ঢাকা, সোমবার ১৪ জুলাই ২০২৫
২৯ আষাঢ় ১৪৩২, ১৮ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, সোমবার ১৪ জুলাই ২০২৫
২৯ আষাঢ় ১৪৩২, ১৮ মহররম ১৪৪৭

দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে চাই

অন্যান্য
অন্যান্য
শেয়ার
দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে চাই

জাপানের সেরা তরুণ বিজ্ঞানী নির্বাচিত হলেন বাংলাদেশের ডা. আরিফ হোসেন। জাপানের চিকিৎসাবিজ্ঞানের ৬১ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো বিদেশিকে এ সম্মান দেওয়া হলো। লাইসোসোমাল রোগের কার্যপদ্ধতি এবং চিকিৎসা আবিষ্কারের জন্য ডা. আরিফ হোসেন এ সম্মাননা পেলেন! এই চিকিৎসাবিজ্ঞানীর সঙ্গে কথা বলেছেন কাজী ফারহান হোসেন পূর্ব

লাইসোসোমাল রোগটি কী?

লাইসোসোম হচ্ছে একধরনের কোষীয় অঙ্গাণু। শরীরের ভেতরেই কিছু বিষাক্ত পদার্থ তৈরি হয়।

লাইসোসোমের যে থলিগুলো আছে সেগুলোর ভেতরে হাইড্রোলাইটিক এনজাইম থাকে। এই এনজাইমগুলোর কাজ হচ্ছে বিষাক্ত পদার্থগুলোকে ভেঙে শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয় এমন পদার্থে রূপান্তরিত করা। এর মধ্যে কিন্তু অনেক ধরনের এনজাইম থাকে! যার মধ্যে যে এনজাইমটির স্বল্পতা থাকে তার সেই অসুখটা হয়! যেমন—আমি যে ফ্যাব্রি রোগ নিয়ে কাজ করেছি সেই রোগের যে এনজাইম স্বল্পতা হয় তার নাম হলো আলফা-গ্যালে।

আচ্ছা আমরা কি আগে থেকে অনুমান করতে পারব কোনো মা-বাবার হবু সন্তানের ফ্যাব্রি রোগ হবে কি না? এর কোনো প্রতিরোধ ব্যবস্থা আছে?

লাইসোসোমাল রোগগুলো আসলে জেনেটিক অসুখ।

এই জেনেটিক অসুখগুলো হলে সাধারণত যেটা হয় সেটা হলো মায়ের পেট থেকেই শিশু জিনগত সমস্যা নিয়ে জন্ম নেয়। নির্দিষ্ট জিনের ত্রুটির জন্য নির্দিষ্ট অসুখ হয়। কেউ যদি একই পরিবারে বিয়ে করে, যেমন ধরুন আপন চাচাতো বোন বা আপন চাচাতো ভাই বিয়ে করলে এই অসুখগুলো হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। কারণ তারা একই জিন বহন করে।
একই জিন বহন করার কারণে এ ধরনের রোগ হয়। প্রত্যেক মানুষের মধ্যে জিনের দুটি উইং থাকে। বিজ্ঞানের ভাষায় একে ‘এলিলি’ বলে। যদি দুটি উইংয়ে এই অসুখ না থাকে, তবে সেটা সাধারণত প্রকাশ পায় না। কখনো কখনো এমন হয় যে স্বামীর একটি উইংয়ে সমস্যা থাকলেও তা বোঝা যায় না।
কিন্তু তার চাচাতো বোন বা মামাতো বোনের মধ্যে বিয়ে হলে সন্তানের দুটি উইংয়ে এই অসুখটা চলে আসতে পারে। ফলে সেটা প্রকট হয় এবং তাদের সন্তানের অসুখ হওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকে।

প্রতিরোধের কথায় এলে এক নম্বর প্রতিরোধ হলো নিকটাত্মীয়কে বিয়ে করা যাবে না। দুই নম্বর প্রতিরোধ হলো, ধরুন কোনো পরিবারে একটি বাচ্চার এই অসুখ ধরা পড়েছে। পরে সেই মা আবার গর্ভবতী হলে তাঁর তিন থেকে চার মাস গর্ভকালীন গর্ভ থেকে ‘অ্যামনিওটিক ফ্লুইড’ বের করে আনতে হবে। সেখান থেকে আমরা সেই বাচ্চাটির ডিএনএ সংগ্রহ করব। ডিএনএতে দেখব সেখানে তার বড় ভাই বা বোনের সমস্যাটি আছে কি না! থাকলে তখন থেকেই শুরু হবে প্রতিরোধব্যবস্থা। জন্মের পরও এ রোগ নিরূপণ করা যায়। সে জন্য সেই মানুষটির ডিএনএ পরীক্ষা করে দেখতে হবে তার সেই রোগ আছে কি না। যদি রোগটি পাওয়া যায়, তবে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা নিতে হবে! ফ্যাব্রি রোগ যত দ্রুত শনাক্ত করা যাবে এবং যত দ্রুত চিকিৎসা করা যাবে রোগের লক্ষণগুলো তত দেরিতে প্রকাশ পাবে। সে হয়তো পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবে না, তবে তার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।

বাংলাদেশে ফ্যাব্রি ডিজিজের প্রকোপ কী রকম? এ রকম কি হয় যে ফ্যাব্রি রোগ হয়েছে কিন্তু আমরা বুঝতেই পারিনি?

ফ্যাব্রি একটি বিরল জেনেটিক রোগ, যা ‘আলফা-গ্যালাকটোসাইডেজ এ’ নামক এনজাইম স্বল্পতার কারণে হয়ে থাকে। রোগটি দেহের বিভিন্ন অংশ, যেমন—ত্বক, চোখ, গ্যাসট্রোইন্টেস্টাইনাল সিস্টেম, কিডনি, হার্ট, ব্রেন এবং নার্ভাস সিস্টেমকে আক্রান্ত করে। মেডিসিননেট.কমের তথ্যমতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ৪০ হাজার পুরুষের একজন এ রোগে আক্রান্ত হয়। তীব্র ব্যথা, হাত-পায়ে পুড়ে যাওয়ার অনুভূতি, নাভি থেকে গোড়ালির ত্বকে ছোট, গাঢ় লাল দাগ, শ্রবণশক্তি হ্রাস, গিরায় ব্যথা, তলপেটে অস্বস্তি ইত্যাদি হলো এ রোগের লক্ষণ।

ফ্যাব্রি রোগ বাংলাদেশেও আছে। আর এটা নিয়ে যেহেতু কেউ গবেষণা করে না, তাই কারো জানারও কথা নয়। কিন্তু ফ্যাব্রি রোগ অবশ্যই বাংলাদেশে আছে বলে আমি বিশ্বাস করি।

 

বাংলাদেশের ডাক্তার এবং গবেষকদের জন্য আপনার বার্তা!

আমরা (জাপানিজ রিসার্চ ইনস্টিটিউট) বিভিন্ন দেশের লাইসোসোমাল রোগ পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুবিধা দিই। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আমাদের ড্রাই ব্লাড পাঠিয়ে থাকে। ‘ড্রাই ব্লাড’ হলো এক রনের কাগজে রক্তের কিছু শুকনো ফোঁটা। সেই রক্ত পরীক্ষা করে তাদের রোগ নিশ্চিত করে দিই। তারপর তারা সেই রোগগুলো নির্ধারণ করে চিকিৎসা দিতে পারে। মোট কথা, রোগটি কী তা জানা গেলে কিছু না কিছু চিকিৎসা তো চিকিৎসকরা করতেই পারবেন! কিন্তু রোগটিকে যদি চিহ্নিতই না করতে পারেন, তাহলে আপনি সে রোগের চিকিৎসা দেবেন কিভাবে?

ভারতের মতো এশিয়ার বিভিন্ন দেশ, এমনকি কোরিয়াও আমাদের কাছ থেকে এসব পরীক্ষা করে নেয়। এর জন্য কিন্তু আমরা এক পয়সাও নিই না! সেই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের ডাক্তাররাও এই সুবিধা গ্রহণ করতে পারেন।

ইয়ুভাল নোয়াহ হারারির ‘স্যাপিয়েন্সে ব্রিফ হিস্টোরি অব হিউম্যানকাইন্ড’ বইয়ে যেমনটা বলা হয়েছে, মানুষ ২০৫০ সালের মধ্যে অমরত্ব লাভের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে! তা ছাড়া ড. ইয়ান পিয়ারসনসহ অনেকেই এ সময়ের মধ্যে কৃত্রিম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এবং প্রযুক্তির সাহায্যে মানুষ অমরত্ব লাভ করবে বলে ধারণা করছেন। একজন চিকিৎসাবিজ্ঞানী হিসেবে আপনার কাছে কি আদৌ এটা সম্ভব বলে মনে হয়?

বর্তমানে কিছু কিছু জায়গায় মানবদেহ সংরক্ষণের ব্যবস্থা শুরু হয়ে গেছে। অনেকে আশা করছেন প্রযুক্তির কল্যাণে আবার হয়তো তাঁরা বেঁচে উঠবেন। কিন্তু আমার কাছে এটা অবাস্তব বলে মনে হয়। মায়ের পেটে থাকা ভ্রূণের প্রাথমিক কোষগুলোই হচ্ছে এম্ব্রায়োনিক স্টেম সেল। এই এম্ব্রায়োনিক স্টেম সেলগুলো বিভাজিত হয়ে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তৈরি হয়। আমরা জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে শরীর থেকে সাধারণ কোষ নিয়ে সেই কোষটিকে এম্ব্রায়োনিক স্টেম সেলে রূপান্তরিত করতে পারি। এই পদ্ধতি প্রথম আবিষ্কার করেন জাপানের শিনইয়া ইয়ামানাকা। তাঁর পদ্ধতিটিকে অনুসরণ করে আমাদের ল্যাবেও এ কাজ করছি! এই এম্ব্রায়োনিক স্টেম সেল দিয়ে কোনো মানুষের ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন অঙ্গকে প্রতিস্থাপন করার জন্য চেষ্টা করছি। ধরুন, কোনো মানুষের একটি অঙ্গ নষ্ট হয়ে গেছে। তখন গবেষণাগারে তার ত্বক থেকে টিস্যু নিয়ে এম্ব্রায়োনিক স্টেম সেল তৈরি করে তার সেই অসুস্থ কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত অঙ্গকে প্রতিস্থাপন করতে পারব। এ মুহূর্তে জাপানে বাণিজ্যিকভাবে এম্ব্রায়োনিক স্টেম সেল দিয়ে স্পাইনাল কর্ড ইনজুরির চিকিৎসা হচ্ছে।

এখন ধরুন, এভাবে আপনি একজন মানুষের সব অঙ্গ তৈরি করার মাধ্যমে গোটা মানবদেহটাই তৈরি করে ফেললেন। কিন্তু সেটিকে ‘চালু’ বা প্রাণ দেবেন কিভাবে? এ জন্য আমার মনে হয় এটা কখনো সম্ভব হবে না।

 

আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

বাংলাদেশের গরিব মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। দেশে যেসব রোগের পরীক্ষা সহজে করা সম্ভব নয় সেসব পরীক্ষা করার ক্ষেত্রে যদি কোনো রকম ভূমিকা রাখতে পারতাম, তাহলে অনেক ভালো লাগত।

জেনেটিক রোগগুলোকে সহায়ক চিকিৎসা দিলে স্থায়ী কোনো সমাধান পাওয়া যায় না। তাই এই আইপিএস গবেষণাকে নিয়ে যদি আরো বেশি গভীরে যেতে পারি, তবে রোগের স্থায়ী কোনো চিকিৎসা সম্ভব হবে। এই গবেষণাটিকে এমন একটি জায়গায় নিয়ে যেতে চাই, সেখানে ওষুধ খেয়ে লাইসোসোমাল রোগের চিকিৎসা করা যাবে!

সম্মাননা হাতে ডা. আরিফ হোসেন

সংক্ষিপ্ত পরিচয়

ডা. আরিফ হোসেন গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর ভাটিয়াপাড়াতে জন্মগ্রহণ করেন। এগারো ভাই-বোনের মধ্যে তিনিই সবার ছোট। বাবা ছিলেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, মা ছিলেন গৃহিণী। মা চাইতেন আরিফ হোসেন বড় হয়ে বিশ্ববিখ্যাত ডাক্তার হবেন। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ থেকে শিশু বিষয়ে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে জাপানের ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেন। শিশু নিউরো-মেটাবলিক রোগের ক্লিনিক্যাল ফেলোশিপ করেন সেখান থেকেই। এই শিশু নিউরো-মেটাবলিক রোগবিশেষজ্ঞ বর্তমানে জাপানিজ রিসার্চ ইনস্টিটিউটে সিনিয়র রিসার্চার হিসেবে কাজ করছেন।

২০১৭ সালে নেচারের হিউম্যান জেনেটিকস সম্পর্কিত বিশেষ জার্নাল—‘জার্নাল অব হিউম্যান জেনেটিকসে’র সেরা তিন তরুণ বিজ্ঞানীর মধ্যে জায়গা করে নেন তিনি। নোয়েভ নামক একধরনের ছোট আকারের প্রোটিন দিয়ে ক্র্যাব্বে ডিজিজের চিকিৎসায় পৃথিবীতে তিনিই প্রথম সফল হন।

২০১৫ সালে এটি জার্নাল অব হিউম্যান জেনেটিকসে প্রকাশ পায়। পরে গবেষণাটি বিজ্ঞানীদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেলে জার্নাল অব হিউম্যান জেনেটিকসের বিশেষজ্ঞ প্যানেল তাঁকে এই সম্মাননা প্রদান করে।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

এআই দেখাবে পরিবেশ বিপর্যয়

    এখনই পরিবেশদূষণ না কমালে ভবিষ্যতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কী হাল হতে পারে, তারই একটি সিমুলেটেড চিত্র তুলে ধরতে চালু হয়েছে thisclimatedoesnotexist.com। পরিবেশ বিপর্যয়ের পর সেই জায়গাটি কেমন হতে পারে, তারই চিত্র দেখা যাবে এ সাইটে। বিস্তারিত জানাচ্ছেন এস এম তাহমিদ
শেয়ার
এআই দেখাবে পরিবেশ বিপর্যয়
জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের লালবাগ কেল্লা ডুবে যাওয়ার পর এমনই দেখা যেতে পারে

দুই বছর ধরে সাইটটি নিয়ে কাজ করছে কানাডার কুইবেকে অবস্থিত এআই ইনস্টিটিউট মিলা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিভিন্ন প্রয়োগ নিয়ে মিলা ইনস্টিটিউট কাজ করে আসছে। ২০১৯ সালে দলটি সিদ্ধান্ত নেয়, জলবায়ু পরিবর্তনের পরিণাম কতটা ভয়াবহ হতে পারে সেটা মানুষকে চোখে আঙুল তুলে দেখানোর জন্য একটি প্রজেক্ট তৈরি করার। তাদের দলে কোনো আবহাওয়াবিদ না থাকলেও মন্ট্রিয়ল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণালব্ধ অনেক তথ্যের ডাটাসেট হাতের কাছেই ছিল।

সেসব ব্যবহার করেই এআই ট্রেনিং শুরু করে তারা।

বিশ্বের সব অঞ্চল একইভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হবে না। সব জায়গায় সব ধরনের বিপর্যয় ঘটবেও না। মিলার দলটির ট্রেনিং দেওয়া এআই সূক্ষ্মভাবে তফাতগুলো আমলে নিয়ে এলাকাভিত্তিক পরিবর্তনগুলোর ভবিষ্যদ্বানী করতে পারে।

একই সঙ্গে বিপুল পরিমাণ ছবি দিয়ে নিজেদের জেনারেটিভ এআইকে ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে, যাতে নিখুঁতভাবে বন্যা, ধোঁয়াশা বা দাবানলের প্রভাব ছবিতে সেটি ফুটিয়ে তুলতে পারে। প্রায় দুই বছরের অক্লান্ত শ্রমের ফসল মিলা ইনস্টিটিউটের এ দুটি এআই মডেল।

গবেষকদের অনেক দেশ ও এলাকার দুর্যোগের বাস্তব চিত্র জোগাড় করা সম্ভব হয়নি। সে ক্ষেত্রে তাঁরা সেসব এলাকার থ্রিডি মডেল তৈরি করে সেখানে বন্যা, আগুন বা ধোঁয়াশার প্রভাব সিমুলেট করে সেই তথ্য ব্যবহার করেছেন।

সিমুলেশনের থেকে পাওয়া তথ্য এবং অন্যান্য এলাকার বাস্তব ছবি একসঙ্গে মিলিয়ে তবেই তৈরি করা হয়েছে দুর্যোগের চিত্রগুলো। ধোঁয়াশা বা আগুনের প্রভাব বেশ সহজেই এআইকে বুঝিয়ে দেওয়া গেলেও, বন্যার চিত্র জেনারেট করা শেখাতে তাঁদের বেশ কষ্ট হয়েছে। পানির প্রবাহ, অবস্থান, চারদিকের দৃশ্যের প্রতিফলনের মতো জটিল সব খুঁটিনাটি জিনিসপত্র সঠিকভাবে রেন্ডার করা না গেলে চিত্রগুলো বাস্তবসম্মত লাগবে না, সেটা দলের সবাই প্রথম দিনই বুঝতে পেরেছিলেন।

প্রজেক্টটির মূল লক্ষ্য, সবার মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো এবং সেটি ঠেকানোর জন্য পদক্ষেপ নিতে আগ্রহী করা। জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি স্ক্রিনে বা কাগজের কিছু লেখা ও সংখ্যায় আটকে থাকায় অনেকের কাছেই সেটার প্রভাব আসলে কতটা বিস্তীর্ণ হতে পারে, সেটা সব সময় অনুধাবন করা সম্ভব হয় না।

চিরচেনা জায়গাগুলো ভবিষ্যতে কিভাবে বদলে যেতে পারে, সেটা সরাসরি দেখার পর অনেকেই অভ্যাস ও আইন বদলের যে কতটা প্রয়োজন, সেটা অনুধাবন করতে পারবে।

সিমুলেশনটি দেখতে হলে তাদের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে বেছে নিতে হবে পছন্দসই জায়গা। বিশ্বের সব দেশ ও শহরেই সিমুলেশনটি কাজ করে, তাদের তথ্যের জোগানদাতা গুগল ম্যাপস স্ট্রিটভিউ। ঠিকানা বাছাই করার পর দুর্যোগের ধরন ঠিক করে দিলেই কিছু সময় পর পাওয়া যাবে এআইয়ের তৈরি ছবি। নিজের বাসা, গ্রাম থেকে শুরু করে বিখ্যাত স্থানসব ছবি সহজেই জেনারেট করা যাবে সাইটটির মাধ্যমে।

 

মন্তব্য

কী দেখা গেল গ্যালাক্সি আপ্যাকড ইভেন্টে?

    বার্ষিক গ্যালাক্সি আপ্যাকড ইভেন্ট হয়ে গেল ১০ জুলাই। এতে উন্মোচিত হয়েছে নতুন ফোল্ডিং গ্যালাক্সি ফোন, গ্যালাক্সি ওয়াচ এবং গ্যালাক্সি বাডসের পাশাপাশি স্যামসাং স্মার্ট রিংও। বিস্তারিত জানাচ্ছেন এস এম তাহমিদ
শেয়ার
কী দেখা গেল গ্যালাক্সি আপ্যাকড ইভেন্টে?

বাডস ও ওয়াচের চিরচেনা স্যামসাং ডিজাইনে এবার দেখা গেছে বড়সড় পরিবর্তন। স্যামসাং স্মার্ট রিং হতে পারে আগামীর জনপ্রিয় ফ্যাশনেবল স্মার্ট প্রযুক্তিপণ্যে। সব মিলিয়ে বলা যায়, ফোনগুলোই ছিল ইভেন্টের সবচেয়ে সাদামাটা ডিভাইস।

 

গ্যালাক্সি ফোল্ডেবল সিরিজ

স্যামসাং গ্যালাক্সি জেড ফোল্ড ৬ ডিজাইন বর্তমান জেড ফোল্ড ৫-এর কাছাকাছি।

সামনের ডিসপ্লে কিছুটা বড় করা হয়েছে, ৬.৩ ইঞ্চি ডিসপ্লেটি আগের মডেলগুলোর মতো চওড়ায় অতিরিক্ত চিকন নয়। ভেতরের ডিসপ্লে অবশ্য থাকছে অপরিবর্তিত। ক্যামেরার ডিজাইনে এসেছে কিছুটা পরিবর্তন, ট্রিপল ক্যামেরার প্রতিটি লেন্সের চারদিকে থাকছে বড়সড় বর্ডার, যাতে সহজে ক্যামেরায় দাগ না পড়ে। মূল ক্যামেরা থাকছে ৫০ মেগাপিক্সেল, টেলিফটো থাকছে ৩এক্স জুমসমৃদ্ধ ১০ মেগাপিক্সেল।
আলট্রাওয়াইডের সেন্সরটি নতুন, ১২ মেগাপিক্সেল রেজল্যুশনের সেন্সর, যাতে অন্ধকারে আরো ভালো ছবি তোলা যায়। স্ন্যাপড্রাগন ৮ জেন ৩ ফর গ্যালাক্সি প্রসেসর থাকছে ফোনটিতে, সঙ্গে ১২ গিগাবাইট র‌্যাম ও ন্যূনতম ২৫৬ গিগাবাইট স্টোরেজ। স্যামসাং অন্তত সাত বছর ফোনটিতে আপডেট দেবে বলে অঙ্গীকার করেছে। বাকি সব হার্ডওয়্যার জেড ফোল্ড ৫-এর মতোই, শুধু ফোনটি কিছুটা পাতলা ও হালকা করা হয়েছে, সঙ্গে বেড়েছে এটির আইপি রেটিং।
এক্স৫ থেকে এখন ফোনটির আইপি ৪৫ রেটিংয়ে উন্নীত হয়েছে।

জেড ফ্লিপ ৬-এর হার্ডওয়্যারও ফ্লিপের মতোই। প্রসেসর বদলে দেওয়া হয়েছে স্ন্যাপড্রাগন ৮ জেন ৩ ফর গ্যালাক্সি, ক্যামেরা হার্ডওয়্যার থাকছে এস২৪-এর মতো মূল ৫০ মেগাপিক্সেল ও আলট্রাওয়াইড ১২ মেগাপিক্সেল সেন্সর। র‌্যাম ও রম থাকছে ফোল্ডের মতোই, ১২ গিগাবাইট ও ২৫৬ গিগাবাইট। এই ফোনটিও করা হয়েছে ফ্লিপ ৫-এর চেয়ে কিছুটা পাতলা ও হালকা, ব্যাটারি ৪০০০ এমএএইচ-এ উন্নীত করা হয়েছে।

ফোনটিকে ওভারহিটিং থেকে বাঁচাতে যুক্ত হয়েছে ভেপর চেম্বার। এর বাইরে তেমন পরিবর্তন নেই।

গ্যালাক্সি জেড ফোল্ড ৬-এর দাম শুরু এক হাজার ৮৯৯ ডলার থেকে। আর গ্যালাক্সি জেড ফ্লিপ ৬-এর দাম ৮৯৯ ডলার থেকে শুরু। 

 

স্যামসাং বাডস

স্যামসাং বাডস ৩ এবং বাডস ৩ প্রো দেখতে অনেকটাই এয়ারপডসের মতো। বেশির ভাগ স্যামসাং-ভক্ত বিষয়টি নিয়ে হতাশ, এত দিন ধরে স্যামসাং নিজেদের বাডসগুলোতে এ রকম নিজস্ব ডিজাইন ব্যবহার করে আসছিল। চমৎকার সাউন্ড, ফাস্ট পেয়ারিং এবং কার্যকরী নয়েজ ক্যানসেলেশনের জন্য দুটি বাডসই অবশ্য প্রাথমিক রিভিউতে উের গেছে। বাডস ৩ প্রো মডেলে থাকছে সরাসরি বাডসের মধ্যেই লাইট স্ট্রিপ, যাতে চট করে ব্যাটারি লাইফ দেখে নেওয়া যায়। তবে এয়ারপডসের ডিজাইনের এত কাছাকাছি করে নতুন বাডস ডিজাইন করায় স্যামসাংয়ের নিজস্বতা কিছুটা ক্ষুণ্ন হয়েছে, বলেছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা।

স্যামসাং বাডস ৩-এর দাম ১৭৯ ডলার থেকে শুরু।  বাডস ৩ প্রো-এর দাম ২৪৯ ডলার থেকে শুরু।

 

গ্যালাক্সি ওয়াচ এবং রিং

অ্যানড্রয়েড ওয়্যার ওএস চালিত সবচেয়ে জনপ্রিয় স্মার্টওয়াচ সিরিজ গ্যালাক্সি ওয়াচ। নতুন গ্যালাক্সি ওয়াচ ৭-এর মূল্য থাকছে অপরিবর্তিত, ২৯৯ ডলার থেকে শুরু। চেহারাও অনেকটা ওয়াচ ৬-এর মতোই রাখা হয়েছে, বৃত্তাকার অ্যামোলেড ডিসপ্লেসমৃদ্ধ ওয়াচটি বাজারের বাকি সব চতুষ্কোণ স্মার্টওয়াচের চেয়ে একেবারেই আলাদা।

গ্যালাক্সি ওয়াচ আলট্রা স্যামসাং পরিবারে নতুন সংযোজন। চারকোনা বডি ও কমলা বাটন এবং ন্যাটো স্টাইল স্ট্র্যাপ দেখে অ্যাপল ওয়াচ আলট্রার কথাই মনে পড়বে। তবে বডি চারকোনা হলেও ডিসপ্লে থাকছে বৃত্তাকার। টাইটেনিয়াম বডি এবং স্যাফায়ার গ্লাস ডিসপ্লের ডিভাইসটি টানা ১০০ ঘণ্টা পর্যন্ত এক চার্জে চলতে সক্ষম। ডুয়াল ব্যান্ড জিপিএস, -২০ থেকে ৫৫ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রায় এবং ২৯ হাজার ৫২৭ ফিট উচ্চতায় পর্যন্ত কার্যক্ষম থাকার মতো শক্তপোক্ত ডিজাইনের ঘড়িটি তৈরি করা হয়েছে যারা অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় তাদের কথা মাথায় রেখেই। মূল্য শুরু ৬৪৯ ডলার থেকে।

 

গ্যালাক্সি রিং

স্যামসাং নিজেদের স্মার্ট রিং তৈরি করেছে হাতে স্মার্টওয়াচ না পরেই হার্টরেট, ব্রিদিং, দেহের উত্তাপ এবং ঘুমের মনিটরিং করার জন্য। বেশ কিছু ব্র্যান্ডের স্মার্ট রিং এর মধ্যেই বাজারে পাওয়া যাচ্ছে, স্যামসাংও অবশেষে বাজারে প্রবেশ করল। এক চার্জে প্রায় এক সপ্তাহ চলবে গ্যালাক্সি রিং, পাওয়া যাবে ম্যাট ব্ল্যাক, সিলভার এবং গোল্ড তিনটি রঙে। রিংটি ব্যবহার করার জন্য লাগবে অ্যানড্রয়েড ফোন, সব ফিচারের জন্য গ্যালাক্সি ফোন থাকা আবশ্যক। মূলত যারা ফ্যাশনসচেতন বা দীর্ঘ সময়, বিশেষ করে ঘুমের মধ্যে ঘড়ি পরতে আগ্রহী নয়, তাদের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে ডিভাইসটি। মূল্য ৪০০ ডলার থেকে শুরু।

মন্তব্য

ঘূর্ণিঝড় খুঁজতে ড্রোন

    সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় হারিকেনের প্রবল ঘূর্ণিবাতের কারণে উপকূল এলাকায় প্রাণ হারায় অসংখ্য জনজীবন। হারিকেনের তাণ্ডব থেকে জানমাল রক্ষার্থে এবার মাঠে নেমেছে সামুদ্রিক ড্রোন। তার কার্যকলাপ লিখেছেন আল সানি
শেয়ার
ঘূর্ণিঝড় খুঁজতে ড্রোন

উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের পশ্চিমাঞ্চল, মধ্য এবং পূর্ব-উত্তর প্রশান্ত মহাসাগর, ক্যারিবিয়ান সাগর এবং মেক্সিকো উপসাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড়কে বলা হয় হারিকেন। হারিকেনের পাঁচটি ক্যাটাগরির মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর ক্যাটাগরি-ফাইভ, যেটির গতিবেগ ২৫০ কিলোমিটারের ওপরে। তবে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড়গুলো প্রাথমিক অবস্থায় অল্প শক্তি নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও দ্রুত ক্যাটাগরি ফাইভ হারিকেনে রূপান্তরিত হচ্ছে। বিশেষ করে হারিকেন ওটিস গত বছরের অক্টোবর মাসে দক্ষিণ মেক্সিকোর উপকূলে আঘাত হানে, যার গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২৭০ কিলোমিটার।

গেরেরো রাজ্যের একটি বৃহৎ বন্দর ও জনপ্রিয় পর্যটন স্পট আকাপজল্কোতে আঘাত হেনে ব্যাপক ক্ষতি করেছিল এটি। তবে শুরুতে ওটিস এত বেশি শক্তিশালী ছিল না, আবহাওয়াবিদরা ওটিসের দ্রুত শক্তি সঞ্চয়ে কিছুটা অবাকও হয়েছিলেন। যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব রিডিং-এর গবেষকদের ২০২২ সালের একটি সমীক্ষা বলছে, সমুদ্রের তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে ছোটখাটো ঝড়ও দ্রুত হারিকেনে রূপ নিচ্ছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের আকস্মিক বিপদ থেকে আগেই সতর্ক হতে ইউএস ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এনওএএ) সেইলড্রোনের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে।
সেইলড্রোনের বানানো সামুদ্রিক ড্রোনের নাম দেওয়া হয়েছে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের নামানুসারেই।

সমুদ্রগামী ড্রোন তৈরি করা সেইলড্রোন আদতে একটি ডাটা কম্পানি। তবে তারা যে ড্রোন তৈরি করছে, এগুলো ক্রমাগত শক্তি সঞ্চয়কারী হারিকেনের গতিবিধি নজর রাখতে এখন পর্যন্ত শতভাগ সক্ষম। এই সেইলড্রোনগুলো সেন্সরের মাধ্যমে সমুদ্র ও বায়ুমণ্ডলের অবস্থার তথ্য সংগ্রহ করে সরকারি সংস্থার কাছে রিলে করে প্রেরণ করে এবং পরবর্তী সময়ে বিজ্ঞানীরা এসব ডাটা বিশ্লেষণ করে ঝড়ের সম্ভাব্য অবস্থান ও গতিবিধির ব্যাপারে সচেতন হয়।

বায়ু অথবা সৌর যেকোনো নবায়নযোগ্য শক্তি দিয়ে চলা এসব ড্রোন দেখতে অনেকটা পালতোলা নৌকার মতো। প্রয়োজন অনুসারে বিভিন্ন আকারের ড্রোন বানিয়েছে সেইলড্রোন। ২৩ ফুট, ৩৩ ফুট বা ৬৫ ফুটসব ধরনের ড্রোন আছে তাদের। সূর্যের তীব্রতা, বায়ু চলাচলের পথসব কিছু ট্র্যাক করে যথেষ্ট তথ্যবহুল ডাটা প্রদান করে বলে দিন দিন নির্ভরযোগ্য যন্ত্রে পরিণত হচ্ছে এগুলো। সেইলড্রোনগুলো সমুদ্রের পানির নিচের ঢেউ থেকেও ডাটা ক্যাপচার করতে পারে ও সমুদ্রের স্রোত বিশ্লেষণ করতে সক্ষম এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের ওপরে ৩০০০০ ফুট (৯১৪৪ মিটার) ও নিচের দিকে ১০০০ ফুট (৩০০ মিটার) গভীরতায় পরিষ্কার ছবিও তুলতে পারে।
সেইলড্রোনের মিশন ব্যবস্থাপনার পরিচালক জুলিয়া প্যাক্সটন বলেন, সামুদ্রিক এই ড্রোনগুলোর কাজ হারিকেনের ভবিষ্যদ্বাণী করা নয়, শুধু হারিকেনগুলো কেন ও কিভাবে তীব্র হয়ে উঠছেসেসব বিষয়ে গবেষণা করা, যেন ভবিষ্যতে এই ধরনের ঝড়ের মডেলিং আমরা আরো উন্নত করতে পারি। সেইলড্রোনের থেকে প্রাপ্ত তথ্যের মাধ্যমে এনওএএ-এর বিজ্ঞানীরা একটি কম্পিউটার মডেল তৈরি করার চেষ্টা করছেন, যার ফলে হারিকেন কোথায়, কত শক্তিতে আঘাত হানতে পারেতা আরো নিখুঁতভাবে জানতে সক্ষম হয়। আর এ তথ্যই ঘূর্ণিঝড়প্রবণ অঞ্চলগুলোর জানমালের নিরাপত্তায় কাজ করবে বলে আশাবাদী সবাই।

মন্তব্য

আরিয়ানের রোবটেরা

    একদিকে শ্রমিকের অভাব, অন্যদিকে কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের নিরাপত্তাহীন জীবন—এই দুইয়ের মাঝে জায়গা করে নিয়েছে ‘গ্রে ম্যাটার রোবোটিকস’। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটির সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বুয়েটিয়ান আরিয়ান কবিরের পথচলার গল্প জানাচ্ছেন আল সানি
শেয়ার
আরিয়ানের রোবটেরা
আরিয়ান কবির

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক ছাত্র আরিয়ান কবির ২০২০ সালে তাঁর দুই ভারতীয় সতীর্থ ব্রুয়াল শাহ ও সতেন্দ্র কে. গুপ্তাকে নিয়ে শুরু করেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবোটিকস বিষয়ক প্রতিষ্ঠান গ্রে ম্যাটার রোবোটিকস। প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক হলেও সেবা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রসহ শিল্পোন্নত দেশগুলোতে।

বিশ্বব্যাপী রোবোটিকসকে এগিয়ে নিতে সৃজনশীল ও শক্তিশালী উদ্ভাবকদের দেওয়া হয় বিআরআর৫০ ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ড। ২০২০ সালে যেটি পায় গ্রে ম্যাটার রোবোটিকস।

 

শুরুর কথা

আরিয়ান কবির পড়াশোনা করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিষয় নিয়ে। তবে বুয়েটে ভর্তির আগে থেকেই আরিয়ানের বেশ আগ্রহ ছিল রোবট নিয়ে। দৈনন্দিন কাজকে সহজ করে দেওয়া, বিপজ্জনক কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে করা ইত্যাদি কাজের জন্য রোবট কিভাবে বানায়, সেসবও ছিল তাঁর চিন্তায়। তবে আরিয়ান চাইতেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে এসব রোবট স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিক।

এসব চিন্তা-ভাবনা থেকেই রোবট ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সংযোগ বিষয়ে পড়াশোনা করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের খোঁজখবর নিয়ে চলে আসেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ডে। ২০১৩ সালে স্নাতক শেষ করলেও স্নাতকোত্তর না করেই সরাসরি পিএইচডি প্রগ্রামে যুক্ত হন আরিয়ান। পিএইচডি প্রগ্রামে তিনি গুরুত্ব দিয়েছিলেন বিভিন্ন রোবোটিকস সিস্টেমকে অটোনোমাস (স্বয়ংক্রিয়) কিভাবে করা যায় সেসব বিষয়ে।
প্ল্যানিং ও লার্নিং অ্যালগরিদম ব্যবহার করে কঠিন ও জটিল কাজে রোবোটিক সিস্টেম উন্নত করাই ছিল তাঁর লক্ষ্য।

২০১৬ সালে আরিয়ান তাঁর অধ্যাপকের সঙ্গে ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ায় চলে আসেন। সেখানকার ল্যাবে বিভিন্ন শিল্প উৎপাদকের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। তখন বড় একটি অ্যারোস্পেস প্রতিষ্ঠান থেকে জানতে পারেন তারা নিজেদের মাল্টি মিলিয়ন ডলারের হেলিকপ্টার ব্লেড এখনো হাতে বানায়। তবে এই কাজে প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিল ওই সময়।

বিশেষ করে ফিনিশিংয়ের কাজের জন্য দীর্ঘ সময় শ্রমিক নিয়োগ ও রাসায়নিকের প্রভাবে তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি ছিল চিন্তার কারণ। পুরনো কর্মী ও শ্রমিকরা অবসর নেওয়ার পর নতুনরা খুব বেশিদিন এসব কাজে মনোসংযোগ করতে পারছিল না। আর এসব কারণে তারা পড়েছিল শ্রমিক সংকটে। একটু গবেষণা করে ওই সময় আরিয়ান জানতে পারেন যুক্তরাষ্ট্রে ৯৮ শতাংশ ম্যানুফ্যাকচারিং কম্পানি রোবট ব্যবহার করে না। আর তাই যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল এই বাজারে জায়গা করে নিতে আরিয়ান ও তাঁর সহকর্মীরা মিলে গড়ে তোলেন গ্রে ম্যাটার রোবোটিকস

 

শ্রমিক সংকট থেকে মুক্তি দিতে 

যুক্তরাষ্ট্রে শ্রমিক সংকট নতুন নয়। ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোর বেশ কিছু অঞ্চলে ৪৪ হাজারের বেশি রোবট অর্ডার করেছিল বিভিন্ন কম্পানি। প্রযুক্তি কম্পানিগুলোর সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন ফর অ্যাডভান্সিং অটোমেশন বা এ৩-এর তথ্য বলছে, ২০২১ সালের চেয়ে এটি ১১ শতাংশ বেশি। রোবট শ্রমিকের বাজার দাঁড়িয়েছে ২৩৮ কোটি ডলারে, যা আগের বছরের চেয়ে ১৮ শতাংশ বেশি। চলতি বছরও যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিক সংকট বেড়েছে ক্রমবর্ধমান হারে। সবচেয়ে বেশি শ্রমিক ঘাটতি উৎপাদন শিল্পে। প্রায় আড়াই ট্রিলিয়ন ডলারের এই উৎপাদনশিল্পে বিপজ্জনক বিভিন্ন কাজের জন্য শ্রমিক মেলানো কঠিন, যার কারণে ক্রয়াদেশের পাহাড় ক্রমাগত বেড়েই চলছে। অনেক কারখানারই ব্যাকলগে পড়ে আছে দুই থেকে তিন বছরের কাজ। এই সংকট মোকাবেলায় বিভিন্ন দেশ থেকে শ্রমিক আমদানি করা হলেও প্রশিক্ষণের অভাবে তাঁদেরও কাজে লাগানো যাচ্ছে না পুরোদমে। পরিসংখ্যান বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৩৮ লাখ শ্রমিকের পদ শূন্য। শূন্য পদের বিপরীতে যখন মানব শ্রমিকের অভাবে ধুঁকছে শিল্পোন্নত এসব দেশ, সেখানেই এগিয়ে এসেছে আরিয়ান কবিরের প্রতিষ্ঠান। গ্রে ম্যাটার রোবোটিকস প্রতিনিয়ত নতুন নতুন কর্মদ্দীপ্ত এআইসমৃদ্ধ রোবট নিয়ে হাজির হচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠানে। মানব শ্রমিকের চেয়ে কম খরচ ও প্রায় শূন্য ঝুঁকির কারণে শিল্পসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো ঝুঁকছে গ্রে ম্যাটার রোবটিকসের দিকে।

 

সাধারণ থেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবট

গ্রে ম্যাটার রোবোটিকস নিজেরা বানায় না কোনো রোবট। যে কাজের জন্য তাদের রোবট লাগে, সেই কাজের উপযোগী রোবট তারা বাজার থেকে কিনে আনে। হার্ডওয়্যারভিত্তিক এই রোবটগুলোতে তারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রগ্রাম সেট করে দেয়। আরিয়ানের প্রতিষ্ঠানটি মূলত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) একটি সফটওয়্যার কম্পানি। স্পেসিফিক সেন্সর, টুলস যুক্ত করে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের মাধ্যমে তারা বাজারের সাধারণ রোবটকে বানিয়ে তোলে একটি বুদ্ধিমান যন্ত্র হিসেবে। বর্তমানে তাদের রোবট বিভিন্ন সারফেস ফিনিশিংয়ের কাজে বেশি ব্যবহৃত হয়। সেন্ডিং, পলিশিং, কোটিং, গ্রাইন্ডিং, পেইন্টিংসহ যেখানে হাত দিয়ে কাজ করা হয়, সেখানেই কাজ করে এটি।

আরিয়ানের রোবটেরা

ভাড়ায় খাটা রোবট

আরিয়ানের প্রতিষ্ঠানের রোবটগুলো গ্রাহকরা না কিনেও ব্যবহার করতে পারে। এ ক্ষেত্রে শ্রমিকের মতো ভাড়া নেওয়ার সুবিধা রাখা হয়েছে। আর এ কারণে রোবট কেনার জন্য এককালীন বিশাল খরচ থেকে বেঁচে যায় কারখানাগুলো এবং ক্রয়াদেশের ওপর ভিত্তি করে রোবট কম-বেশি করে ভাড়াও নিতে পারে তারা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে এসব রোবটের উৎপাদনশীলতা ও দক্ষতা মানব শ্রমিকের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।

 

বিনিয়োগ যখন ৭৩১ কোটি টাকার

আরিয়ানের প্রতিষ্ঠান প্রায় দুই বছর আগে বিনিয়োগ পেয়েছিল ২০০ কোটি টাকার বেশি। চলতি বছর তারা বিনিয়োগ পেয়েছে আগেরবারের চেয়ে প্রায় তিন গুণ। বাংলাদেশি টাকায় ৫৩১ কোটি বা সাড়ে চার কোটি ডলারের বি সিরিজ বিনিয়োগে সবার প্রথমে নাম আসে ওয়েলিংটন ম্যানেজমেন্টের। তা ছাড়া এই বিনিয়োগে যুক্ত আছে এনজিপি ক্যাপিটাল, ইউক্লিডিয় ক্যাপিটাল, অ্যাডভান্স ভেঞ্চার পার্টনারস ও এসকিউএন ভেঞ্চার পার্টনারস। থ্রিএম ভেঞ্চারস, বি ক্যাপিটাল, বো ক্যাপিটাল, ক্যালিব্রেট ভেঞ্চারস, ওসিএ ভেঞ্চারস ও সুইফ ভেঞ্চারসের বিনিয়োগে আরিয়ান কবিরের প্রতিষ্ঠান যুক্ত হয়েছে আগেই। সাড়ে চার কোটি ডলারের নতুন বিনিয়োগ দিয়ে গ্রে ম্যাটার রোবোটিকস আরো নতুন ধরনের পণ্য ও সেবা নিয়ে কাজ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন এর উদ্যোক্তারা। তা ছাড়া পুরনো গ্রাহকদের নতুন যেকোনো চাহিদা পূরণ করতেও রাখা হয়েছে আলাদা বরাদ্দ। বাকি অর্থ ব্যয় হবে নতুন নতুন গ্রাহক সৃষ্টি ও মার্কেটিংয়ের কাজে।

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ