<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষ সম্মান শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে এক লাখ ৭৮ হাজার ৫৯১ শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীর সঙ্গে এক বা একাধিক অভিভাবক ছিলেন। এই বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকের আবাসন ও আহারের স্থান সংকুলান না হওয়ায় এক হৃদয়বিদারক অবস্থার সৃষ্টি হয় প্রতিবছর। শিক্ষার্থীরা সাধারণত হলে, মেসে, হোটেলে, আত্মীয়ের বাসায় থেকে প্রতিযোগিতামূলক ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়। অনেক শিক্ষার্থী দূর-দূরান্ত থেকে বাসে-ট্রেনে করে এসে পরীক্ষা দিয়ে আবার চলে যায়। ভর্তি পরীক্ষার সময় রাজশাহী শহরের বাসস্টেশন ও রেলস্টেশনে দাঁড়ানোর স্থান থাকে না। মসজিদের বারান্দায় অনেক শিক্ষার্থীকে প্রতিবছরই দেখা যায়। ক্যাম্পাসের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী, শিক্ষার্থী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী সবাই নতুন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করেন। এই মানবিকতার অন্য পিঠে রয়েছে নিষ্ঠুরতা, হঠকারিতা, অমানবিকতা।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রিকশা, অটোরিকশা, এমনকি হোটেলের ভাড়া ছিল অনেক বেশি। অনেক অটোরিকশা ৩০ টাকার ভাড়া ১০০ টাকা পর্যন্ত নিয়েছে। অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার সময় শিক্ষার্থীদের তারা বলেছে, ভর্তি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে আমরা এমনই নিই। অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ায় আমি এক অটোরিকশাচালককে বলেছিলাম, এই শিক্ষার্থীরা একসময় পুলিশ অফিসার, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, ব্যাংকারসহ নানা পেশায় যাবে। সে সময় তোমরা অপরাধ করলে জরিমানা যদি একটু বেশি করে তখন কি অন্যায় হবে? জীবনের সূচনালগ্নে শিক্ষার্থীরা যে শিক্ষা পাচ্ছে বড় হয়ে সে কর্ম করাই স্বাভাবিক। শিক্ষাজীবন শুরু হওয়ার আগে যে শিক্ষার্থী কোচিং সেন্টারে, শিক্ষকের বাসায় গিয়ে অর্থের বিনিময়ে শিক্ষা নেয়, সেই শিক্ষার্থী কর্মজীবনে একটু বাড়তি সুবিধা নেওয়াটা নৈতিকভাবে কি অন্যায় হবে? দর্শনে শাস্তি সম্পর্কে মতবাদে আছে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দাঁতের বদলে দাঁত। প্রবাদে রয়েছে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">যেমন কুকুর তেমন মুগুর।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রথমত, বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীকে একসঙ্গে রাজশাহীতে টেনে না নিয়ে এসে বিকল্প ব্যবস্থা করা উচিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগে বিভাগে পরীক্ষা নিচ্ছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা বিভাগে বিভাগে নেওয়া হলে চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীকে সীমাহীন কষ্ট শিকার করে রাজশাহীতে আসতে হবে না। দ্বিতীয়ত, এসএসসি ও এইচএসসি এবং সমমানের পরীক্ষার রেজাল্ট থেকে অর্ধেক নম্বর নেওয়া হলে শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজে অধিক মনোযোগী হবে। তৃতীয়ত, তিয়াত্তরের আইন দিয়ে পরিচালিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মান শ্রেণির শিক্ষার্থীর আসন হ্রাস করে এমএ, এমফিল এবং পিএইচডি শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বৃদ্ধি করা উচিত। অন্তত একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএস সম্মান শ্রেণি বন্ধ করা উচিত মানসম্মত উচ্চশিক্ষা প্রসারের জন্য। মানসম্মত উচ্চশিক্ষা ছাড়া স্মার্ট বাংলাদেশ স্মার্টলি পরিচালনা করা কষ্টকর হবে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">থিসিসবিহীন এমএ ডিগ্রি বন্ধ করার সময় এসেছে স্মার্ট বাংলাদেশে। আমার বিভাগে থিসিস নিয়ে শিক্ষার্থীকে আরো দুটি কোর্স নিতে হয়। থিসিস নিলে কোর্স নেওয়ার কোনো প্রয়োজনীয়তা আছে বলে মনে হয় না। কলেজ থেকে বিএ সম্মান ডিগ্রি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার বিধান করা উচিত। বাংলাদেশের সব চাকরির যোগ্যতা এখনো পর্যন্ত বিএ, বিএসসি, বিকম হলেই চলে। বিসিএস পাস করার জন্য চার বছরের সম্মানসহ এক বছরের এমএ ডিগ্রি সময় ও অর্থের অপচয় ছাড়া অন্য কিছু নয়। শিক্ষা ক্যাডারের জন্য এমএ ডিগ্রির প্রয়োজন। সাধারণ ব্যাংকিং, স্কুল, মাদরাসায় শিক্ষকতার জন্য এমএ ডিগ্রি কোনো কাজেই আসে না। অপ্রয়োজনীয় শিক্ষা শুধু বিলাসিতা নয়, শিক্ষা খাতে বাজেটের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। পাকিস্তান ইজম প্রসারের জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেসব বিভাগ গুরুত্ব পেয়েছিল শুধু রাজনৈতিক বিবেচনায় সেসব বিভাগ পুনর্গঠন প্রয়োজন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশের সর্বত্র দখলদারি মনোভাব। যে যেখানে যেভাবে পারছে সে সেখানে তাঁর সামর্থ্য অনুযায়ী দখলে নিচ্ছে। সাধারণ মানুষ, শিক্ষক কেউ বাকি থাকে না দখলদারি মনোভাব থেকে। এসব বাড়ি সরকারি সংস্থা ভেঙে দিয়ে যাচ্ছে, কয়েক দিন পর আবার আগের অবস্থানে। এক ইঞ্চি জমিও কেউ ছাড়তে চায় না। নদী, খাল-বিল, পুকুর কোনো কিছুই বাদ নেই। খাসজমি, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সম্পত্তি হলে তো কথাই নেই।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নীতি-নৈতিকতা, আদর্শবাদিতা, অলৌকিক কোনো নির্দেশদাতার ওপর নির্ভর করে মানুষের দখলদারি মনোভাব হ্রাস করা যাবে না। উন্নত বিশ্বে এক মিনিট বিদ্যুিবভ্রাট ঘটলে দোকান লুট হয়ে যায়। শুধু আইন প্রয়োগে শিথিলতা না থাকায় সেসব দেশে মানুষের নৈতিক মান উন্নত হয়েছে। করপোরেট বিশ্বে আমাদের এখানে ব্যতিক্রম ঘটবে বলে আশা করা যায় না। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর দক্ষতা ও সততার ওপর দেশের নৈতিক অবস্থান অনেকটাই নির্ভর করে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা দুর্বল হলে নীতি-নৈতিকতার ওপর দায় চাপিয়ে আত্মতৃপ্তি পাওয়া যায়। এ ধরনের আত্মতৃপ্তি থেকে আত্মসম্মান রক্ষা হয় না। সমাজ ব্যবস্থাপনা এক দিনে কোনো অলৌকিক, অতি প্রাকৃতিক শক্তির নির্দেশে ঠিক হয়ে যাবে না। জ্যঁ জ্যাক রুশোর মতে, মেরে খাওয়া, লুণ্ঠন প্রবৃত্তি মানুষের সহজাত। এই প্রবৃত্তি থেকে মানুষ মুক্ত হয়েছে কঠোর আইন প্রয়োগের সাহায্যে। শুধু আদেশ, নির্দেশ, উপদেশ, ভয়ভীতি দেখিয়ে মানুষকে খুব কমই শৃঙ্খলাবদ্ধ করা যায়। উন্নত বিশ্বে আদেশ-উপদেশের চেয়ে আইনের যথাযথ প্রয়োগ আছে, আর এ আইন সবার জন্যই সমান। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়</span></span></span></span></p> <p> </p>