<p>হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমীর মাওলামা আব্দুল আউয়াল বলেছেন, নারায়ণগঞ্জের পতিতালয় উৎখাত করার জন্য বহুদিন পরিকল্পনা ও আন্দোলন করে শামীম ওসমান সাহেবের সহযোগিতায় এটা করতে পেরেছিলাম। শামীম ওসমান এখনো আমাকে দেখলে এটা বলেন। </p> <p>তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও এমপি শামীম ওসমানের সহায়তায় আমরা নারায়ণগঞ্জের জমিন থেকে এই অভিশাপ উৎখাত করেছি। এখন দেখছি এখানে মিনি পতিতালয় শুরু হয়ে গেছে। এখানে পার্কের ভেতরে রেস্টুরেন্টের নামে নারী-পুরুষদের অবাধে যে মেলামেশা শুরু হচ্ছে। আশেপাশের পাঁচ ছয়টা মসজিদের মাঝে এটা। নারায়ণগঞ্জবাসী এটা সহ্য করবে না। যিনা ব্যভিচার ও পতিতাপল্লী এখানে চলবে আর আমরা এখানে বসে থাকব এটা হতে পারে না।</p> <p>শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) বিকেলে শহরের ডিআইটি মসজজিদের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন তিনি।</p> <p>তিনি আরো বলেন, প্রথমে এখানে করলেন পার্ক। সেখানে করলেন চারুকলা। এখন এখানে ব্যবসায়ের নামে পতিতাবৃত্তি চালু করছেন। নারায়ণগঞ্জবাসী এগুলোর খবর রাখে। মেয়র মহোদয়ের পাওয়ার আছে তিনি খেলবেন। আমরাও আল্লাহর পাওয়ারে খেলব। আমাদের হেফাজতি বলে অবজ্ঞা করছেন। আপনার প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বারবার আমরা সাক্ষাৎ ও কথাবার্তা বলছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের অনেক সম্মান দিয়েছেন। তাদের তুমি সন্ত্রাসী বলছ। আমরা সন্ত্রাসী হলে তুমি আইভী রাস্তায় চলতে পারতা না।</p> <p>তিনি বলেন, গত ১০ ফেব্রুয়ারি ডিআইটি মসজিদ থেকে কিছু মুসল্লিরা রাসেল পার্কের ভেতরে গিয়ে নাকি পার্ক লাউঞ্জে ৯৫ সালের এসএসসি ব্যাচের লোকজন একত্রিত ছিল, তারা সকাল থেকে গানবাজনা করছিল। সকাল থেকে আমার একটা প্রোগ্রাম ছিল কচুয়া। সেখানে আলোচনার মাঝখানে একজন খাদেম বলল চারুকলার ভেতর বিকট আওয়াজে গানবাজনা চলছে। পাশের মসজিদে জামাত ছিল ৮টায় আমাদের জামাত সোয়া ৮টায়। তারা ভেবেছিল পাশের মসজিদে নামাজ শেষ, কিন্তু আমাদের শেষ হয়নি। আওয়াজটা এত বেশি ছিল যে নামাজে ব্যাঘাত ঘটছিল। তখন আমাদের এখান থেকে কিছু মুসল্লি গিয়েছিল, আশেপাশের মসজিদ থেকেও এসে তারা নিষেধ করেছে। কিছু ভাঙচুরও হয়েছিল সেটা শুনেছি। মাওলানা ফেরদৌস (নারায়ণগঞ্জ মহানগর হেফাজতে ইসলামের সভাপতি) সেসময় সুনামগঞ্জ মাহফিলে। পরের দিন সিটি করপোরেশনের কিছু লোক এসে তথ্য নিলেন। সভাপতি বলেছিলেন আমি সেদিন ছিলাম। আমি ৯৯৯ ট্রিপল নাইনে কল দিয়েছিলাম। সেখানে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আমরা এ তথ্যগুলো দিয়ে দিয়েছি। এখানে উচ্ছৃঙ্খল কেউ ছিল না, মুসল্লিরাই ছিল।</p> <p>অনেক যুবক আছে যারা আল্লাহ ও তার রাসূলকে নিয়ে কটাক্ষ হলে এমন অশ্লীল কার্যকলাপ দেখলে প্রতিবাদ করতে দেরি করে না। এটাই আমাদের দেশের কালচার। সকলে এ ব্যাপারটা মিমাংসা করে দিয়েছে। এরপর মেয়রের ভাই উজ্জ্বল আমাদের কমিটির এক লোককে পার্কে ডেকে নিয়ে গিয়ে বলল হুজুরকে জুমার আলোচনায় এ বিষয় নিয়ে কিছু বলতে না করবেন, এটা নিয়ে যেন আর বাড়াবাড়ি না হয়। পরের দিন তারা ক্ষমাও চেয়েছেন এই অশালীন কাজের জন্য। সেটাও পেপারে এসেছিল। ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত এ নিয়ে কোনো কথা হয়নি। বুধবার দেখলাম মাওলানা ফেরদৌসকে নিয়ে তারা মামলা করেছেন। এটা দেখে খুব কষ্ট পেয়েছি। তারা আমাদের ঘুম পাড়িয়ে পরিকল্পনা করেছে মামলার মাধ্যমে আমাদের শায়েস্তা করবেন। মেয়র আমাদের এক লোককে বলেছে রোজার পরে আমি মামলা করব। এখানে কারা এগুলো করেছে আমি দেখিয়ে দেব। </p> <p>মসজিদের দোকানও নাকি তারা ভেঙে দেবে। এখানে নাকি সন্ত্রাসী থাকে। তাদের আমরা লালন পালন করছি। আমি এগুলো শুনে বলেছি তার মেয়র হওয়ার পর এমন ছোটখাটো বিষয় নিয়ে কথা বলা উচিত হয়নি।</p> <p>তিনি এখানকার স্থানীয় মানুষ। তিনি প্রায়ই অনেককে কটাক্ষ করে কথা বলেন। আর ফেরদৌসের সঙ্গে তার আগে থেকেই মনোমালিন্য আছে। সে বিষয়গুলোকে সামনে এনে তাকে আসামি বানালেন। তার বুঝা দরকার ছিল ফেরদৌস কোথায় ছিল। তারা বলেছে, ফেরদৌসের পরিকল্পনা, নির্দেশনা ও সহযোগিতায় এটা হয়েছে। এটা আমাদের আগের পরিকল্পনা হয়ে থাকলে চারুকলার ভন্ডামি হতে পারত না। এখন আমাদের পরিকল্পনা করার সময় এসেছে।</p> <p>তিনবারের মেয়র হয়ে আইভী তুমি অহংকারী হয়ে গেছ। ডিআইটি মসজিদ তোমার কীসের মাথাব্যথা। এ মসজিদ ভাঙার চেষ্টা হয়েছিল। আমরা প্রতিবাদ করেছিলাম। সে মামলায় আমাকে আসামি করা হয়েছিল। এখানে হাজার হাজার মুসল্লি আসে এটা আইভীর মাথাব্যথা।</p> <p>তিনি আরো বলেন, এদেশে হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ খ্রিস্টান সবাই থাকে। তুমি সবার মেয়র। তুমি তোমার আকিদা নিয়ে থাকো আমরা আমাদের আকিদা নিয়ে থাকি। কবরে গিয়ে জবাব দিবা। তুমি চাও সকল মসজিদগুলোতে বিদাতি প্রথা চালু করতে। তুমি তাদের সহযোগিতা করো, আমাদের নিয়ে মাথা ঘামানোর চেষ্টা করো না। আমাদের মান ইজ্জতে হামলা হয়েছে, আমরাও মামলা করব। কোর্ট তোমাদের বাবার না। মানুষ বুঝবে কারা চোর ও কারা ভালো মানুষ। তোমরা কোটি টাকা চুরি করো নিজেরা চুরি করে আমাদের চোর বলে ডাকছো। সাবধান হয়ে যাও।</p> <p>এর আগে গত ১০ ফেরুয়ারি নারায়ণগঞ্জের শেখ রাসেল পার্কের অবস্থিত পার্কল্যান্ড রেস্তোরাঁর সামনে এসএসসি-৯৫ ব্যাচের একটি অনুষ্ঠানে নামাজের সময় উচ্চ শব্দে গান চলাকালীন রাত সাড়ে ৮টার দিকে সেখানে একদল এলাকাবাসী বাধা দেয় প্রতিবাদ করে এবং ভাঙচুর চালায়। সেই ঘটনার প্রায় দুই মাস পর গত ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের আইন কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বাদি হয়ে নারায়ণগঞ্জ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হেফাজতে ইসলামের নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সভাপতি ফেরদৌসুর রহমানকে প্রধান আসামিসহ শতাধিক অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠানের সাউন্ড সিস্টেম পরিচালনাকারীকে মারধরসহ ১০ লাখ টাকার মালপত্র ক্ষতি ও ৩ লাখ টাকার জিনিস চুরির অভিযোগ আনা হয়েছে।</p>