ঢাকা, শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫
৩ শ্রাবণ ১৪৩২, ২২ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫
৩ শ্রাবণ ১৪৩২, ২২ মহররম ১৪৪৭

কেমন আছেন হাসান আজিজুল হক

  • সাজ্জাদ বকুল
অন্যান্য
অন্যান্য
শেয়ার
কেমন আছেন হাসান আজিজুল হক
পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের যবগ্রামে নিজ জন্মভিটায় স্মৃতি হাতড়ে ফিরছেন হাসান আজিজুল হক। ছবি : লেখক, এপ্রিল ২০১৮

কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক গত ফেব্রুয়ারিতে বিরাশিতে পা দিলেন। তাঁর মতো সৃষ্টিশীল মানুষের জন্য এই বয়স অবশ্য তেমন কিছুই নয়। ২০১৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আমরা রাজশাহীবাসীর পক্ষ থেকে যখন তাঁর ‘৮০তম জন্মোৎসব’ আয়োজন করি, তার আগের বছর এপ্রিলে আমার সুযোগ হয়েছিল স্বয়ং হাসান আজিজুল হকের সঙ্গে তাঁর জন্মস্থান পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের যবগ্রাম ঘুরে আসার। লাল, রুক্ষ মাটির রাঢ়বঙ্গে জন্ম হলেও হাসান আজিজুল হকের মনটা সব সময়ই শিশুদের মতো কোমল।

সে সময় আরেকবার তাঁর পরিচয় পেয়েছিলাম। মানুষকে যে কী ভালোবাসেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও এই কিংবদন্তি গল্পকার! আমার সঙ্গে আরো একবার যবগ্রামে, কাটোয়ায় যেতে চেয়েছিলেন তিনি।

কিন্তু করোনা মহামারি সব ওলটপালট করে দিল। সেই যে গত বছর মার্চের পর থেকে গৃহবন্দি হয়ে পড়লেন, তারপর আর ঘর থেকে বের হওয়া হলো না প্রচণ্ড আমুদে এই মানুষটির।

রাজশাহীর কাটাখালীর কাছে বিহাসে নিজ হাতে গড়া বাসা ‘উজান’-এ শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে যে জমাট আড্ডায় মেতে থাকতেন, সেটাও বন্ধ হয়ে গেল।

এরই মাঝে কখন যে তাঁকে বিষণ্নতার পুরনো ব্যামো আবার কাবু করে ফেলেছে তা টের পাইনি আমরা। মাঝে একবার শরীরে র‌্যাশের মতো হয়েছিল। সেখান থেকে যদিও কিছুটা সুস্থ হলেন, কিন্তু এরপর কানে কম শুনতে লাগলেন।

আমরা টেলিফোন করলে বা তিনি নিজে ফোন করলেও আর কথা বাড়ানোর উপায় থাকত না। গেল আগস্টের মাঝামাঝি হাসান স্যারের ছেলে ইমতিয়াজ হাসান ফেসবুক পোস্টে বিষয়টি জানানোর পর হুলস্থুল পড়ে যায়। হাসান আজিজুল হকের এবারের অসুস্থতার খবরে সবাই উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়লেন।

২১ আগস্ট এই লেখককে জরুরি ভিত্তিতে এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে করে ঢাকায় নেওয়া হয়। সেখানে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে প্রায় ২০ দিন চিকিৎসা শেষে রাজশাহীতে ফেরত আনা হয়।

এর পর থেকে আবারও গৃহবন্দি। এবার শরীরের অবস্থা যা ছিল তাতে যেতে দিতে চাইলেও বাইরে যাওয়া তাঁর পক্ষে আর সম্ভব ছিল না। ফুসফুসে পানি জমায় শ্বাসকষ্ট, খাবারে অরুচির কারণে ধীরে ধীরে খুবই কাহিল হয়ে পড়া—সব মিলিয়ে দাপুটে এই সাহিত্যিক এবার অনেকটাই চলনশক্তিহীন। বাসায় রেখে চিকিৎসা, বিশ্রাম, নিয়ম করে নেবুলাইজ করা, নানা রকম ওষুধ, ইনজেকশন—এসবে যেন ভীষণ ত্যক্তবিরক্ত আড্ডাপ্রিয় এই মানুষটি।

আমি গত প্রায় এক মাসে কয়েকবার গিয়ে দেখেছি, যত দিন যাচ্ছে তিনি যেন আরো বেশি ম্রিয়মাণ হয়ে যাচ্ছেন। ঢাকা থেকে ফেরার পরও প্রথম দিকে হেসে কথা বলেছেন। হিন্দি ‘উমরাও জান’ ছবির ‘দিল চিজ কিয়া হ্যায়’, ‘মাসুম’ ছবির অনুপ ঘোষালের গাওয়া ‘তুঝসে নারাজ নেহি’, কিশোর কুমারের সুরে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া ‘দূর গগন কি ছাঁও মে’ তাঁর খুবই প্রিয় গান। গত কয়েক দফায় দেখতে গিয়ে আবারও শুনিয়েছি গানগুলো, শুনেছেন মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আবার দেখতে যাই। এবার আমার সঙ্গী রাজশাহীর ডায়াবেটিসের ডাক্তার, স্যারের সুহৃদ এফ এম এ জাহিদ। গিয়ে দেখি চেয়ারে বসিয়ে স্যারকে খাওয়ানোর চেষ্টা করছেন তাঁর বড় মেয়ে শুচি আপা। একটা মোতিচুরের লাড়ু থেকে ভেঙে কিছুটা খাওয়ানোর ব্যর্থ চেষ্টা চলছে। আপা জানালেন, বরাবরের মতোই কিছুই খেতে চাচ্ছেন না। খাওয়াতে গেলে বেশ রেগে যাচ্ছেন, মুখ থেকে ফেলে দিচ্ছেন। ডায়াবেটিস স্বাভাবিক আছে। অক্সিজেনও খুব নিয়মিত দিতে হচ্ছে না। তবে নেবুলাইজ করতে হচ্ছে দিনে দুইবার করে। আর পা ফুলে গেছে বেশ কিছুটা।

আমরা জাহিদ ভাইকে দেখিয়ে ‘চিনতে পারছেন কি না’ জানতে চাইলে শান্তশিষ্ট মানুষের মতো স্মিত হেসে অস্ফুট কণ্ঠে বললেন, ‘জাহিদ, তুমি আত্মগোপনের চেষ্টা করছ!’ হাসান আজিজুল হক অসম্ভব স্মৃতিধর মানুষ। বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার নানা জটিলতার মধ্যেও তাঁর স্মৃতিশক্তি যে কতটা প্রখর তা ভাবলে অবাকই হতে হয়। আরো অবাক করা বিষয়, এই মাসখানেক আগেও আমাকে বললেন, ‘এসো, কিছু লেখার চেষ্টা করব।’ হাত নেড়ে বিদায় দিলেন, আমার চলে যাওয়া পর্যন্ত দরজার দিকে তাকিয়ে থাকলেন।

 তাঁর সর্বশেষ যে লেখাটা আমি কম্পোজ করে দিয়ে সহযোগিতা করছিলাম তার নাম তিনি দিয়েছেন ‘মাটির বাড়ি : যতোদিন চন্দ্র, সূর্য’। যবগ্রামে তাঁর বাবার মাটির বাড়ি বানানোর গল্প সেটি। কিন্তু কিছুদূর এগিয়ে লেখাটি বন্ধ হয়ে যায় করোনার কারণে। জানি না, লেখাটি আর শেষ করতে পারবেন কি না।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

চরিত্রহীন

    রুদ্র অহম
শেয়ার
চরিত্রহীন

একদিন বিবেকবাবু ডাকলেন

বললেন, শোনো, আর যা-ই করো,

তোমার চরিত্র হারিয়ো না কখনো।

শুনে আমি খানিক বিস্মিত হলাম!

বললাম, বিবেকবাবু,

আপনি তো জানেন,

মদ-জুয়া কিংবা পরকীয়া

আমার কিছুতে আসক্তি নেই।

        তাহলে চরিত্র হারাব কিসে?

 

বিবেকবাবু হাসলেন।

বললেন, কিছু মানুষ আছে, যারা

সারাক্ষণ অন্যকে খুশি করতে,

অন্যের প্রিয়পাত্র হতে মত্ত থাকে।

কারোর অপ্রিয় হওয়ার সাহস নেই,

মাথা তুলে দাঁড়াবার মেরুদণ্ড নেই।

 

যেমন পানি। যে পাত্রেই রাখো,

তার আকার নেয়; নিজস্বতা নেই।

যার নিজের রুচি-পছন্দ-ইচ্ছে স্বতন্ত্র,

সে কখনো সকলের প্রিয় হয় না।

আর যে সকলের প্রিয়,

                   তার কোনো চরিত্র নেই।

মন্তব্য

বর্ষারূপ

    আসাদ কাজল
শেয়ার
বর্ষারূপ

অভিনব বর্ষা বুকের ভিতর কাঁদে

সৃষ্টিতত্ত্ব বর্ষার ভিতর চলাচল

বর্ষা বহমান প্রকৃতিতে অবিচল

আমি শুধু পড়ে থাকি স্বপ্নময় ফাঁদে।

 

প্রকৃতির মেঘ দূরে সরে যায়। তবু

প্রণয়সঙ্গিনী মনের ভিতর একা।

বর্ষাভেজা রাতে সংগোপনে দেয় দেখা

বর্ষায় নিভৃতে ডাকি স্বরচিত প্রভু।

 

কদমফুলের মতো তোমার দুচোখ

ভালোবেসে উপেক্ষা করেছি রাজ্য-রাজা

চৈত্র ভুলে পুরনো বর্ষায়যত শোক

ভুলে যাই আমি মনের সমস্ত সাজা।

 

তবু বর্ষা আসে, উদ্যমে গোপন সঙ্গ

বর্ষারূপ আমার ভিতর স্বপ্নভঙ্গ।

 

 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

শান্তি

    ফারুক মাহমুদ
শেয়ার
শান্তি

তোমার বাগান থেকে তুলে আনা দুটি পাকা বীজ

                      রোপণ করেছি বারান্দার টবে

 

অপেক্ষা অপেক্ষা শুধুকবে হবে গাছ

সেই গাছে দুলে দুলে দুলতে থাকবে

শাখাছন্দ, অহরহ অগণিত সবুজ বাতাস

ফুলের প্রকাশ্য মুখ, থেকে থেকে সুরভিত গান

 

কোনো এক পুণ্যপ্রাতে দেখি

বীজ থেকে হতে হতে হয়ে ওঠা গাছে

প্রথম ফুটেছে কলি। মনে হলো তুমি বুঝি এলে

 

চেনা গন্ধ, চারপাশে প্রবাহিত শান্তিসত্যধারা

 

 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য
প্রদর্শনী

আটাশ শিল্পীর নান্দনিকতা

    মোহাম্মদ আসাদ
শেয়ার
আটাশ শিল্পীর নান্দনিকতা
পুরনো ঢাকা শহর। শিল্পী : কামার উদ্দিন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। শিল্পী : মনজুর রশিদ

প্রদর্শনীর মাধ্যমে শিল্পীদের কাজ শিল্পপ্রেমীদের নজরে আসে। বিগত শতাব্দীতে এই গুরুদায়িত্ব শিল্পকলা একাডেমি পালন করত। ছিল কয়েকটি গ্যালারি। সেখানে বিশেষ কিছু শিল্পীই প্রদর্শনীর সুযোগ পেতেন।

অবশ্য সেই সময়ে শিল্পীর সংখ্যাও ছিল কম। এই শতাব্দীর শুরু থেকেই শিল্পকর্ম প্রদর্শনের ব্যাপকতা দেখা যায়। নানা রকম গ্যালারি ও সেন্টারে অনেকে নিজ দায়িত্বে একক প্রদর্শনী করছেন। হাজারো বৈচিত্র্যময় কাজ দেখতে পারছেন শিল্পকলাপ্রেমীরা।
প্রদর্শনীর ব্যয়বাহুল্যের কারণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ শিল্পীর গুরুত্বপূর্ণ সৃষ্টি দৃষ্টির আড়ালে থেকে যায়। সম্প্রতি হয়ে যাওয়া আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ লা গ্যালারিতে এস্থিক বা নান্দনিকতা শিরোনামে ভিন্ন এক প্রদর্শনীর কথা বলছি। ২৮ জন শিল্পীর ৩৩টি কাজ নিয়ে এই আয়োজন। শিল্পীরা সবাই প্রায় এই সময়ের শ্রেষ্ঠ কাজ উপহার দিয়ে চলেছেন।
বৈচিত্র্যপূর্ণ কাজের বিশাল সমাহারে প্রদর্শনীটি আলোকিত হয়ে উঠেছিল।

এই প্রদর্শনীর শিল্পীরা হলেন আবদুল্লাহ আল বশির, আব্দুস সাত্তার তৌফিক, আল-আখির সরকার, আনজুম সুলায়মান, অনুকূল চন্দ্র মজুমদার, আশফাক বাপ্পী, বিপ্লব চক্রবর্তী, বিশ্বজিৎ গোস্বামী, কে জামান শিমুল, কামাল উদ্দিন, কামরুজ্জোহা, কাজী শহীদ, লুত্ফা মাহমুদা, মো. জিয়াউর রহমান, মনজুর রশিদ, মুনতাসির মঈন, নাঈম জামান, নাজিয়া আহমেদ, প্রদ্যুৎ কুমার দাস, রত্নেশ্বর সূত্রধর, রেজাউর রহমান, রুহুল আমিন তারেক, এস এম সাহা, আনিসুজ্জামান ফারুক, সৌরভ চৌধুরী, সুমন ওয়াহেদ, সৈয়দ গোলাম দস্তগীর, ত্রিবেদী গোপাল চন্দ্র গুপ্ত।

বিশাল এই প্রদর্শনীর কোনো আয়োজক প্রতিষ্ঠান নেই। নিজেদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে প্রদর্শনীটির শুরু। তার পরও একজন তো দায়িত্বভার বহন করেছেন।

তিনি হলেন মনজুর রশিদ। তিনি বলেন, একাকিত্বের গানে নির্মল আনন্দ আছে, কিন্তু কখনো কখনো তা একা করে ফেলতেও পারে শ্রোতাকে! দিনশেষে মানুষ মানুষের সাহচর্যই চায় সম্ভবত! একসঙ্গে অনেকে মিলে চলাটা আনন্দের, ঘটে প্রাণের সঞ্চালন! জীবনকে আমরা সহজ সুন্দর করেই উদযাপন করতে চাই। এই ২৮ জন শিল্পীকে একটি স্রোতে এনে দারুণ কিছু করার প্রয়াস মাত্র। ভবিষ্যতেও এই চেষ্টা অব্যাহত থাকবে আশা করি।

কোনো বাণিজ্যিক চিন্তা ছাড়া এমন সুন্দর আয়োজনে শিল্পীরা যেমন উৎসাহিত হবেন, শিল্পকলাপ্রেমীরাও একই সঙ্গে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ দেখতে পারবেন।

 

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ