ঢাকা, মঙ্গলবার ১৫ জুলাই ২০২৫
৩১ আষাঢ় ১৪৩২, ১৯ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, মঙ্গলবার ১৫ জুলাই ২০২৫
৩১ আষাঢ় ১৪৩২, ১৯ মহররম ১৪৪৭

সৈয়দ শামসুল হকের কবিতায় বঙ্গবন্ধু

  • তুহিন ওয়াদুদ
অন্যান্য
অন্যান্য
শেয়ার
সৈয়দ শামসুল হকের কবিতায় বঙ্গবন্ধু
ছবি : মোহাম্মদ আসাদ

সৈয়দ শামসুল হকের কবিতা বিষয়বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর কবিতার বৈচিত্র্যপূর্ণ উপজীব্যের মধ্যে অন্যতম। কবির ভাবলোকে স্থায়ী আসন ছিল বঙ্গবন্ধুর। ফলে তাঁর অসংখ্য কবিতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পাওয়া যায়।

কখনো বিষয় হিসেবে, কখনো বিষয়ের অনুষঙ্গ হিসেবে।

প্রতিবেদন রচনা কিংবা কাহিনিকে অবিকৃত উপস্থাপন কবিতার কাজ নয়। কবিতায় ইতিহাসের ইঙ্গিত, প্রতীক, রূপক সহজ। বিষয়ের বিস্তৃতির পরিবর্তে কবিতায় বিষয়গত রঙের ব্যঞ্জনা অধিক প্রস্ফুটিত।

সৈয়দ শামসুল হকের কবিতায় তাই কবিতার আঙ্গিকে বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতি মেলে। কখনো বিষয়ের ভেতরে বঙ্গবন্ধুর প্রতীকী উপস্থিতি, কখনো ইঙ্গিতধর্মিতায়। ইঙ্গিত-রূপক-প্রতীক-আভাস-এর বাইরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অনেকবার কবিতার বিষয় হয়ে উঠেছেন। সৈয়দ শামসুল হকের কবিতা নিরবচ্ছিন্ন পাঠ করতে থাকলে বঙ্গবন্ধুর স্বতন্ত্র উপস্থিতি সহজেই উপলব্ধি করা যায়।
কবি বঙ্গবন্ধুকে একক চরিত্র হিসেবে যতবার কবিতায় গ্রথিত করেছেন, আর কোনো চরিত্রকে এককভাবে এতবার গ্রথিত করেননি। ইতিহাসের অনেক চরিত্র তাঁর কবিতায় স্থান লাভ করেছে। শাস্ত্রীয় গ্রন্থেরও অনেক চরিত্রকে তাঁর কবিতায় পাই। তবে তা কোনো অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তুলনীয় নয়। কখনো এমন হয়নি যে ইতিহাসের অন্য চরিত্রকে কবিতায় রূপ দেওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধুকে কবিতায় তুলে ধরেছেন।
বরং বঙ্গবন্ধুকে কবিতায় দৃশ্যমান করার জন্য অনেক চরিত্রকে তুলে ধরেছেন। বারো ভুঁইয়া, ঈশা খাঁ, রামপাল, গোপাল, হুসেন শাহ, নূরলদীন, যশোরাজ খাঁ, আব্বাসউদ্দীন, বায়েজিদ বোস্তামি, হযরত মুসা, চাঁদ সওদাগর, সনকা, লখিন্দরসহ অনেক চরিত্র তাঁর কবিতায় প্রাণ লাভ করলেও বঙ্গবন্ধু শীর্ষে। কারণ তিনি বঙ্গবন্ধুকে প্রেরণাদায়ী জ্ঞান করেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চেয়ে বাঙালির ইতিহাসে আর কোনো মহান নেতা নেই। ইতিহাসে তাঁর চেয়ে উজ্জ্বলতর কোনো চরিত্র নেই। দেশের কথা বলতে গেলে বঙ্গবন্ধু তাই অনিবার্যভাবে উঠে এসেছে। বাঙালির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ঘটনা মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের চেয়ে ইতিহাসে আর কোনো প্রভাবক ঘটনা নেই। সেই মুক্তিযুদ্ধের কথা কবিতায় আনয়ন করতে হলেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেখানেও শির উঁচু করে থাকেন। এই মহান ব্যক্তিত্বের করুণ পরিণতি ইতিহাসের সর্বাধিক নগ্ন-ঘৃণ্য ঘটনা। যার সাংগঠনিক নেতৃত্ব একটি দেশ এনে দিয়েছিল, তাঁকেই যখন স্বাধীন দেশের মাটিতে রক্তাক্ত করা হয়, নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়—তখন দেশবোধসম্পন্ন মানুষের পাথরশোকে নিমজ্জিত হওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প থাকে না। ফলে ইতিহাস আশ্রিত, দেশবোধনির্ভর চেতনাসমৃদ্ধ কবির সৃষ্টিতে অবলীলায় অবিরল ঝরনাধারার মতো উঠে আসেন বঙ্গবন্ধু।

সৈয়দ শামসুল হকের জনপ্রিয় এবং বহুলপঠিত একটি কবিতা থেকে বঙ্গবন্ধুপ্রীতির প্রথম দৃষ্টান্ত দেওয়া যেতে পারে। এ কবিতার নাম ‘আমার পরিচয়’। কবিতাটিতে কবি নিজের পরিচয় দিয়েছেন জাতিগত পরিচয়। ইতিহাসের পারম্পর্য এখানে বিধৃত। ইতিহাসের দীর্ঘ বয়ান শেষে কবি এখানে বঙ্গবন্ধুর কথা লিখেছেন। বাঙালির সমৃদ্ধ ইতিহাসের বর্ণনায় কবি তিতুমীর, হাজী শরীয়ত উল্লাহ, ক্ষুদিরাম, সূর্য সেন, জয়নুল, অবনঠাকুরের কথা বলেছেন। ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতাঞ্জলি, কাজী নজরুল ইসলামের অগ্নিবীণার কথা বলেছেন। সেই ইতিহাস কবি কিছুতেই ভুল যেতে পারেন না। এর কারণ হিসেবে তিনি লিখেছেন—

এই ইতিহাস ভুলে যাবো আজ, আমি কি তেমন সন্তান?/যখন আমার জনকের নাম শেখ মুজিবুর রহমান,/তাঁরই ইতিহাস প্রেরণায় আমি বাংলা পথ চলি—/চোখে নীলাকাশ, বুকে বিশ্বাস পায়ে উর্বর পলি। ‘আমি সাক্ষী’ শীর্ষক কবিতায় ও কবির অভিন্ন চিন্তার প্রতিচ্ছবি লক্ষ করা যায়। বঙ্গবন্ধুর প্রেরণায় পথচলার কথা এ কবিতাতেও বিধৃত। এ কবিতায় কবি লিখেছেন—‘তবুও পথিক আমি, কবি আমি,/সৃষ্টিশীল এখনো আমি,/এখনো যে অগ্রসর হয়েই চলেছি,/নবান্নর ঘ্রাণডাক বাঙালির প্রাঙ্গণের দিকে,/সে কেবল তাঁরই প্রেরণায়—।

‘মুজিবের শাদা পায়রাটি’ শীর্ষক কবিতায় কবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্থান-কাল নিরপেক্ষ করে উপস্থাপন করেছেন। পৃথিবীর বুকে যেকোনো স্থানে স্বাধীনতার কথা বলার মধ্যে কবি নিজেদের খুঁজে পান। নিজেদের মুক্তি এবং স্বাধীনতাকেই দেখেন। মুজিবকে ধারণ করেই লেখকের শক্তিমান হয়ে ওঠার ইঙ্গিত এখানে লক্ষণীয়। কবির ভাষায়—‘মুজিবের চাদর আমরা গায়ে নেব জড়িয়ে,/উত্তাপে বিশাল হয়ে উঠবো, স্বপ্নের ভূমিতে সুস্থির।/আমাদের হাতে থাকবে মানুষেরই হাতের গ্রন্থন—/করতল ও হাতের মুদ্রা থেকে বেরিয়ে আসবে/সেই শাদা শাদা পায়রাটি আবার,/মুজিবের হাত থেকে/একদিন যে উড়েছিলো বাংলার আকাশে/এবং অনূদিত হয়েছিল অক্ষর দুটি শব্দে/মুক্তির সংগ্রাম ও স্বাধীনতা।’

‘মুজিবের রক্তাক্ত বাংলায়’ শীর্ষক কবিতার শেষ চরণে মুজিবের কথা উঠে এসেছে। সম্পূর্ণ কবিতায় তিনি নিজেকে বিভিন্ন সময়ের মধ্যে গেঁথে দিয়েছেন। দেশের কথা বলার লক্ষ্যেই কবিতার পঙক্তিগুলো সাজিয়েছেন। কবিতার শেষ চরণে এসে তিনি কবিতাটিকে মুড়িয়ে দিয়েছেন এমনভাবে যেন সর্বত্রই তখন মুজিবের উপস্থিতি জ্বলজ্বল করতে থাকে। কবিতার শেষাংশের পাঠ পুনর্ভাবনার জন্ম দেয়। কবিতাটির সামষ্টিক অর্থবিন্যাসে মুজিব অবিচ্ছেদ্য হয়ে ওঠেন। কবি লিখেছেন—‘তাঁর পদচিহ্ন থেকে জাত আমি,/গরীবুল্লাহ, আবদুল হাকিম/বসে আছি/নিহত পয়ার কোলে মুজিবের রক্তাক্ত বাংলায়। কবিতার সৌষ্ঠব অবিকৃত রেখে কবিতায় বঙ্গবন্ধুকে রূপ দিয়েছেন সৈয়দ শামসুল হক। কবিতার শিরোনামের মধ্যেই মুজিবের ঘোষণা আছে। কবিতার ভেতরে তার সন্ধান পেতে পাঠ করতে হয় শেষ চরণাবধি।

সৈয়দ শামসুল হক যখন বাংলাদেশকে বিপথগামী হতে দেখেছেন তখন বাংলাদেশকে তার নিজস্ব গতিসৌন্দর্যে প্রত্যাবর্তন করার আহবান জানিয়েছেন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে সামরিক বাহিনীর বুলেটে ক্ষতবিক্ষত ছিল বাংলাদেশ। বিপন্ন ছিল গণতন্ত্র। স্বাধীনতার অর্থও মুহ্যমান হয়েছিল। এমন সময়ে কবিতাশিল্পের মাধ্যমে কবি বাংলাদেশকে ফিরে আসার আহবান জানিয়েছিলেন। সেই আহবান গভীর আবেগের, অন্তহীন ভালোবাসার। সেখানে তিনি বঙ্গবন্ধুর কথা বলেছেন। কবির ভাষায়—ফিরে এসো, বাংলাদেশ,/ফিরে এসো লৌহিত্য নদের কিনারে,/ফিরে এসো মানুষের মিছিলে আবার,/ফিরে এসো যোদ্ধার পেশীতে তুমি,/ফিরে এসো মুজিবের কণ্ঠস্বরে,/ফিরে এসো রবীন্দ্রনাথের গানে,/নজরুলের আগুনে আবার,/ফিরে এসো বাংলাদেশ, আমার মিনতি,/ফিরে এসো লৌহিত্য নদের কিনারে।’

টুঙ্গিপাড়ায় বসে সৈয়দ শামসুল হক লিখেছেন ‘বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে’ কবিতাটি। ‘যেন পথই টেনে নিয়ে এলো এই পল্লীটিতে’ লেখার মধ্য দিয়ে কবি বঙ্গবন্ধুর প্রতি নিজের অকৃত্রিম অন্তর্গত টানের কথাই উচ্চারণ করেছেন। কবিতায় কবি বঙ্গবন্ধুকে উপজীব্য করেছেন। দূরবর্তী ইঙ্গিতধর্মিতার পরিবর্তে এখানে কবি বিষয়ঘনিষ্ঠ হয়েছেন। কবিতার পরতে পরতে পতপত করে উড়ছে বঙ্গবন্ধু। ১৯৯৪ সালেও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সরব হওয়ার মতো উপযুক্ত পরিবেশ প্রস্তুত হয়নি। যারা বঙ্গবন্ধুকে মেরে ফেলেছে, বঙ্গবন্ধুর প্রদর্শিত পথকে বন্ধুর করে তুলেছে ‘বিষ্ঠায় পতিত হবে অচিরে তারাই’ বলে মন্তব্য করেছেন কবি। ভবিতব্য সম্পর্কে কবিতার বাণীবিন্যাস তার যথার্থই ছিল। সময় তার সাক্ষী।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা বাঙালি জাতির চূড়ান্ত অবক্ষয়ের দৃষ্টান্ত। একটি দেশের আক্ষরিক অর্থেই যিনি স্থপতি, তাঁকেই নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তাঁর এই হত্যাকাণ্ড জনমনে গভীর ছাপ ফেলে গেছে। বঙ্গবন্ধুপ্রেমী কবি-সাহিত্যিকরা কেউই এই বিষয় নিয়ে লেখার মাধ্যমে প্রতিবাদ জানাতে ভোলেননি। সৈয়দ শামসুল হক অসংখ্য কবিতায় সে কথা লিখেছেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। কবি এই সময় সম্পর্কে মূল্যায়ন করেছেন ‘দাঁতালের ছাল’। ‘আমি সাক্ষী’ কবিতাটি সৈয়দ শামসুল হক বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু নিয়ে লিখেছেন। কবির ভাষায়—‘আমি সাক্ষী। লিখে রেখো এ আমার নাম।/তেরোশ’ বিরাশি সন। মেঘার্ত শ্রাবণ। শেষ রাত।/অকস্মাৎ! —বৃষ্টি নয়, ঘটে গেলো রাষ্ট্রস্বপ্ন থেকে রক্তপাত। ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের মতো ব্যাপ্ত ছিল যাঁর বুক/বিদ্ধ হলো উত্তপ্ত বুলেটে।/দেহ শুধু দেহ নয়—ইতিহাস, মূল্যবোধ, শ্রেয়—/ভেসে গেলো বাংলাদেশ রক্তের প্লাবনে—/অন্তিম শয়ানে। এ কবিতায় হাজার বছরের পথ ধরে বয়ে আসা সময়ের বুকে বঙ্গবন্ধু কিভাবে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন তারও বয়ান আছে।

মুজিবের প্রতি সৈয়দ শামসুল হকের বিশেষ উপলব্ধি ছিল। আর এই উপলব্ধি মূলত দেশবোধজাত। আর তারই ছায়া-প্রতিচ্ছায়া বারবার পড়েছে কবিতার আঙিনায়। কবির ভাবলোকে যেসব অনুষঙ্গ প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অন্যতম। কবির সুদীর্ঘ কাব্যবলয়ে বঙ্গবন্ধু যতবার যতভাবে এসেছেন, তা বৃহৎ পরিসরে গবেষণার দাবি রাখে। নিশ্চয়ই সেই গবেষণা আগামীতে হবে। কবিকে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম দেখতে চাইলে এসব অনুষঙ্গের বিশ্লেষণ জরুরি। কবির পঞ্চম প্রয়াণবার্ষিকী স্মরণে কবিকে পাঠকের পক্ষে বিনীত স্মরণ।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

বই আলোচনা

মাশির হোসেন হিরু স্মারকগ্রন্থ বিস্মৃতি থেকে স্মৃতিতে

শেয়ার
মাশির হোসেন হিরু স্মারকগ্রন্থ বিস্মৃতি থেকে স্মৃতিতে

সাংবাদিক মাশির হোসেন, যিনি হিরু ডাকনামে অধিক পরিচিত। তাঁর আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী ও সুধীজনের কাছে তিনি স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। প্রায় দুই দশক পরেও তাঁরা তাঁকে ভুলে যাননি; মনে রেখেছেন। মুস্তাফা মজিদ সম্পাদিত মাশির হোসেন হিরু স্মারকগ্রন্থ : বিস্মৃতি থেকে স্মৃতিতে তারই প্রমাণ।

মায়ানমারের ইয়াঙ্গুনে জন্মগ্রহণ করলেও তাঁর শৈশব কাটে ঢাকার আর্মানিটোলায়, পরবর্তীতে শান্তিনগরে। স্বাধীনচেতা মাশির হোসেন তাই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন সাংবাদিকতা। শুরু করেন স্পোর্টস রিপোর্টার হিসেবে। ভাষা আন্দোলনে ছিল তাঁর সক্রিয় অংশগ্রহণ।

সাংবাদিকতার পাশাপাশি দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজের বিভিন্ন অসংগতি নিয়েও তিনি সোচ্চার ছিলেন।

স্মারকগ্রন্থের সম্পাদক মুস্তাফা মজিদ বলেছেন, অন্য অনেক স্মারকগ্রন্থের মতো মাশির হোসেন হিরু স্মারকগ্রন্থও সাদামাটা, যা ভালোবাসার মানুষদের স্মৃতিচারণাই। যদিও কোনো কোনো বৃহৎ ঘটনার পুনরাবৃত্তি করেছেন কেউ কেউ, তা সত্ত্বেও তার ভেতরেই ফুটে উঠেছে এক অনন্য অকৃত্রিম দরদ এবং মাশির হোসেনের চরিত্রের নানা দিক, যা তাঁকে নতুন আলোয় উদ্ভাসিত করেছে বর্তমান প্রজন্মের মানুষদের মাঝে; বিশেষত সাংবাদিকতাজগতে যাঁরা এ প্রজন্মের, যাঁদের অনেকেই মাশির হোসেনকে ব্যক্তিগতভাবে দেখেননি এবং চেনেন না। তিনি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন এই গ্রন্থে যাঁরা লিখেছেন তাঁদের সবাইকে।

এই স্মারকগ্রন্থে লিখেছেন আমানউল্লাহ, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, এরশাদ মজুমদার, আবুল কাসেম ফজলুল হক, মুহাম্মদ কামরুজ্জামান, মনোয়ার হোসেন, লুত্ফুর রহমান, সৈয়দ দীদার বখত, দীপা দত্ত (সেন), গোলাম তাহাবুর, ড. মাহবুব উদ্দীন চৌধুরী, ইকবাল সোবহান চৌধুরী, রফিকুর রহমান, কাজিম রেজা, আব্দুল আউয়াল ঠাকুর, এ কে এম মহসিন, এলাহী নেওয়াজ খান, আহমদ আখতার, কাজী রওনাক হোসেন, মমতাজ বিলকিস, মারুফ কামাল খান, খায়রুল আনোয়ার, সৈয়দ আবদাল আহমদ, ফজলুল বারী, মোস্তফা কামাল মজুমদার, শওকত মাহমুদ, বুলবুল আহমেদ, মাহমুদ শফিক, শওকত আনোয়ার প্রমুখ।

এ ছাড়া আছে মাশির হোসেন হিরুর লেখা, জীবনবৃত্তান্ত ও কিছু দুর্লভ আলোকচিত্র, যা এই গ্রন্থকে আরো আকর্ষণীয় করেছে। আশা করি, মাশির হোসেন হিরুকে জানতে স্মারকগ্রন্থটি নতুন প্রজন্মকে সাহায্য করবে।

রিহাম হাসান

 

মন্তব্য
পাঠকের প্রিয় বই

যেন কারো একান্ত গোপন চিঠির খাম খুলেছি

    তাওহীদাহ্ রহমান নূভ, বাংলা বিভাগ, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
শেয়ার
যেন কারো একান্ত গোপন চিঠির খাম খুলেছি

চিঠিপত্র তো ব্যক্তিমানসের মুকুর। কেবল এই মুকুরকেই কাজে লাগিয়ে রচিত হতে পারে অনবদ্য কোনো উপন্যাস, এটা হয়তো বুদ্ধদেব গুহর আগে ভাবেননি কোনো কথাকার। শুধু আঙ্গিকেই নয়, বহু দিক থেকে নতুন মাত্রা যোগ করেছে সবিনয় নিবেদন নামের চমৎকার এই উপন্যাস। শিক্ষিত, স্বাবলম্বী ও উদারমনা এক নারী ঋতার সঙ্গে বেতলার জঙ্গলে এক চরম বিপন্ন মুহূর্তে একঝলক দেখা হয়েছিল ঝকঝকে, ব্যক্তিত্ববান অফিসার রাজর্ষি বসুর।

এরপর শুরু হয় দুজনের পত্রবিনিময়। শেষ হয় এই বিনিময়েই।

যেন কারো একান্ত গোপন চিঠির খাম খুলেছিসবিনয় নিবেদন-এর মতো বই পড়া যেন এক ধরনের নীরব সাধনা। যেন কারো একান্ত গোপন চিঠির খাম আমি খুলে বসেছি, যার ভাঁজে ভাঁজে জমে আছে অভিমান, ব্যথা, অরণ্যের ঘ্রাণ আর অপ্রকাশিত ভালোবাসা।

এ উপন্যাস কাহিনি নয়, চরিত্র নয়এ যেন এক দীর্ঘ আত্মালেখ্য, যা পাঠকের হৃদয়ের দরজায় কড়া নাড়ে শব্দহীনভাবে।

প্রথম থেকেই মনে হয়েছে, উপন্যাস পড়ছি, না একটি রাগপ্রবণ, বেদনাঘন রাগিণী শুনছি। যেন এক পিয়ানো, যার কিছু চাবি বাজে না, কিছু অতিরিক্ত সুর তুলে দেয়। বুদ্ধদেব গুহর ভাষা এতটাই স্বচ্ছ ও জীবন্ত যে চরিত্রের চোখের জলও যেন স্পষ্ট অনুভব করা যায়।

সেই জল শুধু দুঃখের নয়; তাতে মিশে থাকে স্মৃতির অনুতাপ, সৌন্দর্যের শোক এবং অমোঘ অভিজ্ঞতার মৌন সম্মতি।

প্রতিটি পৃষ্ঠা যেন একটি কুয়াশাময় সকালঅস্পষ্ট, কিন্তু অনুভবে পরিপূর্ণ। সম্পর্ক এখানে নদীর মতোপ্রবহমান, বাঁক নেয়, স্রোতের নিচে পাথর লুকিয়ে থাকে। লেখকের অভিজ্ঞতা থেকে উঠে আসা অনুভবগুলো এমনভাবে বিন্যস্ত, যেন পাঠকের আত্মজগতে আয়না ধরে রাখা হয়েছে, যেখানে নিজের ভেতরের চেহারা ধরা পড়ে, যেটা আমরা অনেক সময় এড়িয়ে যাই। ভালোবাসার বর্ণনা এ উপন্যাসে কোনো একপেশে আবেগে সীমাবদ্ধ নয়।

তা কখনো নৈঃশব্দ্য, কখনো দূরত্ব, আবার কখনো নিঃশর্ত প্রতীক্ষার মতো হয়ে ওঠে। বিচ্ছেদের ব্যথা এখানে করুণ নয়, বরং দার্শনিকএক ধরনের মেনে নেওয়া, যেন জীবন থেকেই শেখা যায় কিভাবে না-পাওয়া জিনিসও একদিন আপন হয়ে ওঠে স্মৃতির মাধ্যাকর্ষণে। ভাষার সৌন্দর্য এই উপন্যাসের সবচেয়ে অনন্য বৈশিষ্ট্য। কোথাও তা অরণ্যের মতো জটিল, কোথাও নদীর মতো স্বচ্ছ, কোথাও বা মৃত পাখির পালকের মতো হালকা ও বেদনাবিধুর। উপমা, ইঙ্গিত ও নৈঃশব্দ্য মিলিয়ে বুদ্ধদেব গুহ এক অন্তর্লোক নির্মাণ করেছেন, যেখানে পাঠক শুধু পাঠ করে না; অংশগ্রহণ করে।

গ্রন্থনা : পিন্টু রঞ্জন অর্ক

 

 

মন্তব্য
বিশ্বসাহিত্য

জার্মান লেখক সেবাস্টিয়ান হাফনারের উপন্যাসের চমক

শেয়ার
জার্মান লেখক সেবাস্টিয়ান হাফনারের উপন্যাসের চমক

সম্প্রতি প্রকাশ করা হয়েছে জার্মান সাংবাদিক, ইতিহাসবিদ ও লেখক সেবাস্টিয়ান হাফনারের উপন্যাস আবসিড বা বিদায়। হাফনারের জন্ম ১৯০৭ সালে, মারা যান ১৯৯৯ সালে। আবসিড বা বিদায় নামের উপন্যাসের পাণ্ডুলিপি পাওয়া যায় প্রয়াত লেখকের ড্রয়ার থেকে। উপন্যাসটি লেখা হয় ১৯৩২ সালের ১৮ অক্টোবর থেকে ২৩ নভেম্বরের মধ্যে।

এ উপন্যাস উনিশ শ ত্রিশের দশকের শুরুতে লেখা হলেও তখন প্রকাশ করার মতো পরিবেশ ছিল না। হাতে লেখা পাণ্ডুলিপিটি ড্রয়ারে পান হাফনারের ছেলে অলিভার প্রেটজেল। এ উপন্যাসের কাহিনিতে বলা হয়েছে দুই নারী-পুরুষের ভালোবাসার কথা। ভিয়েনার ইহুদি মেয়ে টেডি এবং বার্লিনের আইনপড়ুয়া অ-ইহুদি ছেলে রাইমান্ডের প্রেমপূর্ব সাক্ষাৎ হয় ১৯৩০ সালে বার্লিনে।
বার্লিন ও প্যারিসে তাদের একসঙ্গে কাটানো সময় নিয়েই তৈরি হয়েছে উপন্যাসের অবয়ব। একটা টান টান উত্তেজনাপূর্ণ সময়কে ধরা হয়েছে এ উপন্যাসে। হাফনারের আসল নাম রাইমান্ড প্রেটজেল। জন্ম বার্লিনে।
নাৎসি আমলের প্রাক্কালে ১৯৩৮ সালে তিনি লন্ডন চলে যান। লন্ডনে অবস্থানকালে তিনি নাম পরিবর্তন করেন, যাতে জার্মানিতে অবস্থানরত পরিবারের অন্য সদস্যরা তাঁর কারণে নির্যাতনের শিকার না হন। এ উপন্যাসের জন্য প্রকাশের সময় প্রাক্কথন লিখে দিয়েছেন জার্মান সাহিত্য সমালোচক ভলকার ওয়েডারম্যান। তিনি মনে করেন, উনিশ শ ত্রিশের দশকে প্রকাশ না করার অন্যতম কারণ হলো, পাঠকের কাছে হাফনারের সে সময়ের ব্যক্তিত্বের সঙ্গে এ উপন্যাস বেশ বেমানান মনে হতো।

এ বছর এ উপন্যাস প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে জনপ্রিয় হওয়ার কারণ হলো, এখানে ইতিহাসের খুব কঠিন সময়ের সাদামাটা জীবনের গল্প বলা হয়েছে।

যুদ্ধের প্রাক্কালে সাধারণ মানুষের জীবন কেমন ছিল তা জানার জন্য বর্তমানের পাঠকদের কৌতূহল জেগেছে বলেই তাঁরা এটা এতটা পছন্দ করেছেন। আরো একটি কারণ হলো, দৈনন্দিন জীবনের জটিলতার সঙ্গে বর্তমান সময়ের রাজনীতিও জটিল হচ্ছে। পাঠকের কাছে রাজনীতিও আগ্রহের বিষয় হয়ে উঠছে।

ফাহমিদা দ্যুতি

 

মন্তব্য

এক ঘণ্টা

    জামান আখতার
শেয়ার
এক ঘণ্টা
অঙ্কন : তানভীর মালেক

রাত সাড়ে আটটায় ঢাকা শহরের সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায় সরকারি আদেশমতো।

সিটি শপিং মলের আটতলার সব দোকান আটটায় দ্রুত বন্ধ করে দিচ্ছে। ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই লিফট-সিঁড়ি বেয়ে নেমে শপিং মল ত্যাগ করছে। গ্রাউন্ড ফ্লোরে সিকিউরিটি গেটে সবার চলে যাওয়ায় সহযোগিতা করছে।

কাল মার্কেট সাপ্তাহিক বন্ধ।

রাত সাড়ে আটটা বাজার কিছুক্ষণ আগে ছয়তলা থেকে হন্তদন্ত হয়ে মাস্ক পরা এক স্মার্ট যুবক আশিক লিফটে চড়ে ডোর ক্লোজ বাটন টিপে ঘুরে দাঁড়াল। দেখল, লিফটের কোনায় কিছু শপিং ব্যাগ হাতে একটু ঘুরে দাঁড়ানো সালোয়ার-কামিজ হিজাব-নেকাব পরা এক যুবতি।

লিফট নিচে নামতেই সহসা একটা শব্দ করে থেমে গেল।

অন্ধকার হলো লিফট। মেয়েটি আঁতকে উঠে ঘুরে তাকাল

: কী হলো?

অস্ফুট স্বরে আশিক বলল

: কারেন্ট চলে গেল।

: লোডশেডিং!

: ভয় পাবেন না। জেনারেটর ছাড়লেই লিফট চলবে।

সিঁড়ি বেয়ে সবাই নেমে শপিং মল ত্যাগ করল। মার্কেট শূন্য। শুধু অন্ধকার লিফটের ভেতরে আটকা পড়ে আছে আশিক আর একটি রক্ষণশীল নারী।

আশিক তার মাস্ক খুলে মোবাইলের লাইট অন করল। বেশ আলোকিত হলো লিফট।

মেয়েটি দুচোখে ভয়ার্ত আতঙ্কে একটু নড়েচড়ে দাঁড়াল। আশিক বুঝতে পারল, মেয়েটি শঙ্কিত, ভীতসন্ত্রস্ত। যেন তার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে এই অন্ধকার বন্দিশালায়। আশিক লিফট ইন্টারকমের বাটন টিপল।

: হ্যালো। হ্যালো লিফটম্যান। হ্যালো হ্যালো।

আশিক ইন্টারকম বক্সে কারো কোনো সাড়াশব্দ পেল না। সিকিউরটি রমিজ  শপিং মলের আন্ডারগ্রাউন্ড কার পার্কিং থেকে একজনের গাড়ি বিদায় করছে। লিফটে বন্দি আশিক চিৎকার করে বলছে

: কে আছ, লিফটের দরজা খোলো। আমরা আটকা পড়েছি।

সিকিউরিটির কানে তখনো আওয়াজ পৌঁছেনি। আশিক লিফটের দরজায় ডান হাতে অনবরত ঘুষি মারছে আর বলছে

: আমরা লিফটে আটকা পড়েছি। কে আছ, জেনারেটর চালু করো। নয়তো লিফট ভেঙে ফেলব। ভেঙেই ফেলব।

আশিকের এই আর্তচিৎকারে বিমর্ষ মেয়েটি। সিকিউরিটির কানে আওয়াজ পৌঁছল। দ্রুত সিকিউরিটি লিফট ইন্টারকম বাটন টিপে বলে

স্যার স্যার, আমি মার্কেট সিকিউরিটি রমিজ।

: তোমাদের লিফটম্যানকে বলো  জেনারেটর চালু করতে।

: স্যার, লিফটম্যান করিম ভাই তো সন্ধ্যাবেলা বাইত চইলা গেছে।

: তুমি তাড়াতাড়ি জেনারেটর চালু করো।

: কেমনে চালু করুম স্যার, সারা দিন তিনবার কারেন্ট গেছে। জেনারেটরে তেল নাই।

: লিফটের চাবি নিয়ে, তুমি লিফট ফ্লোর লেভেলে এনে দরজা খুলে আমাদের দুজনকে বের করো।

: স্যার লিফটের চাবি তো লিফটম্যান করিম ভাইয়ের কাছে থাকে। যাইবার সময় কইলো, মার্কেট বন্ধ হইলে লিফটের কারেন্ট পাওয়ার যেন আমি অফ কইরা দেই।

তোমার করিম ভাইকে ফোন করে লিফটের চাবি নিয়ে আসতে বলো।

: আইচ্ছা, ফোন দিতাছি স্যার। চিন্তা কইরেন না।

আশিক লক্ষ করল, মেয়েটি গরমে ঘামছে। আশিক একা মনেই বলল

: উহ্! এই গরমে টিকব কী করে?

মেয়েটি আঁতকে উঠল

: অ্যাঁ! তাহলে?

লিফটের ইন্টারকম বেজে উঠল। আশিক দ্রুত ঘুরে তাকল লিফটের সাউন্ড বক্সের দিকে।

: হ্যাঁ, করিম মিয়া আসছে তো?

সিকিউরিটি রমিজ বলল

: না স্যার। ম্যালা চেষ্টা করলাম, করিম ভাইয়ের মোবাইল বন্ধ।

আশিক উদ্বিগ্ন স্বরে বলল

: হোয়াট!

শব্দ শুনে মেয়েটি আচমকা বলে উঠল

: হায় আল্লাহ, এখন উপায়!

রমিজ মিয়া বলল

আল্লাহ ভরসা। এক ঘণ্টার মধ্যেই কারেন্ট চইলা আসবো। তার পরেও আমি বিদ্যুৎ অফিসে খবর লইতাছি।

আশিকের মোবাইল আলোয় কী অদ্ভুত ঐন্দ্রজালিক অন্ধকার লিফটের চার দেয়ালের ভেতরে চৈত্রদাহে পুড়ছে, দুজন অচেনা-অজানা লিফটযাত্রী।

এক ঘণ্টার লোডশেডিং হলে বিদ্যুৎ আসতে এখনো চল্লিশ মিনিট বাকি। কতক্ষণ আর লিফটে দাঁড়িয়ে থাকা যায়। মেয়েটি শপিং ব্যাগগুলো নিয়ে লিফটে বসে পড়ল। আশিকও বসে লম্বা করে পা মেলে দিল। আশিক লক্ষ করল, মেয়েটি শপিং ব্যাগ থেকে একটি পণ্যের প্যাকেট বোর্ড ছিঁড়ে হাতপাখা করে বাতাস তুলে নিচ্ছে তার গায়ে। গরমে হিজাব-নেকাব ভিজে একাকার। আশিক তার কাঁধে ঝোলানো লেদার সাইড ব্যাগ থেকে মিনারেল ওয়াটারের বোতলটা বের করে মেয়েটির দিকে এগিয়ে দিল। মেয়েটি হাত বাড়িয়ে দিয়ে, কী যেন ভেবে হাতটা সরিয়ে নিল। আশিক ব্যাপারটা বুঝে বোতলের কক খুলে সামান্য পানি নিজে মুখে ঢেলে নিল। মেয়েটির মনে যেন একটা বিশ্বস্ততা ফুটে উঠল অজানা আশিকের প্রতি। এবার মেয়েটি হাত বাড়িয়ে মিনারেল বোতলটি ধরতেই চমকে উঠল, আশিকের হাতের আঙুল ফেটে তরতর করে রক্ত ঝরে পড়ছে। মেয়েটি পানির বোতলটা নিয়ে লিফটের ফ্লোরে রেখে দ্রুত তার মুখে আবৃত সাদা নেকাবটা টান দিয়ে খুলে আশিকের রক্ত ঝরা আঙুলে পেঁচিয়ে দিতে উদ্যত হলে আশিক হাত সরিয়ে নিয়ে খুব বিনয়ের সুরে বলে

: য়ু হু। আগে আপনার গলাটা ভিজিয়ে নিন।

মেয়েটি বোতল তুলে ঢকঢক করে পানি খেয়ে নেকাব দিয়ে আশিকের রক্ত ঝরা আঙুল পেঁচিয়ে বেঁধে দিল। আশিক এক অনন্যা অপ্সরী সুন্দরী নারীর রূপে অভিভূত হলো।। সহসা একটা নিষ্পাপ সুন্দর যেন আশিকের মনকে এই বন্দিত্বের কথা ভুলিয়ে দিল। মেয়েটিকে বলল

: আমি আশিক। আপনি?

: নাজমা!

: তো, এত প্যাকেট, কী শপিং করলেন?

: গায়েহলুদের কিছু সামগ্রী।

: ও! আপনার গায়েহলুদ?

: জি না। ছোট বোন সূচনার কাল হলুদসন্ধ্যা।

: তো, সাথে কেউ আসেনি?

: বাবা নেই। মা বুড়ো মানুষ!

: সূচনা?

: সামান্য কটা আইটেম, ভাবলাম একাই পারব।

: আপনার হাজব্যান্ড?

: জি!

নাজমা আঁতকে উঠল। আশিক বলল

: চমকে উঠলেন যে!

: এমনি।

: না...বলছিলাম, ছোট বোনের বিয়ে, আপনার হাজব্যান্ডকে নিয়ে...

: নেই।

: নেই, মানে ছোট বোনকে বিয়ে দিয়ে তারপর...

: বিয়ে, ঘর-সংসারএসব নিয়ে আর ভাবছি না।

: কেন?

: ব্যাপারটা কোথায় যেন একটু কমপ্লিকেটেড মনে হচ্ছে। তাহলে কি আপনার হাজব্যান্ড...

: ছিল।

: তো, এখন উনি...

আশিক লক্ষ করল, নাজমার চোখ ভিজে যাচ্ছে। যেন জীবনের কোনো একটা অতৃপ্ত গল্প লুকানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছে। সহসা আশিকের মোবাইল বেজে উঠল। রিসিভ করল

: হ্যালো, মা। এইতো একটা জায়গায়। কারেন্ট এলেই চলে আসব। জি। জি মা।

আশিক মোবাইল বন্ধ করল

: বিপদে আছেন, মাকে বুঝতে না দিয়ে ভালোই করেছেন। আমার মা আর সূচনা হয়তো আমাকে ফোন দিয়ে পাচ্ছে না।

: সঙ্গে মোবাইল আনেননি।

: চার্জ নেই।

 

 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ