ভিআইপি সড়কের দ্রুত ধাবমান গাড়ির বহর ঝুঁকি নিয়ে পার হয়ে তরুণীটির মনে হলো, সে এবারকার মতো বেঁচে গেল। সে রাস্তা পেরিয়ে মনোযোগহীনভাবে পথ চলতে গিয়ে হঠাৎ টের পেল, কে যেন তার পিছু নিয়েছে। মেয়েদের পিছু নেওয়া ছ্যাবলা গোছের তরুণদের একটা প্রায় নিয়মিত স্বভাব, তা সে জানে। বিশেষ করে সে যখনই পথ চলেছে, সুযোগ বুঝে কেউ না কেউ তার পিছু নিয়েছে।
শূন্যতা যখন প্রতিপক্ষ
- সালাম সালেহ উদদীন
অন্যান্য

—কুমিল্লার রনি, তেজকুনিপাড়া থাকে।
—না, আমি নাটোরের বনলতা সেনের আপন ছোট বোন মধুমিতা সেন। যে বনলতা সেনকে নিয়ে জীবনানন্দ দাশ কবিতা লিখেছেন।
—ও বুঝেছি, ইডেন কলেজের ছাত্রী বনলতা সেন। ও আপনার বোনই তাহলে প্রেমের কারণে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় জেবুন্নেসা হোস্টেলের ছাদ থেকে পড়ে আত্মহত্যা করেছিল।
—আপনার কল্পনাশক্তি প্রবল। আপনি কবিতা লিখলে রূপসী বাংলার কবিকেও ছাড়িয়ে যেতেন। তবে আপনি বোধ হয় কানে একটু বেশি শোনেন। বলেছি তো আমার বোনকে নিয়ে যিনি হাজার বছর পথ হেঁটে ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে কবিতা লিখেছিলেন, তার চেয়ে সে বিখ্যাত। তা ছাড়া আমার বোন আত্মহত্যা করে বিখ্যাত হতে যাবে কোন দুঃখে। আমার বোন তো ধ্বংসের নয় শান্তির প্রতীক, যুগে যুগে অনুপ্রেরণার প্রতীক।
জীবনানন্দ দাশ তার কাছ থেকে দুদণ্ড শান্তি পেয়েছিল। অন্ধকার বিদীর্ণ করে মুখোমুখি কেবল বসেছিল। সেখানে বনলতা সেনের ছিল অশরীরী গভীর ভালোবাসার সম্পর্ক, অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। আর ছাদ থেকে প্রেমের কারণে মনঃকষ্টে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে পত্রিকার শিরোনাম হওয়ারও ছিল না কোনো সুযোগ। এসব কথা জীবনানন্দ দাশ তাঁর কিংবদন্তিতুল্য বনলতা সেন কবিতার ছত্রে ছত্রে লিখে রেখে গেছেন। আপনি পড়েছেন সে কবিতা?
—না।
—তাহলে আপনি রাস্তা মাপুন এবং কুমিল্লার রনির বোন জলিকে খুঁজতে থাকুন। এমনিভাবে বহু তিক্ত অভিজ্ঞতায় তরুণীটির জীবন পূর্ণ হওয়ার পথে। প্রথমাবস্থায় যারা এ ধরনের প্রশ্ন করত তারা প্রশ্নের ধরন পাল্টেছে। একজন হয়তো বলল, আপা, মাফ করবেন, আপনাকে একটি কথা জিজ্ঞেস করতে পারি? তরুণীটির সরাসরি উত্তর—না। এরপর দ্রুতবেগে সামনের দিকে ধাবিত হওয়া।
ইদানীং যারা তার পিছু নিয়েছে তারাও জিজ্ঞাসার কৌশল পাল্টে ফেলেছে। তারা এখন আর জিজ্ঞেস করে না, আপনি রনির বোন জলি কি না, ইডেন-বদরুন্নেসায় পড়েন কি না। কিংবা আপনাকে একটি কথা সবিনয়ে জিজ্ঞেস করতে পারি কি না ইত্যাদি। অকারণে হয়তো একটি দৃশ্যের অবতারণা করে মেয়েটির মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা। মেয়েটিকে অনুসরণ করতে করতে দুজনেই রাজধানীর ব্যস্ততম রাস্তা পার হতে গিয়ে যানজটে পড়ে গেল। তখন হয়তো মেয়েটির মনোযোগ আকর্ষণের জন্য ছেলেটি বলল—ঢাকা শহরের নতুন নতুন মডেলের গাড়ির বহর দেখে মনেই হয় না যে এটি উন্নত দেশ নয়। ওহ, কী দুঃসহ যানজট! এর মধ্যে রাস্তা পার হওয়া খুবই দুঃসাধ্য ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজ, বিশেষ করে মেয়েদের জন্য। ছেলেটির কথা শুনে মেয়েটি হয়তো একফাঁকে আপাদমস্তক দেখে নিল। কোন ধরনের জুতা তার পায়ে। শার্ট-প্যান্ট-ঘড়ি, হাতের মোবাইল সেট, চোখ-মুখের অভিব্যক্তি সব। এভাবেও কোনো কোনো ছেলে তার সঙ্গে কথা বলার সূত্র খুঁজে পেয়েছে। একবার এক ছেলে হাঁপাতে হাঁপাতে এসে তাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করল—আচ্ছা আপা, আপনার নাম কী?
—ক্যান?
—আমার ওস্তাদে জানতে চেয়েছে।
—আপনার ওস্তাদ কি বাস বা দূরপাল্লার ট্রাকের ড্রাইভার?
—ছি ছি, কী যে বলেন। তিনি হচ্ছেন ছাত্রনেতা। আমাদের বটবৃক্ষ। নানা বিপদে-আপদে আমাদের ছায়া দিয়ে রাখেন।
—কিন্তু আমার তো ছায়ার প্রয়োজন নেই। রোদ-বৃষ্টির আশঙ্কা থাকলে আমার হাতে ছাতা তো রয়েছেই।
—আমি তো আপনার নামই জানতে চাইছি।
—আমার নাম ভাঙা কুলো।
নাম শুনে ওস্তাদের ঘেঁটুটি আর পিছু নেয়নি। এভাবেও আজকাল আর তাকে কেউ সরাসরি জিজ্ঞেস করে না। জিজ্ঞাসার ধরনও তরুণরা পাল্টে ফেলেছে। এখন কেউ পাশাপাশি কিংবা আগে-পিছে গজ কয়েক হেঁটে অন্যমনস্কভাবে জিজ্ঞেস করল— আপনার বাসা কি আশপাশেই। মেয়েটি যদি সাতমসজিদ রোড ধরে হাঁটতে থাকে তাহলে হয়তো বলবে জিগাতলা, ধানমণ্ডি-১৫ অথবা শংকরের কথা।
—কেন, বলুন তো।
—না, আপনাকে প্রায়ই এলাকায় দেখি।
—কিন্তু আমি তো এখানে দ্বিতীয়বার এলাম। প্রথমবার এসেছিলাম বছর পাঁচেক আগে। আমার বোনের বাসায়।
—ও, আচ্ছা। তাহলে হয়তো আপনার বড় বোনকেই মাঝেমধ্যে দেখি।
—কী আশ্চর্য। আমার বড় বোন তো ঠিক পাঁচ বছর আগে থেকে প্রবাসজীবনে আমেরিকায়। তাকে দেখলেন কোথায়?
—যুবকটি নিরুত্তর। পালানোর রাস্তা খোঁজে।
এমনি নানা কিসিমের তরুণদের প্রতিদিন সামাল দিয়ে তরুণীটিকে রাস্তায় চলতে হয়। তরুণদের উটকো ঝামেলা থেকে বাঁচার জন্য সে যখন উপায় বের করতে লাগল, তার দুদিনের মাথায় অনেকটা অভিনব পন্থায় যুবকটি তার পিছু নিল। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হয়ে প্রথমে সে ভেবেছিল এযাত্রায় হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছে। কিন্তু সে যখন নিশ্চিত হলো তরুণটি তার পিছু নিয়েছে, তখন মনে হলো ভিআইপি সড়কের ধাবমান গাড়ির বহর অতিক্রম করা তার পক্ষে সম্ভব হবে না।
তরুণীটি নিজস্ব ভঙ্গিতে পথ চলতে লাগল। যে তাকে অনুসরণ করছে, তাকে পাত্তা দেওয়ার কিছু নেই। সেই সব বহুমাত্রিক স্মৃতি জাবর কাটছিল সে অনেকটা অন্যমনস্ক হয়ে। যুবকটি বেশ দূরে ছিল। কিন্তু তার অন্যমনস্ক হয়ে পথ চলার সুযোগে সে একেবারে কাছে এসে পড়েছে। বাঁকা চোখে অনুসরণকারীকে একফাঁকে দেখে নেয়।
অনুসরণকারী সুদর্শন। নায়কোচিত গাম্ভীর্য চেহারায় বিদ্যমান। সরলতার ছাপও চোখে-মুখে স্পষ্ট। যুবকটি সমান্তরালভাবে একসময় পথ চলতে লাগল। তরুণীটির মুখে কথা নেই, দ্বিধাগ্রস্তও নয় সে। যুবকটিও বলতে গেলে নির্বিকার। কোনো কিছুই তরুণীটিকে জিজ্ঞেস করছে না। এবার তরুণীটি তার পায়ের বেগ বাড়িয়ে দ্রুত হাঁটার চেষ্টা করলে সে বুঝতে পারল যুবকটি তাকে কিছু জিজ্ঞেস না করলেও কিংবা তার ব্যাপারে অতিমাত্রায় কৌতূহল প্রকাশ না করলেও সে সমান্তরালভাবে হাঁটার চেষ্টা করছে। যুবকটির লক্ষ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য সে আবার ধীরে হাঁটতে শুরু করে। এবার সে দেখতে পায়, যুবকটিও তার হাঁটার গতি কমিয়ে দিয়েছে। তরুণীটি যে উদ্দেশ্যে ভিআইপি সড়কের পাশ ঘেঁষে ফুটপাতে হাঁটছিল, তা যেন উবে গেল। সে চেয়েছিল সকালে এদিকটায় বিকেলের মতো মানুষের আনাগোনা নেই। অনেকটা নির্জন রাস্তায় সে একাকী হাঁটবে। কিন্তু এখানেও অঘটন ঘটল।
অনেকটা পথ দুজনে সমান্তরাল হাঁটার পর যুবকটি যখন তাকে কোনো প্রশ্ন করল না, তখন সে নিজেই বিরক্ত হলো। তরুণীটি এবার রাস্তার মাঝে স্থির দাঁড়িয়ে পড়ল। যুবকটিও একই জায়গায় যখন দাঁড়াল তখন তরুণীটি কিঞ্চিৎ বিরক্ত হলো। তার মধ্যে ভয়ও কাজ করল। মাঝপথে সে ভেবে নিল এই সুদর্শন যুবকের কোনো ‘ওস্তাদ-টুস্তাদ’ নেই তো।
না, যুবকটি তাকে কিছুই জিজ্ঞেস করল না। বরং তার অভিব্যক্তিতে এক ধরনের বিষাদ ভাব ফুটে উঠল। তরুণীটি যে কাজটি জীবনেও করেনি, এবার সে তা-ই করল। এত দিন অনুসরণকারীরা নানা বাহানায় তাকে প্রশ্ন করত, তার মনোযোগ আকর্ষণ করার ব্যর্থ চেষ্টা চালাত। এবার সে নিজেই যুবকটিকে প্রশ্ন করল—
—আপনি কি আমাকে কিছু বলতে চান?
—(প্রশ্ন শুনে যুবকটি প্রথমে ভড়কে গেল, এরপর আমতা আমতাভাবে স্বর বের হলো) না।
—তাহলে দীর্ঘ সময় ধরে আমাকে অনুসরণ করছেন কেন?
—আপনার ধারণা ভুল। আমি আপনাকে অনুসরণ করতে যাব কেন। আমি তো কেবল আপনার পাশাপাশি নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে হাঁটার চেষ্টা করছি। ঠিক সমান্তরালভাবে।
—কাজটি যে অন্যায় এবং গর্হিত অপরাধ, তা জানেন?
—জানি।
—জেনেও কেন এ কাজ করছেন?
—করছি না, করতে বাধ্য হচ্ছি।
—তার মানে।
—আসলে আপনাকে আমি বিরক্ত করতে চাইনি। এমনকি অনুসরণ করতেও নয়। আমি চেয়েছি কেবল আপনার পাশাপাশি ঠিক সমান্তরালভাবে কিছুদূর (এতে যতটুকু সময় পাওয়া যায়) হাঁটতে। রেললাইনের মতো দীর্ঘ পথ, বহু সময় নয়।
—হঠাৎ আপনার এ ধরনের ইচ্ছে হলো কেন?
— ইচ্ছেটা পুরনো। কেবল আপনাকে দিয়ে পূরণ করছি তা বলা যাবে না। আপনার মতো মানুষ দিয়ে পূরণ করতে চাই। এটাকে ঠিক ইচ্ছে বলা যাবে না। এটা আমার জীবনের এক ধরনের শূন্যতা, যে শূন্যতা আমাকে নিরন্তর কুরে কুরে খাচ্ছে।
—আপনার শূন্যতা পূরণ করার জন্য আমি আগ্রহী—এ ধারণা আপনার জন্মাল কী করে?
—আসলে আমি আপনাকে বিরক্ত করতে চাইনি। এমনকি আপনার সঙ্গে কথা বলতেও নয়। আমি কেবল আপনার পাশাপাশি হাঁটতে চেয়েছি—তা যতক্ষণই হোক।
—কারো সঙ্গে পাশাপাশি হাঁটার মধ্য দিয়ে জীবনের শূন্যতা পূরণ হয় না।
—শূন্যতার তো রকমফের আছে। একজন মানুষ তো সব দিক থেকে শূন্য হতে পারে না। সব দিকে পূর্ণতাও পায় না।
—দর্শন বিষয়ে আমার পড়াশোনা কম। জীবনের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি সম্পর্কেও গভীরভাবে চিন্তা করিনি। তবে খানিকটা অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি। আপনি যেভাবে শূন্যতা পূরণ করতে চাচ্ছেন, এভাবে শূন্যতা কমার পরিবর্তে বেড়ে যাবে।
—আমার শূন্যতাটা হৃদয়ঘটিত, যা আমার জীবনের সব কিছু ছাপিয়ে উঠেছে।
—আমরা যেখানে শূন্যতার মধ্যে বসবাস করছি, সেখানে হৃদয়ঘটিত শূন্যতা কোনো শূন্যতাই নয়।
তরুণীটির উচ্চমার্গীয় কথা যুবক বুঝে উঠতে পারে না। তাই সে কিছু সময় চুপ করে থাকে। সে কেবল তার মুখের দিকে বারবার তাকাচ্ছে। তরুণীটি বিষয়টি লক্ষ করে যুবককে আবার প্রশ্ন করে—
—কোনো নারী আপনাকে ভালোবেসেছে?
—না।
—তাহলে তো আপনার ভেতরে শূন্যতা থাকার কথা নয়। কোনো নারী আপনাকে ভালোবাসতে শুরু করলেই আপনার ভেতরে শূন্যতার সৃষ্টি হবে। হৃদয়ঘটিত শূন্যতা বলেন আর নারীকেন্দ্রিক শূন্যতা বলেন—এসব সৃষ্টি হয় নারীর ভালোবাসা থেকে। আপনি আমাকে মিথ্যা বলছেন। আপনার ভেতর যে শূন্যতা আপনি লালন করছেন, এটা কোনো নারীর গভীর ভালোবাসারই ফল। সুতরাং আমার পাশাপাশি হাঁটার মাধ্যমে এই শূন্যতা পূরণ আদৌ সম্ভব নয়।
তরুণীটির কথায় যুবকটি মুহূর্তে কুঁচকে যায়। সে তাৎক্ষণিক স্মৃতির জাবর কাটতে শুরু করে। কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারছে না কখনো কোনো নারী তাকে ভালোবেসেছিল কি না, কিংবা ঠিক কবে থেকে তার ভেতরে হৃদয়ঘটিত শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। তার এও মনে হলো, নিজের শূন্যতা পূরণের জন্য সে এতক্ষণ যার সঙ্গে পাশাপাশি হেঁটে শূন্যতা নিয়ে কথা বলল, ওই তরুণীটি তার চেয়ে গভীর কোনো শূন্যতার মধ্যে বাস করছে। তাই যুবকটির পক্ষে তরুণীটির পাশাপাশি হাঁটা আর সম্ভব হয়ে উঠল না। সে হঠাৎ ভিআইপি রোড অতিক্রম করে তরুণীটির দৃষ্টির বাইরে চলে গেল। তার মনে হলো, এতক্ষণ যে রাস্তায় সে হেঁটে চলেছে, এ রাস্তা তার নয়।
সম্পর্কিত খবর

চরিত্রহীন
- রুদ্র অহম

একদিন বিবেকবাবু ডাকলেন
বললেন, শোনো, আর যা-ই করো,
তোমার চরিত্র হারিয়ো না কখনো।
শুনে আমি খানিক বিস্মিত হলাম!
বললাম, বিবেকবাবু,
আপনি তো জানেন,
মদ-জুয়া কিংবা পরকীয়া
আমার কিছুতে আসক্তি নেই।
তাহলে চরিত্র হারাব কিসে?
বিবেকবাবু হাসলেন।
বললেন, কিছু মানুষ আছে, যারা
সারাক্ষণ অন্যকে খুশি করতে,
অন্যের প্রিয়পাত্র হতে মত্ত থাকে।
কারোর অপ্রিয় হওয়ার সাহস নেই,
মাথা তুলে দাঁড়াবার মেরুদণ্ড নেই।
যেমন পানি। যে পাত্রেই রাখো,
তার আকার নেয়; নিজস্বতা নেই।
যার নিজের রুচি-পছন্দ-ইচ্ছে স্বতন্ত্র,
সে কখনো সকলের প্রিয় হয় না।
আর যে সকলের প্রিয়,
তার কোনো চরিত্র নেই।

বর্ষারূপ
- আসাদ কাজল

অভিনব বর্ষা বুকের ভিতর কাঁদে
সৃষ্টিতত্ত্ব বর্ষার ভিতর চলাচল
বর্ষা বহমান প্রকৃতিতে অবিচল
আমি শুধু পড়ে থাকি স্বপ্নময় ফাঁদে।
প্রকৃতির মেঘ দূরে সরে যায়। তবু
প্রণয়সঙ্গিনী মনের ভিতর একা।
বর্ষাভেজা রাতে সংগোপনে দেয় দেখা
বর্ষায় নিভৃতে ডাকি স্বরচিত প্রভু।
কদমফুলের মতো তোমার দুচোখ
ভালোবেসে উপেক্ষা করেছি রাজ্য-রাজা
চৈত্র ভুলে পুরনো বর্ষায়—যত শোক
ভুলে যাই আমি মনের সমস্ত সাজা।
তবু বর্ষা আসে, উদ্যমে গোপন সঙ্গ
বর্ষারূপ আমার ভিতর স্বপ্নভঙ্গ।

শান্তি
- ফারুক মাহমুদ

তোমার বাগান থেকে তুলে আনা দুটি পাকা বীজ
রোপণ করেছি বারান্দার টবে
অপেক্ষা অপেক্ষা শুধু—কবে হবে গাছ
সেই গাছে দুলে দুলে দুলতে থাকবে
শাখাছন্দ, অহরহ অগণিত সবুজ বাতাস
ফুলের প্রকাশ্য মুখ, থেকে থেকে সুরভিত গান
কোনো এক পুণ্যপ্রাতে দেখি—
বীজ থেকে হতে হতে হয়ে ওঠা গাছে
‘প্রথম ফুটেছে কলি’। মনে হলো তুমি বুঝি এলে
চেনা গন্ধ, চারপাশে প্রবাহিত শান্তিসত্যধারা
।

প্রদর্শনী
আটাশ শিল্পীর নান্দনিকতা
- মোহাম্মদ আসাদ

প্রদর্শনীর মাধ্যমে শিল্পীদের কাজ শিল্পপ্রেমীদের নজরে আসে। বিগত শতাব্দীতে এই গুরুদায়িত্ব শিল্পকলা একাডেমি পালন করত। ছিল কয়েকটি গ্যালারি। সেখানে বিশেষ কিছু শিল্পীই প্রদর্শনীর সুযোগ পেতেন।
এই প্রদর্শনীর শিল্পীরা হলেন আবদুল্লাহ আল বশির, আব্দুস সাত্তার তৌফিক, আল-আখির সরকার, আনজুম সুলায়মান, অনুকূল চন্দ্র মজুমদার, আশফাক বাপ্পী, বিপ্লব চক্রবর্তী, বিশ্বজিৎ গোস্বামী, কে জামান শিমুল, কামাল উদ্দিন, কামরুজ্জোহা, কাজী শহীদ, লুত্ফা মাহমুদা, মো. জিয়াউর রহমান, মনজুর রশিদ, মুনতাসির মঈন, নাঈম জামান, নাজিয়া আহমেদ, প্রদ্যুৎ কুমার দাস, রত্নেশ্বর সূত্রধর, রেজাউর রহমান, রুহুল আমিন তারেক, এস এম সাহা, আনিসুজ্জামান ফারুক, সৌরভ চৌধুরী, সুমন ওয়াহেদ, সৈয়দ গোলাম দস্তগীর, ত্রিবেদী গোপাল চন্দ্র গুপ্ত।
বিশাল এই প্রদর্শনীর কোনো আয়োজক প্রতিষ্ঠান নেই। নিজেদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে প্রদর্শনীটির শুরু। তার পরও একজন তো দায়িত্বভার বহন করেছেন।
কোনো বাণিজ্যিক চিন্তা ছাড়া এমন সুন্দর আয়োজনে শিল্পীরা যেমন উৎসাহিত হবেন, শিল্পকলাপ্রেমীরাও একই সঙ্গে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ দেখতে পারবেন।