<p>ট্রেনে কাটা পড়ে দুই পা হারালেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র শফিকুল আলম শান্তর (২২) জীবন বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসকরা। দুর্ঘটনায় পর অ্যাম্বুল্যান্সে ঢাকায় নেওয়ার পথে যানজটে আটকা পড়ায় হেলিকপ্টারে করে তাঁকে ঢাকায় জাতীয় অর্থপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (নিটোর) নেওয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকেল ৫টায় সেখানে চিকিৎসকরা তাঁর জরুরি অপারেশন করেন।</p> <p>অপারেশন শেষে নিটোর পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবদুল গনি মোল্লা কালের কণ্ঠকে বলেন, অপারেশন সফল হয়েছে। তবে শান্ত এখনো আশঙ্কামুক্ত নয়। তাঁকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। ৪৮ ঘণ্টা পর পরিস্থিতি বোঝা যাবে।</p> <p>শীতে মা-বাবার সঙ্গে সময় কাটাতে সাপ্তাহিক ছুটিতে সিরাজগঞ্জে নিজের বাড়িতে এসেছিলেন শান্ত। কিন্তু অপ্রত্যাশিত এই দুর্ঘটনাটি তাঁর পুরো পরিবারকে ওলট-পালট করে দেয়। বিষণ্ন করে তোলে এলাকাবাসীকেও।</p> <p>পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দুই দিন কাটিয়ে গতকাল সোমবার ঢাকায় ফিরে যাচ্ছিলেন শান্ত। গতকাল ভোর ৬টায় সিরাজগঞ্জ বাজার স্টেশনে ট্রেনে ওঠার চেষ্টা করেন তিনি। সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছেড়ে যাওয়ায় শান্ত অটোরিকশায় চেপে সাত কিলোমিটার দূরে শহীদ এম. মনসুর আলী স্টেশনে পৌঁছান। ততক্ষণে ট্রেন চলতে শুরু করলে চলন্ত ট্রেনে উঠতে গিয়ে পা ফসকে ট্রেনের নিচে পড়ে যান শান্ত।</p> <p>প্রত্যক্ষদর্শী রহমত আলী জানান, ট্রেনের হ্যান্ডেল কুয়াশায় ভিজে থাকায় হাত পিছলে শান্ত পড়ে গিয়ে দুঃখজনক ঘটনাটি ঘটে। অপ্রত্যাশিত এ ঘটনায় শান্তর মা সাহিদা খাতুন বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। শান্তর বড় ভাই শাহ আলম লিটন জানান, ছোটবেলা থেকেই শান্ত অত্যন্ত মেধাবী। বর্তমানে সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। শান্তর বাবা স্কুলশিক্ষক শাহজাহান আলী মাস্টার কিছুতেই এই অপ্রত্যাশিত ঘটনাটি মানতে পারছেন না।</p> <p>সিরাজগঞ্জ রেলওয়ে জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইদুর রহমান জানান, সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেসে ঢাকায় যাওয়ার জন্য শান্ত গতকাল সকালে শহীদ এম. মনসুর আলী স্টেশনে যায়। ততক্ষণে ট্রেনটি চলতে শুরু করলে তাতে উঠতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে যায় সে। এতে তাঁর দুই পা কাটা পড়ে। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।</p> <p>সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. শামীমুল ইসলাম জানান, আহত ছাত্রের দুই পায়ের অবস্থা খুবই নাজুক। ফলে দ্রুত তাকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।</p> <p>শান্তর চাচা মনিরুজ্জামান জানান, ডাক্তাররা সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতাল থেকে শান্তকে দ্রুত ঢাকায় নিয়ে যেতে বললে আমরা অ্যাম্বুল্যান্সে করে তাকে নিয়ে ঢাকায় রওনা হই। বঙ্গবন্ধু সেতু পার হয়ে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গায় তীব্র যানজটে পড়লে শেষে যমুনা রিসোর্ট থেকে ভাড়া করা হেলিকপ্টারে তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়। গতকাল বিকেলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে শান্তর বাবা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এই মাত্র শান্তকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়েছে। আপনারা সবাই আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন।’</p>