<p> ২২. স্মরণ করো, যেদিন আমি তাদের সবাইকে একত্র করব, অতঃপর মুশরিকদের (অংশীবাদীগণকে) বলব, যাদের তোমরা আমার অংশীদার বলে ধারণা করতে, তারা আজ কোথায়?</p> <p> ২৩. অতঃপর তাদের এ কথা (বলা) ছাড়া কোনো অজুহাত থাকবে না যে আমাদের প্রতিপালক আল্লাহর শপথ! আমরা তো মুশরিকই ছিলাম না।</p> <p> ২৪. দেখো তো, তারা নিজেদের প্রতি কিরূপ মিথ্যা আরোপ করে। আর যে মিথ্যা তারা রচনা করত, তা কিভাবে তাদের জন্য নিষ্ফল হয়ে গেল। (সুরা : আনআম : ২২-২৪)</p> <p> তাফসির : আগের আয়াতে বলা হয়েছিল, 'যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর মিথ্যা আরোপ করে কিংবা তাঁর আয়াতগুলোকে অস্বীকার করে, তার চেয়ে বড় জুলুমবাজ আর কে আছে?' এখানে জুলুম দ্বারা শিরককে বোঝানো হয়েছে। শিরককে খুবই ঘৃণ্য ও ভয়ংকর জিনিস হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য কোরআনের বহু জায়গায় একে জুলুম বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। কেননা শিরক একাধারে সত্যের ওপর, নিজ ব্যক্তিসত্তার ওপর এবং অন্যান্য মানুষের ওপর জুলুম ও আগ্রাসন চালানোর নামান্তর। আল্লাহর নিরঙ্কুশ অধিকার রয়েছে যে একমাত্র তাঁরই আনুগত্য ও দাসত্ব করা হবে, এতে কাউকে অংশীদার করা হবে না। আল্লাহর এ অধিকার হরণ করা হয় শিরকের মাধ্যমে। শিরক দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহর ক্রোধ ও শাস্তির কারণ। সুতরাং শিরক নিজের ওপর জুলুম ও অবিচার করার নামান্তর।</p> <p> শিরকের মাধ্যমে জনসাধারণের ওপরও অত্যাচার করা হয়। কেননা এর মাধ্যমে তাদের অন্যায় ও অবৈধভাবে আল্লাহ তায়ালা ছাড়া অন্যান্য সত্তা ও বস্তুর দাসে পরিণত করা হয়। এই অন্যায় দাসত্বের কারণে মানবরচিত আইন ও শাসনের জাঁতাকলে পিষ্ট করে তাদের জীবনকে দুর্বিষহ করা হয়। মনে রাখতে হবে যে মূর্তি, গাছ, সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্র, আগুন ইত্যাদির পূজা করাই শিরকের একমাত্র রূপ নয়। শিরক মূলত আল্লাহ তায়ালা ছাড়া অন্য কারো বা অন্য কিছুর জন্য এমন গুণ ও বৈশিষ্ট্যের বিশ্বাস ও স্বীকৃতি দেওয়ার নাম, যে গুণ বৈশিষ্ট্য বাস্তবে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো মধ্যে নেই। থাকতেও পারে না।</p> <p> হাশরের ময়দানে মুশরিকদের অবস্থা</p> <p> কিয়ামতের ভয়াবহ অবস্থা ও লোমহর্ষক দৃশ্যাবলি এবং রাব্বুল আলামিনের শক্তি-সামর্থ্যের অভাবনীয় ঘটনাবলি দেখার পর মুশরিকরা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়বে। তারা আল্লাহর কসম খেয়ে বলবে, 'আমরা মুশরিক ছিলাম না।' আল্লাহর আদালতে দাঁড়িয়ে তারা এ নির্লজ্জ মিথ্যাচার করতে পারল! তা-ও আবার বলিষ্ঠ চিত্তে, আল্লাহর নামে কসম খেয়ে!! বিষয়টি ব্যাখ্যাসাপেক্ষ। অধিকাংশ তাফসিরবিদ এর ব্যাখ্যায় বলেন, 'তাদের এ মিথ্যাচার ভয়ের আতিশয্যে হতবুদ্ধিতার আবেশে মুখে যা এসেছে, তা-ই বলে দেওয়ার মতো।' অতঃপর তাদের এ মিথ্যা শপথের পর আল্লাহ তাদের মুখে মোহর এঁটে তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও হস্তপদকে নির্দেশ দেবেন যে 'তোমরা সাক্ষ্য দাও, তারা কী করত।' তখন প্রমাণিত হবে, মানুষের হাত-পা, চোখ-কান- এরা সবাই আল্লাহর গুপ্ত গোয়েন্দা। তারা সব কাজকর্ম একটি একটি করে আল্লাহর সামনে তুলে ধরবে। সুস্পষ্ট প্রমাণাদির ভিত্তিতে তারা অপরাধী সাব্যস্ত হওয়ার পর অনন্তকালের ভয়াবহ আজাবে তাদের নিক্ষেপ করা হবে।</p> <p> (তাফসিরে মা'আরেফুল কোরআন ও ইবনে কাছির অবলম্বনে)</p> <p>  </p> <p>  </p>