<p>জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারে কিছু নতুনত্ব আছে। যেমন— ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করার কথা বলা হয়েছে। মুক্ত মতামত প্রকাশে এটি বাধা তৈরি করেছে বলে সমাজে জনমত রয়েছে। গণমাধ্যম ও সাধারণ মানুষের মতামত প্রকাশে বাধা সৃষ্টিকারী এই আইন বাতিল করার অঙ্গীকার একটি ভালো দিক।</p> <p>বিচার বিভাগের দিকে নজর দিলে আমরা দেখতে পাই তৃণমূল পর্যায়ে বা উপজেলা পর্যায়ে বিচারপ্রার্থীরা হয়রানির শিকার হয়। তারা জেলা থেকে শেষ পর্যন্ত উচ্চ আদালতে ছোটে। আমাদের প্রস্তাব ছিল উপজেলা পর্যায়ে নিম্ন আদালত সম্প্রসারণ করার। উপজেলা পর্যায়ে নিম্ন আদালত সম্প্রসারণ না হওয়ায় প্রশাসনে ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে পুলিশের প্রাধান্য স্থাপিত হয়েছে। একেকটি উপজেলায় গড়ে দুই থেকে চার লাখ মানুষের বসবাস। তাদের জেলায় বা আরো দূরে যেতে হয়। এখানে পুলিশের প্রাধান্য থাকায় সাধারণ মানুষ পুলিশের মাধ্যমে হয়রানির শিকার হয়। বিচারপ্রার্থী সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ থেকে মুক্তির জন্য নিম্ন আদালতের সম্প্রসারণ বিষয়কে ইশতেহারে গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল।</p> <p>তবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনী ইশতেহারে স্থানীয় সরকারে বরাদ্দের বিষয়ে আমাদের প্রস্তাবটি গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমানে স্থানীয় সরকারে নির্দিষ্ট অর্থায়ন নেই। রাজনৈতিক ইচ্ছায় যার যেখানে যেমন খুশি বরাদ্দ দেওয়া হয়। যেখানে যতটুকু দরকার, সেখানে ততটুকু বরাদ্দ মেলে না। এই বরাদ্দে বৈষম্য বিরাজ করছে। বিরাজ করছে ভারসাম্যহীনতা। স্থানীয় সরকারে বরাদ্দের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনো ফর্মুলা নেই। ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারে আমাদের প্রস্তাব আমলে নিয়ে পাঁচ বছরে ৩০ শতাংশ বরাদ্দের বিষয়ে অঙ্গীকার করা হয়েছে। এটি ইতিবাচক। এতে জাতীয় সংসদে আইন প্রণয়নসহ সংশ্লিষ্ট কর্মসূচিতে ব্যাঘাত ঘটিয়ে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের আর স্থানীয় সরকারের বিষয়ে বেশি সময় দিতে হবে না। তাতে উন্নয়নে শৃঙ্খলা আসবে।</p> <p>সামাজিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বয়স্ক পেনশন চালু করা উচিত। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তা পেয়ে থাকেন। আমরা প্রস্তাব করি বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে বয়স্ক পেনশন চালুর ব্যবস্থা করা উচিত। বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সরকারকে আয়কর দিয়ে জীবনের শেষ পর্যায়ে পেনশন সুবিধা পান না। এটা বৈষম্য। বেসরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে প্রথমে আয়কর প্রদানকারীদের মধ্যে তা চালু করে পরে তার সম্প্রসারণ ঘটাতে হবে। তাতে রাজস্বদাতা বাড়বে।</p> <p>জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনী ইশতেহারে ‘পর পর দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকা যাবে না’ এই অঙ্গীকারটি ইতিবাচক। এ ক্ষেত্রে এই প্রস্তাবের সঙ্গে সম্পূরক হিসেবে জাতীয় সংসদকে দুই কক্ষবিশিষ্ট করতে হবে। উচ্চকক্ষে থাকবেন অভিজ্ঞরা। তাতে অভিজ্ঞতার আলোয় জাতীয় সংসদের পথচলা মসৃণ ও গতিশীল হবে।</p>