<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সুস্থ সমাজব্যবস্থা ও সুন্দর সামাজিক মনোভাব হলো আমাদের মস্তিষ্কের ন্যায়। তাই এটিকে টিকিয়ে রাখার দায়িত্বও আমাদের সবার। সমাজে বসবাসরত প্রতিটি মানুষ নিজ নিজ সামাজিকতা, সভ্যতা ও সভ্যরূপনীতি মানতে বাধ্য থাকবে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এমনটিই স্বাভাবিক। সমাজ সংস্করণের উন্নতি সাধন করার আগে দেশের সভ্যতার ভার বহন করে দেশের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও গুণাবলি। সামাজিক অবক্ষয় নিয়ে অনেক উদাহরণ রয়েছে। আমরা এখন অনেকটাই ইতিবাচকতার পরিবর্তে নেতিবাচকতাকে লালন করি এবং চর্চা করি। বিশ্বের সব ক্ষেত্রেই মানুষ এখন অনেক নেতিবাচকতায় ভরপুর। আমরা প্রত্যাশা করি, সমাজের সব নেতিবাচকতা দূর হয়ে একটি স্বপ্নময় পৃথিবী সৃষ্টি হোক। কিন্তু সেটি কি অতটা সহজ? মোটেও না।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমরা যদি নিজেদের নেতিবাচকতা থেকে মুক্ত করতে চাই, তাহলে সামাজিক মূল্যবোধের বিষয়ে অগ্রাধিকার দিতে হবে। আর এই সামাজিক মূল্যবোধ বিকাশের ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিষয়ের উন্নতি খুবই জরুরি। মূল্যবোধ ব্যক্তিকে নিজের ও অন্যদের কাছে দায়বদ্ধ করে রাখে। মূল্যবোধ চর্চার ফলে নীতি ও দীর্ঘমেয়াদি উদ্দেশ্যগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হয়। সমাজবিজ্ঞানীদের ধারণা অনুসারে, আমরা জানি </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">যেকোনো সমাজের রীতিনীতি, মনোভাব এবং সমাজস্বীকৃত আচার-আচরণের সমষ্টি হলো </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সামাজিক মূল্যবোধ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">। সমাজে বসবাসকারী মানুষের ধ্যান-ধারণা, বিশ্বাস, সংকল্প, মানুষের আচার-আচরণ এবং কার্যাবলিকে নিয়ন্ত্রণ করে সামাজিক মূল্যবোধ। নির্মম সত্যিটা হলো এই, আমরা জেনে-বুঝেও এসব মানছি না বা মেনে নিতে পারছি না। সামাজিক মূল্যবোধ বলতে সমাজের জন্য কল্যাণকর সব ভাবনাকে বোঝায়। কিন্তু আমরা কতজন মানুষ কল্যাণকর ভাবনা ভাবছি। সেই সংখ্যাটা তার নিজস্ব ভাবনাকে প্রতিষ্ঠিত করার শিক্ষা এবং যোগ্যতা সমাজ থেকেই পেয়ে থাকে। যথাযথ সামাজিক মূল্যবোধের পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য আমাদের অনেক পথ পারি দিতে হবে। নতুন একটি বিবেকবান সমাজ গড়ে তুলতে হবে। জোড়াতালির শিক্ষাব্যবস্থা, বৈষম্যজনিত বিশৃঙ্খলা, সম্মান ও ভালোবাসা, প্রতারণার নিত্যনতুন কলাকৌশল ইত্যাদি বিষয় সামাজিক পটভূমিকে স্বাভাবিকতা থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন করে ফেলছে। অন্ধকার বুকে ধারণ করে আমরা কৃত্রিম আলোর দিকে ছুটছি। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বৃদ্ধ মা-বাবা ইদানীং সন্তানদের কাছে বোঝা হয়ে উঠছেন। আত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক থাকছে না। পারস্পরিক আন্তরিকতা, হূদ্যতা নেই। আপনজনের দেখাশোনা করছি না। দুর্বিষহ এমন সব পরিস্থিতিতে সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গাটা আজ ভয়ানক নড়বড়ে। ভবিষ্যতের সুখের আশায় শিকড়কে অস্বীকার করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধাও আর মানুষ করছে না। মাত্রাহীন অবক্ষয়কে যে করেই হোক ঠেকাতে হবে, না হলে মানুষের অর্জিত জ্ঞান-শিক্ষা এসবের আর মূল্য থাকবে না।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অবক্ষয়ের পেছনে অর্থনৈতিক অসমতা, রাজনৈতিক অস্থিরতা, সাংস্কৃতিক ও জাতিগত উত্তেজনা, সামাজিক গতিশীলতার অভাব, প্রযুক্তির পরিবর্তন, পরিবেশের অবনমন, পারিবারিক কাঠামোর পরিবর্তন, মিডিয়ার প্রভাব, ভুল তথ্য পরিবেশন করা ইত্যাদি দায়ী। আবার অবক্ষয়ের পেছনে অনেক সমাজবিজ্ঞানীর অনেক মতামত ও উপলব্ধি রয়েছে। সেগুলো আমরা অনুসরণ করতে পারি। এ অবক্ষয়ের পেছনে এক ধরনের অসুস্থতাও কাজ করে, যা আবার আসে দীর্ঘদিনের নীতিবর্জিত প্রতিযোগিতা, আচরণ, ব্যবহার, কাজ ও চলাচলের ওপর ভর করে। একজন শিশু বা কিশোরের বিকশিত হওয়ার নিমিত্তে মূল্যবোধের শিক্ষা দেওয়া হয়ে থাকে। মূল্যবোধের কারণে ব্যক্তি কোনো বিষয়ের সঠিকতা যাচাই এবং কোনো জটিল বিষয় সম্পর্কে সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ করে থাকে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রাজনৈতিক দর্শন এবং চেতনার সামঞ্জস্যহীনতা, নানামুখী মতবাদ ও ভাবনার কারণে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দুর্বলতা বা বলিষ্ঠতার অভাবে সমাজে বিবিধ টানাপড়েনের সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে তালগোল পাকিয়ে একধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির উদ্ভব হচ্ছে, যা কারো জন্যই সুখকর বার্তা নিয়ে আসবে না। এ জন্য সহনশীল এবং মানবিক মানুষ হওয়া অত্যন্ত জরুরি।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মূলত সামাজিক অবক্ষয় বৃদ্ধি পাওয়ায় অন্যায়-অপকর্ম প্রতিরোধ লাগামহীন হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে এমন কোনো প্রতিষ্ঠান খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে অনৈতিক কর্মকাণ্ড একেবারে শূন্যের কোটায় চলে এসেছে। ইদানীং দেশের প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ধরনের অন্যায় ও অসামাজিক কার্যক্রমের কোনো না কোনো নমুনা আমরা লক্ষ করছি। যেগুলোর কোনো কোনোটি এরই মধ্যে ভয়াবহ অবস্থায় পৌঁছেছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সাধারণত মনে করা হয়, শিক্ষকরা হবেন আদর্শ, তাঁদের আচরণ হবে অন্যদের কাছে অনুকরণীয়। শিক্ষকদের কাছ থেকে শিক্ষার্থীরাই শুধু পাঠ নেয় না, সমাজও অনেক কিছু শেখে। কিন্তু আমাদের সামাজিক অবক্ষয় এমন স্তরে এসে পৌঁছেছে যে এখন শিক্ষকরাও নানা ধরনের অনৈতিক কাজে লিপ্ত হয়ে উঠছেন। অনেক শিক্ষকই এখন আদর্শের রোল মডেল হতে পারছেন না। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রায়ই শুনে থাকি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের কোনো কোনো শিক্ষক শিক্ষার্থীদের নানা ধরনের প্রলোভনের মাধ্যমে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। শিক্ষার্থীরাও অনেক সময় নিরুপায় হয়ে এ ধরনের অনৈতিক কাজের প্রতিবাদ করতে পারে না। পরিস্থিতি চরম পর্যায়ে পৌঁছালে সেগুলোর কোনো কোনোটি আমাদের সামনে আসে। তবে এটি নিশ্চিত যে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বেশির ভাগই আমরা জানতে পারি না। অবশ্য কতিপয় ক্ষেত্রে এসব ঘটনার সুস্পষ্ট সত্যতা অনুমান করা গেলেও সেগুলো যথাযথভাবে প্রতিরোধ সম্ভব হচ্ছে না। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দেশে সামাজিক অবক্ষয়জনিত নানা অপরাধপ্রবণতা লক্ষণীয় মাত্রায় বেড়েছে। বিশেষ করে দেশের অনেক তরুণসমাজ মাদকের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। আমরা অনুধাবন করছি যে মাদকের ভয়ংকর নেশা দেশের তরুণসমাজের একটি বড় অংশকে ধীরে ধীরে গ্রাস করতে চলেছে। শহর ছাড়িয়ে গ্রামাঞ্চলেও তরুণসমাজে ইয়াবা আসক্তি বাড়ছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">একটি দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নই একমাত্র উন্নয়ন নয়। সামাজিক মূল্যবোধ ও নীতিবোধ সৃষ্টি এবং তার উন্নয়ন ঘটানোর প্রেক্ষিতে সব স্তরের এবং সব ধরনের অপকর্মের প্রতিরোধ ঘটানো সম্ভব। সরকারের পক্ষ থেকে এ ধরনের মূল্যবোধ চর্চার উদ্যোগ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্থায়ী প্রক্রিয়ায় সামাজিক অবক্ষয় প্রতিরোধ করা যেতে পারে। শুধু গণমাধ্যম ব্যবহার করে সামাজিকভাবে সচেতন করে তোলাই নয়, এ বিষয়ে আলাদাভাবে সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ গ্রহণ করার সময় এসেছে। আমি মনে করি, রাষ্ট্রীয় অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাত্রাকে টেকসই করে তুলতে এবং তরুণদের রক্ষা করতে সামাজিক অবক্ষয় থেকে দেশকে রক্ষা করার কাজে মনোযোগী হতে হবে। এটি রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্বও বটে। শুধু বক্তৃতা-বিবৃতি নয়, এ বিষয়ে যথেষ্ট সতর্ক ভূমিকা পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">sultanmahmud.rana@gmail.com</span></span></span></span></p>