<p>কারো কাছে ভাবি, কারো কাছে মা, কারো বা খালা, কারো বড় বোন। সমাজের সব স্তরের মানুষকে বেঁধে নিয়েছেন আত্মীয়তার বাঁধনে। নাম সালমা রহমান। ডাক নাম হ্যাপি। সদা হাস্যোজ্জ্বল এ সদালাপী নারীর নামের সঙ্গে কর্মেরও রয়েছে মিল। মানুষের কল্যাণে সুখ খুঁজে পান তিনি। পিরোজপুর জেলা সদরের বহু ছাত্রছাত্রী, যাদের পড়াশোনার সুযোগ ছিল না, আর্থিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে তাদের সেই সুযোগ করে দিয়েছেন তিনি। অসংখ্য নারীকে কর্মসংস্থান করে দিয়েছেন। স্বামীর অত্যাচারে বাধ্য হয়ে ঘরছাড়া নারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দিয়ে স্বাবলম্বী করার চেষ্টা করেছেন। চিকিৎসার অভাবে ধুঁকে ধুঁকে শেষ হওয়া রোগীদের সেবার সুযোগ করে দিয়েছেন আর্থিক সহায়তা দিয়ে। গোপনে বহু মধ্যবিত্ত পরিবারকে সহায়তা দেন, যা তাঁর নিতান্ত কাছের লোক ছাড়া জানে না। জেলা শহরে বেশ কয়েকটি সামাজিক সংগঠন রয়েছে, যা চলে তাঁর <img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/2017/Print-2017/March/08-3-2017/1-1_kalerkantho-2017-3-8.jpg" style="float:left; height:381px; margin-left:12px; margin-right:12px; width:255px" />আর্থিক সহায়তায়। দেশ আর দেশের মানুষের প্রতি অপার ভালোবাসার দায়ে তিনি এসব করেন। ১৯৬৭ সালের ১ অক্টোবর পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার আমরাজুড়ি গ্রামে সালমা রহমানের জন্ম। বাবা মৃত সৈয়দুর রহমান শরীফ, পেশায় তৎকালীন উপবিভাগীয় কার্যালয়ের (এসডিও) পেশকার ছিলেন। তাঁর ভাই ১৯৭১-এ দেশের জন্য শহীদ হয়েছেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরদিন বাবা স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দেন। মা কুলসুম বেগম, যিনি কিছুদিন আগেও এক মুঠো ভাত বেশি রান্না করতে বলতেন তাঁর শহীদ সন্তান ফিরে আসবেন বলে। এখন কাউকে তিনি চিনতে পারেন না। হ্যাপি বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ পিরোজপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক। এর আগে প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে জেলা শাখার সহ-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ভাইয়ের নামে গড়ে তুলেছেন শহীদ ওমর ফারুক শিশু শিক্ষালয়, অসহায় নারীদের জন্য গড়েছেন সূচনা ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন ও শহীদ ওমর ফারুক পাঠাগার। জেলা সদরের কুমারখালীর মিলি মৃধা বলেন, ‘একটি কন্যাসন্তান নিয়ে স্বামীর ঘর থেকে বাবার ঘরে ফিরে আসি। এমনিতে আমি হিন্দু সম্প্রদায়ের মেয়ে। তার ওপর স্বামীর ঘর ছেড়ে জীবনের লড়াইয়ে চারদিকে যখন অন্ধকার দেখছিলাম, তখন হ্যাপি ভাবি সাহায্যের হাত বাড়ালেন। ঢাকায় একটি বিউটি পার্লার থেকে ছয় মাসের প্রশিক্ষণ নেওয়ার সম্পূর্ণ খরচ দিলেন। পিরোজপুরে আসার পর তাঁরই সহযোগিতায় একটি বিউটি পার্লার করলাম। আমার মেয়েটিকে মানুষ করার জন্য কারো কাছে আর হাত পাততে হয়নি। মেয়ে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। হ্যাপি ভাবি আমার জীবনে দেবদূতের মতো।’হ্যাপির স্বামী মজিবুর রহমান খালেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। নানা লোক তাঁর কাছে আসে। স্বামী ব্যস্ত থাকলে তিনি চেষ্টা করেন তাদের কথা শুনতে। তাঁদের দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে ব্যবসা করেন। ছোট ছেলে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেন অস্ট্রেলিয়ায়। তিনি সন্তানদেরও মানুষের কল্যাণে কাজ করতে উৎসাহিত করেন। হ্যাপি বলেন, ‘মানুষের দুঃখ-কষ্ট দেখলে ভেতর থেকে তাগিদ অনুভব করি, কিছু করতে পারলে মন আনন্দে ভরে ওঠে।’</p> <p>পিরোজপুর মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা সালমা জাহান বলেন, ‘নারীর অর্থনৈতিক মুক্তি এবং নারীর ওপর সহিংসতা রোধে সালমা রহমান হ্যাপি একটি প্রতিবাদী কণ্ঠ।’ পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ খায়রুল আলম শেখ বলেন, ‘মানুষের কল্যাণে তাঁর অবদান অনুকরণীয়।’</p>