<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দারিদ্র্য যদি খুঁজি তাও আছে, অসাম্য খুঁজলে তাও</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমাদের সংস্কৃতিতে এই দুই উপাদানের কোনো অভাব নেই। এবং দারিদ্র্য ও অসাম্যকে এমনিতে যতটা পরস্পর নিকটবর্তী মনে হয়, আসলে তারা তার চেয়েও বেশি ঘনিষ্ঠ। বললে ভুল হবে না মোটেই যে অসাম্যই দারিদ্র্যের মূল কারণ। অসাম্য যে বিভাজন সৃষ্টি করেছে ধনীতে ও দরিদ্রে, শহরে ও গ্রামে, শিক্ষিতে ও অশিক্ষিতে, সেই বিভেদই দারিদ্র্য সৃষ্টির জন্য দায়ী</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কী অর্থনীতিতে, কী সংস্কৃতিতে, যেমন মূল কাঠামোতে তেমনি ওপরকাঠামোতে। অর্থনৈতিক দারিদ্র্যের পক্ষে সাংস্কৃতিক দারিদ্র্যের কারণ হওয়ার পথে কোনো প্রতিবন্ধক নেই। এ কথাও অবশ্যি সত্য যে টাকা হাতে এলেই যে সংস্কৃতিতে উত্কর্ষ আসবে এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। মধ্যপ্রাচ্যের তেল-ধনী কোনো কোনো দেশ এ বিষয়ে সরলরৈখিক সমীকরণ টানার বিপক্ষে রায় দিচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যে যেতে হবে কেন, আমাদের হাতের কাছেই হঠাৎ ধনী পরিবার খুঁজলে পাওয়া যাবে, যারা ওপরে যত বেড়েছে হৃদয়ে তত বাড়েনি। না, টাকা থাকলেই রুচিবান হওয়া যায় না; কিন্তু বিপরীত পক্ষে আবার টাকা না থাকলে রুচিও বেঁচে থাকে না, কিছুই থাকে না। কেবল খাওয়ার জন্য মানুষ বাঁচে না বটে, তবে বাঁচতে হলে খেতেই হয়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="বাংলা কি অনাদৃতই থেকে যাবে" height="274" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/02.February/05-02-2025/0.jpg" style="float:left" width="345" />কিন্তু এ আলোচনার প্রারম্ভেই বোধ করি বলে নেওয়া আবশ্যক যে সংস্কৃতি কোনো সংকীর্ণ অর্থে বিবেচনা করছি না আমরা। সংস্কৃতি বলতে সুকুমার শিল্পের চর্চাকেই শুধু বোঝানো হচ্ছে না, বরঞ্চ চিন্তা-চেতনার প্রকাশসমূহকেই ধরা হচ্ছে, যাদের মধ্যে সুকুমার শিল্পসমূহ থাকবে তো বটেই, কিন্তু কেবল তারাই থাকবে না, সঙ্গে আপন আপন দাবি নিয়ে থাকবে ভাষা ও সাহিত্য, দর্শন ও বিজ্ঞান, থাকবে শিক্ষা ও জ্ঞানানুশীলন। আসলে সংস্কৃতি হচ্ছে পরিবেশ ও প্রকৃতির ওপর কর্তৃত্ব স্থাপনে মানুষের যে প্রয়াস তারই প্রকাশ, এই প্রয়াসে আনন্দ আছে, বেদনা আছে, এর অভ্যন্তরে প্রতিনিয়ত গড়ে উঠছে চিন্তাধারা। এই প্রয়াসে পরিবেশ ও প্রকৃতি যেমন বদলায় তেমনি মানুষ নিজেও যায় বদলে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">যদি সংস্কৃতির বিভিন্ন এলাকাতে আলাদা আলাদাভাবে চোখ দিই, তবে দেখা যাবে ওই যে বললাম দারিদ্র্য ও অসাম্য, তারা নানাভাবে নানারূপে কাজ করে যাচ্ছে। আসলে আমাদের এই আলোচনা সেই দৃষ্টিপাত ভিন্ন অন্য কিছু নয়। সিদ্ধান্তটা যদি আগে থেকেই দিয়ে দেওয়া হয় সে শুধু এই কারণে যে এ কোনো গোপন ব্যাপার নয়, এর মধ্যে লুকোচুরি নেই। সত্যটা সামান্যই, অসামান্য সত্যের কার্যকারিতা, কর্মদক্ষতা ও সর্বত্রবিরাজমানতা।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সর্বক্ষেত্রের দিকে একই সঙ্গে তাকানো যাবে না। আপাতত আমরা কয়েকটি ক্ষেত্রের দিকে তাকাব। যেমন ধরা যাক ভাষার কথা। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমাদের এই অঞ্চলে ভাষা সব সময়ই একটা বড় সমস্যা। তার একটা প্রধান কারণ বেশির ভাগ মানুষই অশিক্ষিত এখানে। অশিক্ষিতজনের কোনো ভাষা নেই, এক আর্তনাদ এবং কদাচিৎ-কখনো হুংকার ছাড়া। কিন্তু শিক্ষিতজনের মধ্যেও ভাষার সমস্যা বারংবার দেখা গেছে, অত্যন্ত কিম্ভূত, নিতান্ত কুৎসিত আকারে। বাংলা এখানে রাষ্ট্রভাষা আগে কখনোই ছিল না। শাসক ও শাসকের সহযোগী শ্রেণি সংস্কৃতের চর্চা করেছে কখনো, কখনো ফার্সির, তারপর ইংরেজির, এমনকি সেবা করতে চেয়েছিল উর্দুরও। নিকট অতীতেও ইংরেজির অত্যন্ত প্রাদুর্ভাব ছিল। দুই-দুইবার স্বাধীন হবার পরও ইংরেজির চল কমেনি, বাড়ছেই বরঞ্চ দিনকে দিন। স্বাধীন বাংলাদেশে প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারিতে নতুন করে শপথ নিতে হয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে বাংলা ভাষা প্রচলনের। সে শপথ পরের দিনই বিলীন হয় বিস্মৃতির গহ্বরে। বলা বাহুল্য, এর কারণটা খুবই স্পষ্ট। ইংরেজ গেছে, আমেরিকা এসেছে, সাম্রাজ্যবাদ ঘটা করে চলে গেল নতুন করে, আরো প্রবলভাবে ফিরে আসার জন্য। আজ দুর্ভাগা বাংলাদেশের সর্বত্র বিদেশের উপস্থিতি, তার পুঁজি আসছে বিদেশ থেকে, আসছে ঋণ, দান, অনুদান সাহায্য। বিক্রি হয়ে যাচ্ছে পানির মাছ, হবে মনে হয় মাটির নিচের গ্যাস, ওপরের আকাশ। যুগ-যুগান্তের জন্য বন্ধক রাখা হয়ে গেছে আমাদের ভবিষ্যৎ। যার গায়ের জামায়, মুখের ভাষায়, মেধার রেখায় যত বেশি বিদেশের ছাপ সেই তত বেশি মহৎ এই দেশে। তেমন অবস্থায় বাংলা কেন চলবে? না, চলে না। সমাজের অধিপতি শ্রেণি বাংলা চর্চা করে না। বাঙালি মুসলমানের মাতৃভাষা বাংলা না উর্দু এই মর্মান্তিক বিতর্ক একদিন উঠেছিল, আজও উঠতে পারে নতুন এক বিতর্ক</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাঙালির মাতৃভাষা বাংলা নাকি ইংরেজি? উচ্চ শিক্ষিত বাঙালির প্রধান অংশটাই বাংলা চর্চায় যেমন অনভ্যস্ত তেমনি অনাগ্রহী। এমনকি যে বাঙালি বাংলা ব্যবহার করে তারও বাক্যের মধ্যে ইংরেজির অনুপ্রবেশ ক্রমবর্ধমান। কারণ এই শ্রেণির মধ্যে উদগ্র লালসাটা হলো যেকোনো পথে হোক, যেকোনোভাবেই হোক সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়া। এরা উপগ্রহ, গ্রহের আলোকেই আলোকিত। এটা একদিক। অন্যদিকে এই শ্রেণি দেশের ব্যাপক জনসাধারণের সঙ্গে নিজের দূরত্বটাকে যেভাবে পারে, যতটা পারে বজায় রাখতে চায়। সে ক্ষেত্রেও ভাষা মানুষের সহায়ক বটে। ভাষা মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে, কিন্তু এ ক্ষেত্রে ভাষা মানুষকে বিচ্ছিন্ন করেছে। ইংরেজি আসছে বিচ্ছিন্নতার তথা আভিজাত্যের স্মারকচিহ্ন হিসেবে। যেমন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এককালে ফার্সি এসেছিল, তার আগে এসেছিল সংস্কৃত। আবির্ভাব হয়েছিল উর্দুরও।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ফস করে যদি কেউ প্রশ্ন করেন, বাংলা ভাষাটা তাহলে কোথায় আছে? বলা যাবে সে আছে সাধারণ মানুষের জীবনে। এ দেশের সাধারণ মানুষ অসাধারণরূপে বিপন্ন, কিন্তু সেই বিপন্ন মানুষই বিপন্ন ভাষাকে রক্ষা করছে, মা যেমন রক্ষা করে আপন শিশুকে। বিদেশিরা বারবার এসেছে এ দেশে, এসে শাসন করেছে দেশ, তাদের তাঁবেদার শ্রেণি শাসকদের ভাষাকেই নিজেদের ভাষা হিসেবে সানন্দে মেনে নিয়েছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ ওই </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অছিলাটা</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> পায়নি, তারা থেকেছে নিজস্ব </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অন্ধকারে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">, যায়নি দালালির পথে, হয়নি বেনিয়া-ফড়িয়া, কিংবা আমলা। তাদের ভাষা সব যুগেই স্বদেশি ভাষা। এমনকি বায়ান্নর রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনও সফল হতো না (যতটা হয়েছে) যদি না সাধারণ মানুষ নিজেদের নতুনভাবে বিপন্ন করে এগিয়ে এসে যোগ দিত লড়াইয়ে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মাতৃভাষা চর্চাই যদি দেশপ্রেমের সবচেয়ে অকৃত্রিম ও নির্ভরযোগ্য নিরিখ হয়, তাহলে এ দেশের শ্রমিক-কৃষকই যে সবচেয়ে বড় দেশপ্রেমিক সে বিষয়ে কোনো প্রকার সন্দেহ থাকে না; শ্রমিকের চেয়েও উচ্চস্থান কৃষকের। বিদেশ কৃষককে ছুঁয়েছে সবচেয়ে কম। যে শ্রেণি উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রধান শক্তি সেই একই শ্রেণি যে সবচেয়ে বড় দেশপ্রেমিক এ ঘটনা তাৎপর্যবিহীন নয়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কিন্তু দেশের সাধারণ মানুষের জীবনের সত্যি কোনো ভাষা আছে কি? সেও তো একটি মর্মান্তিক প্রশ্ন। শ্রমজীবী মানুষের জীবনটা ছোট শিশুর জীবনের চেয়েও সংকীর্ণ। কেননা তাতে শিশুর হ্রস্বত্ব আছে ঠিকই, কিন্তু শিশুর কল্পনাটা নেই। যেন আজন্ম বৃদ্ধ সে, লোলচর্ম। বাংলাদেশের গ্রামগুলোর মতোই অন্ধকারাচ্ছন্ন-আতঙ্কে জড়সড়। না, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মতো ভাষাহীন প্রাণী খুঁজে পাওয়া ভার। বিষয়ীর সঙ্গে বিষয় এখানে এমন গলাগলি ঠাসাঠাসি করে দাঁড়িয়ে যে সাধ্য কি সেখানে ভাষা প্রবেশ করে, অন্তঃপ্রবিষ্ট হয় বস্তুজ্ঞান, অথবা তত্ত্বচিন্তা। বিশেষ্যকে সেখানে ছাপিয়ে ওঠে বিশেষণ। তাই যদি হয়, কেমন করে তাহলে বলব যে সাধারণ মানুষের অতিসংকীর্ণ জীবনে ভাষা আছে? না, এক অর্থে ভাষা নেই। আর এখানেই আরেকটি মর্মান্তিকতা, যাদের মুখে ভাষা নেই ভাষা রক্ষার দায়িত্ব তাদেরই নিতে হচ্ছে। এ অবশ্যি অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয় আমাদের দেশে। এখানে উৎপাদন যে করে উৎপাদিত পণ্য সে ভোগ করে না, এখানে দরিদ্রই দরিদ্রকে সাহায্য করে এবং দরিদ্রই ধনীকে বাঁচায়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">উচ্চবিত্তদের জীবনে বাংলার চলটা কম। বিত্তের উচ্চতা ও বাংলার ব্যবহার বিপরীত অনুপাতে চলে। এই বৈপরীত্য বাড়ছে বৈ কমছে না। আমাদের উচ্চবিত্তদের জগৎ এত বেশি উদার ও বৃহৎ, সাহসী ও বিকাশপ্রিয় যে তারা ও বিত্তহীনেরা যে একই দেশের মানুষ তা ভাবলে যে ধাঁধা লাগে না তার কারণ আমরা এ বিষয়ে ভাবিই না। এদের জগৎ মোটামুটি আন্তর্জাতিক, আর আন্তর্জাতিক মানে বাংলার উচ্চমূল্য নির্ধারণ সহজ কাজ নয়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মাঝখানে মধ্যবিত্ত, তার জীবনে বাংলার চল উচ্চবিত্তের চেয়ে বেশি, কিন্তু বিত্তহীনের তুলনায় কম। মধ্যবিত্ত চিরকালই অসন্তুষ্ট, এ ক্ষেত্রেও তার স্বাভাবিক অসন্তোষ বিদ্যমান। সে অসন্তুষ্ট উচ্চবিত্ত থেকে সে যথেষ্ট দূরের বলে, অর্থাৎ কিনা যদৃচ্ছ ইংরেজি ব্যবহার করতে পারে না দেখে, এবং অন্যদিকে আবার অসন্তুষ্ট নিম্নবর্তী শ্রেণির যথেষ্ট নিকটবর্তী বলে, অর্থাৎ কিনা বাংলা বহুল পরিমাণে ব্যবহার করতে হয় দেখে। ব্যাপারটা এমন স্পষ্ট নয়, কিন্তু অস্পষ্টভাবে হলেও ব্যাপারটা এই রকমই।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমরা বলে থাকি, বাংলা চলছে না। কথাটার অর্থ কি? একটা অর্থ, অফিস-আদালতে চলছে না; শিক্ষায়, বিশেষ করে উচ্চশিক্ষায় চলছে না। অফিস-আদালতে বাংলা চলবে, বাংলা ছাড়া আর কিছুই চলবে না, এই রকম হুকুম থেকে থেকে জারি হয়, কিন্তু এই ভীতির দেশেও অফিসের কলম দেখা যাচ্ছে বেশ নির্ভীক, ইংরেজিই লেখে সে, নির্ভয়ে। এমনকি ভুল লিখলেও। কিন্তু না হয় ধরেই নিলাম আমরা আমাদের ঈন্সিত লক্ষ্যে সত্যি পৌঁছে গেলাম, বাংলা ছাড়া আর কোনো ফাইলই চলছে না, কিন্তু সেই চলমানতায় কি লিখিত বাংলা ভাষা সর্বত্র চলে যাবে, পৌঁছে যাবে দীনদরিদ্র, অশিক্ষিত, অখ্যাতজনের কুঁড়েঘরে। অক্ষরজ্ঞান কি সকলের আছে, সকলের কি সামর্থ্য আছে বই কিনবে, কিনে পড়বে?</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কিন্তু অফিসে-আদালতে এবং উচ্চশিক্ষায় বাংলা চালু হয়ে যাবে এ কল্পনাটাও আপাতত আকাশকুসুম বটে। প্রথম সত্য এই যে আমাদের বিদেশনির্ভরতাকে ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করে বাংলা ভাষাকে আমরা যথোপযুক্তরূপে এমনকি অফিস-আদালতেও চালু করতে পারব না, উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে তো নয়ই। টাকা যেখান থেকে আসে ভাষাও সেখান থেকেই আসবে। টাকাই আসলে কথা বলে, অন্য সব কিছুকে ছাপিয়ে ওঠে তার গলার স্বর। সামাজিক বীরেরা বাংলা বলেন না, বা যত কম বলেন ততই বেশি পরিমাণে বীরের মর্যাদা পান</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ দৃশ্য আমরা অতীতে দেখেছি, ভবিষ্যতেও দেখতে থাকব মাশাল্লাহ, যদি না হঠাৎ করে সামাজিক বিপ্লব ঘটে যায়। দ্বিতীয়ত, অফিস-আদালতে বাংলা চলছে, বাংলা ছাড়া আর কিছুই চলছে না</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এই রোমহর্ষক ছবি দেশবাসীর জন্য বৈপ্লবিক কোনো মঙ্গল আপনা থেকেই বয়ে নিয়ে আসবে এমনও তো ভরসা হয় না। জেল-ফাঁসি তো মস্ত ব্যাপার, আমরা জরিমানার কথাটাই যদি ইংরেজিতে না এসে বাংলায় আসে, তাহলে যে আহ্লাদে একেবারে আটখানা হব এমন তো ভরসা রাখি না। বাংলা, ইংরেজি, আরবি, উর্দু সবই সমান তখন আমাদের কাছে। বাংলা ভাষায় উচ্চশিক্ষা দেব কী করে? পাঠ্যপুস্তক কোথায়? কোথায় পরিভাষা? কে করবে অনুবাদ? এই সমস্ত উত্তেজিত প্রশ্নের অভ্যন্তরে আছে একটি শান্ত সিদ্ধান্ত, পাঠ্যপুস্তক দেশে লেখা হবে না, তাকে আনতে হবে বিদেশ থেকে, তার বিষয়বস্তু আপাদমস্তক বিদেশি, আবরণটাই শুধু স্বদেশি। ওইটুকুই। উচ্চশিক্ষা সব দিক দিয়েই বিদেশমুখো এবং বিদেশে তো বাংলার চল নেই। ভাষার প্রসঙ্গ যখন উঠেছেই তখন বাংলা গদ্যের ব্যাপারটাও বিবেচনা করে দেখা দরকার বৈকি।</span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> লেখক : ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়</span></span></span></span></p>