<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পশ্চিমবঙ্গের কয়েকজন বিজেপি নেতা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর অত্যাচার বাড়ছে এবং সীমান্ত পেরিয়ে সংখ্যালঘুরা বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে চলে আসছে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে। রাজ্য নেতারা এই অভিযোগ করার চেষ্টা করেছিলেন সম্প্রতি প্রচারিত প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কাছে কয়েকজন মার্কিন কংগ্রেসম্যানের লেখা চিঠির ভিত্তিতে। সেই চিঠিতে বলা হয়েছে, মানবাধিকার বাংলাদেশে লঙ্ঘিত হচ্ছে। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার অভাব বোধ হচ্ছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বা অন্য কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থার কিছু তথ্য এ ব্যাপারে কাজে লাগানো হচ্ছে এই প্রচারে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তথা জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল বিজেপির শীর্ষ নেতাদের বাংলাদেশ পরিস্থিতি সম্পর্কে ভারত সরকারের সর্বশেষ রিপোর্ট দিয়েছেন। সেই রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, বিএনপি যখন ক্ষমতাসীন ছিল, সেই সময় খালেদা জমানায় যেভাবে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার হয়েছে, যেভাবে বাংলাদেশ থেকে হিন্দুদের চলে আসতে হয়েছিল, সে তুলনায় শেখ হাসিনার জমানায় যেমন ধর্মনিরপেক্ষ ভাবনার প্রতিষ্ঠা হয়েছে, ঠিক সেইভাবে এই সংখ্যালঘুদের ওপর অপরাধ ও অত্যাচার অনেক কমেছে। সবচেয়ে বড় কথা, ভারত সরকারের তথ্যের ভিত্তিতে বিজেপির কট্টরবাদী হিন্দু বিজেপি নেতাদের বোঝানো হয়েছে, যখনই শেখ হাসিনার কাছে পুলিশি তথ্য আসে, যদি ভারত সরকারের দেওয়া তথ্য আসে যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর এ রকম ঘটনা ঘটেছে বা সন্ত্রাস ও নাশকতার চেষ্টা করা হচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গে শেখ হাসিনা সরকার কড়া ব্যবস্থা নিয়েছে এবং তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। কয়জন আসছে এবং কয়জন যাচ্ছে তার ফ্যাক্টস অ্যান্ড ফিগারস নিয়মিত আদান-প্রদান হচ্ছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ রকম কোনো সমন্বয় খালেদা জমানায় ছিল না। কাজেই সংখ্যালঘুদের বিষয়ে যখন শেখ হাসিনা নিজে সংবেদনশীল, তখন তাঁর বিরুদ্ধে যদি ভারতে বিজেপি কোনো প্রচার অভিযান শুরু করে, তাহলে তাতে কিন্তু লোকসানটা ভারতেরই হবে। লাভ হয়ে যাবে হয়তো অন্য কোনো শক্তির, যে শক্তি এই মুহূর্তে ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ককে বিনষ্ট করতে, দূষিত করতে যথেষ্ট ব্যগ্র ও ব্যস্ত। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমার মনে পড়ে, যখন খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, সেই সময় একবার দুর্গাপূজার ঠিক পরে ভয়ংকরভাবে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার হয়েছিল। অনেক নিরপরাধ কিশোরী ধর্ষিত হয়েছিল। বিজয়া দশমীর সময় রীতিমতো পারস্পরিক সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বিজেপির দলীয় চাপে প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি এবং ন্যাশনাল সেক্রেটারি অ্যাডভাইজার ব্রজেশ মিশ্র ঢাকায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন এবং অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণের আরজি জানান। তা না হলে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে তার প্রভাব পড়বে, এমন কথাও সেদিন ব্রজেশ মিশ্র বলে এসেছিলেন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশে আবার আরেকটা নির্বাচন এসে গেছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশে নির্বাচন, যেখানে ভারতের নির্বাচন হবে ২০২৪ সালের মে মাসে। এ রকম একটা পরিস্থিতিতে আমেরিকার মধ্যে কিছু প্রেশার গ্রুপ আছে, তারা সক্রিয় হয়ে আবার ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কটাকে বিনষ্ট করতে চায়, ঠিক যেভাবে আমেরিকার সঙ্গেও বাংলাদেশের সম্পর্কে চিড় ধরাতে ব্যস্ত থাকে। আমার মনে হয়, এতে যদি সবচেয়ে বেশি লাভবান কেউ হয়, তাহলে সেটা হবে চীন। কারণ চীনের যে আক্রমণাত্মক নীতি, সেটা কিন্তু ভারত সম্পর্কে এখনো বদলায়নি। ভারতের ডোকলামের পর যেভাবে ভারতীয় ভূখণ্ড দখল করে বসে আছে, সেখান থেকে তারা এখনো সেনা প্রত্যাহার করেনি। আর এই পরিস্থিতিতে ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্র নেপাল, ভুটান, মিয়ানমারসহ বিভিন্ন দেশে চীনা প্রভাব বাড়ছে। শ্রীলঙ্কা তো চীনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে এখন অনুশোচনায় ভুগছে। সেখানে বাংলাদেশ কিন্তু যথেষ্ট মুনশিয়ানার সঙ্গে তাদের পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনা করছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চীনের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি পুরনো। চীনের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি থাকার ফলে কখনো ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ভুল-বোঝাবুঝি হয়নি। তার কারণ প্রতিরক্ষা চুক্তি থাকলেও সেখানে সার্বভৌম পররাষ্ট্রনীতিতে বাংলাদেশ কখনো আপস করেনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে পররাষ্ট্রনীতি তৈরি করে দিয়েছিলেন, সেখানে বলাই হয়েছিল বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি হবে তার সার্বভৌম স্বার্থের ওপরে তৈরি। সেখানে অন্য কোনো দুটি দেশের মধ্যে যদি ঝগড়াও বাধে তাহলে বাংলাদেশ কিন্তু কোনো পক্ষ অবলম্বন করবে না। বাংলাদেশ সেখানে নিরপেক্ষভাবে তার নিজের স্বার্থ রক্ষা করবে। সেই কাজটা একটা ছোট দেশের পক্ষে যে কত কঠিন, কত চাপের মধ্যে থাকে, সেটা ভারতও বোঝে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ট্র্যাডিশনালি আমেরিকার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের একটা অতীত আছে। যে অতীতে আমেরিকার একটু পাকিস্তানঘেঁষা নীতি বাংলাদেশের ব্যাপারে কাজ করেছে। ১৯৭১ সালে যখন মুক্তিযুদ্ধ হয় এবং বাংলাদেশ গঠিত হয়, সেই সময় আমেরিকা তা সমর্থন করেনি। অনেক পরে তারা বাধ্য হয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে মেনে নিতে। এর ফলে তারা ছিল পাকিস্তানের পক্ষে। এই চীন-পাকিস্তান অক্ষের সঙ্গে এখন আমেরিকার সম্পর্ক ভালো না হলেও আমলাতন্ত্রের মধ্যে এবং বিভিন্ন স্তরে রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে কোথাও একটা পাকিস্তানের ব্যাপারে পক্ষপাত মার্কিন প্রশাসনেও থেকে গেছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">২০১৩ সালের ঘটনা। শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন মার্কিন প্রশাসনের কেষ্টবিষ্টুরা। সেই সময় রাষ্ট্রদূত ছিলেন আমেরিকার ড্যান মোজিনা। আর ঢাকার বিসিএম ছিলেন জন ডেনিলোয়েস। সেদিন বৈঠকে যখন মার্কিন প্রতিনিধিদলের সামনেই শেখ হাসিনা রসিকতার ছলে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ড্যান মোজিনা রাষ্ট্রদূত শুধু নন, আপনাকে আমরা বিএনপি দলের ওয়ার্কিং গ্রুপের সদস্য বলে মনে করি।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> এই কথোপকথন সেই সময় বাংলাদেশের সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছিল। জন ডেনিলোস কূটনীতিক হিসেবে পাকিস্তানেও ছিলেন এবং পাকিস্তান থেকে অবসরগ্রহণের পর তিনি এখনো বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে লেখালেখি করছেন। বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক যে লাইন এবং ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের যে মধুর অ্যাপ্রোচ, সেই সম্পর্কে যথেষ্ট ক্রিটিকাল কথাবার্তা তাঁর লেখায় পাওয়া যায়। সুতরাং মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গেও শেখ হাসিনা যেভাবে মুনশিয়ানার সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে একটা ছোট দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েও লড়ছেন, সেটা প্রশংসার দাবি রাখে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এখন ভোট এসে যাচ্ছে। ভোটের আর বেশি দেরি নেই। যখনই ভোট আসে তখন বাংলাদেশের ভেতরেও সাম্প্রদায়িক শক্তি ও স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী সক্রিয় হয়ে ওঠে। এবারও নানা গোষ্ঠী, যাদের একটা অংশ ঢাকায় আছে, একটা অংশ আমেরিকায় আছে; আবার অনেকে ভারতের মধ্যেও আছে; তারা চেষ্টা করছে কী করে এই সম্পর্কটাকে তিক্ততায় নিয়ে যাওয়া যায়। ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে বারবার জানিয়েছে, তারা ঢাকার অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নাক গলাবে না। এবারে ভোটের ক্ষেত্রেও কোনোভাবেই ভারতের কোনো ভূমিকা থাকবে না। এটা বাংলাদেশের নির্বাচন। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হওয়াটা যে বাঞ্ছনীয়, সেটা তো সবাই জানে। সেটার জন্য আমেরিকা কেন অযাচিতভাবে বাংলাদেশ সরকারকে জ্ঞান দেবে এবং তাদের ভিসানীতি ঘোষণা করবে? </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমেরিকার নির্বাচন নিয়েও তো অনেক অভিযোগ ওঠে। তাই সেই একই যুক্তিতে ভারত কিংবা বাংলাদেশ কি আমেরিকার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করে? শুধু বড় দেশ বলে আমেরিকা এ রকমভাবে একটা দাদাগিরি মনোভাব নেবে! আর ভোট হওয়ার এখন অনেক দেরি আছে। ভোট হওয়ার আগে  থেকেই এ ধরনের অ্যাপ্রিহেনশন তৈরি করা এবং সঙ্গে সঙ্গে বিএনপি প্রতিক্রিয়া জানিয়ে দিয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অ্যাটম বোম ফেলে দিয়েছে। আর এই ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার নির্বাচন না হওয়ার জন্য দায়ী হবে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ আবার উল্টো বলেছে, আসলে শান্তিপূর্ণ ও অবাধ নির্বাচন তো করা সম্ভব হয় না বিএনপির জন্য। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সুতরাং রাজনৈতিক চাপান-উতোর ঢাকায়ও শুরু হয়ে গেছে। ভারত এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো রকমভাবে নাক গলায়নি। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টও কিন্তু চিঠির বৈধতা এখন পর্যন্ত স্বীকার করেনি। বিষয়টা যাই হোক না কেন, এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে ভারত ও বাংলাদেশকে এখন আরো অনেক বেশি মেহনত করতে হবে মৈত্রী রক্ষা করার জন্য। আরো অনেক বেশি সচেষ্ট হতে হবে। সেপ্টেম্বর মাসে জি২০ সম্মেলন হচ্ছে। শেখ হাসিনা ভারতে আসছেন। নরেন্দ্র মোদি আমেরিকায় যাচ্ছেন তার আগে। সুতরাং আশা করা যায়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গেও আমেরিকা সফরে কোনো না কোনোভাবে এই এলাকার যে পরিস্থিতি সেটা নিয়ে একটা আলাপ-আলোচনা হবে। আর ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কটা ইতিবাচক পথে হাঁটবে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : নয়াদিল্লিতে কালের কণ্ঠ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">র বিশেষ প্রতিনিধি</span></span></span></span></p> <p> </p>