<p>রাজশাহী নগরীর ব্যস্ততম সাহেববাজার এলাকার চারদিকে রাস্তাজুড়ে শুধুই ইজি বাইক ও ব্যাটারিচালিত ছোট রিকশার সারি। এ দুটি যানের চাপে রাস্তায় পা ফেলার জায়গা নেই। পূর্বে আলুপট্টি থেকে পশ্চিমে রাজশাহী কলেজ মুসলিম হোস্টেল পর্যন্ত রাস্তা যানজটে স্থবির। আটকা পড়ে রোদে পুড়ছে পথচারী।</p> <p>গতকাল সোমবার সকাল ১১টার চিত্র এটি। তবে নির্দিষ্ট সময় বেঁধে নয়, বলা যায় দিন-রাতের বেশির ভাগ সময় এমন জট লেগে থাকছে রাজশাহী নগরীর <img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/2017/Print-2017/March/07-03-2017/News/kalerkantho-07-03-2017-13.jpg" style="float:left; height:191px; margin:12px; width:98px" />ব্যস্ততম সড়কগুলোতে। এর মধ্যে সাহেববাজার, রেলগেট, লক্ষ্মীপুর, রাজশাহী কলেজ গেট, সোনাদীঘির মোড় এলাকার অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। জনবহুল এসব এলাকায় কাকডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত লেগে থাকছে ইজিবাইকের জট। সেই জটে পড়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ পথচারীসহ স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থীদের। আর তা খুলতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে ট্রাফিক পুলিশকে।</p> <p>রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) ও মহানগর পুলিশ মাঝে উদ্যোগ নিয়েছিল ব্যাটারিচালিত এসব অটোরিকশা বন্ধের। কিন্তু শ্রমিক নেতাদের চাপে সেই সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটতে বাধ্য হয় দুটি সংস্থাই। এতে করে দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে ব্যাটারিচালিত ইজি বাইক ও রিকশা। সাহেববাজার এলাকার ব্যবসায়ী এরফান আলী বলেন, ‘অটোরিকশার চাপে দোকানের সামনে কোনো খদ্দেরও সহজে দাঁড়াতে পারে না। সব সময় মনে হয়, দোকানের মধ্যেই বুঝি ঢুকে পড়বে অটোরিকশাগুলো।’ রাজশাহী কলেজের ছাত্রী মৌ বিপা বলেন, ‘কলেজ থেকে বের হলেই যেন অটোরিকশার জ্যামে পড়তে হয়। ঠিকমতো পা ফেলারও সুযোগ পাওয়া যায় না। বাজারে কেনাকাটা করতে গিয়েও অটোরিকশার চাপে দুর্ভোগে পড়তে হয়।’ </p> <p>অনুসন্ধানে জানা গেছে, ব্যাটারিচালিত এসব অটোরিকশা দুটি শ্রেণিতে ভাগ হয়ে গোটা নগরী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। নগরীতে সব মিলিয়ে কমপক্ষে ৪০ হাজার অটোরিকশা ও রিকশা চলাচল করছে। এর মধ্যে ১৫ হাজার ইজি বাইক এবং প্রায় ২৫ হাজার ব্যাটারিচালিত রিকশা। এগুলোর মধ্যে মাত্র ১৪ হাজার ২৬২টি অটোরিকশার নিবন্ধন দিয়েছে সিটি করপোরেশন। অথচ নগরীতে চলাচলকারী সব অটোরিকশাতেই লাগানো আছে সিটি করপোরেশনের নাম্বার প্লেট।</p> <p>রাসিক সূত্র মতে, ২০১১ সাল থেকে রাজশাহীতে ইজি বাইক চলাচল শুরু হয়। সিটি করপোরেশনের দেওয়া নিবন্ধনের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে সেটি গিয়ে দাঁড়িয়েছে আট হাজার ৮৬২টিতে। সেই হিসাব অনুযায়ী, অনিবন্ধিত ইজি বাইকের সংখ্যা প্রায় সাত হাজার। আর ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল শুরু হয় ২০১৪ সালে। ক্রমাগত বেড়ে তা দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৫ হাজারে। অথচ ২০১৬ সালের জানুয়ারির মধ্যে রাসিক থেকে এ ধরনের রিকশার নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে মাত্র পাঁচ হাজার ৪০০টির। এরপর যত রিকশা শহরে ঢুকছে, তার সবই চলছে নিবন্ধন ছাড়া। নতুন এসব রিকশারও নিবন্ধন নম্বর আছে। যদিও খাতা-কলমে গিয়ে রাসিকের কোথাও এসংক্রান্ত তথ্য খুুঁজে পাওয়া যায়নি।</p> <p>অনুসন্ধানে জানা গেছে, আগের দেওয়া লাইসেন্স নম্বরগুলোই একাধিক রিকশায় বসিয়ে নিবন্ধন ফি হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আর এই কাজের সঙ্গে জড়িত রয়েছে রাসিকের একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী। সূত্র মতে, ইজি বাইকের নিবন্ধনের জন্য রাসিকের নামে আদায় করা হয় পাঁচ হাজার টাকা। আর অটোরিকশার নিবন্ধনের জন্য দুই হাজার টাকা। অন্যদিকে নবায়নের জন্য ইজি বাইক থেকে আদায় করা হয় দুই হাজার টাকা এবং রিকশা থেকে ৫০০ টাকা করে। </p> <p>একাধিক ইজি বাইকচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সিটি করপোরেশন থেকে লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ থাকলেও আগের নম্বর বসিয়ে নতুন করে অটোরিকশা ঠিকই নামছে রাস্তায়। এই কাজে নগর সংস্থার নিবন্ধন শাখার একাধিক কর্মকর্তা জড়িত।</p> <p>এদিকে গত কয়েক বছরে অটোরিকশা দুর্ঘটনায় রাজশাহী নগরীতেই কমপক্ষে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে একজন এসআইও মারা গেছেন অটোরিকশার ধাক্কায়। আবার হাসপাতালে রোগী দেখতে এসে হাসপাতালের প্রধান ফটকের সামনেও অটোরিকশার ধাক্কায় প্রাণ হারাতে হয়েছে পথচারীকে। সব মিলিয়ে অটোরিকশার দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ নগরবাসী। </p> <p>জানতে চাইলে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা আবু সালেহ বলেন, ‘ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও রিকশার জন্য নতুন করে আর নিবন্ধন দেওয়া হচ্ছে না। তার পরও নিবন্ধনবিহীন কিছু গাড়ি চলে নগরীতে। আমরা সেগুলোর বিরুদ্ধে অভিযানও চালাই।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জাল নিবন্ধনের বিরুদ্ধে আমরা নিরাপত্তামূলক কোড ব্যবহার করি। কাজেই জাল নিবন্ধন থাকার কথা নয়। তার পরও আমরা খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।’</p>