুলে এমএমএসের মাধ্যমে আমাদের পরিবারের মোবাইল ফোনে পাঠানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু পাঠানো সম্ভব হয়নি।' ১৩ থেকে ১৬ আগস্ট পর্যন্ত তিন দিন চা বাগানে একটি নির্মাণাধীন বাড়িতে ছিলাম। এরই মধ্যে আরাফাত বলে, 'টাকা আদায়ের চেষ্টা সফল হবে না, তোমার পরিবার পুলিশকে খবর দিয়েছে। পুলিশ আমাদের খুঁজছে।' মুক্তিপণের টাকা পাওয়া গেলে অর্ধেক অর্ধেক ভাগাভাগি হতো বলে জানায় শাহেদ। বাড়ি ফিরে আসার বিষয়ে শাহেদ জানায়, 'আরাফাতরা সরে যাওয়ার পর আমি একটি চা দোকানে চাকরি করি। পরে মঙ্গলবার বিকেলে একটি অটোরিকশা নিয়ে বাড়িতে ফিরে আসি।'</p> <p> চান্দগাঁও থানার ওসি সৈয়দ আবদুর রউফ বলেন, 'আরাফাত পেশাদার অপরাধী। তার বিরুদ্ধে হাটহাজারী থানায় তিনটি মামলা আছে। টাকা না পেয়ে শাহেদকে হত্যা করা হতে পারে- এমন আশঙ্কা সৃষ্টির পর আমরা বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে উদ্ধার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখি।'</p> <p>  </p> <p>  </p>