বিশ্বজুড়ে কভিড-১৯ মহামারির দৃশ্যমান সূত্রপাত চীনের উহান শহর থেকে। দ্রুতই বিশ্বের প্রায় সব দেশেই এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে। বিশ্বে অসংখ্য মানুষ আক্রান্ত ও মৃত্যুবরণ করেছে। বিশ্বের প্রতিটি দেশের অর্থনীতিতে এবং মানুষের জীবনে এই মহামারি নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
করোনা মহামারি মোকাবেলা বৈশ্বিক বাস্তবতা মাথায় রেখে সমালোচনা করা উচিত
- মোহাম্মদ এ আরাফাত
অন্যান্য

চীনে উৎপত্তি হওয়া এই ভাইরাস দেশটিতে এত দ্রুত ছড়িয়েছিল যে তারা রোগীদের হাসপাতালে জায়গা দিতে পারেনি। মাঠে তাঁবু করে তাদের চিকিৎসা দিতে হয়েছে।
সৌভাগ্যবশত অন্য অনেক দেশের তুলনায় প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য কিছু সময় আমরা পেয়েছি। চীনে এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখার সময় থেকেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিজ উদ্যোগে ব্যবস্থা নিতে শুরু করে। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মহামারি ঘোষণার পরপরই আমাদের দেশে বিমান, নৌ ও স্থলবন্দরগুলোতে স্ক্রিনিং ব্যবস্থা চালু করা হয়। প্রতিটি প্রবেশমুখে স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়। এ পর্যন্ত প্রায় আট লাখ বিদেশাগত মানুষকে স্ক্রিনিং করা হয়েছে। সব বিদেশাগত ব্যক্তিকে লিফলেট ও প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিষয়ক নির্দেশনা, যেমন—কিভাবে বাড়িতে কোয়ারেন্টিন করতে হবে, অসুস্থ হলে কী করণীয় ইত্যাদি দেওয়া হয়েছে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমেও তাদের বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এসব ব্যবস্থা অন্য দেশগুলোতে নেওয়া হয়নি।
ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে চীন থেকে দুইবারে প্রায় ৫০০ আটকে পড়া বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত আনা হলে আমরা সফলভাবে তাঁদের হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করেছি। তাঁরা সবাই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এরই মধ্যে প্রায় আট লাখ লোক দেশের বিভিন্ন বন্দর দিয়ে প্রবেশ করেছেন। তাঁরা স্বেচ্ছায় কোয়ারেন্টিন করবেন মর্মে লিখিত গ্রহণ করা হয়েছিল, যা অনেকেই মানেননি। চীনের মতো তাঁদের গুলি করে কোয়ারেন্টিনে থাকা বাধ্য করা যায়নি।
আমাদের দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। প্রথম রোগীর মৃত্যু হয় ১৮ মার্চ। তারও আগে, ১ মার্চ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক আন্ত মন্ত্রণালয়, জেলা ও উপজেলা কভিড প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হয়। পরবর্তী সময়ে বিভাগীয়, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন কমিটি গঠন করা হয়। ১৮টি মন্ত্রণালয়কে এই কভিড মোকাবেলায় সম্পৃক্ত করা হয়। ওই কমিটিগুলোর মাধ্যমে সব নির্দেশনা প্রদান, স্বাস্থ্যবিধি এবং হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। মার্চের ২৬ তারিখ থেকে দেশব্যাপী সাধারণ লকডাউন কার্যকর করা হয়। পরবর্তী সময়ে এলাকাভিত্তিক জোনিং সিস্টেম শুরু করা হয়। মাত্র একটি টেস্টিং ল্যাব ও ১৫০টির মতো নমুনা পরীক্ষা দিয়ে শুরু করলেও প্রয়োজনের তাগিদে এখন সারা দেশে ৮০টি টেস্টিং ল্যাব স্থাপিত হয়েছে। দৈনিক সর্বোচ্চ ১৮ হাজার পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ও হচ্ছে। টেস্টিং ল্যাবের প্রয়োজনীয়তা কারো জানা ছিল না। টেস্টিং ল্যাব স্থাপনে যন্ত্রপাতি ও প্রশিক্ষিত জনবল একই সময়ে ব্যবস্থা করা ছিল একটা বিশাল চ্যালেঞ্জ। সে সময় সারা বিশ্বে লকডাউন চলছিল। দেশে-বিদেশে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। ফলে কিট সংগ্রহ করা দুরূহ ছিল। তার পরও চিকিৎসাসেবা ও নমুনা পরীক্ষা অব্যাহত রাখা হয়েছে এবং দ্রুত বৃদ্ধি করা হয়েছে।
কভিড আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য আলাদা হাসপাতাল ব্যবস্থা করা হয়েছিল। অত্যন্ত ছোঁয়াচে রোগ হওয়ায় প্রাথমিকভাবে অন্যান্য রোগীর সঙ্গে কভিড-১৯ চিকিৎসা প্রদান সম্ভব ছিল না। প্রথমে কুর্মিটোলা, কুয়েত মৈত্রী, মুগদা হাসপাতালসহ প্রায় ১৫টি হাসপাতাল ঢাকায় কভিড-১৯ চিকিৎসা শুরু করে। এরপর সারা দেশে প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আলাদা কভিড হাসপাতাল ও আইসোলেশন ওয়ার্ড তৈরি করা হয়।
আমাদের মেডিক্যাল সোসাইটি ও অন্যান্য সংগঠনের উদ্যোগে গঠিত বিশেষ কমিটি স্বাস্থ্য গাইডলাইন তৈরি করেছে। আমরা বিশ্বের সব দেশের, বিশেষ করে ইউরোপ, আমেরিকা ও চীনের কার্যকর চিকিৎসাব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। এই চিকিৎসাব্যবস্থাও প্রথম দিকে কারো জানা ছিল না। তখন ভেন্টিলেটরের প্রসঙ্গে সবাই সরব ছিল। সে সময় বিশ্বে লকডাউনের ফলে অধিক হারে ভেন্টিলেটর সংগ্রহ করা সম্ভব ছিল না। এসব নিয়ে অনেক সমালোচনা সহ্য করতে হয় সরকারকে। অথচ পরবর্তীকালে প্রমাণিত হয় যে ভেন্টিলেটর খুব কার্যকর নয়। বরং দেখা গেছে যে রোগীকে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ করাই অন্যতম কার্যকর চিকিৎসাব্যবস্থা। এর মধ্যে হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা অন্যতম। হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা কভিড আক্রান্ত বিশ্বে বেশ অপ্রতুল। আমাদের দেশের বিশেষজ্ঞরা যখন থেকে এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন, তখন থেকেই হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা সংগ্রহের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
রাতারাতি প্রতিটি কভিড হাসপাতালে আইসিইউ ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে। গত তিন মাস আগে অনেক জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা, আইসিইউ, ভেন্টিলেটর, ডায়ালিসিসের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। কারণ কভিড-পূর্ববর্তী বাস্তবতায় সেগুলোর প্রয়োজন ছিল না। এরই মধ্যে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে অনেক হাসপাতালে এগুলো স্থাপন করা হয়েছে বা স্থাপনের প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। ঢাকার ভেতরে কুর্মিটোলা, কুয়েত মৈত্রী, মুগদা, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, ফরিদপুরসহ অন্যান্য হাসপাতালে গত দুই মাসের মধ্যে আইসিইউ ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে। ৭২টি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন এবং লিকুইড অক্সিজেন প্লান্ট চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে, যেগুলো কভিড চিকিৎসার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একপর্যায়ে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেলে ঢাকা শহরে বসুন্ধরা আইসোলেশন সেন্টার, সিটি করপোরেশন মার্কেট, দিয়াবাড়ী, মহানগর হাসপাতালসহ প্রায় ১৫টি বিশেষ কভিড হাসপাতাল চালু করা হয়েছে। কভিড রোগীদের পাশাপাশি নন-কভিড বিভিন্ন অসংক্রামক রোগী, যেমন—ক্যান্সার, কিডনি, হৃদেরাগ, ডায়াবেটিস রোগী এবং গর্ভবতী মায়েদের চিকিৎসা ও প্রসূতিসেবা ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া হয়। যদিও তিন মাসে হাসপাতালের সংখ্যা দ্বিগুণ করা সম্ভব নয়, তবে তা সত্ত্বেও স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হয়নি।
ডাক্তার-নার্সদের জন্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। চিকিৎসাকর্মীদের সুরক্ষা ও রোগীদের চিকিৎসাসেবা বিষয়ে সারা দেশের সব হাসপাতালে চিকিৎসা প্রটোকল দেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞ কমিটির পরামর্শে ডাক্তার-নার্স ও অন্য সেবাকর্মীদের সুরক্ষার জন্য সুরক্ষাসামগ্রীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিশ্বব্যাপী লকডাউনের ফলে প্রাথমিক পর্যায়ে এগুলো সংগ্রহ ও সারা দেশে স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে বিতরণ তথা সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা একটি দুরূহ কাজ ছিল। বিশ্বজুড়েই পিপিই সংগ্রহ ও বিতরণে জটিলতা দেখা গেছে, যা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে আমরা প্রতিনিয়ত দেখেছি। প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশেও এই জটিলতা ছিল; কিন্তু সরকারের আপ্রাণ চেষ্টার ফলে দ্রুতই পিপিই-সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন করা গেছে। দেশের গার্মেন্ট খাতের মাধ্যমে দেশীয়ভাবে তৈরি করে পিপিই সরবরাহ করা হয়েছে। কোনোভাবেই এই সুরক্ষাসামগ্রীর ঘাটতি হতে দেওয়া হয়নি। বিশেষজ্ঞ কমিটির পরামর্শে চিকিৎসাকর্মীদের কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাঁদের থাকা-খাওয়ার জন্য ঢাকা শহরে প্রায় ৫০টি হোটেলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাতায়াতের সুব্যবস্থা করা হয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে সমন্বয়ের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে একটি কো-অর্ডিনেশন সেল করা হয়েছে, যেখানে সব বিষয়ে যেকোনো ব্যক্তি বা সংস্থা তথ্য পাওয়ার সুযোগ পেয়েছে এবং সেখান থেকে ডঐঙ, টঐঋচঙ এবং ইউনিসেফের কর্মকর্তারাও প্রতিনিয়ত যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন। জনগণ যাতে সার্বক্ষণিক কভিড বিষয়ে জরুরি পরামর্শ পেতে পারে সে জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ৫০টি হটলাইন চালু করা হয়।
টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা করা হয়। প্রায় চার হাজার ডাক্তার প্রতিদিন দেশের সব হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা রোগীদের চিকিৎসা বিষয়ে জরুরি পরামর্শ প্রদান করেছেন। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী দ্রুততার সঙ্গে অক্সিজেন সিলিন্ডার ও ১০ হাজার হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা ক্রয়ের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে; যদিও অক্সিজেন সিলিন্ডারের এখন কোনো সংকট নেই। যেহেতু ১০ দিন সেবাদানের পর চিকিৎসাকর্মীদের ২০ দিন কোয়ারেন্টিনের প্রয়োজন পড়ে, তাই তাত্ক্ষণিক এই ঘাটতি পূরণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় চার হাজার ডাক্তার, ছয় হাজার নার্স ও তিন হাজার টেকনোলজিস্ট নিয়োগের প্রক্রিয়া অনেকাংশে সম্পন্ন করা হচ্ছে।
এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে আমাদের স্বাস্থ্য বাজেটে ঘাটতি রয়েছে। আমাদের জনবলের ঘাটতি রয়েছে। হাসপাতাল, আইসিইউ, ডায়ালিসিস বেড, ডাক্তার-নার্সের স্বল্পতা ও যন্ত্রপাতির ঘাটতি রয়েছে। এই ঘাটতি নিয়েও আমরা মানুষকে সুষ্ঠু সেবার ব্যবস্থা করেছি। ১৬ কোটি মানুষসমেত আমাদের দেশ বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। ঢাকা শহরে প্রতি বর্গকিলোমিটারে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ বসবাস করে। এই ধরনের ঘনবসতিপূর্ণ স্থানে মারাত্মক ছোঁয়াচে রোগের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা সহজ নয়। আমাদের কোনো রোগীকে অন্যান্য দেশের মতো হাসপাতালের বাইরে থাকতে হয়নি। কেউ সরকারি হাসপাতালে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করেছে এই নজির নেই।
আমাদের ডাক্তার-নার্স ও অন্য সেবাকর্মীরা আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন রোগীদের সেবা দিয়ে সুস্থ করে তুলতে। তাঁরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন, অনেক সেবাকর্মী মৃত্যুবরণ করেছেন। সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালকে চিকিৎসাসেবায় সম্পৃক্ত করা হয়েছে। শুরুতে তারা সেবা দিতে পারছিল না। তাদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও ডাক্তার দিয়ে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। বর্তমানে সব কভিড ও নন-কভিড হাসপাতাল চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছে। লাখ লাখ রোগীর সেবা দিতে গিয়ে সাময়িক অসুবিধা হতে পারে, সে জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করি। বর্তমানে ঢাকা শহরে প্রায় তিন হাজার শয্যা খালি রয়েছে, সেখানে রোগী নেই। ফলে অন্যান্য রোগীর জন্য হাসপাতাল খুলে দিতে হবে।
এই মহামারি যুদ্ধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নেতৃত্ব দিয়ে কাজ করে গেছে। লকডাউনের সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় মন্ত্রণালয় সার্বিক সহযোগিতা করেছে। এ জন্য তাদের আমরা ধন্যবাদ জানাই।
দুঃখের বিষয়, আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের সেবায় সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট ও সরকারবিরোধীরা নানাভাবে বিভিন্ন গণমাধ্যমে অপপ্রচার করছে, একের পর এক দোষারোপ করছে, মিথ্যাচার করছে, হেয় প্রতিপন্ন করছে। এই পরিস্থিতিতে এমনটি কাম্য নয়। তারা জনগণের সম্মুখে দেশ ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। অথচ এই সংক্রমণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ করা সবার দায়িত্ব। এ ধরনের ঘটনা নজিরবিহীন। পৃথিবীর কোথাও কভিড রোগীর চিকিৎসার জন্য এভাবে হেয় করা হয়নি। শুধু তা-ই নয়, যাঁরা কাজ করেছেন তাঁদেরও ব্যক্তিগত ও পারিবারিকভাবে আক্রমণ করা হয়েছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। যে সময় সবাই মিলে দুর্যোগ মোকাবেলার কথা, মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথা, সেই সময় এরূপ বৈরী আচরণ ন্যক্কারজনক। কিছু সংস্থা আছে তাদের কাজ হলো সমালোচনা করা, মিথ্যাচার করা, সরকারকে বেকায়দায় ফেলা, ব্যর্থ প্রমাণ করা। তাদের কখনো মানুষের পাশে দেখা যায়নি। তাদের দেখা যায় টিভির পর্দায়। পত্রপত্রিকায় বিবৃতির মাধ্যমে। জনমনে তারা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে, ভুল তথ্য উপস্থাপন করে।
এ ছাড়া কিছু আলোচিত-সমালোচিত ঘটনার বেলায় মাত্রাতিরিক্ত রং দেওয়া হয়েছে। মাস্কের বিষয়ে সিএমএসডির সাবেক পরিচালক, যিনি এটি অর্ডার দিয়েছেন, রিসিভ করেছেন আবার ফেরতও দিয়েছেন। এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য লিখিতভাবে পত্রপত্রিকায় এবং টিভিতে প্রচারিতও হয়েছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসাকর্মীদের থাকা-খাওয়া, পরিবহনের বিষয়টিও পরিচালক গণমাধ্যমের সম্মুখে বিবৃতি দিয়ে স্পষ্ট করেছেন। সম্প্রতি রিজেন্ট ও জেকেজি হাসপাতালের বিষয়টিও গণমাধ্যম ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়েছে। এ বিষয়ে সবাই এখন প্রকৃত সত্য বুঝতে পেরেছে কারা দায়ী। কাউকেই ছাড় দেওয়া হয়নি। দায়ীদের আইনের আওতায় এনে যথাযথ ব্যবস্থা সরকার নিচ্ছে। ভবিষ্যতেও কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। যখন, যেখানেই অনিয়ম পরিলক্ষিত হবে সেখানেই এর যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আপনারা জানেন, জীবন-জীবিকার জন্য সরকারকে অনেক কিছুই শিথিল করতে হয়েছে। গার্মেন্ট চালু রাখতে হয়েছে, রমজানে মসজিদে যাওয়া, ঈদে বাড়ি যাওয়ার অনুমতি দিতে হয়েছে। ফলে অনেক স্বাস্থ্যবিধি বিঘ্নিত হয়, যে কারণে সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পায়। এ বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতার বাইরে ছিল।
আমরা আশা করি, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সংস্থা, নেতারা প্রকৃত বিষয়গুলো গণমাধ্যমে তুলে ধরলে, জনগণ প্রকৃত সত্য জানবে, বিভ্রান্তি দূর হবে এবং অপপ্রচারকারীদের মুখোশ উন্মোচিত হবে। আপনাদের সার্বিক সহযোগিতা ও সুপরামর্শ আমাদের এই দুঃসময়ে স্বাস্থ্যসেবায় আরো গতি ও স্বচ্ছতা আনবে।
লেখক : চেয়ারম্যান, সুচিন্তা ফাউন্ডেশন
সম্পর্কিত খবর

জুলাই গণ-অভ্যুত্থান : চাওয়া-পাওয়ার দাগ-খতিয়ান
- তুহিন খান

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রায় এক বছর উপলক্ষে জুলাই ও আগস্ট মাসজুড়ে বেশ বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানসূচি ঘোষিত হয়েছে ইন্টেরিম সরকারের তরফে। কিন্তু এক বছরে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের চাওয়া-পাওয়ার হিসাব কতটা মেলানো গেল? জুলাইয়ের সুফল কার ঘরে কতটা উঠল?
গণ-অভ্যুত্থান নিজেই একটি বড় প্রাপ্তি। যে অভ্যুত্থানের ফলে আওয়ামী লীগের মতো একটি নিকৃষ্ট ফ্যাসিস্ট শাসকগোষ্ঠীর পতন হলো, তার চেয়ে বড় প্রাপ্তি এ দেশের জনগণের জীবনে খুব কমই আছে। এই অভ্যুত্থানের আগে-পরে দেশে যে বিপুল জনসচেতনতা ও সৃষ্টিশীল গণক্ষমতার উদ্বোধন আমরা দেখেছি, তরুণদের মধ্যে যে স্বচ্ছ রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা ও দেশ গঠনের দৃঢ় প্রত্যয় জন্ম নিতে দেখেছি, তা এককথায় মহাকাব্যিক।
গত বছর ৮ আগস্ট ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার ভারত পলায়নের পরিপ্রেক্ষিতে যে সরকারটি গঠিত হয়, তার ধরনটি ঠিক কী হবে, কী হলে আরো ভালো হতো, এ নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা আছে। অন্তর্বর্তী এই সরকারটি গঠিত হয়েছে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করেই; আবার গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী ছাত্রদের কেউ কেউ এ সরকারের অংশ হয়েছেন।
জুলাইয়ের বিপ্লবী আকাঙ্ক্ষা, অন্তর্বর্তী সরকারের এই ধরন ও রাজনৈতিক শক্তিগুলোর অবস্থান—এই তিনের টানাপড়েন শেষমেশ যে জাতীয় আকাঙ্ক্ষায় থিতু হয়েছে, তার আলংকারিক নাম : সংস্কার। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আগ থেকেই বেশ কিছু রাজনৈতিক দল ও বুদ্ধিবৃত্তিক প্ল্যাটফর্মের কারণে ‘রাষ্ট্র সংস্কার’ ধারণাটি বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ফলে সেটির প্রায়োগিক ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে এবং কিভাবে ও কতটুকু হবে এই সংস্কার—সেটিই প্রধান আলোচ্য বিষয়। বেশ কয়েকটি সংস্কার কমিশন হয়েছে দেশে এবং সেসব কমিশন বড় বড় রিপোর্টও তৈরি করেছে।
রাজনৈতিক ফ্যাসিবাদের স্বাভাবিক ফলাফল হিসেবেই যে সামাজিক ফ্যাসিবাদ ও ধর্মীয় চরমপন্থা সুপ্তাবস্থায় প্রায় এক যুগ ধরে আস্তে আস্তে গাঢ় হয়ে উঠছিল, তা অভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে নিঃশেষিত হয়নি, বরং নানা ধরনের সামাজিক ও ধর্মীয় ফ্যাসিবাদী প্রবণতা নতুন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন শক্তিতে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে পরাজিত ফ্যাসিস্ট শক্তি ও তার দেশি-বিদেশি এজেন্টরা এই প্রবণতাগুলোকে অনেক রংচং মেখে বাস্তবের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি বিকট করে উপস্থাপন করার চেষ্টায় রত। জুলাইয়ের শক্তিগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক বিভাজন ও মেরুকরণও এই পরিস্থিতিটিকে বেশ ঘোলাটে করে তুলছে। সে ব্যাপারে সতর্ক থেকেও বলা যায় যে এই ঘটনাগুলো ঘটছে।
‘মব’ শুনলেই অনেকে খেপে যান আজকাল, তার সংগত কারণও আছে নিশ্চয়ই। কিন্তু সত্য কথা এটিই যে ৫ আগস্টের পর দেশে নানা রকম মব তৈরি হয়েছে। সামাজিক-নৈতিক পুলিশগিরি বাড়ছে। এসবের সঙ্গে জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা বা বিপ্লবী তৎপরতার যোগ সামান্য। ধর্মীয় চরমপন্থাও এই পরিস্থিতিকে একটি সুযোগ হিসেবে বিবেচনা করছে।
বিপ্লবী ছাত্র-জনতা ও সরকারের কাজ ছিল সমাজে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা এই নতুন প্রতিবিপ্লবী, হঠকারী ও ফ্যাসিস্ট তৎপরতাগুলোরও বিরুদ্ধে দাঁড়ানো, যেখানে মোটাদাগে স্পষ্টতই তারা ব্যর্থ হয়েছে। এতে সমাজে সরকার ও অভ্যুত্থানের নেতৃত্বের ব্যাপারে যে মাত্রারই হোক, একটি নেতিবাচকতা তৈরি হয়েছে।
৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ের একটি প্রধান জনদাবি ও গুরুতর কাজ ছিল বিচার ও আনুষ্ঠানিক রিকনসিলিয়েশন প্রসেস শুরু করা। কিন্তু এই দাবিটি বিদ্যমান কোনো রাজনৈতিক শক্তিই সততার সঙ্গে সামনে আনতে পেরেছে বলে মনে হয় না। নির্বাচনী রাজনীতির হিসাব-নিকাশ, সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর টানাপড়েন, মামলা বাণিজ্যের পলিটিক্যাল ইকোনমি, ঘোলা পানিতে মাছ শিকারিদের নানা রকম অপতৎপরতা, বিচারহীন পুনর্বাসনের বিবিধ উদ্যোগ আর সরকারের অস্পষ্ট ও গতিহীন নানা কর্মকাণ্ডের মধ্যে বিচারের দাবিটির বহুলাংশ অপচয় হয়েছে। একটি ফ্যাসিস্ট সরকারকে উত্খাত করার পর অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করার পাশাপাশি জাতীয় অখণ্ডতা রক্ষা ও সামাজিক-রাজনৈতিক রিকনসিলিয়েশন নিশ্চিতে যে ধরনের ব্যাপক, বহুমুখী ও কুশলী প্রাতিষ্ঠানিক তৎপরতা প্রয়োজন ছিল, সরকার সেটি করতে বেশ খানিকটা ব্যর্থই হয়েছে বলা যায়।
অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দলটিকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্তরের মানুষের মধ্যে এক ধরনের কৌতূহল, আকাঙ্ক্ষা ও দরদ তৈরি হয়েছে। তবে এই আকাঙ্ক্ষা নিরঙ্কুশ নয়। নির্বাচনী রাজনীতিতে ঢুকে পড়ায় বিদ্যমান রাজনৈতিক কাঠামোর অনেক বিষয়ই আত্তীকৃত করতে হয়েছে দলটির, যা তাদের নানাভাবে বিতর্কিত করেছে। আবার এই দলটির গতি-প্রকৃতি কী হবে, তার কল্পনার বাংলাদেশটি ঠিক কেমন হবে—এসব বিষয়েও নানা ধরনের অনুমান তৈরি হয়েছে। এসব সত্ত্বেও পরিবর্তনকামী বা সংস্কারবাদীরা এখনো এই দলটির ওপর ভরসা রাখতে চাইছেন বলেই মনে হয়।
প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির এই হিসাব চলবে। কিন্তু জুলাইয়ে ঘটে যাওয়া মহাকাব্যিক অভ্যুত্থানটি আমাদের জাতীয় জীবনে যে বিপুল পরিবর্তনের সম্ভাবনা হাজির করেছে, তা অসামান্য। আমরা এর কতটা কাজে লাগাতে পারব, তা এখনো অনিশ্চিত। তবে বাংলাদেশ যত দিন থাকবে, তত দিন মুক্তির এই অসামান্য সম্ভাবনা এ দেশের মানুষকে অনুপ্রাণিত করে যাবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
লেখক : কবি, অনুবাদক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করা প্রয়োজন
- ড. নিয়াজ আহম্মেদ

করোনার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমে যে ছেদ তৈরি হয়েছিল, তা এখনো আমরা কাটিয়ে উঠতে পারিনি। এ ছাড়া গত বছরের গণ-আন্দোলনে তিন-চার মাস আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। বিশ্ব্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত আমাদের এইচএসসি নামক পাবলিক পরীক্ষা। কোনো কারণে এইচএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে গেলে আমাদের ভর্তি কার্যক্রমও পিছিয়ে যায়।
আমরা যদি জানুয়ারি মাসে এসএসসি এবং ফেব্রুয়ারি মাসে এইচএসসি পরীক্ষা নিতে পারি, তাহলে জুলাই মাসে উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা যাবে।
উচ্চশিক্ষা যেহেতু বহু রকমের, সেহেতু এখানেও অনেক বিষয় রয়েছে। মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার বিষয়টি সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ দ্বারা পরিচালিত হয়। তাই তারা বেশ দ্রুত পদক্ষেপ নিতে পারে। সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় যদি একটি পরীক্ষায় ভর্তি নিতে পারত, তাহলেও সময় বাঁচত। কিন্তু তা সম্ভব হয়ে উঠছে না। আমাদের মানে শিক্ষকদের এখানে করণীয় রয়েছে। এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ভাবতে হবে। আমরা প্রতিবছর একই পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা এবং এর কার্যক্রম সম্পন্ন করি। ফলে দ্রুত কার্যক্রম শুরু করতে সমস্যা নেই। ফলাফল প্রকাশের এক সপ্তাহের মধ্যে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, এক মাসের মধ্যে ভর্তি পরীক্ষা এবং সর্বোচ্চ তিন মাসের মধ্যে পুরো ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করা সম্ভব।
আমাদের কাছে মনে হয়, সরকারের আন্তরিকতা এবং শিক্ষকদের সহযোগিতা এখানে মুখ্য বিষয়। আমাদের মনে রাখতে হবে, কতটা সহজে এবং দ্রুত আমরা আমাদের ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন করতে পারি। আমাদের টার্গেট যদি থাকে জানুয়ারি মাসের প্রথম দিন ক্লাস শুরু করা, তাহলে টার্গেট অনুযায়ী কাজটি করতে হবে। একদিকে শিক্ষার্থীরা পাবলিক পরীক্ষা দেবে, অন্যদিকে আমরা ভর্তি পরীক্ষার কার্যক্রম শুরু করব। সরকার যদি পাবলিক পরীক্ষা আগে এবং দ্রুত সম্পন্ন করতে পারে, তাহলে আমরাও দ্রুত ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন করতে পারব। ধরুন, এখন এইচএসসি পরীক্ষা চলছে। আশা করা যায়, সেপ্টেম্বরে ফলাফল প্রকাশিত হবে। আমরা অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ভর্তি পরীক্ষা শেষ করতে পারি। তিন মাসে কি ভর্তি পরীক্ষার যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করা যথেষ্ট নয়? আমাদের দরকার সরকারের ইচ্ছা এবং সবচেয়ে বড় দরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয়, শিক্ষকদের মধ্যে সহযোগিতা ও আন্তরিকতা। আমরা আশা করব, আগামী শিক্ষাবর্ষে যেন জানুয়ারি মাসেই শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হয়।
লেখক : অধ্যাপক, সমাজকর্ম বিভাগ
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
nahmed1973@gmail.com

কজন জানে জুলাই সনদ কী
- গাজীউল হাসান খান

সমাজ ও বৃহত্তরভাবে রাষ্ট্র মেরামত কিংবা পরিবর্তনের জন্য যেসব কাঙ্ক্ষিত বা আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়, মূলত সেগুলোকেই সংস্কার বা ‘রিফর্ম’ বলা হয়। দেশের সংবিধান থেকে শুরু করে জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নাগরিকরা কিংবা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা সেসব সংস্কারের উদ্যোগ নিতে পারেন। তবে শেষ পর্যন্ত জাতীয় কিংবা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সেসব সংস্কার প্রস্তাবকে কার্যকর করতে হলে একটি আইনানুগ ভিত্তি দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। বাংলাদেশে চব্বিশ সালের গণ-অভ্যুত্থান-উত্তর সময়ে অতীত স্বৈরাচারী কিংবা ফ্যাসিবাদী শাসন এবং আর্থ-সামাজিক শোষণ-বঞ্চনার অবসানের জন্য দল-মত-নির্বিশেষে সবাই রাষ্ট্র মেরামতের একটি জোরালো দাবি উত্থাপন করেছে।
এ কথা ঠিক যে বিগত জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থান কোনো সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ছিল না। তবু সেটি আমাদের বিগত ৫৩ বছরের স্বাধীনতা-উত্তর আন্দোলনের ইতিহাসে একটি বিরাট মাইলফলক। স্বৈরাচারী কিংবা ফ্যাসিবাদী শাসন-শোষণের কবল থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণের পথে একটি বিশাল পদক্ষেপ। সুতরাং কোনো বিবেচনায়ই সে অভ্যুত্থানকে খাটো করে দেখা যাবে না।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান অধ্যাপক ড. ইউনূসসহ আমাদের রাজনৈতিক মহলের অনেকেই এরই মধ্যে গণ-অভ্যুত্থান-উত্তর বাংলাদেশের প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেছেন। এতে তাঁদের অনেকের মধ্যেই বিগত ১১ মাসে ঘটে যাওয়া অনেক ব্যর্থতার চিত্র প্রতিফলিত হয়েছে। এর অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে অনেকে দায়ী করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের নেতা ও অন্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে চিন্তা-চেতনা ও দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রে সমন্বয়ের অভাবকে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সাবেক নেতারা এরই মধ্যে বহুবার অভিযোগ করেছেন যে অভ্যুত্থান-পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে সময়োচিতভাবে একটি ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণার অভাবে রাজনৈতিক মহলে এখনো অনেক বিভ্রান্তি এবং ভবিষ্যৎ দিকদর্শনের অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। ফলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই তাদের নিজ নিজ দলের পতাকাতলে অবস্থান নিয়েছে। ভুলে গেছে সেই মহান গণ-অভ্যুত্থানের জাতীয় প্রেক্ষাপটটি। রাজনৈতিক ঐক্য কিংবা রাজনৈতিক কর্মসূচিগত সমন্বয়ের বিষয়টি। ফলে চারদিকে মাথা তোলার অবকাশ বা সুযোগ পেয়েছে পতিত আওয়ামী সরকারের দোসর কিংবা বশংবদরা। সে পরিস্থিতিতে ড. ইউনূস হতাশা ব্যক্ত করে বলেছেন, ‘আমাদের একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বিফলে যেতে বসেছে। আমরা মুখে বলছি, সাবেক ফ্যাসিবাদী সরকারের প্রতিনিধিরা এখনো সর্বত্র বসে রয়েছে। আমরা তাদের সরাতে পারিনি। আমরা তাদের স্বভাব-চরিত্র বদলাতে পারিনি।’ এ অবস্থায় অনতিবিলম্বে সর্বক্ষেত্রে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে না পারলে এবং সব জায়গায় কাঙ্ক্ষিত সংস্কার কিংবা পরিবর্তন সাধন করতে ব্যর্থ হলে ভবিষ্যতে ক্ষমতার রাজনীতিতে কোনো নির্বাচিত সরকারই স্থিতিশীল হতে পারবে না। এতে অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে জাতীয় জীবনের সব ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন, উন্নয়ন কিংবা সমৃদ্ধি আশা করা হয়েছিল, তা বিফলে যেতে বাধ্য হবে। এখানেই অতীতে সংঘটিত সব গণ-অভ্যুত্থানের সঙ্গে ২০২৪-এর জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থানের মৌলিক এবং রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিগত কিছু পার্থক্য ছিল। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারটি ছিল গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী একটি ভিন্নধর্মী রাজনৈতিক উদ্যোগের ফসল, কিন্তু তাতে অন্য অনেক কিছু থাকলেও ছিল না রাজনৈতিক দূরদর্শিতা।
ফরাসি বিপ্লব রাশিয়ায় সংঘটিত সমাজতান্ত্রিক (বলশেভিক) বিপ্লবের মতো ছিল না। অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রায় শেষ দশকে (১৭৮৯-১৭৯৯) ফ্রান্সে সংঘটিত সে বিপ্লব ছিল একটি ‘দশক স্থায়ী সামাজিক-রাজনৈতিক অভ্যুত্থান’। ফ্রান্সের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের উল্লেখযোগ্য সময়। সে অভ্যুত্থানের শুরুতেই অর্থাৎ ১৭৮৯ সালে তার নেতারা ফ্রান্সের নাগরিক কিংবা মানুষের অধিকার নিয়ে ফ্রেঞ্চ চার্টার নামে একটি সনদ ঘোষণা করেন। সে সনদই ফরাসি বিপ্লবের মৌলিক চরিত্র বা বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধরে। তাদের মুক্তি, সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের নীতি প্রকাশ করে। এর পাশাপাশি মানুষের মৌলিক অধিকার ও দায়দায়িত্বের পথনির্দেশ প্রদান করে। সেদিক থেকে পর্যালোচনা করলে বাংলাদেশে সংঘটিত জুলাই-আগস্টের বিপ্লবও ছিল মূলত একটি গণ-অভ্যুত্থান। কিন্তু সে সফল অভ্যুত্থানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের নেতাদের কী প্রত্যাশা ছিল, সেগুলো তাঁরা একটি সনদ আকারে নিজেরা প্রকাশ করেননি। তাঁরা অপেক্ষা করেছেন এই দায়িত্বটি সম্পন্ন করার ব্যাপারে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য, যাদের সঙ্গে সে গণ-অভ্যুত্থান কিংবা রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই। সে কারণেই জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান সম্পর্কিত ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণা কিংবা নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়টি অনিশ্চিতভাবে ঝুলে রয়েছে। জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থানের কোনো কিছু উদযাপনের ক্ষেত্রেই কোনো গুরুত্ব দেখা যাচ্ছে না। এ রকম একটি রাজনীতিগত দোদুল্যমান অবস্থায় কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থান আমাদের জীবনে কী পরিবর্তন এনেছে? যদি কোনো পরিবর্তন না-ই হয়ে থাকে, তাহলে দেশে ফ্যাসিবাদের পতন বা তাদের উত্খাত করা হলো কিভাবে? কেন এত বিশাল গণ-আন্দোলন ও সাধারণ মানুষের এত আত্মত্যাগ? অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান বলেছেন, ‘অতীতের অগণতান্ত্রিক, স্বৈরাচারী কিংবা ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন বদলাতে আমরা রাষ্ট্র মেরামতসহ সর্বত্র সংস্কার সাধনের যে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছি, সেগুলো আমাদের প্রস্তাবিত জুলাই সনদে স্থান পেতে হবে।’ দল-মত-নির্বিশেষে জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাইকে প্রস্তাবিত ঘোষণাগুলো বাস্তবায়িত করতে হবে। কিন্তু কী সে প্রস্তাবিত ঘোষণা, তা এখনো জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থানের সঙ্গে সম্পৃক্ত অনেক দলই জানে না। বিএনপিসহ বিভিন্ন দেশপ্রেমিক দলের নেতাদের সঙ্গে এ ব্যাপারে কোনো আলোচনায়ই এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে বসা হয়নি। কারা কারা হবেন এই প্রস্তাবিত সনদে স্বাক্ষরকারী? এ পর্যন্ত তারও কোনো হদিস নেই। গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং দেশি-বিদেশি আধিপত্যকে প্রতিরোধ করে আমরা কিভাবে মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত করব—প্রস্তাবিত সনদে আমরা সে ব্যাপারে সবার সম্মিলিত প্রতিশ্রুতি চাই।
লেখক : বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সাবেক প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক
gaziulhkhan@gmail.com

বাবনপুরে জেগে আছেন শহীদ আবু সাঈদ
- ড. মো. ফখরুল ইসলাম

বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসে জুলাই ২০২৪ মাসটি এক অনন্য মর্যাদার দাবিদার। এই মাসে বারবার রক্ত ঝরেছে, শিক্ষার্থী-শ্রমিক-জনতার আহ্বানে কেঁপে উঠেছে শাসকের প্রাসাদ। সেই উত্তাল জুলাইয়ের সূচনা ঘটেছিল রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) মাটি রঞ্জিত করে আবু সাঈদ নামের এক শিক্ষার্থীর রক্তে। পীরগঞ্জের বাবনপুর নামক গ্রামে একটি বাঁশের বেড়া দেওয়া কবরে তিনি শুয়ে আছেন নীরবে, নিঃশব্দে।
রংপুরে শিক্ষার বাতিঘর হয়ে উঠেছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্রের অব্যবস্থাপনা, নিয়োগ বাণিজ্য, রাজনৈতিক দখল ও অবমূল্যায়নের কারণে নতুন এই বিশ্ববিদ্যালয়টি বারবার পরিণত হয়েছে ক্ষোভের আগ্নেয়গিরিতে।
জুলাই বিপ্লব তাই কেবল রংপুরের বা বেরোবির নয়।
এই শহীদ যেন আরেকবার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন, বাংলাদেশে ছাত্ররাই বারবার যুগ পরিবর্তনের সূচনা করেন। হোক তা ভাষা আন্দোলন, স্বাধিকার সংগ্রাম কিংবা স্বৈরাচারবিরোধী লড়াই। আমরা চাই, এই শহীদের রক্ত বৃথা না যাক।
জুলাই বিপ্লবের এই প্রথম শহীদের স্মরণে রাষ্ট্র কি আরো একটু নত হবে, নাকি আবারও চলবে এড়িয়ে যাওয়ার নীলনকশা? যদি তা-ই হয়, তবে আগামী দিনগুলো আরো অস্থির, আরো উত্তাল হবে।
‘যেখানে বাধাগ্রস্ত হবে, সেখানেই জুলাইকে তুলে ধরতে হবে’—এই চেতনা দেরিতে এলো কেন? এই প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে আছে রাষ্ট্রযন্ত্রের চেহারার ভেতরে, যা দিন দিন হয়ে উঠছে আরো দুর্বিনীত, অসহনশীল ও জনবিচ্ছিন্ন। যখন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা পাস করার পর চাকরির জন্য ঘুরে বেড়ান, তাঁদের দাবি উপেক্ষা করে, বিরোধিতা করে, এমনকি দমন করতে গিয়েই সরকার তার আসল চেহারা উন্মোচন করে। ঠিক এখানেই জুলাই এসে দাঁড়িয়েছিল প্রতিবাদের ভাষা হয়ে। এটি কেবল একটি মাস নয়, এটি একটি ধারণা, একটি রাজনৈতিক চেতনা, একটি ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতার নাম, যা শেখায় জুলুমের বিরুদ্ধে চুপ থাকা মানেই অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া। তাই যখনই কোথাও প্রতিবাদ বাধাগ্রস্ত হবে, যখনই মত প্রকাশের অধিকার পদদলিত হবে, তখনই জুলাইকে তুলে ধরতে হবে প্রতিরোধের এক ছায়াছবির মতো।
বাবনপুরে শায়িত জুলাই বিপ্লবের প্রথম শহীদ, তাঁর জীবন দিয়ে আমাদের আবার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন, প্রতিবাদের মুখ বন্ধ করে রাখা যায় না। তাই তাঁর মৃত্যু আর দশটি মৃত্যুর মতো নয়, বরং এটি এক বিস্মৃত সময়কে জাগিয়ে তোলার মুহূর্ত, যেখানে জুলাই আবার ফিরে এসেছে জনতার পাশে দাঁড়াতে।
এখন বাংলাদেশের প্রতিটি শিক্ষাঙ্গনে, কর্মক্ষেত্রে, সংবাদমাধ্যমে, এমনকি সংসদের ভেতরেও যদি অন্যায় চাপিয়ে দেওয়া হয়, তবে সেখানেই জুলাইকে তুলে ধরতে হবে। কারণ এই মাস শেখায় শুধু স্মৃতিচারণা নয়, স্মৃতি দিয়ে বাস্তব পরিবর্তনের দাবিও তোলা যায়।
তাই আমাদের দায়িত্ব এই শহীদের মৃত্যু যেন অন্ধকারে হারিয়ে না যায়। রাষ্ট্র যদি কখনো ন্যায়ের পথ ছেড়ে নিপীড়নের দিকে হাঁটে, তাহলে প্রতিটি গ্রামে বাবনপুরের মতো একেকটি জুলাই জন্ম নিতে পারে।
এমন সময় হয়তো আবারও প্রশ্ন উঠবে, জুলাই-জুলাই বলে এত মাতামাতি কেন? আমরা তখন উত্তর দেব, এর কারণ আমাদের প্রতিবাদের জায়গাগুলো একে একে নিঃশব্দ হয়ে যাচ্ছে। আর যেখানে হাতে মুষ্টি তুলে পথে নেমে সমস্বরে চিৎকার করা নিষিদ্ধ, সেখানে জুলাই-ই হয়ে উঠতে পারে একমাত্র ভাষা।
শহীদ আবু সাঈদের মৃত্যু কেবল একটি গুলি বা একটি সংবাদ শিরোনাম ছিল না। এটি একটি সাবধানবাণীও ছিল। বেরোবির পার্কের মোড়ের অদূরে যা ঘটেছিল, তা ছিল আসলে পুরো রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতিচ্ছবি। যেখানে কথা বলা মানেই অপরাধ, দাবি জানানো মানেই রাষ্ট্রদ্রোহ মনে করা হয়েছিল।
সেদিন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা যখন শান্তিপূর্ণভাবে দাঁড়িয়েছিলেন, তখন রাষ্ট্র কী করেছিল? তারা কেন সেদিন তাঁদের দিকে বন্দুক তাক করল? সেদিন যে তরুণ শহীদ হলেন, তিনি যেন গোটা বাংলাদেশের হয়ে প্রতিবাদ করতে গিয়ে প্রাণ বিসর্জন দিতে বদ্ধপরিকর ছিলেন, তৎকালীন ক্ষমতাধরদের কাছে তা অনুধাবন করা কি খুব জটিল বিষয় ছিল?
বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রতিবাদের ঐতিহ্য খুব গর্বের। ভাষা আন্দোলন, গণ-অভ্যুত্থান, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন—সবখানেই ছাত্রসমাজ পথ দেখিয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালে এসেও ছাত্রসমাজের কণ্ঠ রোধ করতে গুলি ব্যবহার করতে হয়, এটি কি রাষ্ট্রের দুর্বলতা নয়? আগামী দিনে আমরা এ ধরনের আর কোনো রাষ্ট্রীয় দুর্বলতা ও ভয় দেখতে চাই না।
জুলাই বিপ্লবের এই প্রথম শহীদ শব্দটি যেন আমাদের সবার কাঁধে নতুন দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়। এর মানে, আরো অনেক শহীদ আসতে পারেন, যদি রাষ্ট্র তার দমননীতি থেকে ফিরে না আসে। যদি কথা বলার জায়গা, ভিন্নমতের জায়গা একে একে নিঃশব্দ হয়ে যায়, তাহলে শেষ ভরসা হয় রক্ত। বেরোবির ইংরেজি পড়ুয়া অকুতোভয় ছাত্র আবু সাঈদ পুলিশের তাক করা বন্দুকের নলের সামনে বুক উঁচিয়ে গুলি খেতে দ্বিধাহীন না থাকলে আজ কী করতাম আমরা, তা কি কেউ ভেবে দেখেছেন?
জন্ম নিলেই সবাইকে একদিন না একদিন নির্বাক হতে হয়। কিন্তু সবার কথা কি সব মানুষের অনন্তকালব্যাপী মনে থাকে? শহীদ আবু সাঈদ বাবনপুরে শুয়ে আমাদের শিখিয়ে দিচ্ছেন, দেশের যেকোনো প্রয়োজনে যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে নির্বাক থাকার দিন শেষ।
লেখক : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন
fakrul@ru.ac.bd