<article> <p>একাত্তরের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণ দিলেন। কিছুদিন পরই ১৭ মার্চ তাঁর জন্মদিন। তত দিনে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত বঙ্গবন্ধুর হাতে সেদিনই ভাষণের একটি গ্রামোফোন রেকর্ড তুলে দেন ঢাকা রেকর্ডের অংশীদার এম আবুল খায়ের। পাকিস্তানি স্বৈরশাসকের বিধি-নিষেধের কারণে ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ বেতারে প্রচারিত হয়নি।</p> </article> <article>কিন্তু পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম করপোরেশনের চেয়ারম্যান এ এইচ এম সালাহউদ্দিন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আবুল খায়ের সেই ভাষণের অডিও রেকর্ড ও ভিডিও ধারণ করেছিলেন। জন্মদিনে ভাষণটির রেকর্ড উপহার হিসেবে পেয়ে বঙ্গবন্ধু তাই আপ্লুত হয়েছিলেন। <p>সেকালের গান শোনার যন্ত্র গ্রামোফোনে ব্যবহৃত রেকর্ডের এক বিশেষ প্রদর্শনীতে ঐতিহাসিক ঘটনাটির উল্লেখ পাওয়া গেল গতকাল মঙ্গলবার। গ্রামোফোন যন্ত্রটি তখনকার বাঙালি সমাজে পরিচিতি পেয়েছিল ‘কলের গান’ হিসেবে।</p> </article> <article>এর প্রায় দেড় শ বছরের বিভিন্ন নিদর্শন নিয়ে জাতীয় জাদুঘরে শুরু হয়েছে ‘কলের গান : সেকাল-একাল’ শীর্ষক এই প্রদর্শনী। মূলত দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গানের রেকর্ড নিয়ে এই প্রদর্শনী। পাশাপাশি এতে জায়গা পেয়েছে দুই বাংলার নাটক, পালাগান, যাত্রার রেকর্ডও। বিশ্ববিখ্যাত শিল্পীদের পাশাপাশি আছে বাংলার মানুষের লোকজীবন থেকে উঠে আসা নানা ধরনের সংগীত। আছে ইতিহাসের বহু উপকরণ।</article> <article> <p>জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী প্রদর্শনকক্ষে এই প্রদর্শনী শুরু হয়েছে শনিবার সন্ধ্যায়। এতে রয়েছে স্থপতি, লেখক ও জাদুঘর পরিচালনা পর্ষদের সদস্য শামীম আমিনুর রহমানের একক ব্যক্তিগত সংগ্রহ। জাতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষ এবং সংগ্রাহক যৌথভাবে এই প্রদর্শনীর আয়োজক।</p> <p>আদি যুগের গ্রামোফোন থেকে সংগীতযন্ত্রের বিবর্তনের নমুনা রয়েছে প্রদর্শনীটিতে। হরেক রকম রেডিও ও টেলিভিশনের সংগ্রহটিও বিশেষ করে নবীন বয়সীদের চমকে দেবে। প্রদর্শনীর সব নমুনা সচল। সাজিয়ে রাখা এসব নমুনা আর দেয়ালজুড়ে সাঁটা বিভিন্ন পোস্টার তরুণদের দিচ্ছে ইতিহাস ভ্রমণের সুযোগ আর প্রবীণদের করছে স্মৃতিকাতর।</p> </article> <article> <p>গতকাল বিকেলে প্রদর্শনী উপভোগ করতে আসা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সৈয়দ আনোয়ার হামিদ বললেন, ‘এই কলের গানের সূত্রেই রবীন্দ্রনাথের গান ছড়িয়ে পড়েছিল। কলের গানের মাধ্যমেই কাজী নজরুল ও আব্বাসউদ্দীনের গান বাঙালি মুসলমান সমাজকে সংগীতে টেনে এনেছিল। তৈরি হয়েছিল নানামাতৃক প্রভাব।’</p> <p>১৮৭৭ সালে মার্কিন বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন প্রথম আবিষ্কার করেন শব্দ ধারণ করার যন্ত্র ‘ফোনোগ্রাফ’। এক দশক পরে জার্মানির বিজ্ঞানী এমিল বার্লিনার ১৮৮৭ সালে যন্ত্রটিকে আরো উন্নত করে নাম দেন গ্রামোফোন। এডিসনের ফোনোগ্রাফে শব্দ ধারণ করা হতো ধাতব চোঙের ওপর। আর গ্রামোফোনে শব্দ ধারণ করা হলো খুব পাতলা চাকতির ওপর। শিল্পীর কণ্ঠের গান গ্রামোফোনে রেকর্ডের মাধ্যমে ছড়িয়ে যায় দেশজুড়ে সাধারণ শ্রোতার কাছে। অনেক দিন পর্যন্ত অবশ্য বেশ সচ্ছল ও সংগীতপিয়াসী সংস্কৃতিবান পরিবারেই এই যন্ত্রের দেখা মিলত।</p> <p>শামীম আমিনুর রহমানের সংগ্রহে গত শতকের একেবারে গোড়ার দিকে ধারণ করা গ্রামোফোন রেকর্ডও আছে। কালের কণ্ঠকে তিনি জানান, প্রদর্শনীতে তিনি মূলত বাংলা গান ও গ্রামোফোনের সেকাল-একাল দেখাতে চেয়েছেন। এ জন্য দুই বাংলার সৃষ্টিই বেশি জায়গা পেয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদেরও যে গর্ব করার মতো ঐতিহ্য ও সৃষ্টি রয়েছে, তাই দেখাতে চেয়েছি।’</p> <p>শামীম আমিনুর রহমান কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন ঢাকা রেকর্ডের এ এইচ এম সালাহউদ্দিনের প্রতি। কলকাতায় গ্রামোফোনে প্রথম গান রেকর্ড হয়েছিল ১৯০২ সালে। শিল্পী ছিলেন গওহর জান। আরো পরে এসে ঢাকায় রেকর্ডিং শুরু করেন এ এইচ এম সালাহউদ্দিন। শামীম আমিনুর রহমান বলেন, ‘এ দেশের মানুষ বিয়ের অনুষ্ঠানে হিন্দি গান বাজায়, বাংলা গান নাকি খুঁজে পায় না। অথচ ঢাকা রেকর্ডের সালাহউদ্দিন সাহেব প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে গ্রামীণ শিল্পীদের এনে বাংলা লোকগানের অমূল্য সম্পদ বিয়ের গীত রেকর্ড করিয়েছিলেন। এসব গানের আবেদন এখনো রয়েছে। আধুনিক বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করে নতুনভাবে গানগুলো রেকর্ড করলে অসামান্য কাজ হবে।’</p> <p>‘কলের গান : সেকাল একাল’ প্রদর্শনী চলবে আগামী ১২ মে পর্যন্ত। শনি থেকে বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৫টা এবং শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সবার জন্য খোলা থাকবে। বন্ধ থাকবে বৃহস্পতিবার।</p> </article>