ঢাকা, রবিবার ১৩ জুলাই ২০২৫
২৯ আষাঢ় ১৪৩২, ১৭ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, রবিবার ১৩ জুলাই ২০২৫
২৯ আষাঢ় ১৪৩২, ১৭ মহররম ১৪৪৭

ভাষা আন্দোলন নিয়ে লেখালেখি

  • এম আবদুল আলীম
অন্যান্য
অন্যান্য
শেয়ার
ভাষা আন্দোলন নিয়ে লেখালেখি

বাঙালির জাতীয় জীবনে গভীর প্রভাব বিস্তারকারী রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন নিয়ে লেখালেখি শুরু এ আন্দোলনের সূচনালগ্ন থেকেই। বলা চলে, পূর্ববঙ্গের সচেতন বুদ্ধিজীবীদের প্রগতিশীল অংশ এ আন্দোলনের যৌক্তিক ভিত নির্মাণ করেছিলেন তাঁদের ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে। আবদুল হক, মুহম্মদ এনামুল হক, মাহবুব জামাল জাহেদী, আবুল কাসেম, সৈয়দ মুজতবা আলী, মুহম্মদ মুসলিম চৌধুরী, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, কাজী মোতাহার হোসেন, আবুল মনসুর আহমদ প্রমুখের নাম এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায়।

বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে প্রথম পুস্তিকা প্রকাশিত হয় ১৯৪৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর; শিরোনাম : ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা—না উর্দু?’ পুস্তিকাটিতে তিনটি প্রবন্ধ স্থান পায়; যার লেখকরা ছিলেন আবুল কাসেম, কাজী মোতাহার হোসেন ও আবুল মনসুর আহমদ।

পরবর্তী সময়ে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের উত্তাল দিনগুলোতে এ নিয়ে দুটি পুস্তিকা রচিত হয়, যার একটি ‘রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন কী ও কেন?’, লেখক : আনিসুজ্জামান; আরেকটি ‘আমাদের ভাষার লড়াই’, লেখক : বদরুদ্দীন উমর। পরবর্তীকালে ভাষা আন্দোলন ও একুশের চেতনাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা জাতীয়তাবোধ ও স্বাধিকার-সংগ্রাম যতই বেগবান হয়েছে, ততই এ আন্দোলন সম্পর্কে সৃষ্টি হয়েছে কৌতূহল। সেই কৌতূহল থেকেই চলেছে গভীর অনুসন্ধান ও বিচিত্র আঙ্গিকের লেখালেখি। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের ইতিহাস নিয়ে যেমন গ্রন্থ রচিত হয়েছে, তেমনি এর বিচিত্র অনুষঙ্গে লেখা হয়েছে নাটক, কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, গান ও স্মৃতিচারণামূলক লেখা।

 ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির হত্যাকাণ্ডের কয়েক দিন পরে হানিফ পাঠান প্রণয়ন করেন ‘বায়ান্নর পাণ্ডুলিপি বাংলা বনাম উর্দু রাষ্ট্রভাষা বিতর্ক’ শীর্ষক পাণ্ডুলিপি। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম নামক সংগঠন ‘উর্দুর পক্ষে পঞ্চাশ পয়েন্ট’ নামে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করলে তার জবাবে তিনি এ পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত করেন, পরে পুস্তকাকারে প্রকাশিত হয়। এরপর বায়ান্নর রক্তাক্ত ঘটনার তিন মাস পরে ভাষা আন্দোলন এবং একুশের ইতিহাস নিয়ে গ্রন্থ রচনা করেন প্রিন্সিপাল আবুল কাসেম। ‘ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস’ শিরোনামের ওই বইটি প্রকাশিত হয় ১৯৫২ সালের জুন মাসে।

একুশের সাতটি কবিতা নিয়ে প্রথম বই প্রকাশিত হয় ১৯৫২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে, শিরোনাম ‘ওরা প্রাণ দিল’। কলকাতার বালিগঞ্জ স্টেশনের বেনু প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত এই গ্রন্থ সম্পাদনা করেন মানিকগঞ্জের বামপন্থী রাজনৈতিক কর্মী প্রমথ নন্দী।

একুশের আলোড়ন সৃষ্টিকারী গ্রন্থ মুনীর চৌধুরীর ‘কবর’ নাটক। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি অবস্থায় তিনি এটি রচনা করেন। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের অব্যবহিত পরে প্রকাশিত সবচেয়ে তাত্পর্যপূর্ণ গ্রন্থ হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত ‘একুশে ফেব্রুয়ারী’।

প্রকাশিত হয় ১৯৫৩ সালের মার্চ মাসে। পুথিপত্র প্রকাশনী থেকে এটি প্রকাশ করেন মোহাম্মদ সুলতান। প্রচ্ছদ আঁকেন শিল্পী আমিনুল ইসলাম, অলংকরণ করেন শিল্পী মুর্তজা বশীর ও বিজন চৌধুরী। এর উৎসর্গপত্রটি আনিসুজ্জামানের স্বহস্তে লেখা। একুশের ঘটনাপঞ্জি, গল্প, প্রবন্ধ, কবিতা, গান, নকশার সমন্বয়ে সাজানো এ সংকলন শুধু ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসের প্রামাণ্য গ্রন্থই নয়, এ গ্রন্থ পাকিস্তানি ভাবধারার বিপরীতে গড়ে ওঠা বাংলা সাহিত্যের মূল ধারার গতিপথ নির্ধারণেও অবদান রাখে।

রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন নিয়ে প্রথম গবেষণা গ্রন্থ রচনা করেন বদরুদ্দীন উমর। তিন খণ্ডে রচিত তাঁর ‘পূর্ববাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তত্কালীন রাজনীতি’ গ্রন্থটির প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয় ১৯৭০ সালে। এই গ্রন্থে বৃহৎ পরিসরে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। ভাষা আন্দোলন সমকালীন রাজনীতি, এ আন্দোলনের আর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক পটভূমি, ঘটনাপ্রবাহ ইত্যাদির সমন্বয়ে রচিত গ্রন্থটি লাভ করেছে আকর গ্রন্থের মর্যাদা। এ ছাড়া ‘ভাষা আন্দোলন প্রসঙ্গ : কতিপয় দলিল’ নামে দুই খণ্ডে তাঁর আরেকটি গ্রন্থ রয়েছে, যাতে সন্নিবেশিত হয়েছে ভাষা আন্দোলনের দলিলপত্র এবং এর পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণকারী বিভিন্ন ব্যক্তির কার কী ভূমিকা সে সম্পর্কিত সাক্ষাত্কার। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে বদরুদ্দীন উমরের এসব গ্রন্থ আকর গ্রন্থের মর্যাদা লাভ করলেও এ আন্দোলনে অনেকের অবদান; বিশেষত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে তিনি যেসব যুক্তি-তথ্যহীন অভিমত ব্যক্ত করেছেন, তা ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের ইতিহাসচর্চায় উল্লেখযোগ্য সংযোজন রফিকুল ইসলামের ‘ভাষা আন্দোলন ও শহীদ মিনার’ (১৯৮২), ‘বাংলা ভাষা আন্দোলন’ (১৯৮৪), ‘শহীদ মিনার’ (১৯৮৬), ‘ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সাহিত্য’ (১৯৯৩) ইত্যাদি গ্রন্থ। একই সঙ্গে উল্লেখ করা যায়, আনিসুজ্জামান রচিত ও সম্পাদিত দুটি গ্রন্থ—যথাক্রমে ‘আত্মপরিচয় ভাষা-আন্দোলন স্বাধীনতা’ এবং ‘প্রথম শহিদ মিনার ও পিয়ারু সরদার’-এর কথা। এ রকম প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা ও অনুসন্ধানী দৃষ্টি দিয়ে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসচর্চা করেছেন গাজীউল হক, এম আর আখতার মুকুল, আবদুল মতিন, আহমদ রফিক প্রমুখ। গাজীউল হক এবং এম আর আখতার মুকুল যৌথভাবে সম্পাদনা করেছেন ‘বাহান্নর ভাষা আন্দোলন’, আবদুল মতিন ও আহমদ রফিক লিখেছেন ‘ভাষা-আন্দোলন : ইতিহাস ও তাত্পর্য’। আবদুল মতিন এককভাবে লিখেছেন ‘ভাষা ও একুশের আন্দোলন’ (১৯৮৬), ‘বাঙালি জাতির উৎস সন্ধান ও ভাষা আন্দোলন’ (১৯৯৫)। ভাষাসংগ্রামীদের মধ্যে আহমদ রফিক ভাষা আন্দোলন নিয়ে সবচেয়ে বেশি গ্রন্থ রচনা করেছেন। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের পূর্বাপর ঘটনা, শহীদ মিনার নির্মাণ, ভাষা আন্দোলনের ঢাকাই জনতার ভূমিকা, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রদের অবদান, শহীদদের সংখ্যা, ঢাকার বাইরের ভাষা আন্দোলন, কমিউনিস্ট পার্টি ও তমদ্দুন মজলিসের অবদান, এ আন্দোলনের উত্তর প্রভাব ইত্যাদি বিষয় তাঁর অনুসন্ধানে বিস্তৃত পরিসরে উঠে এসেছে। তাঁর রচিত গ্রন্থগুলো হলো—‘একুশের ইতিহাস আমাদের ইতিহাস’ (১৯৮৮), ‘ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি ও কিছু জিজ্ঞাসা’ (১৯৯৩), ‘ভাষা আন্দোলন : গ্রাম কৃষি ও কৃষক’ (২০০২), ‘ভাষা আন্দোলন’ (২০১৫), ‘একুশের দিনলিপি’ (২০১৬), ‘ভাষা আন্দোলন : ইতিহাস ও উত্তর প্রভাব’ (২০১৭) ইত্যাদি।

গবেষকদের মধ্যে অনেকেই রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন নিয়ে গ্রন্থ রচনা করেছেন। এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলো হলো—সফর আলী আকন্দর ‘ল্যাঙ্গুয়েজ মুভমেন্ট অ্যান্ড দ্য মেকিং অব বাংলাদেশ’; বশীর আল্ হেলালের ‘ভাষা-আন্দোলনের ইতিহাস’; হারুন-অর-রশিদের ‘ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা’ (২০২১); বিশ্বজিৎ ঘোষের ‘রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন ও শেখ মুজিব’ (২০২১); মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীরের ‘ভাষা আন্দোলন ও নারী’, মোহাম্মদ জমালুল আকবর চৌধুরীর ‘সংবাদপত্র ও পূর্ব বাংলার ভাষা-আন্দোলন (১৯৪৮-১৯৫২)’, এম আবদুল আলীমের ‘বঙ্গবন্ধু ও ভাষা-আন্দোলন’ (২০২০), ‘ভাষা-আন্দোলন-কোষ’ (২০২০), ‘আওয়ামী লীগ ও ভাষা-আন্দোলন’ (২০২০), ‘রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে ছাত্রলীগের ভূমিকা’ (২০২১) ইত্যাদি। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গোলাম কুদ্দুছের ‘ভাষার লড়াই ও রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন’ এবং ‘ভাষা আন্দোলন : সহজ পাঠ’ বই দুটির নামও এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায়।

রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের আঞ্চলিক ইতিহাস নিয়ে অনেক গ্রন্থ রচিত হয়েছে। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থ হলো—আবু মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন সম্পাদিত ‘ভাষা-আন্দোলনের আঞ্চলিক ইতিহাস’, আহমদ রফিকের ‘ভাষা আন্দোলন : টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া’, তসিকুল ইসলামের ‘বরেন্দ্র অঞ্চলে ভাষা আন্দোলন’, মামুন সিদ্দিকীর ‘কুমিল্লায় ভাষা-আন্দোলন’, এম আবদুল আলীমের ‘রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন : জেলাভিত্তিক ইতিহাস’, ‘পাবনায় ভাষা-আন্দোলন, সিরাজগঞ্জে ভাষা-আন্দোলন’, মোজাম্মেল বিশ্বাসের ‘নারায়ণগঞ্জে ভাষা আন্দোলন’ ইত্যাদি।

ভাষা আন্দোলনের কালজয়ী উপন্যাস জহির রায়হানের ‘আরেক ফাল্গুন’। একুশের অমর সংগীত আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী’ এখন দেশের গণ্ডি অতিক্রম করে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও জায়গা করে নিয়েছে। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন নিয়ে স্মৃতিচারণামূলক রচনার পরিমাণও কম নয়। এসব স্মৃতি সংগ্রহ ও সংরক্ষণে বাংলা একাডেমি পালন করেছে ঐতিহাসিক ভূমিকা।

এভাবে আলোচনা ও তথ্যানুসন্ধান করলে দেখা যায়, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন নিয়ে বিস্তর লেখালেখি হয়েছে। এখন সময় এসেছে যত দূর সম্ভব প্রাপ্ত তথ্য একত্র করে বাঙালির গৌরবের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের পূর্ণাঙ্গ এবং অপেক্ষাকৃত সর্বজনীন ইতিহাস রচনার, যার মাধ্যমে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম জানতে পারবে ভাষার লড়াইয়ে বাঙালির ত্যাগের কথা, শোকের কথা এবং শোককে শক্তিতে রূপান্তর করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয়ের কথা, যে প্রত্যয় তাদের দান করেছে স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জনের সর্বৈব শক্তি-সাহস ও প্রেরণা।

 

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

বই আলোচনা

মাশির হোসেন হিরু স্মারকগ্রন্থ বিস্মৃতি থেকে স্মৃতিতে

শেয়ার
মাশির হোসেন হিরু স্মারকগ্রন্থ বিস্মৃতি থেকে স্মৃতিতে

সাংবাদিক মাশির হোসেন, যিনি হিরু ডাকনামে অধিক পরিচিত। তাঁর আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী ও সুধীজনের কাছে তিনি স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। প্রায় দুই দশক পরেও তাঁরা তাঁকে ভুলে যাননি; মনে রেখেছেন। মুস্তাফা মজিদ সম্পাদিত মাশির হোসেন হিরু স্মারকগ্রন্থ : বিস্মৃতি থেকে স্মৃতিতে তারই প্রমাণ।

মায়ানমারের ইয়াঙ্গুনে জন্মগ্রহণ করলেও তাঁর শৈশব কাটে ঢাকার আর্মানিটোলায়, পরবর্তীতে শান্তিনগরে। স্বাধীনচেতা মাশির হোসেন তাই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন সাংবাদিকতা। শুরু করেন স্পোর্টস রিপোর্টার হিসেবে। ভাষা আন্দোলনে ছিল তাঁর সক্রিয় অংশগ্রহণ।

সাংবাদিকতার পাশাপাশি দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজের বিভিন্ন অসংগতি নিয়েও তিনি সোচ্চার ছিলেন।

স্মারকগ্রন্থের সম্পাদক মুস্তাফা মজিদ বলেছেন, অন্য অনেক স্মারকগ্রন্থের মতো মাশির হোসেন হিরু স্মারকগ্রন্থও সাদামাটা, যা ভালোবাসার মানুষদের স্মৃতিচারণাই। যদিও কোনো কোনো বৃহৎ ঘটনার পুনরাবৃত্তি করেছেন কেউ কেউ, তা সত্ত্বেও তার ভেতরেই ফুটে উঠেছে এক অনন্য অকৃত্রিম দরদ এবং মাশির হোসেনের চরিত্রের নানা দিক, যা তাঁকে নতুন আলোয় উদ্ভাসিত করেছে বর্তমান প্রজন্মের মানুষদের মাঝে; বিশেষত সাংবাদিকতাজগতে যাঁরা এ প্রজন্মের, যাঁদের অনেকেই মাশির হোসেনকে ব্যক্তিগতভাবে দেখেননি এবং চেনেন না। তিনি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন এই গ্রন্থে যাঁরা লিখেছেন তাঁদের সবাইকে।

এই স্মারকগ্রন্থে লিখেছেন আমানউল্লাহ, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, এরশাদ মজুমদার, আবুল কাসেম ফজলুল হক, মুহাম্মদ কামরুজ্জামান, মনোয়ার হোসেন, লুত্ফুর রহমান, সৈয়দ দীদার বখত, দীপা দত্ত (সেন), গোলাম তাহাবুর, ড. মাহবুব উদ্দীন চৌধুরী, ইকবাল সোবহান চৌধুরী, রফিকুর রহমান, কাজিম রেজা, আব্দুল আউয়াল ঠাকুর, এ কে এম মহসিন, এলাহী নেওয়াজ খান, আহমদ আখতার, কাজী রওনাক হোসেন, মমতাজ বিলকিস, মারুফ কামাল খান, খায়রুল আনোয়ার, সৈয়দ আবদাল আহমদ, ফজলুল বারী, মোস্তফা কামাল মজুমদার, শওকত মাহমুদ, বুলবুল আহমেদ, মাহমুদ শফিক, শওকত আনোয়ার প্রমুখ।

এ ছাড়া আছে মাশির হোসেন হিরুর লেখা, জীবনবৃত্তান্ত ও কিছু দুর্লভ আলোকচিত্র, যা এই গ্রন্থকে আরো আকর্ষণীয় করেছে। আশা করি, মাশির হোসেন হিরুকে জানতে স্মারকগ্রন্থটি নতুন প্রজন্মকে সাহায্য করবে।

রিহাম হাসান

 

মন্তব্য
পাঠকের প্রিয় বই

যেন কারো একান্ত গোপন চিঠির খাম খুলেছি

    তাওহীদাহ্ রহমান নূভ, বাংলা বিভাগ, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
শেয়ার
যেন কারো একান্ত গোপন চিঠির খাম খুলেছি

চিঠিপত্র তো ব্যক্তিমানসের মুকুর। কেবল এই মুকুরকেই কাজে লাগিয়ে রচিত হতে পারে অনবদ্য কোনো উপন্যাস, এটা হয়তো বুদ্ধদেব গুহর আগে ভাবেননি কোনো কথাকার। শুধু আঙ্গিকেই নয়, বহু দিক থেকে নতুন মাত্রা যোগ করেছে সবিনয় নিবেদন নামের চমৎকার এই উপন্যাস। শিক্ষিত, স্বাবলম্বী ও উদারমনা এক নারী ঋতার সঙ্গে বেতলার জঙ্গলে এক চরম বিপন্ন মুহূর্তে একঝলক দেখা হয়েছিল ঝকঝকে, ব্যক্তিত্ববান অফিসার রাজর্ষি বসুর।

এরপর শুরু হয় দুজনের পত্রবিনিময়। শেষ হয় এই বিনিময়েই।

যেন কারো একান্ত গোপন চিঠির খাম খুলেছিসবিনয় নিবেদন-এর মতো বই পড়া যেন এক ধরনের নীরব সাধনা। যেন কারো একান্ত গোপন চিঠির খাম আমি খুলে বসেছি, যার ভাঁজে ভাঁজে জমে আছে অভিমান, ব্যথা, অরণ্যের ঘ্রাণ আর অপ্রকাশিত ভালোবাসা।

এ উপন্যাস কাহিনি নয়, চরিত্র নয়এ যেন এক দীর্ঘ আত্মালেখ্য, যা পাঠকের হৃদয়ের দরজায় কড়া নাড়ে শব্দহীনভাবে।

প্রথম থেকেই মনে হয়েছে, উপন্যাস পড়ছি, না একটি রাগপ্রবণ, বেদনাঘন রাগিণী শুনছি। যেন এক পিয়ানো, যার কিছু চাবি বাজে না, কিছু অতিরিক্ত সুর তুলে দেয়। বুদ্ধদেব গুহর ভাষা এতটাই স্বচ্ছ ও জীবন্ত যে চরিত্রের চোখের জলও যেন স্পষ্ট অনুভব করা যায়।

সেই জল শুধু দুঃখের নয়; তাতে মিশে থাকে স্মৃতির অনুতাপ, সৌন্দর্যের শোক এবং অমোঘ অভিজ্ঞতার মৌন সম্মতি।

প্রতিটি পৃষ্ঠা যেন একটি কুয়াশাময় সকালঅস্পষ্ট, কিন্তু অনুভবে পরিপূর্ণ। সম্পর্ক এখানে নদীর মতোপ্রবহমান, বাঁক নেয়, স্রোতের নিচে পাথর লুকিয়ে থাকে। লেখকের অভিজ্ঞতা থেকে উঠে আসা অনুভবগুলো এমনভাবে বিন্যস্ত, যেন পাঠকের আত্মজগতে আয়না ধরে রাখা হয়েছে, যেখানে নিজের ভেতরের চেহারা ধরা পড়ে, যেটা আমরা অনেক সময় এড়িয়ে যাই। ভালোবাসার বর্ণনা এ উপন্যাসে কোনো একপেশে আবেগে সীমাবদ্ধ নয়।

তা কখনো নৈঃশব্দ্য, কখনো দূরত্ব, আবার কখনো নিঃশর্ত প্রতীক্ষার মতো হয়ে ওঠে। বিচ্ছেদের ব্যথা এখানে করুণ নয়, বরং দার্শনিকএক ধরনের মেনে নেওয়া, যেন জীবন থেকেই শেখা যায় কিভাবে না-পাওয়া জিনিসও একদিন আপন হয়ে ওঠে স্মৃতির মাধ্যাকর্ষণে। ভাষার সৌন্দর্য এই উপন্যাসের সবচেয়ে অনন্য বৈশিষ্ট্য। কোথাও তা অরণ্যের মতো জটিল, কোথাও নদীর মতো স্বচ্ছ, কোথাও বা মৃত পাখির পালকের মতো হালকা ও বেদনাবিধুর। উপমা, ইঙ্গিত ও নৈঃশব্দ্য মিলিয়ে বুদ্ধদেব গুহ এক অন্তর্লোক নির্মাণ করেছেন, যেখানে পাঠক শুধু পাঠ করে না; অংশগ্রহণ করে।

গ্রন্থনা : পিন্টু রঞ্জন অর্ক

 

 

মন্তব্য
বিশ্বসাহিত্য

জার্মান লেখক সেবাস্টিয়ান হাফনারের উপন্যাসের চমক

শেয়ার
জার্মান লেখক সেবাস্টিয়ান হাফনারের উপন্যাসের চমক

সম্প্রতি প্রকাশ করা হয়েছে জার্মান সাংবাদিক, ইতিহাসবিদ ও লেখক সেবাস্টিয়ান হাফনারের উপন্যাস আবসিড বা বিদায়। হাফনারের জন্ম ১৯০৭ সালে, মারা যান ১৯৯৯ সালে। আবসিড বা বিদায় নামের উপন্যাসের পাণ্ডুলিপি পাওয়া যায় প্রয়াত লেখকের ড্রয়ার থেকে। উপন্যাসটি লেখা হয় ১৯৩২ সালের ১৮ অক্টোবর থেকে ২৩ নভেম্বরের মধ্যে।

এ উপন্যাস উনিশ শ ত্রিশের দশকের শুরুতে লেখা হলেও তখন প্রকাশ করার মতো পরিবেশ ছিল না। হাতে লেখা পাণ্ডুলিপিটি ড্রয়ারে পান হাফনারের ছেলে অলিভার প্রেটজেল। এ উপন্যাসের কাহিনিতে বলা হয়েছে দুই নারী-পুরুষের ভালোবাসার কথা। ভিয়েনার ইহুদি মেয়ে টেডি এবং বার্লিনের আইনপড়ুয়া অ-ইহুদি ছেলে রাইমান্ডের প্রেমপূর্ব সাক্ষাৎ হয় ১৯৩০ সালে বার্লিনে।
বার্লিন ও প্যারিসে তাদের একসঙ্গে কাটানো সময় নিয়েই তৈরি হয়েছে উপন্যাসের অবয়ব। একটা টান টান উত্তেজনাপূর্ণ সময়কে ধরা হয়েছে এ উপন্যাসে। হাফনারের আসল নাম রাইমান্ড প্রেটজেল। জন্ম বার্লিনে।
নাৎসি আমলের প্রাক্কালে ১৯৩৮ সালে তিনি লন্ডন চলে যান। লন্ডনে অবস্থানকালে তিনি নাম পরিবর্তন করেন, যাতে জার্মানিতে অবস্থানরত পরিবারের অন্য সদস্যরা তাঁর কারণে নির্যাতনের শিকার না হন। এ উপন্যাসের জন্য প্রকাশের সময় প্রাক্কথন লিখে দিয়েছেন জার্মান সাহিত্য সমালোচক ভলকার ওয়েডারম্যান। তিনি মনে করেন, উনিশ শ ত্রিশের দশকে প্রকাশ না করার অন্যতম কারণ হলো, পাঠকের কাছে হাফনারের সে সময়ের ব্যক্তিত্বের সঙ্গে এ উপন্যাস বেশ বেমানান মনে হতো।

এ বছর এ উপন্যাস প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে জনপ্রিয় হওয়ার কারণ হলো, এখানে ইতিহাসের খুব কঠিন সময়ের সাদামাটা জীবনের গল্প বলা হয়েছে।

যুদ্ধের প্রাক্কালে সাধারণ মানুষের জীবন কেমন ছিল তা জানার জন্য বর্তমানের পাঠকদের কৌতূহল জেগেছে বলেই তাঁরা এটা এতটা পছন্দ করেছেন। আরো একটি কারণ হলো, দৈনন্দিন জীবনের জটিলতার সঙ্গে বর্তমান সময়ের রাজনীতিও জটিল হচ্ছে। পাঠকের কাছে রাজনীতিও আগ্রহের বিষয় হয়ে উঠছে।

ফাহমিদা দ্যুতি

 

মন্তব্য

এক ঘণ্টা

    জামান আখতার
শেয়ার
এক ঘণ্টা
অঙ্কন : তানভীর মালেক

রাত সাড়ে আটটায় ঢাকা শহরের সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায় সরকারি আদেশমতো।

সিটি শপিং মলের আটতলার সব দোকান আটটায় দ্রুত বন্ধ করে দিচ্ছে। ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই লিফট-সিঁড়ি বেয়ে নেমে শপিং মল ত্যাগ করছে। গ্রাউন্ড ফ্লোরে সিকিউরিটি গেটে সবার চলে যাওয়ায় সহযোগিতা করছে।

কাল মার্কেট সাপ্তাহিক বন্ধ।

রাত সাড়ে আটটা বাজার কিছুক্ষণ আগে ছয়তলা থেকে হন্তদন্ত হয়ে মাস্ক পরা এক স্মার্ট যুবক আশিক লিফটে চড়ে ডোর ক্লোজ বাটন টিপে ঘুরে দাঁড়াল। দেখল, লিফটের কোনায় কিছু শপিং ব্যাগ হাতে একটু ঘুরে দাঁড়ানো সালোয়ার-কামিজ হিজাব-নেকাব পরা এক যুবতি।

লিফট নিচে নামতেই সহসা একটা শব্দ করে থেমে গেল।

অন্ধকার হলো লিফট। মেয়েটি আঁতকে উঠে ঘুরে তাকাল

: কী হলো?

অস্ফুট স্বরে আশিক বলল

: কারেন্ট চলে গেল।

: লোডশেডিং!

: ভয় পাবেন না। জেনারেটর ছাড়লেই লিফট চলবে।

সিঁড়ি বেয়ে সবাই নেমে শপিং মল ত্যাগ করল। মার্কেট শূন্য। শুধু অন্ধকার লিফটের ভেতরে আটকা পড়ে আছে আশিক আর একটি রক্ষণশীল নারী।

আশিক তার মাস্ক খুলে মোবাইলের লাইট অন করল। বেশ আলোকিত হলো লিফট।

মেয়েটি দুচোখে ভয়ার্ত আতঙ্কে একটু নড়েচড়ে দাঁড়াল। আশিক বুঝতে পারল, মেয়েটি শঙ্কিত, ভীতসন্ত্রস্ত। যেন তার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে এই অন্ধকার বন্দিশালায়। আশিক লিফট ইন্টারকমের বাটন টিপল।

: হ্যালো। হ্যালো লিফটম্যান। হ্যালো হ্যালো।

আশিক ইন্টারকম বক্সে কারো কোনো সাড়াশব্দ পেল না। সিকিউরটি রমিজ  শপিং মলের আন্ডারগ্রাউন্ড কার পার্কিং থেকে একজনের গাড়ি বিদায় করছে। লিফটে বন্দি আশিক চিৎকার করে বলছে

: কে আছ, লিফটের দরজা খোলো। আমরা আটকা পড়েছি।

সিকিউরিটির কানে তখনো আওয়াজ পৌঁছেনি। আশিক লিফটের দরজায় ডান হাতে অনবরত ঘুষি মারছে আর বলছে

: আমরা লিফটে আটকা পড়েছি। কে আছ, জেনারেটর চালু করো। নয়তো লিফট ভেঙে ফেলব। ভেঙেই ফেলব।

আশিকের এই আর্তচিৎকারে বিমর্ষ মেয়েটি। সিকিউরিটির কানে আওয়াজ পৌঁছল। দ্রুত সিকিউরিটি লিফট ইন্টারকম বাটন টিপে বলে

স্যার স্যার, আমি মার্কেট সিকিউরিটি রমিজ।

: তোমাদের লিফটম্যানকে বলো  জেনারেটর চালু করতে।

: স্যার, লিফটম্যান করিম ভাই তো সন্ধ্যাবেলা বাইত চইলা গেছে।

: তুমি তাড়াতাড়ি জেনারেটর চালু করো।

: কেমনে চালু করুম স্যার, সারা দিন তিনবার কারেন্ট গেছে। জেনারেটরে তেল নাই।

: লিফটের চাবি নিয়ে, তুমি লিফট ফ্লোর লেভেলে এনে দরজা খুলে আমাদের দুজনকে বের করো।

: স্যার লিফটের চাবি তো লিফটম্যান করিম ভাইয়ের কাছে থাকে। যাইবার সময় কইলো, মার্কেট বন্ধ হইলে লিফটের কারেন্ট পাওয়ার যেন আমি অফ কইরা দেই।

তোমার করিম ভাইকে ফোন করে লিফটের চাবি নিয়ে আসতে বলো।

: আইচ্ছা, ফোন দিতাছি স্যার। চিন্তা কইরেন না।

আশিক লক্ষ করল, মেয়েটি গরমে ঘামছে। আশিক একা মনেই বলল

: উহ্! এই গরমে টিকব কী করে?

মেয়েটি আঁতকে উঠল

: অ্যাঁ! তাহলে?

লিফটের ইন্টারকম বেজে উঠল। আশিক দ্রুত ঘুরে তাকল লিফটের সাউন্ড বক্সের দিকে।

: হ্যাঁ, করিম মিয়া আসছে তো?

সিকিউরিটি রমিজ বলল

: না স্যার। ম্যালা চেষ্টা করলাম, করিম ভাইয়ের মোবাইল বন্ধ।

আশিক উদ্বিগ্ন স্বরে বলল

: হোয়াট!

শব্দ শুনে মেয়েটি আচমকা বলে উঠল

: হায় আল্লাহ, এখন উপায়!

রমিজ মিয়া বলল

আল্লাহ ভরসা। এক ঘণ্টার মধ্যেই কারেন্ট চইলা আসবো। তার পরেও আমি বিদ্যুৎ অফিসে খবর লইতাছি।

আশিকের মোবাইল আলোয় কী অদ্ভুত ঐন্দ্রজালিক অন্ধকার লিফটের চার দেয়ালের ভেতরে চৈত্রদাহে পুড়ছে, দুজন অচেনা-অজানা লিফটযাত্রী।

এক ঘণ্টার লোডশেডিং হলে বিদ্যুৎ আসতে এখনো চল্লিশ মিনিট বাকি। কতক্ষণ আর লিফটে দাঁড়িয়ে থাকা যায়। মেয়েটি শপিং ব্যাগগুলো নিয়ে লিফটে বসে পড়ল। আশিকও বসে লম্বা করে পা মেলে দিল। আশিক লক্ষ করল, মেয়েটি শপিং ব্যাগ থেকে একটি পণ্যের প্যাকেট বোর্ড ছিঁড়ে হাতপাখা করে বাতাস তুলে নিচ্ছে তার গায়ে। গরমে হিজাব-নেকাব ভিজে একাকার। আশিক তার কাঁধে ঝোলানো লেদার সাইড ব্যাগ থেকে মিনারেল ওয়াটারের বোতলটা বের করে মেয়েটির দিকে এগিয়ে দিল। মেয়েটি হাত বাড়িয়ে দিয়ে, কী যেন ভেবে হাতটা সরিয়ে নিল। আশিক ব্যাপারটা বুঝে বোতলের কক খুলে সামান্য পানি নিজে মুখে ঢেলে নিল। মেয়েটির মনে যেন একটা বিশ্বস্ততা ফুটে উঠল অজানা আশিকের প্রতি। এবার মেয়েটি হাত বাড়িয়ে মিনারেল বোতলটি ধরতেই চমকে উঠল, আশিকের হাতের আঙুল ফেটে তরতর করে রক্ত ঝরে পড়ছে। মেয়েটি পানির বোতলটা নিয়ে লিফটের ফ্লোরে রেখে দ্রুত তার মুখে আবৃত সাদা নেকাবটা টান দিয়ে খুলে আশিকের রক্ত ঝরা আঙুলে পেঁচিয়ে দিতে উদ্যত হলে আশিক হাত সরিয়ে নিয়ে খুব বিনয়ের সুরে বলে

: য়ু হু। আগে আপনার গলাটা ভিজিয়ে নিন।

মেয়েটি বোতল তুলে ঢকঢক করে পানি খেয়ে নেকাব দিয়ে আশিকের রক্ত ঝরা আঙুল পেঁচিয়ে বেঁধে দিল। আশিক এক অনন্যা অপ্সরী সুন্দরী নারীর রূপে অভিভূত হলো।। সহসা একটা নিষ্পাপ সুন্দর যেন আশিকের মনকে এই বন্দিত্বের কথা ভুলিয়ে দিল। মেয়েটিকে বলল

: আমি আশিক। আপনি?

: নাজমা!

: তো, এত প্যাকেট, কী শপিং করলেন?

: গায়েহলুদের কিছু সামগ্রী।

: ও! আপনার গায়েহলুদ?

: জি না। ছোট বোন সূচনার কাল হলুদসন্ধ্যা।

: তো, সাথে কেউ আসেনি?

: বাবা নেই। মা বুড়ো মানুষ!

: সূচনা?

: সামান্য কটা আইটেম, ভাবলাম একাই পারব।

: আপনার হাজব্যান্ড?

: জি!

নাজমা আঁতকে উঠল। আশিক বলল

: চমকে উঠলেন যে!

: এমনি।

: না...বলছিলাম, ছোট বোনের বিয়ে, আপনার হাজব্যান্ডকে নিয়ে...

: নেই।

: নেই, মানে ছোট বোনকে বিয়ে দিয়ে তারপর...

: বিয়ে, ঘর-সংসারএসব নিয়ে আর ভাবছি না।

: কেন?

: ব্যাপারটা কোথায় যেন একটু কমপ্লিকেটেড মনে হচ্ছে। তাহলে কি আপনার হাজব্যান্ড...

: ছিল।

: তো, এখন উনি...

আশিক লক্ষ করল, নাজমার চোখ ভিজে যাচ্ছে। যেন জীবনের কোনো একটা অতৃপ্ত গল্প লুকানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছে। সহসা আশিকের মোবাইল বেজে উঠল। রিসিভ করল

: হ্যালো, মা। এইতো একটা জায়গায়। কারেন্ট এলেই চলে আসব। জি। জি মা।

আশিক মোবাইল বন্ধ করল

: বিপদে আছেন, মাকে বুঝতে না দিয়ে ভালোই করেছেন। আমার মা আর সূচনা হয়তো আমাকে ফোন দিয়ে পাচ্ছে না।

: সঙ্গে মোবাইল আনেননি।

: চার্জ নেই।

 

 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ