ঢাকা, সোমবার ১৪ জুলাই ২০২৫
৩০ আষাঢ় ১৪৩২, ১৮ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, সোমবার ১৪ জুলাই ২০২৫
৩০ আষাঢ় ১৪৩২, ১৮ মহররম ১৪৪৭

কে পাচ্ছেন এবার সাহিত্যে নোবেল

  • দুলাল আল মনসুর
অন্যান্য
অন্যান্য
শেয়ার
কে পাচ্ছেন এবার সাহিত্যে নোবেল

খুব নিকটে চলে এসেছে সাহিত্যের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার নোবেল ঘোষণার দিন। আগ্রহী পাঠকরা অধীর অপেক্ষায় আছেন কাঙ্ক্ষিত সাহিত্যিকের নাম শোনার জন্য। নোবেল পুরস্কার সম্পর্কে অনুমান করে কিছু বলা খুব কঠিন। অনেক সময় লেখকের ভাষা, লিঙ্গ, রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও অবস্থান, ভৌগোলিক অবস্থান ইত্যাদি বিষয়ও বিবেচনায় রেখে অনুমান করা যায় কে পেতে যাচ্ছেন নোবেল।

২০২২ সালের পুরস্কারের জন্য প্রাসঙ্গিকভাবে অন্যবিধ ক্ষেত্রে আলোচনা ও প্রত্যাশা মাথায় রেখেও উল্লেখ করা যায় ব্রিটিশ জুয়াড়ি প্রতিষ্ঠান ল্যাডব্রক্সের কথা। সেখানে যাঁরা বাজি ধরেন, এবার তাঁদের বেশির ভাগেরই প্রথম পছন্দ ফরাসি কথাসাহিত্যিক মিশেল ওয়েলবেক। ওয়েলবেক উপন্যাস, কবিতা ও প্রবন্ধ লেখেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘হোয়াটএভার’ প্রকাশ করেন ১৯৯৪ সালে।

একুশ শতকের দ্বিতীয় দশকের মাঝামাঝি তাঁকে বহির্বিশ্বে ফরাসি সাহিত্যের প্রধান বাহক বলা হয়।   

এবার ল্যাডব্রক্সের তালিকার দ্বিতীয় স্থানে আছেন সালমান রুশদি। গত মাসের ১২ তারিখে নিউ ইয়র্কে জঘন্য হামলার শিকার হন রুশদি। তার পর থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও একাডেমিক মহল থেকে সুইডিশ একাডেমির নোবেল কমিটির প্রতি অনুরোধ আসছে রুশদিকে এ বছরের সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার দেওয়ার সমর্থনে।

‘মিডনাইটস চিলড্রেন’, ‘দ্য মুরস লাস্ট সাই’, ‘যোসেফ অ্যান্টন : আ মেমোইর’ রুশদির অন্যতম বিখ্যাত লেখা।  

বাজির তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছেন কেনিয়ার কথাসাহিত্যিক গুগি ওয়া থিয়োঙ্গো। ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, প্রবন্ধকার, সম্পাদক ও শিক্ষাবিদ গুগির লেখায় প্রাধান্য পেয়েছে আফ্রিকার ঔপনিবেশিক অবস্থা থেকে উত্তর-ঔপনিবেশিক অবস্থায় স্থানান্তরকালের টানাপড়েন এবং আধুনিক মানুষের জীবন জটিলতার চিত্র। ‘আ গ্রেইন অব হুইট’, ‘দিস টাইম টুমরো’, ‘দ্য ট্রায়াল অব দেবান কিমাথি’, ‘ডিকলোনাইজিং দ্য মাইন্ড’ ইত্যাদি তাঁর গ্রন্থগুলোর অন্যতম।  

যুক্তরাষ্ট্রের কথাসাহিত্যিক স্টিফেন কিং চলে এসেছেন আলোচনার সামনের দিকে।

তাঁকে বলা হয় ‘কিং অব হরর’। কল্পবিজ্ঞান, অপরাধবিষয়ক ও লোমহর্ষক কাহিনি লেখার কারণেই তাঁর এমন নাম।

যুক্তরাষ্ট্রের কবি ও কথাসাহিত্যিক গ্যারিয়েল লাজ নোবেল পুরস্কারের সম্ভাব্য আলোচিত ব্যক্তি হিসেবে পাঠকমনে আগের চেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছেন। ‘স্টোরিস ইন দ্য ওর্স্ট ওয়ে’, ‘আই লুকড অ্যালাইভ’, ‘পার্শিয়াল লিস্ট অব পিপল টু ব্লিচ’ ও ‘ডিভোর্সার’ তাঁর বিখ্যাত গল্প সংকলনের নাম।

ব্রাউন ইউনিভার্সিটির সাহিত্যের অধ্যাপক যুক্তরাষ্ট্রের আরেক কথাসাহিত্যিক রবার্ট লোয়েল কুভারও আছেন সম্ভাব্য লেখকদের তালিকায়। প্রধানত মেটাফিকশন লেখক হিসেবে তাঁর পরিচিতি বেশি। ‘দি অরিজিন অব দ্য ব্রানিস্টস’, ‘দি ইউনিভার্সাল বেসবল অ্যাসোসিয়েশন ইনক. জে হেনরি ওয়াহ প্রপ’ ও ‘দ্য পাবলিক বানিং’ তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস।

পাঠকের ভালোবাসায় তাঁদের দেশের আরো আছেন জয়েস ক্যারল ওটস, ডন ডেলিলো, এন টাইলার, করমাক ম্যাককার্থি, রিচার্ড ফোর্ড, ডেভ এগারস, মেরিলিন রবিনসন প্রমুখ। আমেরিকার কথা কিংবা শুধু ইংরেজির কথা উঠলেও ডন ডেলিলোর নাম আসতেই পারে। সমসাময়িক মানুষের জটিল জীবনের বয়ান খুব নিচু স্বরে তুলে ধরেন তিনি।

কথাসাহিত্যিক জয়েস ক্যারল ওটস বহুলপ্রজ হলেও তাঁর লেখার মধ্যে প্রাণের উপস্থিতি বেশ জোরালো।

অ্যান্টিগুয়ান-আমেরিকান ঔপন্যাসিক, প্রবন্ধকার জ্যামেইকা কিনকেইডও নোবেল পুরস্কারের জন্য বিবেচ্য হতে পারেন। আফ্রিকান ও আফ্রিকান আমেরিকান স্টাডিজের হার্ভার্ড প্রফেসর কিনকেইড লিখে থাকেন উপনিবেশবাদ, ব্রিটিশ ও আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদ, বর্ণবাদ, ঔপনিবেশিক শিক্ষা, লিঙ্গবাদ, শ্রেণি, ক্ষমতা—এসব বিষয়ে।

সাহিত্যের অধ্যাপক ফরাসি কথাসাহিত্যিক আনি এরনো এবারের আলোচনায় একদম সামনের দিকে চলে এসেছেন। তাঁর লেখা প্রধানত আত্মজীবনীমূলক। ১৯৭৪ সালে প্রকাশ করেন তাঁর প্রথম আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস ‘ক্লিনড আউট’।  

ফরাসি কথাসাহিত্যিক পিয়ারে মিশনও এবারের আলোচনায় এগিয়ে এসেছেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘স্মল লাইভস’কে ফরাসি সাহিত্যের মাস্টারপিস গণ্য করা হয়। ‘স্মল লাইভস’ ও ‘দি অরিজিন অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ উপন্যাসের জন্য তিনি বেশ কয়েকটি পুরস্কার পেয়েছেন। ইউরোপের প্রায় সব ভাষায় অনূদিত হয়েছে তাঁর লেখা। 

বেশ কয়েক বছর ধরে আলোচনার শীর্ষে থাকা জাপানি কথাসাহিত্যিক হারুকি মুরাকামিকে নিয়ে বাজির লোকেরা এবার বেশি আগ্রহ দেখায়নি। এবার কিছুটা পিছিয়েই রাখা হয়েছে তাঁকে। 

কানাডার কবি, কথাসাহিত্যিক, পরিবেশবাদী কর্মী ও সাহিত্য সমালোচক মার্গারেট অ্যাটউড বুকার পুরস্কার পাওয়ার অনেক আগে থেকেই আমাদের দেশসহ পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই পরিচিত। লিঙ্গ সম্পর্কিত বিষয়, ব্যক্তির পরিচয়, ধর্ম, পুরাণকথা, রাজনীতি, জলবায়ু পরিবর্তনসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয় তাঁর লেখায় প্রাধান্য পেয়ে থাকে।

কানাডার কবি, প্রবন্ধকার ও অনুবাদক এন কারসন এবারও আলোচনায় আছেন। কানাডার সাহিত্যে অবদানের জন্য দেশে ও বাইরের, বিশেষ করে ইউরোপ ও আমেরিকাসহ অনেক দেশের বড় বড় পুরস্কার পেয়েছেন।

ফরাসি কথাসাহিত্যিক, সমালোচক ও নাট্যকার মারিস কোন্দি বেশ সম্ভাবনাময় নাম এবারের নোবেলের জন্য। তাঁর লেখা কথাসাহিত্য ইউরোপের বিভিন্ন ভাষা ও এশিয়ার কতিপয় ভাষায় অনূদিত হয়েছে। 

বেশ কয়েক বছর রুশ কথাসাহিত্যিক লিউদমিলা উলিৎসকেয়ার নাম এসেছে আলোচনায়। যুদ্ধের ভয়াবহতা ও ধর্মীয় সহিংসতার বিপক্ষে জাতিগত ও ধর্মীয় সহনশীলতার কথা বলেন তিনি। সাহিত্যের মাধ্যমে রাশিয়ার চলমান রাজনৈতিক বিষয়ে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারছেন তিনি।

কয়েক দশকজুড়ে নোবেল পুরস্কার ঘোষণার মৌসুম এলে মিলান কুন্ডেরার নামটি পাঠকদের মুখে উচ্চারিত হয়েছে। আমাদের দেশের অনেক পাঠক খুশি হবেন সত্যি যদি তিনি এই বয়সে এসে নোবেল পুরস্কার পেয়ে যান।

আলবেনিয়ার বর্ষীয়ান কথাসাহিত্যিক ইসমাইল কাদারে এবার নোবেল পুরস্কার পেতে পারেন। তাঁর উপন্যাসের পটভূমি ইতিহাসের অতীত পৃষ্ঠায় স্থাপন করা হয়েছে। তাঁর বয়ানকৌশলের মধ্যে বিভিন্ন শৈলীর মিশ্রণ দেখা যায়। মূল ঘটনার পাশাপাশি চলে আসে প্রকৃতির বর্ণনা, চেতনাপ্রবাহ, লোককাহিনি কিংবা স্বপ্নপ্রয়াণের মতো বিষয়।

উপন্যাস, ছোটগল্প, স্মৃতিকথা, প্রবন্ধসহ সাহিত্যের বিশাল পরিসরে বিচরণ করেন বুকারজয়ী ব্রিটিশ লেখক হিলারি ম্যানেটেল। কিন্তু গত বছর আবদুর রাজ্জাক গুরনাহ নোবেল পুরস্কার পাওয়ার কারণে ম্যানটেল, এ এস বায়াট কিংবা মার্টিন এমিসের সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে গেছে। অন্য ভাষার লেখকদের কথা বিবেচনা করলে স্প্যানিশ ঔপন্যাসিক হাভিয়ার মারিয়াস, আন্তনিও মলিনা কিংবা আন্তর্জাতিক পাঠকের বেশ প্রিয় কথাসাহিত্যিক ইসাবেল আইয়েন্দে—এঁদের কেউ পেয়ে যেতে পারেন এ পুরস্কার। চিলির লেখক ইসাবেল আইয়েন্দে বিশ্বপাঠকের কাছে স্প্যানিশভাষী সর্বাধিক পঠিত লেখকদের অন্যতম বলে বিবেচিত লেখায় জাদুবাস্তবতার ব্যবহার এবং গল্প বলার অসাধারণ ক্ষমতার জন্য।   

দক্ষিণ কোরিয়ার বর্ষীয়ান কবি কো উনের সম্ভাবনা একেবারে কমে গেছে তা নয়, বরং কথাসাহিত্যের নোবেল পুরস্কারের বিশাল কাতারের মাঝে কবিতার রং আরো একবার লাগতে পারে। 

বয়স কম হলেও নাইজেরিয়ার চিমামন্দা নগোজি আদিচি পাঠকদের কাছে এরই মধ্যে লেখার মানের জন্যই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। 

আর্জেন্টিনার কথাসাহিত্যিক সিজার আয়রা, সোমালিয়ার ঔপন্যাসিক নুরুদ্দিন ফারাহ, চীনের কবি বেই দাও, স্পেনের ঔপন্যাসিক হুয়ান মারসে, ইরানের কথাসাহিত্যিক মোহাম্মদ দৌলতাবাদী, রুশ কথাসাহিত্যিক মিখাইল শিসকিন, বেলজিয়ামের কবি লিওনার্দ নোলেনস প্রমুখের যে কারো নাম উচ্চারিত হতেই পারে নোবেল পুরস্কারের প্রাপক হিসেবে। আর্জেন্টিনার কথাসাহিত্যিক ও অনুবাদক সিজার আয়রা বহুলপ্রজ লেখক। অনুবাদক হিসেবে তিনি সমান পরিচিত ও জনপ্রিয়। পূর্ব আফ্রিকার নুরুদ্দিন ফারাহ উপন্যাস, ছোটগল্প, প্রবন্ধ ও নাটক লেখেন। নিরীক্ষাধর্মী শৈলীর লেখক নুরুদ্দিন ফারাহ ইউরোপ-আমেরিকার অনেক সম্মানজনক পুরস্কার এরই মধ্যে পেয়ে গেছেন।

২০১৮ ও ২০১৯ সালের নোবেল পুরস্কার খুব কাছাকাছি ভৌগোলিক অবস্থানের দুজন লেখককে দেওয়া হয়েছে। সে কারণে হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক, নাট্যকার পিটার নাদাসকে তাঁর লেখার গুণের কারণে বিবেচনায় রাখলেও জোর দিয়ে আর বলা যায় না, তিনি পেতে পারেন। হাঙ্গেরির আরেক আলোচিত লেখক হলেন লাজলো ক্রাজনাহরকাই। ঔপন্যাসিক ও নাট্যকার ক্রাজনাহরকাই বিষণ্নতার বিষয়বস্তুর জন্য বিশেষ এক শ্রেণির পাঠকের কাছে বেশ প্রিয়।

‘চীনের নিরীক্ষাধর্মী কথাসাহিত্যের অগ্রগণ্য লেখক’ বলা হয় ক্যান জুইকে। প্রথম পর্যায়ের আধুনিক চীনা সাহিত্যের বাস্তববাদী উপস্থাপনার বলয় থেকে বেরিয়ে এসে তিনি নিরীক্ষাধর্মী লেখা লিখছেন। আরেক লেখক ইয়ান লিয়াংকের নামও গুরুত্বপূর্ণ। ব্যঙ্গাত্মক সুর তাঁর লেখার প্রধান বৈশিষ্ট্য। চীনের কথাসাহিত্যের মেটাফিকশন ও উত্তরাধুনিক ধারার লেখকদের মধ্যে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় লেখক হিসেবে পরিচিতি পান ইউ হুয়া। কথাসাহিত্য ছাড়াও প্রবন্ধ লেখেন। ইংরেজি ভাষার দিক থেকে গুরুত্বের দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে নিলে চীনের সাহিত্যিকদের দিকে নজর দেওয়া যেতে পারে।

আইরিশ ঔপন্যাসিক জন বানভিল, নরওয়ের নাট্যকার জন ফসে, ভারতের অমিতাভ ঘোষ প্রমুখ অনেক দিন থেকেই পাঠকদের কাছে প্রিয়। তাঁদের কেউ এবার নোবেল পুরস্কার পেয়েও যেতে পারেন।

তবে সারা বিশ্বের পাঠক সবচেয়ে বেশি খুশি হবেন নব্বইয়ের দশকের নাদিন গর্ডিমার, ডেরেক ওয়ালকট, টনি মরিসন কিংবা সিমাস হিনির মতো মর্যাদার কোনো লেখক নোবেল পেয়ে গেলে।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

বই আলোচনা

মাশির হোসেন হিরু স্মারকগ্রন্থ বিস্মৃতি থেকে স্মৃতিতে

শেয়ার
মাশির হোসেন হিরু স্মারকগ্রন্থ বিস্মৃতি থেকে স্মৃতিতে

সাংবাদিক মাশির হোসেন, যিনি হিরু ডাকনামে অধিক পরিচিত। তাঁর আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী ও সুধীজনের কাছে তিনি স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। প্রায় দুই দশক পরেও তাঁরা তাঁকে ভুলে যাননি; মনে রেখেছেন। মুস্তাফা মজিদ সম্পাদিত মাশির হোসেন হিরু স্মারকগ্রন্থ : বিস্মৃতি থেকে স্মৃতিতে তারই প্রমাণ।

মায়ানমারের ইয়াঙ্গুনে জন্মগ্রহণ করলেও তাঁর শৈশব কাটে ঢাকার আর্মানিটোলায়, পরবর্তীতে শান্তিনগরে। স্বাধীনচেতা মাশির হোসেন তাই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন সাংবাদিকতা। শুরু করেন স্পোর্টস রিপোর্টার হিসেবে। ভাষা আন্দোলনে ছিল তাঁর সক্রিয় অংশগ্রহণ।

সাংবাদিকতার পাশাপাশি দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজের বিভিন্ন অসংগতি নিয়েও তিনি সোচ্চার ছিলেন।

স্মারকগ্রন্থের সম্পাদক মুস্তাফা মজিদ বলেছেন, অন্য অনেক স্মারকগ্রন্থের মতো মাশির হোসেন হিরু স্মারকগ্রন্থও সাদামাটা, যা ভালোবাসার মানুষদের স্মৃতিচারণাই। যদিও কোনো কোনো বৃহৎ ঘটনার পুনরাবৃত্তি করেছেন কেউ কেউ, তা সত্ত্বেও তার ভেতরেই ফুটে উঠেছে এক অনন্য অকৃত্রিম দরদ এবং মাশির হোসেনের চরিত্রের নানা দিক, যা তাঁকে নতুন আলোয় উদ্ভাসিত করেছে বর্তমান প্রজন্মের মানুষদের মাঝে; বিশেষত সাংবাদিকতাজগতে যাঁরা এ প্রজন্মের, যাঁদের অনেকেই মাশির হোসেনকে ব্যক্তিগতভাবে দেখেননি এবং চেনেন না। তিনি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন এই গ্রন্থে যাঁরা লিখেছেন তাঁদের সবাইকে।

এই স্মারকগ্রন্থে লিখেছেন আমানউল্লাহ, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, এরশাদ মজুমদার, আবুল কাসেম ফজলুল হক, মুহাম্মদ কামরুজ্জামান, মনোয়ার হোসেন, লুত্ফুর রহমান, সৈয়দ দীদার বখত, দীপা দত্ত (সেন), গোলাম তাহাবুর, ড. মাহবুব উদ্দীন চৌধুরী, ইকবাল সোবহান চৌধুরী, রফিকুর রহমান, কাজিম রেজা, আব্দুল আউয়াল ঠাকুর, এ কে এম মহসিন, এলাহী নেওয়াজ খান, আহমদ আখতার, কাজী রওনাক হোসেন, মমতাজ বিলকিস, মারুফ কামাল খান, খায়রুল আনোয়ার, সৈয়দ আবদাল আহমদ, ফজলুল বারী, মোস্তফা কামাল মজুমদার, শওকত মাহমুদ, বুলবুল আহমেদ, মাহমুদ শফিক, শওকত আনোয়ার প্রমুখ।

এ ছাড়া আছে মাশির হোসেন হিরুর লেখা, জীবনবৃত্তান্ত ও কিছু দুর্লভ আলোকচিত্র, যা এই গ্রন্থকে আরো আকর্ষণীয় করেছে। আশা করি, মাশির হোসেন হিরুকে জানতে স্মারকগ্রন্থটি নতুন প্রজন্মকে সাহায্য করবে।

রিহাম হাসান

 

মন্তব্য
পাঠকের প্রিয় বই

যেন কারো একান্ত গোপন চিঠির খাম খুলেছি

    তাওহীদাহ্ রহমান নূভ, বাংলা বিভাগ, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
শেয়ার
যেন কারো একান্ত গোপন চিঠির খাম খুলেছি

চিঠিপত্র তো ব্যক্তিমানসের মুকুর। কেবল এই মুকুরকেই কাজে লাগিয়ে রচিত হতে পারে অনবদ্য কোনো উপন্যাস, এটা হয়তো বুদ্ধদেব গুহর আগে ভাবেননি কোনো কথাকার। শুধু আঙ্গিকেই নয়, বহু দিক থেকে নতুন মাত্রা যোগ করেছে সবিনয় নিবেদন নামের চমৎকার এই উপন্যাস। শিক্ষিত, স্বাবলম্বী ও উদারমনা এক নারী ঋতার সঙ্গে বেতলার জঙ্গলে এক চরম বিপন্ন মুহূর্তে একঝলক দেখা হয়েছিল ঝকঝকে, ব্যক্তিত্ববান অফিসার রাজর্ষি বসুর।

এরপর শুরু হয় দুজনের পত্রবিনিময়। শেষ হয় এই বিনিময়েই।

যেন কারো একান্ত গোপন চিঠির খাম খুলেছিসবিনয় নিবেদন-এর মতো বই পড়া যেন এক ধরনের নীরব সাধনা। যেন কারো একান্ত গোপন চিঠির খাম আমি খুলে বসেছি, যার ভাঁজে ভাঁজে জমে আছে অভিমান, ব্যথা, অরণ্যের ঘ্রাণ আর অপ্রকাশিত ভালোবাসা।

এ উপন্যাস কাহিনি নয়, চরিত্র নয়এ যেন এক দীর্ঘ আত্মালেখ্য, যা পাঠকের হৃদয়ের দরজায় কড়া নাড়ে শব্দহীনভাবে।

প্রথম থেকেই মনে হয়েছে, উপন্যাস পড়ছি, না একটি রাগপ্রবণ, বেদনাঘন রাগিণী শুনছি। যেন এক পিয়ানো, যার কিছু চাবি বাজে না, কিছু অতিরিক্ত সুর তুলে দেয়। বুদ্ধদেব গুহর ভাষা এতটাই স্বচ্ছ ও জীবন্ত যে চরিত্রের চোখের জলও যেন স্পষ্ট অনুভব করা যায়।

সেই জল শুধু দুঃখের নয়; তাতে মিশে থাকে স্মৃতির অনুতাপ, সৌন্দর্যের শোক এবং অমোঘ অভিজ্ঞতার মৌন সম্মতি।

প্রতিটি পৃষ্ঠা যেন একটি কুয়াশাময় সকালঅস্পষ্ট, কিন্তু অনুভবে পরিপূর্ণ। সম্পর্ক এখানে নদীর মতোপ্রবহমান, বাঁক নেয়, স্রোতের নিচে পাথর লুকিয়ে থাকে। লেখকের অভিজ্ঞতা থেকে উঠে আসা অনুভবগুলো এমনভাবে বিন্যস্ত, যেন পাঠকের আত্মজগতে আয়না ধরে রাখা হয়েছে, যেখানে নিজের ভেতরের চেহারা ধরা পড়ে, যেটা আমরা অনেক সময় এড়িয়ে যাই। ভালোবাসার বর্ণনা এ উপন্যাসে কোনো একপেশে আবেগে সীমাবদ্ধ নয়।

তা কখনো নৈঃশব্দ্য, কখনো দূরত্ব, আবার কখনো নিঃশর্ত প্রতীক্ষার মতো হয়ে ওঠে। বিচ্ছেদের ব্যথা এখানে করুণ নয়, বরং দার্শনিকএক ধরনের মেনে নেওয়া, যেন জীবন থেকেই শেখা যায় কিভাবে না-পাওয়া জিনিসও একদিন আপন হয়ে ওঠে স্মৃতির মাধ্যাকর্ষণে। ভাষার সৌন্দর্য এই উপন্যাসের সবচেয়ে অনন্য বৈশিষ্ট্য। কোথাও তা অরণ্যের মতো জটিল, কোথাও নদীর মতো স্বচ্ছ, কোথাও বা মৃত পাখির পালকের মতো হালকা ও বেদনাবিধুর। উপমা, ইঙ্গিত ও নৈঃশব্দ্য মিলিয়ে বুদ্ধদেব গুহ এক অন্তর্লোক নির্মাণ করেছেন, যেখানে পাঠক শুধু পাঠ করে না; অংশগ্রহণ করে।

গ্রন্থনা : পিন্টু রঞ্জন অর্ক

 

 

মন্তব্য
বিশ্বসাহিত্য

জার্মান লেখক সেবাস্টিয়ান হাফনারের উপন্যাসের চমক

শেয়ার
জার্মান লেখক সেবাস্টিয়ান হাফনারের উপন্যাসের চমক

সম্প্রতি প্রকাশ করা হয়েছে জার্মান সাংবাদিক, ইতিহাসবিদ ও লেখক সেবাস্টিয়ান হাফনারের উপন্যাস আবসিড বা বিদায়। হাফনারের জন্ম ১৯০৭ সালে, মারা যান ১৯৯৯ সালে। আবসিড বা বিদায় নামের উপন্যাসের পাণ্ডুলিপি পাওয়া যায় প্রয়াত লেখকের ড্রয়ার থেকে। উপন্যাসটি লেখা হয় ১৯৩২ সালের ১৮ অক্টোবর থেকে ২৩ নভেম্বরের মধ্যে।

এ উপন্যাস উনিশ শ ত্রিশের দশকের শুরুতে লেখা হলেও তখন প্রকাশ করার মতো পরিবেশ ছিল না। হাতে লেখা পাণ্ডুলিপিটি ড্রয়ারে পান হাফনারের ছেলে অলিভার প্রেটজেল। এ উপন্যাসের কাহিনিতে বলা হয়েছে দুই নারী-পুরুষের ভালোবাসার কথা। ভিয়েনার ইহুদি মেয়ে টেডি এবং বার্লিনের আইনপড়ুয়া অ-ইহুদি ছেলে রাইমান্ডের প্রেমপূর্ব সাক্ষাৎ হয় ১৯৩০ সালে বার্লিনে।
বার্লিন ও প্যারিসে তাদের একসঙ্গে কাটানো সময় নিয়েই তৈরি হয়েছে উপন্যাসের অবয়ব। একটা টান টান উত্তেজনাপূর্ণ সময়কে ধরা হয়েছে এ উপন্যাসে। হাফনারের আসল নাম রাইমান্ড প্রেটজেল। জন্ম বার্লিনে।
নাৎসি আমলের প্রাক্কালে ১৯৩৮ সালে তিনি লন্ডন চলে যান। লন্ডনে অবস্থানকালে তিনি নাম পরিবর্তন করেন, যাতে জার্মানিতে অবস্থানরত পরিবারের অন্য সদস্যরা তাঁর কারণে নির্যাতনের শিকার না হন। এ উপন্যাসের জন্য প্রকাশের সময় প্রাক্কথন লিখে দিয়েছেন জার্মান সাহিত্য সমালোচক ভলকার ওয়েডারম্যান। তিনি মনে করেন, উনিশ শ ত্রিশের দশকে প্রকাশ না করার অন্যতম কারণ হলো, পাঠকের কাছে হাফনারের সে সময়ের ব্যক্তিত্বের সঙ্গে এ উপন্যাস বেশ বেমানান মনে হতো।

এ বছর এ উপন্যাস প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে জনপ্রিয় হওয়ার কারণ হলো, এখানে ইতিহাসের খুব কঠিন সময়ের সাদামাটা জীবনের গল্প বলা হয়েছে।

যুদ্ধের প্রাক্কালে সাধারণ মানুষের জীবন কেমন ছিল তা জানার জন্য বর্তমানের পাঠকদের কৌতূহল জেগেছে বলেই তাঁরা এটা এতটা পছন্দ করেছেন। আরো একটি কারণ হলো, দৈনন্দিন জীবনের জটিলতার সঙ্গে বর্তমান সময়ের রাজনীতিও জটিল হচ্ছে। পাঠকের কাছে রাজনীতিও আগ্রহের বিষয় হয়ে উঠছে।

ফাহমিদা দ্যুতি

 

মন্তব্য

এক ঘণ্টা

    জামান আখতার
শেয়ার
এক ঘণ্টা
অঙ্কন : তানভীর মালেক

রাত সাড়ে আটটায় ঢাকা শহরের সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায় সরকারি আদেশমতো।

সিটি শপিং মলের আটতলার সব দোকান আটটায় দ্রুত বন্ধ করে দিচ্ছে। ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই লিফট-সিঁড়ি বেয়ে নেমে শপিং মল ত্যাগ করছে। গ্রাউন্ড ফ্লোরে সিকিউরিটি গেটে সবার চলে যাওয়ায় সহযোগিতা করছে।

কাল মার্কেট সাপ্তাহিক বন্ধ।

রাত সাড়ে আটটা বাজার কিছুক্ষণ আগে ছয়তলা থেকে হন্তদন্ত হয়ে মাস্ক পরা এক স্মার্ট যুবক আশিক লিফটে চড়ে ডোর ক্লোজ বাটন টিপে ঘুরে দাঁড়াল। দেখল, লিফটের কোনায় কিছু শপিং ব্যাগ হাতে একটু ঘুরে দাঁড়ানো সালোয়ার-কামিজ হিজাব-নেকাব পরা এক যুবতি।

লিফট নিচে নামতেই সহসা একটা শব্দ করে থেমে গেল।

অন্ধকার হলো লিফট। মেয়েটি আঁতকে উঠে ঘুরে তাকাল

: কী হলো?

অস্ফুট স্বরে আশিক বলল

: কারেন্ট চলে গেল।

: লোডশেডিং!

: ভয় পাবেন না। জেনারেটর ছাড়লেই লিফট চলবে।

সিঁড়ি বেয়ে সবাই নেমে শপিং মল ত্যাগ করল। মার্কেট শূন্য। শুধু অন্ধকার লিফটের ভেতরে আটকা পড়ে আছে আশিক আর একটি রক্ষণশীল নারী।

আশিক তার মাস্ক খুলে মোবাইলের লাইট অন করল। বেশ আলোকিত হলো লিফট।

মেয়েটি দুচোখে ভয়ার্ত আতঙ্কে একটু নড়েচড়ে দাঁড়াল। আশিক বুঝতে পারল, মেয়েটি শঙ্কিত, ভীতসন্ত্রস্ত। যেন তার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে এই অন্ধকার বন্দিশালায়। আশিক লিফট ইন্টারকমের বাটন টিপল।

: হ্যালো। হ্যালো লিফটম্যান। হ্যালো হ্যালো।

আশিক ইন্টারকম বক্সে কারো কোনো সাড়াশব্দ পেল না। সিকিউরটি রমিজ  শপিং মলের আন্ডারগ্রাউন্ড কার পার্কিং থেকে একজনের গাড়ি বিদায় করছে। লিফটে বন্দি আশিক চিৎকার করে বলছে

: কে আছ, লিফটের দরজা খোলো। আমরা আটকা পড়েছি।

সিকিউরিটির কানে তখনো আওয়াজ পৌঁছেনি। আশিক লিফটের দরজায় ডান হাতে অনবরত ঘুষি মারছে আর বলছে

: আমরা লিফটে আটকা পড়েছি। কে আছ, জেনারেটর চালু করো। নয়তো লিফট ভেঙে ফেলব। ভেঙেই ফেলব।

আশিকের এই আর্তচিৎকারে বিমর্ষ মেয়েটি। সিকিউরিটির কানে আওয়াজ পৌঁছল। দ্রুত সিকিউরিটি লিফট ইন্টারকম বাটন টিপে বলে

স্যার স্যার, আমি মার্কেট সিকিউরিটি রমিজ।

: তোমাদের লিফটম্যানকে বলো  জেনারেটর চালু করতে।

: স্যার, লিফটম্যান করিম ভাই তো সন্ধ্যাবেলা বাইত চইলা গেছে।

: তুমি তাড়াতাড়ি জেনারেটর চালু করো।

: কেমনে চালু করুম স্যার, সারা দিন তিনবার কারেন্ট গেছে। জেনারেটরে তেল নাই।

: লিফটের চাবি নিয়ে, তুমি লিফট ফ্লোর লেভেলে এনে দরজা খুলে আমাদের দুজনকে বের করো।

: স্যার লিফটের চাবি তো লিফটম্যান করিম ভাইয়ের কাছে থাকে। যাইবার সময় কইলো, মার্কেট বন্ধ হইলে লিফটের কারেন্ট পাওয়ার যেন আমি অফ কইরা দেই।

তোমার করিম ভাইকে ফোন করে লিফটের চাবি নিয়ে আসতে বলো।

: আইচ্ছা, ফোন দিতাছি স্যার। চিন্তা কইরেন না।

আশিক লক্ষ করল, মেয়েটি গরমে ঘামছে। আশিক একা মনেই বলল

: উহ্! এই গরমে টিকব কী করে?

মেয়েটি আঁতকে উঠল

: অ্যাঁ! তাহলে?

লিফটের ইন্টারকম বেজে উঠল। আশিক দ্রুত ঘুরে তাকল লিফটের সাউন্ড বক্সের দিকে।

: হ্যাঁ, করিম মিয়া আসছে তো?

সিকিউরিটি রমিজ বলল

: না স্যার। ম্যালা চেষ্টা করলাম, করিম ভাইয়ের মোবাইল বন্ধ।

আশিক উদ্বিগ্ন স্বরে বলল

: হোয়াট!

শব্দ শুনে মেয়েটি আচমকা বলে উঠল

: হায় আল্লাহ, এখন উপায়!

রমিজ মিয়া বলল

আল্লাহ ভরসা। এক ঘণ্টার মধ্যেই কারেন্ট চইলা আসবো। তার পরেও আমি বিদ্যুৎ অফিসে খবর লইতাছি।

আশিকের মোবাইল আলোয় কী অদ্ভুত ঐন্দ্রজালিক অন্ধকার লিফটের চার দেয়ালের ভেতরে চৈত্রদাহে পুড়ছে, দুজন অচেনা-অজানা লিফটযাত্রী।

এক ঘণ্টার লোডশেডিং হলে বিদ্যুৎ আসতে এখনো চল্লিশ মিনিট বাকি। কতক্ষণ আর লিফটে দাঁড়িয়ে থাকা যায়। মেয়েটি শপিং ব্যাগগুলো নিয়ে লিফটে বসে পড়ল। আশিকও বসে লম্বা করে পা মেলে দিল। আশিক লক্ষ করল, মেয়েটি শপিং ব্যাগ থেকে একটি পণ্যের প্যাকেট বোর্ড ছিঁড়ে হাতপাখা করে বাতাস তুলে নিচ্ছে তার গায়ে। গরমে হিজাব-নেকাব ভিজে একাকার। আশিক তার কাঁধে ঝোলানো লেদার সাইড ব্যাগ থেকে মিনারেল ওয়াটারের বোতলটা বের করে মেয়েটির দিকে এগিয়ে দিল। মেয়েটি হাত বাড়িয়ে দিয়ে, কী যেন ভেবে হাতটা সরিয়ে নিল। আশিক ব্যাপারটা বুঝে বোতলের কক খুলে সামান্য পানি নিজে মুখে ঢেলে নিল। মেয়েটির মনে যেন একটা বিশ্বস্ততা ফুটে উঠল অজানা আশিকের প্রতি। এবার মেয়েটি হাত বাড়িয়ে মিনারেল বোতলটি ধরতেই চমকে উঠল, আশিকের হাতের আঙুল ফেটে তরতর করে রক্ত ঝরে পড়ছে। মেয়েটি পানির বোতলটা নিয়ে লিফটের ফ্লোরে রেখে দ্রুত তার মুখে আবৃত সাদা নেকাবটা টান দিয়ে খুলে আশিকের রক্ত ঝরা আঙুলে পেঁচিয়ে দিতে উদ্যত হলে আশিক হাত সরিয়ে নিয়ে খুব বিনয়ের সুরে বলে

: য়ু হু। আগে আপনার গলাটা ভিজিয়ে নিন।

মেয়েটি বোতল তুলে ঢকঢক করে পানি খেয়ে নেকাব দিয়ে আশিকের রক্ত ঝরা আঙুল পেঁচিয়ে বেঁধে দিল। আশিক এক অনন্যা অপ্সরী সুন্দরী নারীর রূপে অভিভূত হলো।। সহসা একটা নিষ্পাপ সুন্দর যেন আশিকের মনকে এই বন্দিত্বের কথা ভুলিয়ে দিল। মেয়েটিকে বলল

: আমি আশিক। আপনি?

: নাজমা!

: তো, এত প্যাকেট, কী শপিং করলেন?

: গায়েহলুদের কিছু সামগ্রী।

: ও! আপনার গায়েহলুদ?

: জি না। ছোট বোন সূচনার কাল হলুদসন্ধ্যা।

: তো, সাথে কেউ আসেনি?

: বাবা নেই। মা বুড়ো মানুষ!

: সূচনা?

: সামান্য কটা আইটেম, ভাবলাম একাই পারব।

: আপনার হাজব্যান্ড?

: জি!

নাজমা আঁতকে উঠল। আশিক বলল

: চমকে উঠলেন যে!

: এমনি।

: না...বলছিলাম, ছোট বোনের বিয়ে, আপনার হাজব্যান্ডকে নিয়ে...

: নেই।

: নেই, মানে ছোট বোনকে বিয়ে দিয়ে তারপর...

: বিয়ে, ঘর-সংসারএসব নিয়ে আর ভাবছি না।

: কেন?

: ব্যাপারটা কোথায় যেন একটু কমপ্লিকেটেড মনে হচ্ছে। তাহলে কি আপনার হাজব্যান্ড...

: ছিল।

: তো, এখন উনি...

আশিক লক্ষ করল, নাজমার চোখ ভিজে যাচ্ছে। যেন জীবনের কোনো একটা অতৃপ্ত গল্প লুকানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছে। সহসা আশিকের মোবাইল বেজে উঠল। রিসিভ করল

: হ্যালো, মা। এইতো একটা জায়গায়। কারেন্ট এলেই চলে আসব। জি। জি মা।

আশিক মোবাইল বন্ধ করল

: বিপদে আছেন, মাকে বুঝতে না দিয়ে ভালোই করেছেন। আমার মা আর সূচনা হয়তো আমাকে ফোন দিয়ে পাচ্ছে না।

: সঙ্গে মোবাইল আনেননি।

: চার্জ নেই।

 

 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ