ঢাকা, রবিবার ১৩ জুলাই ২০২৫
২৮ আষাঢ় ১৪৩২, ১৭ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, রবিবার ১৩ জুলাই ২০২৫
২৮ আষাঢ় ১৪৩২, ১৭ মহররম ১৪৪৭

এলো উইন্ডোজ ১১

  • বিশ্বের সব পিসিতে ব্যবহৃত অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজের নতুন সংস্করণ ঘোষণা করেছে মাইক্রোসফট। এই বছরের শেষের দিকে ব্যবহারকারীদের জন্য ‘উইন্ডোজ ১০’-এর পরবর্তী প্রজন্ম ‘উইন্ডোজ ১১’ প্রকাশ করবে প্রতিষ্ঠানটি। এরই মধ্যে একটি পরীক্ষামূলক সংস্করণ বেশ কিছু ওয়েবসাইটে অবৈধভাবে পাওয়া গেলেও মাইক্রোসফটের দাবি, সেটার সঙ্গে মূল সংস্করণের মিল তেমন একটা নেই। বিস্তারিত জানাচ্ছেন এস এম তাহমিদ
অন্যান্য
অন্যান্য
শেয়ার
এলো উইন্ডোজ ১১

নতুন অপারেটিং সিস্টেমে ‘উইন্ডোজ ১১’ থাকছে বেশ কিছু নতুন ফিচার। তার চেয়েও বড় কথা বেশ কিছু পুরনো ফিচার বাদ পড়তে যাচ্ছে, যা গত ২০ বছরেও মাইক্রোসফট পুরোপুরি বাতিল করেনি। নতুনের পথে এগোতে হলে পুরনোকে ঝেড়ে ফেলতে হয়, সেটা ম্যাকওএসের মাধ্যমে অ্যাপল প্রমাণ করার পর মাইক্রোসফটও হাঁটছে সে পথেই।

 

যেভাবে পাওয়া যাবে উইন্ডোজ ১১

‘উইন্ডোজ ১০’-এর মতো ‘উইন্ডোজ ১১’ও ব্যবহারকারীদের জন্য একেবারে বিনা মূল্যে দেবে মাইক্রোসফট।

আগামী হেমন্তে অর্থাৎ অক্টোবরের শেষে বা নভেম্বরে উইন্ডোজ আপডেটের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের পিসিতে পৌঁছে যাবে উইন্ডোজ ১১। এর জন্য বাড়তি কিছু করতে হবে না। তবে ধারণা করা হচ্ছে, চাইলে ব্যবহারকারীরা আগে থেকেই আপডেট অপশন থেকে ১১ আপগ্রেড বন্ধ করে রাখতে পারবেন। নতুন অপারেটিং সিস্টেম শুরুতেই ব্যবহার না করাই ভালো, বিশেষ করে যদি সে পিসি হয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য।
আলাদা করে মাইক্রোসফট থেকে সরাসরি লাইসেন্স কিনে ডাউনলোড করেও ইনস্টল করা যাবে উইন্ডোজ ১১, ঠিক বর্তমানের মতোই।

 

উইন্ডোজ ১১ ব্যবহার করতে যা লাগবে

মাইক্রোসফট যে পুরনোকে পেছনে ফেলে উইন্ডোজকে নতুন করে সাজাতে চাইছে, তার বড় প্রমাণ ‘উইন্ডোজ ১১’ ব্যবহারের জন্য হার্ডওয়্যারের চাহিদা। নতুন অপারেটিং সিস্টেম আর ৩২ বিট প্রসেসর সমর্থন করবে না। ২০ বছর ধরে মাইক্রোসফট ৩২ বিট সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যারকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে, যা অন্তত ২০২১ সালে আর মানানসই নয়।

যদিও মাইক্রোসফটের ওয়েবসাইট অনুযায়ী অন্তত ১ গিগাহার্জ গতির ডুয়াল কোর ৬৪ বিট প্রসেসর, ৪ গিগাবাইট র‌্যাম, ডাইরেক্ট এক্স ১২ সমর্থিত গ্রাফিকস এবং ৭২০ পিক্সেল রেজল্যুশনের ডিসপ্লে থাকলেই উইন্ডোজ ব্যবহার করা যাবে, কিন্তু বাস্তবে চিত্রটি কিন্তু ভিন্ন। বর্তমানে মাইক্রোসফটের পেজ অনুযায়ী শুধু অষ্টম প্রজন্মের ইন্টেল কোর ও দ্বিতীয় প্রজন্মের এএমডি রাইজেন সিরিজের প্রসেসরসমৃদ্ধ পিসিতেই চলবে ‘উইন্ডোজ ১১’। অর্থাৎ মাইক্রোসফটের বর্তমান ফ্ল্যাগশিপ সারফেস স্টুডিও ২-তেও চলবে না ‘উইন্ডোজ ১১’। পরবর্তী সময়ে এ তালিকায় পুরনো প্রসেসর যুক্ত করার সম্ভাবনাও রয়েছে। এর সঙ্গে আছে আরো একটি চাহিদা—পিসিতে পুরনো ঘরানার বায়োস থাকলেও চলবে না, থাকতে হবে ইউইএফআই (ইউনিফাইড এক্সটেনসিবল ফার্মওয়্যার ইন্টারফেস)।

অবশ্য প্রথম প্রজন্মের ইন্টেল কোর সিরিজের সময় থেকেই ইউইএফআই ব্যবহার হয়ে আসছে বায়োসের বদলে। সঙ্গে অবশ্যই থাকতে হবে ‘ট্রাস্টেড প্ল্যাটফর্ম মডিউল’ বা ‘টিপিএম ২.০’ এবং চালু করতে হবে সিকিউর বুট। সে জন্য অবশ্যই পিসির হার্ড ড্রাইভ বা এসএসডি হতে হবে জিপিটি পার্টিশন, পুরনো এমবিআর নয়। আর এসব চাহিদা একটা দিকেই নির্দেশ করে আর সেটি হলো মাইক্রোসফট চাইছে না আর পুরনো হার্ডওয়্যারের জন্য কাজ করুক এই নতুন উইন্ডোজ। এই নির্দেশনা অনুযায়ী হয়তো ভবিষ্যতে ষষ্ঠ প্রজন্মের ইন্টেল কোর এবং প্রথম প্রজন্মের রাইজেন প্রসেসরসমৃদ্ধ পিসি ‘উইন্ডোজ ১১’ পেতেও পারে; কিন্তু কোর ২ ডুয়ো থেকে শুরু করে পঞ্চম প্রজন্মের কোর সিরিজ বা এএমডির পুরনো এফএক্স সিরিজ পুরোপুরি বাদ যাচ্ছে।

 

নতুন ইন্টারফেস

ইতিহাসে প্রথমবারের মতো উইন্ডোজের স্টার্ট বাটন এবং মেন্যু ডিসপ্লের নিচের অংশের বাঁ কোনায় নয়, মাঝখানে থাকবে। স্টার্ট মেন্যু থেকে বাদ যাচ্ছে লাইভ টাইলস, তার বদলে মেন্যুতে পিন করা অ্যাপ, সর্বশেষ ব্যবহৃত ডকুমেন্টস, অ্যাপ মেন্যু এবং সার্চ বার দেখা যাবে।

ম্যাকের মতো উইন্ডোজেও যুক্ত হচ্ছে স্ন্যাপ লে-আউট। বর্তমানে প্রগ্রাম উইন্ডোজ শুধু ম্যাক্সিমাইজ আর মিনিমাইজ করা যায়, এবার থেকে বাটনটি চেপে ডিসপ্লের এক পাশে বা এক কোনায়ও সেটি পাঠানো যাবে। একাধিক অ্যাপ একসঙ্গে ডিসপ্লেতে নিজ থেকেই সাজানোর অপশনও যুক্ত করা হয়েছে।

স্ন্যাপ লে-আউট নিজের মতো করে সাজানো যাবে একাধিক মনিটরের জন্যও, আর মূল মনিটর থেকে টেনে অন্য মনিটরে অ্যাপ নিয়ে যেতে হবে না, অ্যাপকে একটি মনিটরে বেঁধে দেওয়া যাবে। মনিটর সরিয়ে ফেললেও সেটি সংরক্ষণ করা হবে, পরে আবার যুক্ত করলে নতুন মনিটরে চলে যাবে অ্যাপ।

এ ছাড়া ইন্টারফেসের ডিজাইনে ব্যবহার করা হয়েছে নতুন রং, বেশ কিছু জায়গায় ইন্টারফেস ঢেলে সাজানো হয়েছে। ‘উইন্ডোজ ১০’-এর সঙ্গে মিল নেই বলা যাবে না, বরং একে ‘উইন্ডোজ ১০’-এর বড় আপগ্রেড বলা যেতে পারে।

 

মাইক্রোসফট টিমস ও স্কাইপের পতন

‘উইন্ডোজ ১১’-এর বড় অংশ হতে যাচ্ছে মাইক্রোসফট টিমস। জনপ্রিয় রিমোট অফিস সফটওয়্যার স্ল্যাক, স্কাইপ আর জুমের বেশির ভাগ ফিচার নিয়ে তৈরি টিমস সফটওয়্যারটির সঙ্গে উইন্ডোজের প্রতিটি ফিচার সংযুক্ত থাকবে, ফলে আলাদা করে অন্যান্য অ্যাপ ইনস্টল করতে হবে না বলে দাবি করেছে মাইক্রোসফট।

মেইল অ্যাপ থেকে সরাসরি করা যাবে ভিডিও কল, টিমসের মেসেজ থেকে সরাসরি ক্যালেন্ডারে চলে যাবে মিটিং বা ডেডলাইনের সময়সূচি। ডেস্কটপ বা টাস্কবার থেকেই এক ক্লিকে করা যাবে ভিডিও কনফারেন্স। এরূপ আরো নানা ধরনের সুবিধাই থাকবে উইন্ডোজের সঙ্গে, যাতে ব্যবহারকারীরা কাজ করতে পারেন স্বাচ্ছন্দ্যে।

আর এর মাধ্যমে অবশ্য বাদ পড়ছে স্কাইপ। উইন্ডোজের সঙ্গে স্কাইপ আর দেওয়া থাকবে না, চাইলে অবশ্য ইনস্টল করে নেওয়া যাবে। কিন্তু মাইক্রোসফট যে ধীরে ধীরে স্কাইপকে বাদ দিয়ে টিমসকেই প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে, তারই প্রথম বড় ধাপ এটিকে বলা যায়।

 

চলবে অ্যানড্রয়েড অ্যাপও

আর নয় ইমুলেটর, প্রয়োজন নেই ব্লুস্ট্যাকস। ‘উইন্ডোজ ১১’ ব্যবহারকারীরা সরাসরি অ্যানড্রয়েড অ্যাপ ও গেম চালাতে পারবেন তাঁদের পিসিতে। সরাসরি অ্যামাজন অ্যাপ স্টোর থেকে অ্যানড্রয়েড অ্যাপ ইনস্টল করতে পারবেন ব্যবহারকারীরা। তবে গুগল প্লেস্টোর যুক্ত করার ব্যাপারে এখনো কোনো কিছু জানা যায়নি, সম্ভাবনাও ক্ষীণ। তবে নিজে থেকে ব্যবহারকারীরা অ্যাপ ইনস্টল করতে পারবেন বলে জানা গেছে।

অ্যাপ সাইডলোডিং ফিচারটি কতটুকু সহজ বা কঠিন হবে সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি, তবে একেবারে সহজ হওয়ার সম্ভাবনা কম বলেই ধারণা করা হচ্ছে। অ্যানড্রয়েড গেম পিসিতে ঠিক কতটা ভালোভাবে চলবে সেটা নিয়েও রয়ে গেছে সন্দেহ, কেননা বেশির ভাগ গেমেই দেওয়া হয়ে থাকে টাচ কন্ট্রোল আর বেশির ভাগ পিসিতেই টাচ স্ক্রিন দেখা যায় না।

 

অবশেষে ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারের মৃত্যু

‘উইন্ডোজ ৯৫’ থেকেই ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ব্রাউজারটি উইন্ডোজের অন্যতম বড় অংশ হিসেবে দেখা গেছে। এমনকি ‘উইন্ডোজ ১০’ থেকে এজ ব্রাউজার ব্যবহার শুরু হলেও ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারের একটি সংস্করণ লুকানো অবস্থায় রয়ে গিয়েছিল। ‘উইন্ডোজ ১১’ থেকে আর ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারের দেখা পাওয়া যাবে না। ক্রোমিয়াম ইঞ্জিনচালিত মাইক্রোসফট এজ হবে উইন্ডোজের ডিফল্ট ব্রাউজার।

ওয়েব ডিজাইনাররা দীর্ঘদিন ধরেই ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার সমর্থিত পেজ বানাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন, পুরনো এই ব্রাউজার সমর্থন না করলে ওয়েবসাইটের ডিজাইন সম্পূর্ণ হচ্ছিল না। ‘উইন্ডোজ ১১’-এর মাধ্যমে এই সমস্যার অবসান হতে যাচ্ছে।

 

গেমিং

মাইক্রোসফট খুব জোর দিয়ে চেষ্টা করছে গেমিং দুনিয়ায় নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে। তাদের এক্সবক্স গেম পাস আলটিমেট সেবার মাধ্যমে নেটফ্লিক্সের মতো মাসিক চাঁদা দিয়ে শত শত গেম খেলা যাচ্ছে এক্সবক্স এবং পিসিতে। এবার গেম পাস সেবাটি উইন্ডোজের সঙ্গে আরো শক্ত করে যুক্ত করে দেওয়া হবে, যাতে গেম পাস থেকে বা এক্সবক্স স্টোর থেকে গেম খেলা যায় আরো সহজে। শুধু তা-ই নয়, পিসিটি যদি গেম চালানোর মতো শক্তিশালী না হয়ে থাকে, তাহলে নিজ থেকেই এক্সক্লাউডের মাধ্যমে গেমটি ক্লাউড সার্ভার থেকে চলবে, তার জন্য বাড়তি কোনো সেটআপেরও প্রয়োজন হবে না। মাইক্রোসফটের দাবি, গেম পাস আলটিমেট সেবা চালু করার পর শুধু গেমের ওপর ক্লিক করলেই হবে।

আজকাল প্রচুর ডেস্কটপ মনিটর ও ল্যাপটপে এইচডিআর সমর্থিত ডিসপ্লে ব্যবহার হচ্ছে, অথচ বেশির ভাগ পুরনো গেমেই সেটার সমর্থন নেই। ব্যবহারকারীরা চাইলে ‘উইন্ডোজ ১১’-তে থাকা অটো এইচডিআর ব্যবহার করে সেসব গেমে এইচডিআরের স্বাদ নিতে পারবেন।

 

নতুন ধরনের পিসির জন্য প্রস্তুতি

ট্যাবলেটে উইন্ডোজ চলছে আজ কয়েক দশক ধরে; কিন্তু একেবারে কি-বোর্ড মাউস ছাড়া চলার জন্য তৈরি উইন্ডোজ এটাই প্রথম। সামনের দিনগুলোতে টাইপ কভার ছাড়া সারফেস এবং অন্যান্য উইন্ডোজচালিত ট্যাবলেটের দেখা মিলবে। মাইক্রোসফটের বেশ কিছু ভাঁজযোগ্য ডিভাইসের পরীক্ষামূলক সংস্করণ তারা বিগত বছরগুলোতে দেখালেও সেগুলো এখনো বাজারে আনেনি, সম্ভবত সরাসরি ‘উইন্ডোজ ১১’ ইনস্টল করে তবেই বাজারে আনার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল তারা। মাইক্রোসফটের ভাষ্য অনুযায়ী সামনের দিনগুলোতে কম্পিউটারের সংজ্ঞা অনেকটাই বদলে যাবে, এর সঙ্গে তাল মেলানোর জন্যই তারা প্রস্তুত করেছে নতুন এই উইন্ডোজ।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

এআই দেখাবে পরিবেশ বিপর্যয়

    এখনই পরিবেশদূষণ না কমালে ভবিষ্যতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কী হাল হতে পারে, তারই একটি সিমুলেটেড চিত্র তুলে ধরতে চালু হয়েছে thisclimatedoesnotexist.com। পরিবেশ বিপর্যয়ের পর সেই জায়গাটি কেমন হতে পারে, তারই চিত্র দেখা যাবে এ সাইটে। বিস্তারিত জানাচ্ছেন এস এম তাহমিদ
শেয়ার
এআই দেখাবে পরিবেশ বিপর্যয়
জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের লালবাগ কেল্লা ডুবে যাওয়ার পর এমনই দেখা যেতে পারে

দুই বছর ধরে সাইটটি নিয়ে কাজ করছে কানাডার কুইবেকে অবস্থিত এআই ইনস্টিটিউট মিলা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিভিন্ন প্রয়োগ নিয়ে মিলা ইনস্টিটিউট কাজ করে আসছে। ২০১৯ সালে দলটি সিদ্ধান্ত নেয়, জলবায়ু পরিবর্তনের পরিণাম কতটা ভয়াবহ হতে পারে সেটা মানুষকে চোখে আঙুল তুলে দেখানোর জন্য একটি প্রজেক্ট তৈরি করার। তাদের দলে কোনো আবহাওয়াবিদ না থাকলেও মন্ট্রিয়ল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণালব্ধ অনেক তথ্যের ডাটাসেট হাতের কাছেই ছিল।

সেসব ব্যবহার করেই এআই ট্রেনিং শুরু করে তারা।

বিশ্বের সব অঞ্চল একইভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হবে না। সব জায়গায় সব ধরনের বিপর্যয় ঘটবেও না। মিলার দলটির ট্রেনিং দেওয়া এআই সূক্ষ্মভাবে তফাতগুলো আমলে নিয়ে এলাকাভিত্তিক পরিবর্তনগুলোর ভবিষ্যদ্বানী করতে পারে।

একই সঙ্গে বিপুল পরিমাণ ছবি দিয়ে নিজেদের জেনারেটিভ এআইকে ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে, যাতে নিখুঁতভাবে বন্যা, ধোঁয়াশা বা দাবানলের প্রভাব ছবিতে সেটি ফুটিয়ে তুলতে পারে। প্রায় দুই বছরের অক্লান্ত শ্রমের ফসল মিলা ইনস্টিটিউটের এ দুটি এআই মডেল।

গবেষকদের অনেক দেশ ও এলাকার দুর্যোগের বাস্তব চিত্র জোগাড় করা সম্ভব হয়নি। সে ক্ষেত্রে তাঁরা সেসব এলাকার থ্রিডি মডেল তৈরি করে সেখানে বন্যা, আগুন বা ধোঁয়াশার প্রভাব সিমুলেট করে সেই তথ্য ব্যবহার করেছেন।

সিমুলেশনের থেকে পাওয়া তথ্য এবং অন্যান্য এলাকার বাস্তব ছবি একসঙ্গে মিলিয়ে তবেই তৈরি করা হয়েছে দুর্যোগের চিত্রগুলো। ধোঁয়াশা বা আগুনের প্রভাব বেশ সহজেই এআইকে বুঝিয়ে দেওয়া গেলেও, বন্যার চিত্র জেনারেট করা শেখাতে তাঁদের বেশ কষ্ট হয়েছে। পানির প্রবাহ, অবস্থান, চারদিকের দৃশ্যের প্রতিফলনের মতো জটিল সব খুঁটিনাটি জিনিসপত্র সঠিকভাবে রেন্ডার করা না গেলে চিত্রগুলো বাস্তবসম্মত লাগবে না, সেটা দলের সবাই প্রথম দিনই বুঝতে পেরেছিলেন।

প্রজেক্টটির মূল লক্ষ্য, সবার মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো এবং সেটি ঠেকানোর জন্য পদক্ষেপ নিতে আগ্রহী করা। জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি স্ক্রিনে বা কাগজের কিছু লেখা ও সংখ্যায় আটকে থাকায় অনেকের কাছেই সেটার প্রভাব আসলে কতটা বিস্তীর্ণ হতে পারে, সেটা সব সময় অনুধাবন করা সম্ভব হয় না।

চিরচেনা জায়গাগুলো ভবিষ্যতে কিভাবে বদলে যেতে পারে, সেটা সরাসরি দেখার পর অনেকেই অভ্যাস ও আইন বদলের যে কতটা প্রয়োজন, সেটা অনুধাবন করতে পারবে।

সিমুলেশনটি দেখতে হলে তাদের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে বেছে নিতে হবে পছন্দসই জায়গা। বিশ্বের সব দেশ ও শহরেই সিমুলেশনটি কাজ করে, তাদের তথ্যের জোগানদাতা গুগল ম্যাপস স্ট্রিটভিউ। ঠিকানা বাছাই করার পর দুর্যোগের ধরন ঠিক করে দিলেই কিছু সময় পর পাওয়া যাবে এআইয়ের তৈরি ছবি। নিজের বাসা, গ্রাম থেকে শুরু করে বিখ্যাত স্থানসব ছবি সহজেই জেনারেট করা যাবে সাইটটির মাধ্যমে।

 

মন্তব্য

কী দেখা গেল গ্যালাক্সি আপ্যাকড ইভেন্টে?

    বার্ষিক গ্যালাক্সি আপ্যাকড ইভেন্ট হয়ে গেল ১০ জুলাই। এতে উন্মোচিত হয়েছে নতুন ফোল্ডিং গ্যালাক্সি ফোন, গ্যালাক্সি ওয়াচ এবং গ্যালাক্সি বাডসের পাশাপাশি স্যামসাং স্মার্ট রিংও। বিস্তারিত জানাচ্ছেন এস এম তাহমিদ
শেয়ার
কী দেখা গেল গ্যালাক্সি আপ্যাকড ইভেন্টে?

বাডস ও ওয়াচের চিরচেনা স্যামসাং ডিজাইনে এবার দেখা গেছে বড়সড় পরিবর্তন। স্যামসাং স্মার্ট রিং হতে পারে আগামীর জনপ্রিয় ফ্যাশনেবল স্মার্ট প্রযুক্তিপণ্যে। সব মিলিয়ে বলা যায়, ফোনগুলোই ছিল ইভেন্টের সবচেয়ে সাদামাটা ডিভাইস।

 

গ্যালাক্সি ফোল্ডেবল সিরিজ

স্যামসাং গ্যালাক্সি জেড ফোল্ড ৬ ডিজাইন বর্তমান জেড ফোল্ড ৫-এর কাছাকাছি।

সামনের ডিসপ্লে কিছুটা বড় করা হয়েছে, ৬.৩ ইঞ্চি ডিসপ্লেটি আগের মডেলগুলোর মতো চওড়ায় অতিরিক্ত চিকন নয়। ভেতরের ডিসপ্লে অবশ্য থাকছে অপরিবর্তিত। ক্যামেরার ডিজাইনে এসেছে কিছুটা পরিবর্তন, ট্রিপল ক্যামেরার প্রতিটি লেন্সের চারদিকে থাকছে বড়সড় বর্ডার, যাতে সহজে ক্যামেরায় দাগ না পড়ে। মূল ক্যামেরা থাকছে ৫০ মেগাপিক্সেল, টেলিফটো থাকছে ৩এক্স জুমসমৃদ্ধ ১০ মেগাপিক্সেল।
আলট্রাওয়াইডের সেন্সরটি নতুন, ১২ মেগাপিক্সেল রেজল্যুশনের সেন্সর, যাতে অন্ধকারে আরো ভালো ছবি তোলা যায়। স্ন্যাপড্রাগন ৮ জেন ৩ ফর গ্যালাক্সি প্রসেসর থাকছে ফোনটিতে, সঙ্গে ১২ গিগাবাইট র‌্যাম ও ন্যূনতম ২৫৬ গিগাবাইট স্টোরেজ। স্যামসাং অন্তত সাত বছর ফোনটিতে আপডেট দেবে বলে অঙ্গীকার করেছে। বাকি সব হার্ডওয়্যার জেড ফোল্ড ৫-এর মতোই, শুধু ফোনটি কিছুটা পাতলা ও হালকা করা হয়েছে, সঙ্গে বেড়েছে এটির আইপি রেটিং।
এক্স৫ থেকে এখন ফোনটির আইপি ৪৫ রেটিংয়ে উন্নীত হয়েছে।

জেড ফ্লিপ ৬-এর হার্ডওয়্যারও ফ্লিপের মতোই। প্রসেসর বদলে দেওয়া হয়েছে স্ন্যাপড্রাগন ৮ জেন ৩ ফর গ্যালাক্সি, ক্যামেরা হার্ডওয়্যার থাকছে এস২৪-এর মতো মূল ৫০ মেগাপিক্সেল ও আলট্রাওয়াইড ১২ মেগাপিক্সেল সেন্সর। র‌্যাম ও রম থাকছে ফোল্ডের মতোই, ১২ গিগাবাইট ও ২৫৬ গিগাবাইট। এই ফোনটিও করা হয়েছে ফ্লিপ ৫-এর চেয়ে কিছুটা পাতলা ও হালকা, ব্যাটারি ৪০০০ এমএএইচ-এ উন্নীত করা হয়েছে।

ফোনটিকে ওভারহিটিং থেকে বাঁচাতে যুক্ত হয়েছে ভেপর চেম্বার। এর বাইরে তেমন পরিবর্তন নেই।

গ্যালাক্সি জেড ফোল্ড ৬-এর দাম শুরু এক হাজার ৮৯৯ ডলার থেকে। আর গ্যালাক্সি জেড ফ্লিপ ৬-এর দাম ৮৯৯ ডলার থেকে শুরু। 

 

স্যামসাং বাডস

স্যামসাং বাডস ৩ এবং বাডস ৩ প্রো দেখতে অনেকটাই এয়ারপডসের মতো। বেশির ভাগ স্যামসাং-ভক্ত বিষয়টি নিয়ে হতাশ, এত দিন ধরে স্যামসাং নিজেদের বাডসগুলোতে এ রকম নিজস্ব ডিজাইন ব্যবহার করে আসছিল। চমৎকার সাউন্ড, ফাস্ট পেয়ারিং এবং কার্যকরী নয়েজ ক্যানসেলেশনের জন্য দুটি বাডসই অবশ্য প্রাথমিক রিভিউতে উের গেছে। বাডস ৩ প্রো মডেলে থাকছে সরাসরি বাডসের মধ্যেই লাইট স্ট্রিপ, যাতে চট করে ব্যাটারি লাইফ দেখে নেওয়া যায়। তবে এয়ারপডসের ডিজাইনের এত কাছাকাছি করে নতুন বাডস ডিজাইন করায় স্যামসাংয়ের নিজস্বতা কিছুটা ক্ষুণ্ন হয়েছে, বলেছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা।

স্যামসাং বাডস ৩-এর দাম ১৭৯ ডলার থেকে শুরু।  বাডস ৩ প্রো-এর দাম ২৪৯ ডলার থেকে শুরু।

 

গ্যালাক্সি ওয়াচ এবং রিং

অ্যানড্রয়েড ওয়্যার ওএস চালিত সবচেয়ে জনপ্রিয় স্মার্টওয়াচ সিরিজ গ্যালাক্সি ওয়াচ। নতুন গ্যালাক্সি ওয়াচ ৭-এর মূল্য থাকছে অপরিবর্তিত, ২৯৯ ডলার থেকে শুরু। চেহারাও অনেকটা ওয়াচ ৬-এর মতোই রাখা হয়েছে, বৃত্তাকার অ্যামোলেড ডিসপ্লেসমৃদ্ধ ওয়াচটি বাজারের বাকি সব চতুষ্কোণ স্মার্টওয়াচের চেয়ে একেবারেই আলাদা।

গ্যালাক্সি ওয়াচ আলট্রা স্যামসাং পরিবারে নতুন সংযোজন। চারকোনা বডি ও কমলা বাটন এবং ন্যাটো স্টাইল স্ট্র্যাপ দেখে অ্যাপল ওয়াচ আলট্রার কথাই মনে পড়বে। তবে বডি চারকোনা হলেও ডিসপ্লে থাকছে বৃত্তাকার। টাইটেনিয়াম বডি এবং স্যাফায়ার গ্লাস ডিসপ্লের ডিভাইসটি টানা ১০০ ঘণ্টা পর্যন্ত এক চার্জে চলতে সক্ষম। ডুয়াল ব্যান্ড জিপিএস, -২০ থেকে ৫৫ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রায় এবং ২৯ হাজার ৫২৭ ফিট উচ্চতায় পর্যন্ত কার্যক্ষম থাকার মতো শক্তপোক্ত ডিজাইনের ঘড়িটি তৈরি করা হয়েছে যারা অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় তাদের কথা মাথায় রেখেই। মূল্য শুরু ৬৪৯ ডলার থেকে।

 

গ্যালাক্সি রিং

স্যামসাং নিজেদের স্মার্ট রিং তৈরি করেছে হাতে স্মার্টওয়াচ না পরেই হার্টরেট, ব্রিদিং, দেহের উত্তাপ এবং ঘুমের মনিটরিং করার জন্য। বেশ কিছু ব্র্যান্ডের স্মার্ট রিং এর মধ্যেই বাজারে পাওয়া যাচ্ছে, স্যামসাংও অবশেষে বাজারে প্রবেশ করল। এক চার্জে প্রায় এক সপ্তাহ চলবে গ্যালাক্সি রিং, পাওয়া যাবে ম্যাট ব্ল্যাক, সিলভার এবং গোল্ড তিনটি রঙে। রিংটি ব্যবহার করার জন্য লাগবে অ্যানড্রয়েড ফোন, সব ফিচারের জন্য গ্যালাক্সি ফোন থাকা আবশ্যক। মূলত যারা ফ্যাশনসচেতন বা দীর্ঘ সময়, বিশেষ করে ঘুমের মধ্যে ঘড়ি পরতে আগ্রহী নয়, তাদের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে ডিভাইসটি। মূল্য ৪০০ ডলার থেকে শুরু।

মন্তব্য

ঘূর্ণিঝড় খুঁজতে ড্রোন

    সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় হারিকেনের প্রবল ঘূর্ণিবাতের কারণে উপকূল এলাকায় প্রাণ হারায় অসংখ্য জনজীবন। হারিকেনের তাণ্ডব থেকে জানমাল রক্ষার্থে এবার মাঠে নেমেছে সামুদ্রিক ড্রোন। তার কার্যকলাপ লিখেছেন আল সানি
শেয়ার
ঘূর্ণিঝড় খুঁজতে ড্রোন

উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের পশ্চিমাঞ্চল, মধ্য এবং পূর্ব-উত্তর প্রশান্ত মহাসাগর, ক্যারিবিয়ান সাগর এবং মেক্সিকো উপসাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড়কে বলা হয় হারিকেন। হারিকেনের পাঁচটি ক্যাটাগরির মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর ক্যাটাগরি-ফাইভ, যেটির গতিবেগ ২৫০ কিলোমিটারের ওপরে। তবে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড়গুলো প্রাথমিক অবস্থায় অল্প শক্তি নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও দ্রুত ক্যাটাগরি ফাইভ হারিকেনে রূপান্তরিত হচ্ছে। বিশেষ করে হারিকেন ওটিস গত বছরের অক্টোবর মাসে দক্ষিণ মেক্সিকোর উপকূলে আঘাত হানে, যার গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২৭০ কিলোমিটার।

গেরেরো রাজ্যের একটি বৃহৎ বন্দর ও জনপ্রিয় পর্যটন স্পট আকাপজল্কোতে আঘাত হেনে ব্যাপক ক্ষতি করেছিল এটি। তবে শুরুতে ওটিস এত বেশি শক্তিশালী ছিল না, আবহাওয়াবিদরা ওটিসের দ্রুত শক্তি সঞ্চয়ে কিছুটা অবাকও হয়েছিলেন। যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব রিডিং-এর গবেষকদের ২০২২ সালের একটি সমীক্ষা বলছে, সমুদ্রের তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে ছোটখাটো ঝড়ও দ্রুত হারিকেনে রূপ নিচ্ছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের আকস্মিক বিপদ থেকে আগেই সতর্ক হতে ইউএস ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এনওএএ) সেইলড্রোনের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে।
সেইলড্রোনের বানানো সামুদ্রিক ড্রোনের নাম দেওয়া হয়েছে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের নামানুসারেই।

সমুদ্রগামী ড্রোন তৈরি করা সেইলড্রোন আদতে একটি ডাটা কম্পানি। তবে তারা যে ড্রোন তৈরি করছে, এগুলো ক্রমাগত শক্তি সঞ্চয়কারী হারিকেনের গতিবিধি নজর রাখতে এখন পর্যন্ত শতভাগ সক্ষম। এই সেইলড্রোনগুলো সেন্সরের মাধ্যমে সমুদ্র ও বায়ুমণ্ডলের অবস্থার তথ্য সংগ্রহ করে সরকারি সংস্থার কাছে রিলে করে প্রেরণ করে এবং পরবর্তী সময়ে বিজ্ঞানীরা এসব ডাটা বিশ্লেষণ করে ঝড়ের সম্ভাব্য অবস্থান ও গতিবিধির ব্যাপারে সচেতন হয়।

বায়ু অথবা সৌর যেকোনো নবায়নযোগ্য শক্তি দিয়ে চলা এসব ড্রোন দেখতে অনেকটা পালতোলা নৌকার মতো। প্রয়োজন অনুসারে বিভিন্ন আকারের ড্রোন বানিয়েছে সেইলড্রোন। ২৩ ফুট, ৩৩ ফুট বা ৬৫ ফুটসব ধরনের ড্রোন আছে তাদের। সূর্যের তীব্রতা, বায়ু চলাচলের পথসব কিছু ট্র্যাক করে যথেষ্ট তথ্যবহুল ডাটা প্রদান করে বলে দিন দিন নির্ভরযোগ্য যন্ত্রে পরিণত হচ্ছে এগুলো। সেইলড্রোনগুলো সমুদ্রের পানির নিচের ঢেউ থেকেও ডাটা ক্যাপচার করতে পারে ও সমুদ্রের স্রোত বিশ্লেষণ করতে সক্ষম এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের ওপরে ৩০০০০ ফুট (৯১৪৪ মিটার) ও নিচের দিকে ১০০০ ফুট (৩০০ মিটার) গভীরতায় পরিষ্কার ছবিও তুলতে পারে।
সেইলড্রোনের মিশন ব্যবস্থাপনার পরিচালক জুলিয়া প্যাক্সটন বলেন, সামুদ্রিক এই ড্রোনগুলোর কাজ হারিকেনের ভবিষ্যদ্বাণী করা নয়, শুধু হারিকেনগুলো কেন ও কিভাবে তীব্র হয়ে উঠছেসেসব বিষয়ে গবেষণা করা, যেন ভবিষ্যতে এই ধরনের ঝড়ের মডেলিং আমরা আরো উন্নত করতে পারি। সেইলড্রোনের থেকে প্রাপ্ত তথ্যের মাধ্যমে এনওএএ-এর বিজ্ঞানীরা একটি কম্পিউটার মডেল তৈরি করার চেষ্টা করছেন, যার ফলে হারিকেন কোথায়, কত শক্তিতে আঘাত হানতে পারেতা আরো নিখুঁতভাবে জানতে সক্ষম হয়। আর এ তথ্যই ঘূর্ণিঝড়প্রবণ অঞ্চলগুলোর জানমালের নিরাপত্তায় কাজ করবে বলে আশাবাদী সবাই।

মন্তব্য

আরিয়ানের রোবটেরা

    একদিকে শ্রমিকের অভাব, অন্যদিকে কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের নিরাপত্তাহীন জীবন—এই দুইয়ের মাঝে জায়গা করে নিয়েছে ‘গ্রে ম্যাটার রোবোটিকস’। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটির সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বুয়েটিয়ান আরিয়ান কবিরের পথচলার গল্প জানাচ্ছেন আল সানি
শেয়ার
আরিয়ানের রোবটেরা
আরিয়ান কবির

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক ছাত্র আরিয়ান কবির ২০২০ সালে তাঁর দুই ভারতীয় সতীর্থ ব্রুয়াল শাহ ও সতেন্দ্র কে. গুপ্তাকে নিয়ে শুরু করেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবোটিকস বিষয়ক প্রতিষ্ঠান গ্রে ম্যাটার রোবোটিকস। প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক হলেও সেবা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রসহ শিল্পোন্নত দেশগুলোতে।

বিশ্বব্যাপী রোবোটিকসকে এগিয়ে নিতে সৃজনশীল ও শক্তিশালী উদ্ভাবকদের দেওয়া হয় বিআরআর৫০ ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ড। ২০২০ সালে যেটি পায় গ্রে ম্যাটার রোবোটিকস।

 

শুরুর কথা

আরিয়ান কবির পড়াশোনা করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিষয় নিয়ে। তবে বুয়েটে ভর্তির আগে থেকেই আরিয়ানের বেশ আগ্রহ ছিল রোবট নিয়ে। দৈনন্দিন কাজকে সহজ করে দেওয়া, বিপজ্জনক কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে করা ইত্যাদি কাজের জন্য রোবট কিভাবে বানায়, সেসবও ছিল তাঁর চিন্তায়। তবে আরিয়ান চাইতেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে এসব রোবট স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিক।

এসব চিন্তা-ভাবনা থেকেই রোবট ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সংযোগ বিষয়ে পড়াশোনা করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের খোঁজখবর নিয়ে চলে আসেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ডে। ২০১৩ সালে স্নাতক শেষ করলেও স্নাতকোত্তর না করেই সরাসরি পিএইচডি প্রগ্রামে যুক্ত হন আরিয়ান। পিএইচডি প্রগ্রামে তিনি গুরুত্ব দিয়েছিলেন বিভিন্ন রোবোটিকস সিস্টেমকে অটোনোমাস (স্বয়ংক্রিয়) কিভাবে করা যায় সেসব বিষয়ে।
প্ল্যানিং ও লার্নিং অ্যালগরিদম ব্যবহার করে কঠিন ও জটিল কাজে রোবোটিক সিস্টেম উন্নত করাই ছিল তাঁর লক্ষ্য।

২০১৬ সালে আরিয়ান তাঁর অধ্যাপকের সঙ্গে ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ায় চলে আসেন। সেখানকার ল্যাবে বিভিন্ন শিল্প উৎপাদকের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। তখন বড় একটি অ্যারোস্পেস প্রতিষ্ঠান থেকে জানতে পারেন তারা নিজেদের মাল্টি মিলিয়ন ডলারের হেলিকপ্টার ব্লেড এখনো হাতে বানায়। তবে এই কাজে প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিল ওই সময়।

বিশেষ করে ফিনিশিংয়ের কাজের জন্য দীর্ঘ সময় শ্রমিক নিয়োগ ও রাসায়নিকের প্রভাবে তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি ছিল চিন্তার কারণ। পুরনো কর্মী ও শ্রমিকরা অবসর নেওয়ার পর নতুনরা খুব বেশিদিন এসব কাজে মনোসংযোগ করতে পারছিল না। আর এসব কারণে তারা পড়েছিল শ্রমিক সংকটে। একটু গবেষণা করে ওই সময় আরিয়ান জানতে পারেন যুক্তরাষ্ট্রে ৯৮ শতাংশ ম্যানুফ্যাকচারিং কম্পানি রোবট ব্যবহার করে না। আর তাই যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল এই বাজারে জায়গা করে নিতে আরিয়ান ও তাঁর সহকর্মীরা মিলে গড়ে তোলেন গ্রে ম্যাটার রোবোটিকস

 

শ্রমিক সংকট থেকে মুক্তি দিতে 

যুক্তরাষ্ট্রে শ্রমিক সংকট নতুন নয়। ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোর বেশ কিছু অঞ্চলে ৪৪ হাজারের বেশি রোবট অর্ডার করেছিল বিভিন্ন কম্পানি। প্রযুক্তি কম্পানিগুলোর সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন ফর অ্যাডভান্সিং অটোমেশন বা এ৩-এর তথ্য বলছে, ২০২১ সালের চেয়ে এটি ১১ শতাংশ বেশি। রোবট শ্রমিকের বাজার দাঁড়িয়েছে ২৩৮ কোটি ডলারে, যা আগের বছরের চেয়ে ১৮ শতাংশ বেশি। চলতি বছরও যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিক সংকট বেড়েছে ক্রমবর্ধমান হারে। সবচেয়ে বেশি শ্রমিক ঘাটতি উৎপাদন শিল্পে। প্রায় আড়াই ট্রিলিয়ন ডলারের এই উৎপাদনশিল্পে বিপজ্জনক বিভিন্ন কাজের জন্য শ্রমিক মেলানো কঠিন, যার কারণে ক্রয়াদেশের পাহাড় ক্রমাগত বেড়েই চলছে। অনেক কারখানারই ব্যাকলগে পড়ে আছে দুই থেকে তিন বছরের কাজ। এই সংকট মোকাবেলায় বিভিন্ন দেশ থেকে শ্রমিক আমদানি করা হলেও প্রশিক্ষণের অভাবে তাঁদেরও কাজে লাগানো যাচ্ছে না পুরোদমে। পরিসংখ্যান বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৩৮ লাখ শ্রমিকের পদ শূন্য। শূন্য পদের বিপরীতে যখন মানব শ্রমিকের অভাবে ধুঁকছে শিল্পোন্নত এসব দেশ, সেখানেই এগিয়ে এসেছে আরিয়ান কবিরের প্রতিষ্ঠান। গ্রে ম্যাটার রোবোটিকস প্রতিনিয়ত নতুন নতুন কর্মদ্দীপ্ত এআইসমৃদ্ধ রোবট নিয়ে হাজির হচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠানে। মানব শ্রমিকের চেয়ে কম খরচ ও প্রায় শূন্য ঝুঁকির কারণে শিল্পসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো ঝুঁকছে গ্রে ম্যাটার রোবটিকসের দিকে।

 

সাধারণ থেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবট

গ্রে ম্যাটার রোবোটিকস নিজেরা বানায় না কোনো রোবট। যে কাজের জন্য তাদের রোবট লাগে, সেই কাজের উপযোগী রোবট তারা বাজার থেকে কিনে আনে। হার্ডওয়্যারভিত্তিক এই রোবটগুলোতে তারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রগ্রাম সেট করে দেয়। আরিয়ানের প্রতিষ্ঠানটি মূলত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) একটি সফটওয়্যার কম্পানি। স্পেসিফিক সেন্সর, টুলস যুক্ত করে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের মাধ্যমে তারা বাজারের সাধারণ রোবটকে বানিয়ে তোলে একটি বুদ্ধিমান যন্ত্র হিসেবে। বর্তমানে তাদের রোবট বিভিন্ন সারফেস ফিনিশিংয়ের কাজে বেশি ব্যবহৃত হয়। সেন্ডিং, পলিশিং, কোটিং, গ্রাইন্ডিং, পেইন্টিংসহ যেখানে হাত দিয়ে কাজ করা হয়, সেখানেই কাজ করে এটি।

আরিয়ানের রোবটেরা

ভাড়ায় খাটা রোবট

আরিয়ানের প্রতিষ্ঠানের রোবটগুলো গ্রাহকরা না কিনেও ব্যবহার করতে পারে। এ ক্ষেত্রে শ্রমিকের মতো ভাড়া নেওয়ার সুবিধা রাখা হয়েছে। আর এ কারণে রোবট কেনার জন্য এককালীন বিশাল খরচ থেকে বেঁচে যায় কারখানাগুলো এবং ক্রয়াদেশের ওপর ভিত্তি করে রোবট কম-বেশি করে ভাড়াও নিতে পারে তারা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে এসব রোবটের উৎপাদনশীলতা ও দক্ষতা মানব শ্রমিকের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।

 

বিনিয়োগ যখন ৭৩১ কোটি টাকার

আরিয়ানের প্রতিষ্ঠান প্রায় দুই বছর আগে বিনিয়োগ পেয়েছিল ২০০ কোটি টাকার বেশি। চলতি বছর তারা বিনিয়োগ পেয়েছে আগেরবারের চেয়ে প্রায় তিন গুণ। বাংলাদেশি টাকায় ৫৩১ কোটি বা সাড়ে চার কোটি ডলারের বি সিরিজ বিনিয়োগে সবার প্রথমে নাম আসে ওয়েলিংটন ম্যানেজমেন্টের। তা ছাড়া এই বিনিয়োগে যুক্ত আছে এনজিপি ক্যাপিটাল, ইউক্লিডিয় ক্যাপিটাল, অ্যাডভান্স ভেঞ্চার পার্টনারস ও এসকিউএন ভেঞ্চার পার্টনারস। থ্রিএম ভেঞ্চারস, বি ক্যাপিটাল, বো ক্যাপিটাল, ক্যালিব্রেট ভেঞ্চারস, ওসিএ ভেঞ্চারস ও সুইফ ভেঞ্চারসের বিনিয়োগে আরিয়ান কবিরের প্রতিষ্ঠান যুক্ত হয়েছে আগেই। সাড়ে চার কোটি ডলারের নতুন বিনিয়োগ দিয়ে গ্রে ম্যাটার রোবোটিকস আরো নতুন ধরনের পণ্য ও সেবা নিয়ে কাজ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন এর উদ্যোক্তারা। তা ছাড়া পুরনো গ্রাহকদের নতুন যেকোনো চাহিদা পূরণ করতেও রাখা হয়েছে আলাদা বরাদ্দ। বাকি অর্থ ব্যয় হবে নতুন নতুন গ্রাহক সৃষ্টি ও মার্কেটিংয়ের কাজে।

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ