<p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">ভোক্তার কল্যাণ চিন্তা করে সরকার গত ১৪ সেপ্টেম্বর কৃষির কিছু প্রাথমিক পণ্যের (পেঁয়াজ, আলু ও ডিম) বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করে দেয়। সেই সঙ্গে কৃষিজাত কিছু শিল্পপণ্যের (চিনি, সয়াবিন তেল, পাম অয়েল) দাম আগেই নির্ধারণ করে দিয়েছিল। </span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রাথমিক কৃষিপণ্য পেঁয়াজ ২৪ সেপ্টেম্বর বিক্রি হয়েছে (টাউন হল মার্কেট) ৭৫-৮০ টাকা কেজি,  সরকার নির্ধারিত পেঁয়াজের দাম ৬৫ টাকা কেজি, আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৫ টাকা কেজি, নির্ধারিত দাম ৩৬ টাকা কেজি, ডিম ১২ টাকা পিস নির্ধারিত, বিক্রয় ১৩ টাকা পিস।</span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">কৃষিজাত শিল্পপণ্য চিনির (আমদানীকৃত) নির্ধারিত দাম ১২০ টাকা কেজি, বিক্রয় ১৩৫-১৪০ টাকা কেজি; সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৬৯ টাকা, বিক্রয় ১৭৫-১৮০ টাকা; পাম অয়েল প্রতি লিটার নির্ধারিত ১২৪ টাকা, বিক্রয় ১৪৫-১৫০ টাকা। ঢাকা শহরের অন্যতম বড় কোনো বাজারেই এসব পণ্য নির্ধারিত দামে বিক্রয় হচ্ছে না। ঢাকার বাইরে অন্য শহর ও উপজেলা বা প্রবৃদ্ধি কেন্দ্রের মতো বাজারগুলোতে (প্রায় ৩৫ হাজার) প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিক্রয় দাম সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে আরো বেশি হবে। তবে একটা বিষয় লক্ষণীয়, নির্ধারিত দামের চেয়ে বিক্রয় দাম বেশি হলেও উল্লিখিত সব পণ্যের ক্ষেত্রেই দাম এখন স্থিতিশীল রয়েছে। </span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">সরকার দাম নির্ধারণ করে দিতে যায় কেন? এখন যে শিরোনাম দিয়ে প্রশ্নাকারে এই নিবন্ধ শুরু করেছি সে বিষয়ে আলোকপাত করা যাক। </span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><img alt="পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়া কার্যকর হচ্ছে না কেন" height="259" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2023/09.September/27-09-2023/121/1.jpg" style="float:left" width="295" />‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">কৃষি মৌলিক পণ্য</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi"> ও </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">শিল্পপণ্যে</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">র বাজারব্যবস্থা একেবারেই ভিন্ন প্রকৃতির। বাজারকাঠামোতে মৌলিক কৃষিপণ্যের উৎপাদক লাখ লাখ এবং উৎপাদন দেশের বিস্তৃত অঞ্চলে ব্যাপ্ত। শিল্পপণ্যের প্রতিটির উৎপাদকের সংখ্যা আঙুলে গোনা যায় এবং উৎপাদন নির্দিষ্ট অঞ্চলে বা শিল্পাঞ্চলে সীমিত। শিল্পপণ্য পচনশীল নয়, দীর্ঘকাল সংরক্ষণযোগ্য এবং উৎপাদন কার্যক্রম মৌসুমভিত্তিক নয়। সে কারণেই শিল্পপণ্যের দামের ওঠানামা অনেক কম।</span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">কৃষিপণ্য মৌসুমভিত্তিক উৎপন্ন হয় এবং পচনশীল বিধায় দীর্ঘকাল সংরক্ষণযোগ্য নয়। দেশব্যাপী উৎপাদন হয় বিধায় কৃষিপণ্যের উৎপাদনের কোনো এজেন্ট ডিলার থাকে না। কোটি কোটি উৎপাদক এবং জড়িত হাজার হাজার ব্যবসায়ী খামার থেকে শহরের ভোক্তাদের দরজা পর্যন্ত পণ্য পৌঁছে দেয়। মৌলিক শিল্পপণ্য নির্দিষ্ট ডিলার এজেন্টের মাধ্যমে যাদের প্রয়োজন মফস্বলে পণ্য পৌঁছে দেয়। শিল্পপণ্যের ব্র্যান্ডিং থাকে, মান সুনির্দিষ্ট থাকে, যা কৃষিপণ্যের বেলায় অনুপস্থিত। শিল্পপণ্যের বাজারকাঠামো হচ্ছে প্রতিটি পণ্য নিয়ে কতিপয়ের (অলিগোপলি) ব্যবসা। শিল্পগোষ্ঠী পণ্যের দাম বাজার চাহিদা অনুযায়ী নির্ধারণ করে দেয়। দাম নির্ধারণে তারা ভূমিকা রাখে। কৃষি মৌলিক পণ্য। যেহেতু অসংখ্য উৎপাদক একই পণ্য বাজারে নিয়ে আসে; বাজারের চাহিদা অনুযায়ী তাকে দাম মেনে নিতে হয়, না হলে পণ্য বাড়ি ফেরত নিয়ে আসতে হয়, যার জন্য বাড়তি খরচ বহন করতে হয়। কৃষিপণ্যের বাজার অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক। সব সময়ই বাজারে মোট চাহিদার ওপর তার দাম নির্ধারিত হয়। চাহিদার চেয়ে সরবরাহ বেশি হলে দাম কম মেনে নিতে হয়। সংরক্ষণ করা যায় না বিধায় কম দামে লোকসান দিয়েও বিক্রি করতে হয়। মোটাদাগে এসব কারণে কৃষি উৎপাদন ব্যবসা খুব লাভজনক ব্যবসা নয়। শিল্পপণ্যের বাজারব্যবস্থা একেবারেই ভিন্ন।</span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">মুক্তবাজার অর্থনীতির সবচেয়ে বড় খাত হচ্ছে কৃষি খাত। মোটাদাগে কৃষি উৎপাদন, বিপণন, প্রক্রিয়াকরণ, গুদামজাতকরণ সব ক্ষেত্রেই অসংখ্য ব্যক্তি বা ব্যবসায়ী জড়িত। প্রায় প্রতিটি পণ্যের দরদাম নির্ধারিত হয় প্রতিযোগিতার পরিবেশে। একজন উৎপাদক, একজন ব্যবসায়ী, একজন পরিবহনকারী এককভাবে বাজারে নগণ্য অস্তিত্ব এবং বাজারের দরদাম মেনে নিতে বাধ্য। বাজারে দাম ঠিক করার ক্ষেত্রে একক কোনো ভূমিকা রাখতে পারে না। ধানের প্রক্রিয়াকরণ, অটো রাইসমিলার বাংলাদেশে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে আছে সাড়ে পাঁচ হাজারের মতো, গোল আলু রাখার হিমাগার আছে পাঁচ শতাধিক। সংরক্ষণ করা যায় ব্যক্তি খাতে এমন পণ্যের হাজার হাজার মজুদদার আছে। মূলত এই সংখ্যাধিক্যের কারণে কৃষি মৌলিক পণ্যে চটজলদি সিন্ডিকেট গঠন করা প্রায় অসম্ভব। আবার সিন্ডিকেশন সম্ভব হতে পারে কৃষিজাত </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">শিল্পপণ্য</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi"> যখনই আমদানি করা হয়। কারণ বড় শহরকেন্দ্রিক আমদানিকারকের সংখ্যা কয়েক ডজন থেকে হয়তো শতকের ঘরে। কৃষি বাজার ব্যবস্থায় দেড় শতাধিক শুধু মাঠভিত্তিক উৎপন্ন ফসল বিভিন্ন পর্যায়ে বিপণন হয়ে থাকে, প্রতিটি পণ্যের বাজারব্যবস্থা অদ্বিতীয়। একটির বাজারব্যবস্থার সঙ্গে আরেকটির মিল কম। দাম নির্ধারণ পদ্ধতি, উৎপাদক, ক্রেতা, বিপণনকারী ও প্রক্রিয়াজাতকারকের সংখ্যা এবং বাজার-ভোক্তা দূরত্ব বিভিন্ন রকমের হতে পারে। মোটকথা কৃষি বাজার ব্যবস্থা জটিল এবং বাইরের হস্তক্ষেপ ছাড়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালিত, যা মুক্তবাজার অর্থনীতির মূল প্রতিপাদ্য। যেহেতু দাম বাজারে চাহিদা ও সরবরাহের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়, যেহেতু অসংখ্য ব্যবসায়ী বিভিন্ন পর্যায়ে জড়িত, কৃষি মৌলিক পণ্যের ক্ষেত্রে সাধারণত সিন্ডিকেশন করা বা আঁতাত করে দাম বাড়ানো প্রায় অসম্ভব। সিন্ডিকেট করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে অস্বাভাবিক মুনাফা অর্জনের সুযোগ তৈরি হলে বেশিদিন সেটা টিকে থাকতে পারে না। কারণ হাজার হাজার শিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত বেকার অনেক পুঁজিধারী ওই বিশেষ পণ্য ব্যবসায় নেমে পড়ে এবং একসময় সিন্ডিকেট অনেকের অংশগ্রহণে অকার্যকর হয়ে পড়ে। কৃষি দরদামের আরেকটি বিশেষত্ব হলো মৌসুমভিত্তিক উৎপন্ন হওয়ায় এবং প্রকৃতিনির্ভর উৎপাদন হওয়ার বার্ষিক মোট উৎপাদনের অনেক ওঠানামা হয়। সরবরাহের ওঠানামার কারণে কৃষিপণ্যের দরদামের অনেক ওঠানামা হয়ে থাকে। কৃষিপণ্যের চাহিদা আবার অনেকটা স্থিতিশীল, সরবরাহ অস্থিতিশীল, সে কারণে দামের অস্থিতিশীলতা প্রায় সব দেশেই দেখা যায়। </span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">পুনর্ব্যক্ত করছি যে কৃষিপণ্যের বাজারে দাম, বাজারের মোট চাহিদা ও সরবরাহের ভিত্তিতে হয়ে থাকে। কোনো পণ্যের কর্তন মৌসুমে দাম পড়ে যায়। কারণ একসঙ্গে অনেক উৎপাদক বিক্রির জন্য বাজারে আনে, যেহেতু পণ্য চাহিদা প্রায় স্থিতিশীল, তাই দাম হয়ে পড়ে নিম্নমুখী। এই সময়ে ভবিষ্যতে সরবরাহ যখন কমে আসবে এই বিবেচনায় লাভের জন্য মজুদদাররা </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">সংরক্ষণযোগ্য পণ্য</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi"> মজুদ করে রাখে এবং অমৌসুমে ভোক্তাদের পণ্য পেতে সহায়তা করে থাকে। মজুদদাররা ক্রয় করে বিধায় কর্তন মৌসুমে ভূমিছোঁয়া দাম ওপরে ওঠে এবং কৃষকদের ন্যায্য দাম পেতে সহায়তা করে। অমৌসুমে পণ্য পেতে ভোক্তাদের সহায়তা করে। গুরুত্বপূর্ণ এই কাজটি মজুদদার-মধ্যস্বত্বভোগীরা পালন করে থাকে। অথচ দাম একটু বেড়ে গেলেই এই মধ্যস্বত্বভোগীদের গালমন্দ শুনতে হয়। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ যদি অনেক কম হয় পণ্যের দাম বাজারে অনেক বেড়ে যায়, আর তার জন্য দায় নিতে হয় মধ্যস্বত্বভোগীদের, যা প্রায়শ অযথার্থ। </span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">কৃষিপণ্যের অকস্মাৎ দাম বাড়ার মূল কারণ চাহিদা ও সরবরাহের ব্যবধান। দাম বাড়লে আমরা প্রথমেই দোষারোপ করি মজুদদার বা মধ্যস্বত্বভোগীদের সিন্ডিকেশনের। </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">যা কিছু হারায়, গিন্নি বলেন কেষ্টা বেটাই চোর</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’—</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">অনেকটা সে রকম। বাজারে দাম অনেকটা বেড়ে গেলে বা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকলে বুঝতে হবে সরবরাহে ঘাটতি আছে, মোট উৎপাদনের পরিমাণ আমরা যা-ই বলি না কেন? প্রকৃত দামই বলে দেবে দেশে উৎপাদন পরিস্থিতি কী, যদি না সেই পণ্য চোরাচালান হয়ে দেশের বাইরে যায়। বাজারে মাছের দাম কিছু মৌসুমি ওঠানামা ছাড়া দেড় দশক ধরে একটা স্থিতিশীল পর্যায়ে আছে। কারণ মাছের উৎপাদন দেশে ব্যাপক বেড়েছে এবং চাহিদা মেটাতে পারছে। এ বছর চালের দাম স্থিতিশীল ও নিম্নমুখী অর্থাৎ উৎপাদন এবং মোটা চাল আমদানি মিলিয়ে চাহিদা ও সরবরাহের ভালো সমন্বয় হচ্ছে এবার। এ কারণেই এবার সিন্ডিকেটের আওয়াজ উঠছে না।</span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">গোমাংসের দাম প্রতি কেজি অতি উচ্চ, তাই দাম বেঁধে দিয়েও কার্যকর হয় না। কারণ গোমাংসের ঘাটতি আছে। ডিম ও তেলের বর্ধিত দাম আর অকস্মাৎ বিশ্বব্যাপী সব পণ্যের (৮০ থেকে ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত) আমদানি দাম বেড়ে যাওয়া এবং টাকার মানের প্রায় ২৭ শতাংশ দরপতন আমাদের দেশের মূল্যস্ফীতিকে বাড়িয়ে দেয়। আমাদের কৃষি ও শিল্পোৎপাদন ব্যবস্থা উজ্জীবিত থাকায় আমরা হাইপার বা অতি মূল্যস্ফীতি থেকে (এক বছরে ১৫ শতাংশ বা তার বেশি মূল্যস্ফীতি) রক্ষা পাই। আমাদের আমদানীকৃত গোখাদ্য ও পোলট্র্রিজাত খাদ্য উপকরণের দাম কোনো কোনো ক্ষেত্রে দ্বিগুণের বেশি বৃদ্ধি পায়। ফলে উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যায়। এ বছরের অতি গরম, অতি বৃষ্টিতে পোলট্র্রিজাত সর্বউৎপাদনে বিরূপ প্রভাব পড়ে। অনেক পোলট্রি খামার উৎপাদনের বাইরে চলে যায়। ব্রয়লারসহ ডিম উৎপাদন কমে যায়। ব্রয়লারসহ ডিমের দাম ওঠানামা বা দাম বাড়ার এটাও একটা কারণ। এখানে সিন্ডিকেশনের দোষ অতিরঞ্জিত মনে হয়। কৃষি অর্থনীতিবিদরা এবং ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ সংস্থা এ বিষয়ে অর্থবহ গবেষণা করে দেখতে পারে। </span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">আসলে কৃষিপণ্যের মতো জটিল ব্যবস্থা নিয়ে কেবল সিন্ডিকেটের ওপর দোষ চাপানো বা আলু নিয়ে সিন্ডিকেট হয়েছে বলা অনেকটা সেই গ্রাম্য প্রবাদের মতো </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">দাদার কবর কই, আর দাদি কান্দে কই</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">। কৃষিপণ্য বাজার ব্যবস্থা আমাদের না বোঝার একটি বড় ক্ষেত্র বলেই আমার কাছে প্রতীয়মান হয়। সে কারণেই কৃষিপণ্যের মতো বিশাল ব্যক্তি খাতের যেখানে মুক্তবাজার খেলা সবচেয়ে কার্যকর রয়েছে। উৎপাদন, সংরক্ষণ, বিপণন ক্ষেত্রে বিপুল প্রতিযোগিতা রয়েছে, তেমন একটি ক্ষেত্রে পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়া অবিবেচনাপ্রসূত, যা অতীতে কার্যকর হয়নি এবং এখনো কার্যকর হবে না। আর দাম অনেক বেড়ে গেলে মজুদদার পচনশীল পণ্য নিয়ে বসে থাকবে এটা আশা করা যায় না। লাভের আশায়ই সে পণ্য মজুদ করে থাকে, পচিয়ে ফেলার জন্য নয়। </span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">কৃষিপণ্যের দাম ভোক্তার নাগালের বাইরে চলে গেলে কী করতে হবে? জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রে সরকার এর দায় এড়াতে পারে না অবশ্যই। চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ কম হলে দাম বাড়বেই, স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বাড়ার প্রবণতা দেখা দিলেই দ্রুত আমদানি উৎসাহিত করতে হবে। আমদানিব্যবস্থা যতটা সম্ভব উন্মুক্ত রাখতে হবে পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে। দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে মৌলিক কৃষিপণ্য বা কৃষিজাত শিল্পপণ্য, যা ভোক্তার বাস্কেটে অতি প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী, সেসব ক্ষেত্রে আমদানি কর (আরডি, সিডি ইত্যাদি) আরোপ না করাই বাঞ্ছনীয়। এতে মূল্যস্ফীতিও কমে আসবে। রাজস্ব আদায়ে আমাদের এখন আয়কর সংগ্রহের ওপরই জোর দিতে হবে। কৃষিজাত শিল্পপণ্য (চিনি, ভোজ্য তেল বা মৌলিক কৃষিপণ্য ডাল) ইত্যাদি যেহেতু কেবল কিছুসংখ্যক ব্যবসায়ী আমদানি করে থাকে, এ ক্ষেত্রে সিন্ডিকেশন করা অসম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে অবশ্যই নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে এবং সব খরচসহ আমদানি দামের বেশি দাম চাইলে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে। যতটা সম্ভব আমদানিকারকের সংখ্যা বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিতে হবে। বাজারের দাম বাড়া-কমা কিংবা অত্যধিক বেড়ে যাওয়া সমস্যা, বাজার প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই সমাধান করতে হবে। মূলকথা বাজারকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করতে দিতে হবে, গোডাউনে অভিযান চালিয়ে নয়।    </span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">আর উৎপাদকের ক্ষতি হবে বলে কৃষি খাতের অনেকেই বরাবর আমদানি নিরুৎসাহ করেন। অধিক মূল্যে ভোক্তার পকেট কেটে উৎপাদককে সহায়তা করার কথা অন্যায্য। উৎপাদককে সহায়তা করতে হবে উৎপাদনে খরচ কমিয়ে, উন্নত চাষপদ্ধতি গ্রহণের মাধ্যমে, প্রয়োজনে ঋণ সহায়তা দিতে হবে, যাতে অন্তত আমদানিমূল্যের অথবা তার নিচে আমাদের উৎপাদন খরচ থাকে। এটাই হবে উৎপাদককে সহায়তার টেকসই কৃষির নীতিমালা।                  </span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""> </span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : একুশে পদকপ্রাপ্ত, অর্থনীতিবিদ ও প্রতিমন্ত্রী, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়      </span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"> </p> <p style="margin-bottom:13px"> </p> <p style="margin-bottom:13px"> </p>