<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রবৃদ্ধিটা আসলে সব দেশেই কমছে বা কমবে। কারণ হচ্ছে প্রবৃদ্ধি বৈশ্বিকভাবে সংযুক্ত। কোনো বিচ্ছিন্ন অর্থনীতি খুব ভালো করতে পারবে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এমন চিন্তা করা ঠিক নয়। কেউ একটু ভালো করবে, কেউ খারাপ করবে। কিন্তু এখন বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি কমতির দিকে। এমনকি এ-ও শোনা যাচ্ছে যে বড় বড় অর্থনীতিগুলো ধীরে ধীরে মন্দায় চলে যেতে পারে। মন্দার অর্থটা হচ্ছে বেকার থাকবে। মানুষের হাতে টাকা থাকবে না, এমনও হতে পারে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে এরই মধ্যে দুঃখজনক অনেক ঘটনা ঘটছে। যেমন কয়েকটা ব্যাংক ফেল করেছে। সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিবি) ও সিগনেচার ব্যাংক বন্ধ হয়ে গেল। সুইজারল্যান্ডের ক্রেডিট সুইস ব্যাংক সংকটে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অর্থনীতি বিজ্ঞান যেটা শিখিয়ে দিয়েছে সেটা হলো, সুদের হার বাড়লে বন্ডের দাম কমে। তাদের তো ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম রয়েছে। তাই যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল ব্যাংক যেহেতু সুদের হার বাড়াচ্ছে, সেহেতু তাদের যেসব সরকারি ও করপোরেট বন্ড ইস্যু করা হয়েছে সব কটির দাম কমে গেছে। এদিকে ক্রেডিট সুইস ব্যাংকের ভ্যালু কমতে কমতে শূন্যের কাছাকাছি চলে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকেরও একই অবস্থা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিক ব্যাংকও ফেল করার কথা ছিল। তবে তাদের এফডিআইসি অর্থাৎ সেন্ট্রাল ডিপোজিট ইনস্যুরেন্স করপোরেশন আছে। তারা আড়াই লাখ ডলার পর্যন্ত আমানত ফেরত দিতে পারে। যার ফলে যারা ছোট ছোট ডিপোজিট করেছে তারা তাদের ডিপোজিটের অর্থটা পেয়ে যাবে। তবে যাদের বড় অঙ্ক ডিপোজিট আছে তাদের এটা পেতে কষ্ট হয়ে যাবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">একটা ব্যাংক ফেল করলে কিন্তু অন্য ব্যাংকের ওপরও এর প্রভাব পড়ে। বর্তমানে পুরো ফিন্যানশিয়াল সিস্টেম একটা চাপের মধ্যে আছে। সুদের হার বৃদ্ধি পাওয়া মানে হলো সব কিছু বাড়ছে। এর কারণে অনেকে বলছে ডলার নাকি আরো মূল্য হারাবে। অন্যদিকে যুদ্ধের কারণে লজিস্টিক প্রবলেম হচ্ছে। সাপ্লাইয়ে সমস্যা হচ্ছে। এক দেশ থেকে আরেক দেশে পণ্য পৌঁছতে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। আবার যুদ্ধের কারণে পণ্যের মূল্যও ওঠানামার মধ্যে আছে। এই জটিল পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য অনেকে আবার গোল্ড জমা করতে শুরু করেছে। মন্দার এই পরিস্থিতির রক্ষাকবচ হিসেবে গোল্ডহোলকে অনেকে সমাধান হিসেবে দেখছে। এমনটি অতীতে দেখা যেত, মানুষ সংকট থেকে রক্ষা পেতে স্বর্ণ এবং দামি ধাতব বস্তু সংরক্ষণ করে রাখত। ইতিহাস এমনটিই বলে। এর ফলে আপনি দেখবেন বিশ্বজুড়ে গোল্ডের দামও বেড়ে গেছে অনেক। গত ১০০ বছর বা ধরেন গত ৫০ বছরে আমাদের চোখের সামনেই সবচেয়ে বেশি বেড়েছে বাজারে গোল্ডের দাম। কোনো কোনো সেন্ট্রাল ব্যাংকও এখন গোল্ড কিনছে। যেমন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চীন, তুরস্ক গোল্ড কিনছে। ভারতও কিছু কিছু কিনছে। অন্যান্য আরো অনেক দেশ কিনেছে। তারা মনে করছে ডলারের মান কমে যাবে আর গোল্ড হবে মহামূল্যবান। এদিকে ফেডারেল ব্যাংক যখন সুদের হার বাড়ানো শুরু করেছে তখন অন্যান্য ব্যাংকও সুদের হার বাড়ানো শুরু করেছে। ব্যাংক অব ইংল্যান্ড, ব্যাংক অব জাপান, ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংকের কথা বলা যেতে পারে। তারাও সুদের হার বাড়াচ্ছে। সুদের হার বাড়লে হবে কী, মানুষের ক্রেডিট ফ্লো বা ডিমান্ড ফর মানি অর্থাৎ অর্থের চাহিদা কমে যাবে। তখন মানুষ তো কম কনজাংকশন করবে, তাই সব কিছু কমের দিকে চলে যেতে পারে। এসবকে বলা যেতে পারে রিসাইকল</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">একটি খারাপ জিনিস অন্য একটি খারাপ জিনিসের জন্ম দিচ্ছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="" height="302" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2023/04. April/20-04-2023/1.jpg" style="float:left" width="331" />বর্তমানে গরিব অনেক রাষ্ট্রকে বিদেশি ঋণ চেপে ধরেছে। শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানের কথা এখানে বলা যেতে পারে। পাকিস্তান তো তাদের বিদেশি ঋণ শোধ করতে পারবে বলে মনে হয় না। এরই মধ্যে তারা কঠিন একটি পরিস্থিতিতে পড়ে গেছে। এখন তারা কিছু বন্ধু দেশ থেকে নতুন করে ঋণ নিতে চাচ্ছে,  যেমন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সৌদি আরব বা অন্য দেশ থেকে। এই অর্থ তারা নিচ্ছে তারা যেন এখনকার খরচ মিটিয়ে ভালোভাবে চলতে পারে সে জন্য। পেছনের ঋণ শোধ করার মতো তাদের কোনো ক্যাপাসিটি বিল্ডআপ হচ্ছে না। তারা অনেকটা দেউলিয়ার দ্বারপ্রান্তে চলে গেছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশের একটা ভালো দিক হলো, বাংলাদেশ বিদেশি ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে রাইট অ্যান্ড লেফট নেয় না। গত দু-তিন বছরে এমন ঋণ নিয়েছে বেশি। এর আগে কিন্তু এমন ঋণ নেয়নি। আগের বিদেশি ঋণগুলো অনেকটা সহনীয় পর্যায়ে ছিল। বাংলাদেশ কিছু মেগাপ্রজেক্ট হাতে নেওয়ার কারণে বেশ ঋণ হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে মানুষ কিন্তু ভয়ে আছে, বাংলাদেশের বৈদেশিক দেনা বাড়ছে! তা ছাড়া আগে যে ঋণগুলো করা হয়েছে সেই দেনা বারবার সামনে আসছে। সেগুলো পরিশোধের সময়ও চলে আসছে। অলরেডি ব্যালান্স অব পেমেন্টের ওপর চাপ পড়ছে। একটা নেগেটিভ প্রভাব পড়ছে। তা ছাড়া আমাদের কিন্তু আমদানির চেয়ে রপ্তানির খরচ বেড়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ আমরা যা রপ্তানি করছি এর চেয়ে অনেক গুণ বেশি আমদানি করছি। রপ্তানির চেয়ে আমদানি বেড়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশে বিভিন্ন দামি জিনিসের ওপর কিছু রেসট্রিকশন দেওয়া আছে, অনেক দেশই এ রকম রেসট্রিকশন দিয়েছে। কিন্তু তার পরও আমাদের আমদানি খরচ রপ্তানি আয়ের চেয়ে অনেক বেশি। আমরা অধিক মূল্যের জিনিস আমদানি করছি এবং খুবই কম মূল্যের জিনিস রপ্তানি করছি। এটা মেকআপ করা বাংলাদেশের জন্য এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। এর জন্য সরকার বিভিন্ন কম্পানিকে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বলছে যে আপনাদের ডলার আপনারা ম্যানেজ করেন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশের প্রায় ৬০ শতাংশ ফরেন এক্সচেঞ্জ হয় ডলারের মাধ্যমে। অবশ্য এর সঠিক হিসাবটা বাংলাদেশ ব্যাংক জানে। এ ক্ষেত্রে দেখা যায়, বাংলাদেশের ডলারের ওপর নির্ভরশীলতা অনেক বেশি। বাংলাদেশ এখন ভালো একটা কাজ করছে, সেটা হলো চায়নিজ মুদ্রা ইউয়ানকে রিজার্ভ কারেন্সি হিসেবে মর্যাদা দিয়েছে। ইউয়ানের ভূমিকা যদিও ইউএস ডলারের মতো এতটা হবে না। তবে এতে আস্তে আস্তে চীনের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্যিক সম্পর্কটা উন্নত হবে। কারণ ইউয়ানে এখন বাণিজ্য করলে তারা সহজে সেটা করতে পারবে আমাদের সঙ্গে। ডলারের ঘাটতি রোধ করতে আমরা যদি ইউয়ানের মাধ্যমে বাণিজ্য শুরু করি চীনের সঙ্গে, তাহলে কিন্তু আমাদের ইউয়ানের রিজার্ভ বাড়াতে হবে। চীনে আমাদের এক্সপোর্ট বাড়াতে হবে। আমরা তো এখন চীনে মাত্র এক বিলিয়ন ডলার এক্সপোর্ট করি। ওটা দুই-তিন বিলিয়নে পৌঁছাতে পারলে হবে। চীন আমাদের এখানে প্রায় ১৩-১৪ বিলিয়ন ডলারের মতো রপ্তানি করে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বলা যায়, অনেকটা একতরফা হচ্ছে। এটা তো আগে ডলারে আদায় করতে হতো। তার পরিবর্তে ইউয়ানে যেহেতু এখন পেমেন্ট করা যাবে, এটা ভালো দিক। চীনে রপ্তানি করা ছাড়াও আমরা যদি অন্য অর্থনীতির সঙ্গে ডলারের বদলে ইউয়ানের মাধ্যমে লেনদেন করতে পারি এবং তাদের কাছ থেকে ইউয়ান আনতে পারি, তাহলে আমাদের বৈদেশিক লেনদেনটা আরো সহজ হবে। ভারতের সঙ্গেও তাদের রুপি আমাদের টাকা মিলিয়ে লেনদেনের একটি চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের টাকায় দিতে গেলে আমরা তো এক-দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি করি। তারা তো করে প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলার। বাকিটা কিভাবে দেওয়া যাবে সেটা নিয়েও তো ভাবতে হবে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এখন অর্থনীতি অনেকটাই অস্থির, আবার নির্বাচনের বছর। সব কিছু মিলিয়ে বাংলাদেশেরও দেখার বিষয়। অন্য দু-চারটা অর্থনীতি তো বৈদেশিক ঋণের চাপে দেউলিয়া প্রায়। যেমন পাকিস্তান। পাকিস্তান বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে পারবে বলে মনে হয় না। এখন বাইরে থেকে তারা লোন নিচ্ছে তাদের অর্থনীতিকে চালু রাখার জন্য। বৈদেশিক কোনো লোন তারা ফেরত দেবে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এটা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ এখনো পারছে। ভবিষ্যতেও পারবে বলে আশা করা যায়। দুই-তিন বছর আগেও বাংলাদেশের এত বৈদেশিক ঋণ ছিল না। গত তিন বছরে বেড়েছে অনেক। এখন সেটা কিভাবে সার্ভিসিং করে সেটা দেখার বিষয়।</span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : অর্থনীতিবিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক</span></span></span></span></p>