<p><span style="color:#B22222">কোরীয় যুদ্ধের সময় ১৩ বছর বয়সে মা-বাবা ও পাঁচ ভাই-বোনের সঙ্গে বাড়ি ছেড়ে পালান হুন মি। ভেবেছিলেন সপ্তাহখানেক পর ফিরে আসবেন। এখন বয়স ৮৩ বছর। ফেরা হয়নি বাড়ি। তবে সাত দশক পর হুন নিজের শৈশবের বাড়িতে ফিরলেন। না, বাস্তবে নয়। বিস্তারিত<strong> ইশতিয়াক খানের</strong> কাছে</span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:20px"><strong><img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/2021/January/17/Kk-21'01'17-5.jpg" style="border-style:solid; border-width:1px; float:left; height:282px; margin-left:10px; margin-right:10px; width:300px" />উত্তর কোরিয়া থেকে পালিয়ে</strong></span></p> <p>হুনরা ভেবেছিলেন বড়জোর সপ্তাহখানেকের মতো লুকিয়ে থাকলেই হবে। ঝামেলা (!) শেষ হলে ফিরে আসবেন নিজেদের বাড়িতে। সঙ্গে ছিল শুধু দুই জোড়া মোজা। পায়ে ছিল না কোনো জুতা। সেই এক সপ্তাহ আর শেষ হয়নি। হুন ফিরতে পারেননি উত্তর কোরিয়ায় নিজের বাড়িতে।</p> <p>হুনের মতো হাজার হাজার মানুষ ১৯৫০ সালে কোরীয় যুদ্ধের সময় সীমানা পেরিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন চীন, রাশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ায়।</p> <p>১৯৫৩ সালের পর উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া নিজেদের সীমান্তে এমনই সুকঠিন সীমান্তনীতি চালু করে যে দুই দেশের মধ্যে যাতায়াত মোটামুটি অসম্ভবই হয়ে পড়ে। ফলে হুনের পরিবারের মতো আরো অসংখ্য পরিবার তাদের ভালোবাসার মানুষ ও শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত জায়গাগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।</p> <p> </p> <p><span style="font-size:20px"><strong>অবশেষে বাড়ি ফেরা</strong></span></p> <p>বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া পরিবারগুলোর দুঃখ দূর করার জন্য দক্ষিণ কোরীয় সরকার বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করে—প্রযুক্তির সাহায্যে তাদের অতীতকে আবার ফিরিয়ে দেওয়ার। হোক না সেটা ভার্চুয়াল দুনিয়ায়। আর এই দুনিয়ার তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয় সিউলভিত্তিক ‘টেকটন স্পেস’ নামের একটি রিয়ালিটি প্রস্তুত প্রতিষ্ঠানকে। এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আহন হায়ো-জিন। মূলত তাঁর ওপর দায়িত্ব পড়ে এই দুনিয়া তৈরি করার।</p> <p>দুর্গম উত্তর কোরিয়ার বিভিন্ন এলাকাকে ভার্চুয়ালজগতে পুনর্নির্মাণ করার ব্যাপারটি মোটেও সহজ ছিল না। এই পুরো কাজ তাঁরা করেছেন হুনের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে পাওয়া তাঁর শৈশবের স্মৃতির সাহায্যে। হুনের বর্ণনা অনুযায়ী ছবিগুলো এঁকেছিলেন একজন শিল্পী। এই ছবিগুলোকেই পরে ত্রিমাত্রিক রূপ দেওয়া হয়।</p> <p>‘শুরুতে কাজটি অনেক কঠিন ছিল’, বলেন থ্রিডিশিল্পী মৌন জং সিক। তিনি শঙ্কায় ছিলেন—যদি এমন হয় যে তাঁদের বানানো অভিজ্ঞতাটি হুনের শৈশবের স্মৃতির ধারে-কাছেও না যায়?</p> <p>তবে তাঁর আশঙ্কা ভুল প্রমাণিত হয়। গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রথম শরণার্থী হিসেবে হুনের জন্য ভার্চুয়ালজগিট তৈরি করা হয়। সেটি দেখার পর তিনি আর কান্না ধরে রাখতে পারেননি।</p> <p>শিশুদের মতো উচ্ছ্বসিত হয়ে হুন বলে ওঠেন, ‘উত্তর কোরিয়ায় পৌঁছে গিয়েছি!’</p> <p> </p> <p><span style="font-size:20px"><strong>শরণার্থীদের নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা</strong></span></p> <p>আন মনে করছেন হুনের এই ভার্চুয়ালজগৎ তৈরি মাধ্যমে তাঁরা একটি নতুন যুগে প্রবেশ করেছেন। দক্ষিণ কোরিয়া সরকার আগ্রহ প্রকাশ করেছে প্রকল্পটিকে চালু রাখার। কেননা দক্ষিণ কোরিয়ায় এখনো সেই সময়ের অনেক শরণার্থী বসবাস করছেন। হুনের মতো আরো বেশ কিছু বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া শরণার্থীর সাক্ষাৎকার নিয়েছে টেকটন স্পেস। তারা প্রত্যেকেই শৈশবের বাসস্থানের পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও দেখা করার ইচ্ছা পোষণ করেছেন।</p> <p>হুন জানিয়েছেন, এই প্রযুক্তির মাধ্যমে তিনি বেশ খানিকটা স্বস্তি পেলেও বাস্তব জীবনে নিজের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে পারলে সবচেয়ে বেশি খুশি হবেন।</p> <p>‘আমার চাওয়াটা খুব বেশি কিছু নয়। দুই কোরিয়ার একীভূতকরণ বা এ রকম কিছু আমার অভিপ্রায় নয়। শুধু আমার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে চাই।’ বলেন হুন।</p>