সাম্প্রতিক সময়ে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ডালই ও মিডজার্নির মতো জেনারেটিভ এআইয়ের ছবি আঁকার সিস্টেম। এসব সিস্টেম যেকোনো লেখাকে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ছবিতে রূপান্তর করে ফেলতে পারে। তেমনই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ছবি আঁকেন শিল্পী পিন্ডার ভ্যান আরম্যান। ১৫ বছর আগে নিজের প্রথম ‘পেইন্টিং রোবট’টি তৈরি করেন আরম্যান।
তিনি রোবট দিয়ে ছবি আঁকেন
সাদিয়া আফরিন হীরা

ভ্যান আরম্যান বলেন, ‘আমার রোবটগুলো শুধু কাজে সহায়তাই করছে তা-ই নয়, বরং কার্যকরভাবে আমার সৃজনশীলতাও বৃদ্ধি করছে।
আরম্যানের ছয় ফুট উচ্চতাসম্পন্ন রোবটটি ১৩ হাজার ৯৪০টি তুলির আঁচড় দিয়ে দীর্ঘ ২২ ঘণ্টা পর আরম্যান ও নিজের প্রতিকৃতি আঁকতে সক্ষম হয়।
যেভাবে কাজ করে
ভ্যান আরম্যান কোয়ান্টাম কম্পিউটারের সাহায্যে র্যান্ডম সংখ্যা তৈরি করে থাকেন, তার ওপর ভিত্তি করেই তৈরি করা হয় চিত্রের পটভূমি। এরপর বিভিন্ন ফলাফল তখন ক্যানভাসের পেছনে একটি খুব ছোট প্যাটার্নে মুদ্রিত হয়।
আরম্যান বলেন, ‘তারপর আমার একটি প্রতিকৃতির ছবি এবং রোবটের একটি ছবি তুলেছিলাম। পূর্ববর্তী ধাপের কিউবিটগুলোর ত্রুটিগুলো পরিচয় করিয়ে দিতে এবং আমার ও রোবটের ফটোগুলোকে ব্যবহার করে।’ ভ্যান আরম্যান জানান, বিভিন্ন ধরনের ৫০০টি ছবি তৈরি করা হয়। এরপর সেই ৫০০টি ছবিকে একটি জেনারেটিভ অ্যাডভারসারিয়াল নেটওয়ার্কে দেওয়া হয়। এরপর রোবটটি এক ধরনের এআই প্যাটার্নের সন্ধান করে।
ভ্যান আরম্যান তারপর তাঁর প্রতিকৃতিটি রোবটের প্রতিকৃতির সঙ্গে একত্র করেন এবং ফলাফলটি রোবটকে দেন। রোবটটিকে তখন আটটি ট্রান্সলুসেন্ট পেইন্ট দেওয়া হয়েছিল এবং আন-স্ক্র্যাম্বল ছবিগুলোকে ক্যানভাসে চিত্রের মতো দেখাতে বলা হয়।
তারপর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবটটি ব্রাশস্ট্রোক দেওয়া শুরু করল এবং ভাবতে লাগল কিভাবে ক্যানভাসের দিকে তাকাবে, পেছনে সরে যাবে। একই সময়ে ছবি আঁকার প্রক্রিয়াটি এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরম্যান ছবি আঁকার ব্রাশগুলোকে মোটা থেকে আরো চিকন করতে থাকেন। অবাক করা বিষয়, যতক্ষণ না সম্পূর্ণ চিত্রটি ক্যানভাসে ফুটে না উঠল চিন্তাশক্তিসম্পন্ন রোবটটি নিজেকেই আবার জিজ্ঞাসা করল, ‘ক্যানভাসটিকে আমার মেমোরিতে থাকা চিত্রের মতো দেখাতে কিভাবে ছবিটি আঁকতে পারি?’ ভ্যান আরমান তাঁর রোবটের কাজ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এসব তথ্য জানান।
শেষ পর্যন্ত ধীরে ধীরে ছবিটি সম্পূর্ণ করতে সক্ষম হয় রোবটটি।
এসব কার্যকলাপ দেখার পর মনে একটি প্রশ্ন সবারই জাগে, মেশিন কি আসলেই সৃজনশীল হতে পারে?
আর এই প্রশ্নের উত্তরে ভ্যান আরম্যান বলেন, হ্যাঁ, যখন একটি কৃত্রিম চিন্তাশক্তিসম্পন্ন মেশিন কিংবা রোবট কোনো একটি (সৃজনশীল) সমস্যার সমাধান করে, এর মানেই এসব সৃজনশীল।
সম্পর্কিত খবর

একনজরে
স্বল্পমূল্যে ম্যাকবুক আনছে অ্যাপল
টেকবিশ্ব ডেস্ক

এম সিরিজ প্রসেসরযুক্ত ম্যাকবুক বাজারে আনার পর থেকে ল্যাপটপ বাজারে নিজেদের আধিপত্য ধরে রেখেছে অ্যাপল। তবে মাঝারি মূল্যের ল্যাপটপ বাজার এখনো উইন্ডোজ ল্যাপটপের দখলে, সেটি বদলাতে চাইছে তারা। জোরালো গুঞ্জন উঠেছে, আগামী বছরের শুরুতে ৬০০-৭০০ ডলার মূল্যের একটি ম্যাকবুক বাজারে আসছে। সম্ভবত ১২ ইঞ্চি ম্যাকবুকের নতুন সংস্করণ হতে যাচ্ছে এটি।
এর আগে ২০১৬ সালে ১২ ইঞ্চি ম্যাকবুক মডেল বাজারে এনেছিল অ্যাপল, সেটি ছিল প্রথম ইউএসবি সি যুক্ত ম্যাক। এবারের মডেলটিতেও নতুন প্রযুক্তি ব্যবহৃত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এতে এম সিরিজ নয়, বরং আইফোনের অ্যাপল এ১৮ প্রো প্রসেসর দেওয়া হবে।
যদি ল্যাপটপটির মূল্য ৭০০ ডলারের কম হয়, সে ক্ষেত্রে মাঝারি বাজেটের উইন্ডোজ ল্যাপটপের বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠবে এটি।
দেশীয় ওয়েবসেবা ফ্রি ডকুমেন্ট মেকার
বাংলাদেশে তৈরি একটি উদ্ভাবনী ও সম্পূর্ণ ফ্রি সফটওয়্যার প্ল্যাটফর্ম ‘ফ্রি ডকুমেন্ট মেকার’, খুব অল্প সময়েই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এটি। এআই প্রযুক্তিনির্ভর এ প্ল্যাটফর্মটির মাধ্যমে বিনা মূল্যে ইনভয়েস, রিসিপ্ট, কোটেশন, সিভি, সার্টিফিকেট এবং ইমেজ থেকে পিডিএফ কনভার্ট করা যায়। মোট ৩০টিরও বেশি টুল রয়েছে এই সেবায়। সম্পূর্ণ ব্রাউজারভিত্তিক, স্মার্টফোনে ব্যবহারের জন্য ওয়েবসাইটটি মোবাইল-ফ্রেন্ডলি করে তৈরি করা হয়েছে।
ফ্রি ডকুমেন্ট মেকারের প্রধান ডেভেলপার মো. সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘শিগগিরই মোবাইল অ্যাপ, ক্রোম এক্সটেনশন এবং বাংলা ভাষার সম্পূর্ণ সংস্করণ প্রকাশ করা হবে। পাশাপাশি দেশের ফ্রিল্যান্সারদের জন্য থাকবে বিশেষ টেমপ্লেট ও কাস্টম ফিচার।’

অ্যানড্রয়েড ১৬ নতুনত্ব নেই
আশিক উল বারাত

নতুন সংস্করণের নাম অ্যানড্রয়েড ১৬ হলেও জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেমটির এটি আসলে ৩৬তম সংস্করণ। প্রায় দুই দশক আগে ২০০৮ সালে যখন অ্যানড্রয়েডের যাত্রা শুরু হয়, তখনো স্মার্টফোনের ফিচারগুলো কেমন হওয়া উচিত সে বিষয়ে কোনো পরিষ্কার রোডম্যাপ ছিল না। প্রতিটি সংস্করণেই নতুন ডিজাইনের ইন্টারফেসের পাশাপাশি আনকোরা নতুন সব ফিচারের দেখা পাওয়া যেত। সময়ের সঙ্গে অ্যানড্রয়েড এখন পরিপক্ব হয়ে উঠেছে।
অ্যানড্রয়েড ১৬ আপডেটটির সঙ্গে ১৫-এর পার্থক্য সামান্যই।
নিরাপত্তার জন্য আপডেটটিতে যোগ করা হয়েছে অ্যাডভান্সড প্রোটেকশন ফিচার।
নতুন ফিচারের অভাবের মূল কারণ, গুগল এখন থেকে বেশির ভাগ নতুন ফিচার আলাদা অ্যাপ আকারে সব ব্যবহারকারীর কাছে পৌঁছে দেবে। যেমন—নতুন ‘ফাইন্ড মাই’ সিস্টেম বা কুইক শেয়ার ফিচার সিস্টেম আপডেটের অংশ না করে আলাদা অ্যাপ আকারে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে পুরনো অ্যানড্রয়েড সংস্করণ ব্যবহারকারীদের ফোনেও।

স্পটিফাইয়ে এআই ব্যান্ডের বাজিমাত
- শিল্পচর্চার আদি ও অকৃত্রিম মাধ্যম সংগীত। কালের বিবর্তনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার তৈরি সংগীত জনপ্রিয়তা পাবে—এমনটা কয়েক বছর আগেও ভাবেনি অনেকে। এআই আর্টের মতো এআই সংগীতও শ্রোতারা বর্জন করবে—আশা করেছিলেন অনেক শিল্পী। তবে স্পটিফাইয়ে একটি এআই ব্যান্ডের তুমুল জনপ্রিয়তা নতুন করে ভাবাচ্ছে সবাইকে। এআই ব্যান্ড ‘দ্য ভেলভেট সানডাউন’ নিয়ে লিখেছেন শাহরিয়ার মোস্তফা

জুনের শুরুতে ‘দ্য ভেলভেট সানডাউন’ নামের একটি ব্যান্ড জনপ্রিয় মিউজিক স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম স্পটিফাইয়ে প্রোফাইল তৈরি করে। দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে তাদের গান। মাস শেষে দেখা যায়, পাঁচ লাখেরও বেশি শ্রোতা প্রতিনিয়ত ভেলভেট সানডাউনের গান শুনছে। মাত্র এক মাসে স্পটিফাইয়ে পাঁচ লাখ শ্রোতার অডিয়েন্স গড়ে তোলা অত্যন্ত কঠিন।
মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে দুটি অ্যালবাম প্রকাশ করেছে দ্য ভেলভেট সানডাউন।
যদিও ব্যান্ডটির বায়োগ্রাফি বলছে ভিন্ন কথা। সেখানে লেখা রয়েছে, ব্যান্ডটির চার সদস্যের নাম—গেইব ফ্যারো, লেনি ওয়েস্ট, মাইলো রেইনস ও ওরিওন ‘রিও’ ডেল মার। কিন্তু কোনো সদস্যেরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা অন্য কোনো প্ল্যাটফর্মে প্রোফাইল নেই, কোনো ছবিও খুঁজে পাওয়া যায় না তাঁদের।
দ্য ভেলভেট সানডাউনকে বলা যায় ১৯৭০-এর দশকের ফোক এবং সাইকাডেলিক রক ঘরানার ব্যান্ড। কিছু অল্ট-পপ এবং আধুনিক ইন্ডি ব্যান্ডের প্রভাবও আছে। গানের কথাগুলো বেশ অর্থহীন, সাইকাডেলিক রকের ক্ষেত্রে সেটি অবশ্য বেমানান নয়। তবে রেডিট এবং অন্যান্য ফোরামে ব্যবহারকারীরা বলছে, ব্যান্ডটির গানগুলোও লিখেছে এআই। অসংলগ্ন লিরিক তার প্রমাণ। এমনকি এ-ও হতে পারে, শ্রোতাগুলোও বট অ্যাকাউন্ট। অর্থাৎ এআইয়ের তৈরি সংগীত ‘শুনছে’ অন্য এআই অথবা যন্ত্র, শিল্পী বা শ্রোতা কোনোটিই মানুষ নয়।
সংগীত ও চিত্রকর্ম জেনারেট করা থেকে শুরু করে স্পটিফাইয়ে আপলোড করা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রোফাইল তৈরি অবশ্যই কোনো ব্যক্তির কাজ। এ থেকে সে লাভবানও হচ্ছে, প্রতিবার এ ব্যান্ডের গানগুলো স্ট্রিম করলে অল্প কিছু রাজস্ব তার অ্যাকাউন্টে জমা হচ্ছে। ব্যান্ডটির বিষয়ে তুমুল সমালোচনার পরও দ্য ভেলভেট সানডাউনের প্রোফাইল বন্ধ করেনি স্পটিফাই। সে ক্ষেত্রে বলা যায়, এআই জেনারেটেড সংগীতকে উৎসাহিত করছে জনপ্রিয় এই প্ল্যাটফর্ম। আরেকটি স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম ডিজার অবশ্য এ ব্যান্ডটিকে ‘এআই’ ট্যাগ দিয়েছে। ডিজারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্ল্যাটফর্মটিতে যোগ দেওয়া নতুন শিল্পীদের মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশই এখন এআই। ভবিষ্যতে এর সংখ্যা আরো বাড়বে।
এআই ব্যবহার করে তৈরি সংগীতকে কি শিল্পকর্ম বলা যায়? বা এই গানগুলোর জন্য প্ল্যাটফর্মগুলোর রাজস্ব দেওয়া ঠিক হচ্ছে কি না—এ বিষয়ে ইন্টারনেটের বিভিন্ন ফোরামে চলছে তুমুল বিতর্ক এবং সমালোচনার ঝড়। ইন্ডি শিল্পীরা বলছেন, এআই সংগীতকে একই পাল্লায় মাপায় তাঁদের অবমূল্যায়ন করছে স্পটিফাই। কিছু শিল্পী এ-ও বলেছেন, স্পটিফাই ইচ্ছা করেই এআই জেনারেটেড সংগীতকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এতে করে এআই সংগীত স্ট্রিম হবে বেশি, বাস্তব শিল্পীদের গান শুনবে কম মানুষ। এতে বাস্তব শিল্পীদের স্পটিফাইয়ের কম রাজস্ব দিতে হবে, খরচ কমে যাবে তাদের। কারণ এআই সংগীতের রাজস্ব হার অনেক কম।
অন্যদিকে বিভিন্ন ফোরামে অনেক ব্যবহারকারী এআই সংগীতকে ফটোগ্রাফির সঙ্গে তুলনা করেছে। তারা বলছে, তৈলচিত্রের সঙ্গে আলোকচিত্র যেমন তুলনা করা উচিত নয়, তেমনি এআই জেনারেটেড কনটেন্টের সঙ্গে মানবসৃষ্ট শিল্পের তুলনা করাও ভুল। দুটোর ক্ষেত্র আলাদা, একে অন্যের পরিপূরক নয়।
এর আগে ‘দ্য ডেভিল ইনসাইড’ নামের একটি ব্যান্ডের বিরুদ্ধেও এআই ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। দুই বছরের মধ্যে ১০টি অ্যালবাম কিভাবে তারা প্রকাশ করল, নিজের টক শোতে এ প্রশ্ন করেছেন জন অলিভার। মজার বিষয়, দ্য ভেলভেট সানডাউনের সঙ্গে এ ব্যান্ডটির [দ্য ডেভিল ইনসাইড] গানের বিষয়বস্তু এবং সুরের মিল রয়েছে। সম্ভবত দুটি ব্যান্ড একই এআই মডেল ব্যবহার করে তৈরি।

ফ্রিল্যান্সিং শুরুর আগে
- ইন্টারনেটের মাধ্যমে চুক্তিভিত্তিক রিমোট জব বা ফ্রিল্যান্স কাজের বাজার দ্রুত বদলাচ্ছে। আপওয়ার্ক বা ফাইভারের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোতে এআই সম্পর্কিত কাজের সংখ্যা বাড়ছে, এসব কাজ থেকে আয়ের পরিমাণও বেশি। ফ্রিল্যান্স জব মার্কেটের ট্রেন্ড নিয়ে লিখেছেন এস এম তাহমিদ

ক্যারিয়ার হিসেবে ফ্রিল্যান্সিং জনপ্রিয়। তবে ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য কী ধরনের কাজ শেখা উচিত, সেটা অনেকেই বুঝে উঠতে পারে না। ডিজিটাল মার্কেটিং, কপিরাইটিং আর গ্রাফিকস ডিজাইন কোর্সের চক্করেই রয়ে যায় অনেকে। সহজে ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার শুরুর জন্য বহুদিন পর্যন্ত এ ধরনের কাজই ছিল সেরা।
ফ্রিল্যান্স কাজের ক্ষেত্রে দুভাবে এর মূল্য নির্ধারণ করা হয়—ছোট কাজের ক্ষেত্রে এককালীন পেমেন্ট, আর দীর্ঘমেয়াদি কাজে ঘণ্টাপ্রতি। তাই কোন ক্ষেত্রে সফলতার সম্ভাবনা কত, সেটি ঘণ্টাপ্রতি আয়ের হারে বিচার করা হয়।
মেশিন লার্নিং ইঞ্জিনিয়ার
শীর্ষে আছে মেশিন লার্নিং ইঞ্জিনিয়ার, অর্থাৎ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কিত কাজ। এই কাজগুলোর জন্য প্রতি ঘণ্টায় ৫০ থেকে ২০০ ডলার পর্যন্ত দিচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।
মেশিন লার্নিং ইঞ্জিনিয়ারিংকে বলা যায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাটা অ্যানালিসিসের মেলবন্ধন। ট্রেন্ডের সঙ্গে তাল মেলাতে সেবাগুলোর মধ্যে এআই যোগ করার চেষ্টা করছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। সেটা হতে পারে ওপেনএআই বা গুগলের এআই কাজে লাগিয়ে গ্রাহক সেবাদানকারী চ্যাটবট তৈরির মতো তূলনামূলক সহজ কাজ, অথবা লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল (এলএলএম) ট্রেনিং করে বিশেষায়িত এআই তৈরির মতো জটিল প্রজেক্ট।
মিডিয়া বায়ার
স্পন্সরড ভিডিও-বিজ্ঞাপন প্রচারের উপায় অনেক—খবরের কাগজ বা ম্যাগাজিনের পাতায় ছাপা বিজ্ঞাপন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চালানো প্রচারণা অথবা টিকটক বা ইউটিউবে আপলোড করা।
ক্লায়েন্টের পণ্য বা সেবার ধরন এবং বাজেট অনুযায়ী বিজ্ঞাপনের স্ট্র্যাটেজি ঠিক করা মিডিয়া বায়ারদের কাজ। এ ক্ষেত্রটিতে অভিজ্ঞতা থাকা গুরুত্বপূর্ণ। যারা অন্তত কয়েক বছর বিজ্ঞাপন নিয়ে কাজ করেছে, বোঝে কোন ডেমোগ্রাফিকের কাছে কী ধরনের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে পৌঁছানো সম্ভব—তারাই মিডিয়া বায়ার হিসেবে সফল হয়।
পাবলিক রিলেশনস ম্যানেজার
পাবলিক রিলেশনস (পিআর) ম্যানেজাররা কাজ করে প্রতিষ্ঠানের মুখপাত্র হিসেবে। এ ধরনের কাজের মূল লক্ষ্য, জনসাধারণের মধ্যে পরিচিতি ও মর্যাদা ধরে রেখে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কার্যকলাপ সম্পর্কে প্রচারণা চালানো। প্রতিদিনের কাজের মধ্যে রয়েছে প্রেস রিলিজ লেখা এবং বিভিন্ন ধরনের গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ প্ল্যাটফর্মে সেগুলো প্রকাশ করা। সে জন্য প্রতিটি পিআর ম্যানেজারের সঙ্গে সাংবাদিক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের সুসম্পর্ক থাকা জরুরি। প্রতিষ্ঠানের কার্যকলাপ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্নের মুখোমুখিও হতে হয় পিআর ম্যানেজারদের। এই ক্ষেত্রটিতে কাজ করার বড় দায়িত্ব হলো ক্রাইসিস মোকাবেলা করা। কোনোভাবেই প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা নষ্ট করা যাবে না।
ফ্রিল্যান্স প্ল্যাটফর্মগুলোতে পিআর ম্যানেজারের কাজ প্রতিনিয়ত বাড়ছে, ২০৩৩ সাল পর্যন্ত এই ক্ষেত্রে কাজের পরিমাণ প্রতিবছর অন্তত ৭ শতাংশ করে বৃদ্ধি পাবে। পিআর ম্যানেজারদের আয় ঘণ্টাপ্রতি ৫০ থেকে ১০০ ডলার পর্যন্ত হয়ে থাকে।
সাইবার সিকিউরিটি ডেভেলপার
প্রতিনিয়ত নতুন ধরনের সাইবার হামলা ও ম্যালওয়্যার তৈরি করছে হ্যাকাররা, তাদের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে থাকতে যা করণীয় সবই সাইবার সিকিউরিটি ডেভেলপারের কাজ। ওয়েবসাইট বা সফটওয়্যারের ত্রুটি সারানো, ফায়ারওয়াল এবং অথেন্টিকেশনের নিরাপত্তা জোরদার করা থেকে শুরু করে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নিরাপত্তা সিস্টেম তৈরি করারও প্রয়োজন হতে পারে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের চাহিদা ভিন্ন, একই নিরাপত্তাব্যবস্থা সব ক্ষেত্রে কার্যকর নয়। সঠিক নিরাপত্তাব্যবস্থা ঠিক করার মতো অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে এ ধরনের কাজ করে ঘণ্টাপ্রতি ৪০ থেকে ৯০ ডলার পর্যন্ত আয় করা যায়। এ ক্ষেত্রটিতে কাজের সুযোগও বাড়ছে দ্রুত, ২০৩৩ সাল পর্যন্ত বছরপ্রতি ৩৩ শতাংশ হারে এ কাজের পরিধি বাড়বে।
ভিডিও এডিটিং
ফ্রিল্যান্স প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ভিডিও এডিটর নিয়োগ করে অনেক কনটেন্ট নির্মাতা। কাজের দক্ষতা অনুযায়ী ঘণ্টাপ্রতি ১০ থেকে ৭০ ডলার পর্যন্ত আয়ের সুযোগ আছে। ইউটিউব এবং টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোর জনপ্রিয়তা এবং কনটেন্টের চাহিদা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাওয়ায় এ ক্ষেত্রটিতে কাজের সুযোগও বাড়ছে প্রতিনিয়ত।
গ্রাহকরা সাধারণত নিজেদের শুট করা ফুটেজ এবং ভয়েস ওভার রেকর্ড করে পাঠিয়ে দেয়। তাদের চাহিদা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ভিডিও তৈরি করতে হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কিছু ভিজ্যুয়াল ইফেক্টসের কাজও করতে হয়। তাই এ কাজের জন্য প্রয়োজন শক্তিশালী পিসি এবং উচ্চগতির ইন্টারনেট।
বিজনেস ও ফিন্যানশিয়াল কনসালট্যান্ট
ব্যবসার মুনাফা বাড়াতে সেটি সঠিকভাবে পরিচালনা করা এবং মূলধন ও অন্যান্য সম্পদের যথাযথ ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফ্রিল্যান্স প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিজনেস ও ফিন্যানশিয়াল কনসালট্যান্টদের নিয়োগ করে থাকে। এ ধরনের কাজের মজুরি ঘণ্টাপ্রতি ২৮ থেকে ১০০ ডলারেরও বেশি হতে পারে। এ দুটি ক্ষেত্রে কাজের পরিমাণও প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ২০৩৩ সাল পর্যন্ত ১১ শতাংশ হারে কাজের সুযোগ বাড়তে থাকবে।
বিজনেস কনসালট্যান্টদের কাজ প্রতিষ্ঠানের দৈনন্দিন কার্যক্রম কিভাবে আরো সুচারুভাবে পরিচালনা করা যায় সেটি বের করা। সে জন্য অপ্রয়োজনীয় কর্মচারী ছাঁটাই করা, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় সংকোচন, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিশেষায়িত ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করার মতো অনেক ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। বিজনেস কনসালট্যান্টদের দায়িত্ব ধাপগুলোর পূর্ণাঙ্গ কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা এবং বাস্তবায়ন।
প্রতিষ্ঠানের মূলধন এবং স্থাবর সম্পত্তিগুলোর সর্বোচ্চ লাভজনক ব্যবহার বের করা ফিন্যানন্সিয়াল কনসালট্যান্টদের দায়িত্ব। ব্যক্তি পর্যায়েও একই কাজ করে থাকে তারা। সেটা হতে পারে বিনিয়োগের পোর্টফোলিও সাজিয়ে দেওয়া, অবসরপ্রাপ্তদের পেনশনের লাভজনক বিনিয়োগের পরামর্শ দেওয়া বা ট্যাক্সের বোঝা কমানোর উপায় বের করা।
ডেটা অ্যানালিস্ট
প্রতিটি ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠান বিপুল পরিমাণ তথ্য প্রতিনিয়ত সংগ্রহ করে। ক্রেতাদের তথ্য, বিক্রীত পণ্যের লেজার অথবা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হাজিরার তথ্য—সব কিছু থেকেই প্রতিষ্ঠানকে আরো সুচারুভাবে পরিচালনার উপায় এবং কোথায় লোকসান হচ্ছে—সেটিও বের করা যায়। এ কাজগুলোর জন্য ফ্রিল্যান্স প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ডেটা অ্যানালিস্ট নিয়োগ করে তারা। ঘণ্টাপ্রতি মজুরি ২০ থেকে ৫০ ডলার পর্যন্ত হয়ে থাকে, তবে দক্ষ ডেটা অ্যানালিস্টদের ফুলটাইম চাকরিও দেয় অনেক প্রতিষ্ঠান, সে ক্ষেত্রে আয়ের পরিমাণ বেশি।
এ কাজগুলোর জন্য স্ট্যাটিসটিক্যাল অ্যানালিসিসে বিশেষায়িত সফটওয়্যারগুলো ব্যবহারে পারদর্শী হতে হবে। এ ক্ষেত্রে স্কিল বাড়ালে লস নেই, ২০৩৩ সাল পর্যন্ত অন্তত ২৩ শতাংশ হারে কাজের সুযোগ বাড়তে থাকবে।
এছাড়াও
সেরা সাতটি ফটো ফ্রিল্যান্স জবের বাইরে এডিটিং, এআই প্রফেশনাল, ব্লকচেইন ডেভেলপার, ডিজাইনার বা অ্যাপ ডেভেলপারের মতো আরো অনেক ধরনের কাজ করেও সফল ফ্রিল্যান্সার হওয়া সম্ভব। সফল ফ্রিল্যান্সার হতে চাইলে প্রয়োজন প্রতিটি প্ল্যাটফর্মে কী ধরনের কাজ বেশি পাওয়া যাচ্ছে সে অনুযায়ী নিজের দক্ষতা তৈরি করা। এ ক্ষেত্রে সফলতার আসল চাবিকাঠি দক্ষতা বাড়ানো।