ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই ২০২৫
২৬ আষাঢ় ১৪৩২, ১৪ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই ২০২৫
২৬ আষাঢ় ১৪৩২, ১৪ মহররম ১৪৪৭
লেখার ইশকুল

শিল্পীর কাজ প্রশ্ন করে যাওয়া, উত্তর দেওয়া নয়—আন্তন চেখভ

অন্যান্য
অন্যান্য
শেয়ার
শিল্পীর কাজ প্রশ্ন করে যাওয়া, উত্তর দেওয়া নয়—আন্তন চেখভ

রুশ কথাসাহিত্যিক ও নাট্যকার আন্তন চেখভের জন্ম ১৮৬০ সালে। ছোটগল্পের ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ লেখকদের অন্যতম মনে করা হয় তাঁকে। আধুনিক নাটকের পথিকৃৎ হিসেবে ইবসেন, স্ট্রিনবার্গ প্রমুখের সমপর্যায়ে অবস্থান চেখভের। লেখকজীবনের প্রায় পুরো সময়ই তিনি চিকিৎসক হিসেবেও সক্রিয় ছিলেন।

দুটি ভিন্ন কাজের সঙ্গে জড়িত থাকা নিয়ে রসিকতা করে বলেন, ‘চিকিৎসাপেশা আমার বৈধ স্ত্রী এবং সাহিত্য আমার গোপন প্রেমিকা।’ 

চেখভের বাবা পাভেল চেখভ মুদি দোকান চালাতেন। তিনি ছিলেন গোঁড়া খ্রিস্টধার্মিক। তিনি সন্তানদের শারীরিক শাস্তি দিতেও দ্বিধা করতেন না।

কোনো কোনো সমালোচক মনে করেন, তাঁর বাবার আদলে চেখভের গল্পের অনেক চরিত্র তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে চেখভের মা ইয়েভগেনিয়া চমৎকার গল্প বলতে পারতেন। চেখভের নানা কাপড়ের ব্যবসায়ী ছিলেন। চেখভের মা ছোটবেলায় তাঁর সঙ্গে রাশিয়ার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতেন।
সন্তানদের কাছে সেসব ভ্রমণের অভিজ্ঞতার কথা গল্পের মতো করে বলতেন চেখভের মা। তাঁদের ওপর মা-বাবার প্রভাব সম্পর্কে চেখভ বলেন, ‘বাবার কাছ থেকে আমরা মেধা পেয়েছি, মায়ের কাছ থেকে পেয়েছি আত্মার শক্তি।’

১৮৭৯ সালে চিকিৎসাবিজ্ঞান পড়া শুরু করেন চেখভ। তবে নিজের পড়ার খরচ এবং পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার জন্য রাশিয়ার সমসাময়িক জীবন নিয়ে নিয়মিত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র হাস্যরসাত্মক কাহিনি লেখা শুরু করেন। এগুলো অবশ্য তিনি আন্তশা চেখন্তে ছদ্মনামে লিখতেন।

এসব ব্যঙ্গ রচনার মাধ্যমে তিনি জনপ্রিয়তাও অর্জন করেন। প্রথম দিকে অর্থ উপার্জনের জন্য গল্প লিখলেও ক্রমান্বয়ে তাঁর শৈল্পিক চাহিদা বাড়তে থাকলে গল্পের মধ্যে নতুনত্ব যোগ করতে থাকেন। তাঁর এই প্রয়াসে আধুনিক ছোটগল্পের উৎকর্ষ লাভ হয়। গল্পের মধ্যে জটিলতা আনার কারণে তিনি পাঠকের কাছে মোটেও কৈফিয়ত দেননি, বরং মনে করেছেন, শিল্পীর কাজ প্রশ্ন করে যাওয়া—উত্তর দেওয়া নয়। আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে সিরিয়াস লেখার মাধ্যমে পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন চেখভ। সে সময় তাঁর গল্প ‘শিকারি’ পড়ে তখনকার দিনের প্রখ্যাত লেখক দিমিত্রি গ্রিগরোভিচ মুগ্ধ হন এবং চেখভের মেধার প্রশংসা করেন। তিনি মনে করেন, তাঁর মেধা চেখভকে নতুন প্রজন্মের লেখকদের সামনের দিকে স্থান দিয়েছে। তিনি চেখভকে কম লিখতে বলেন এবং শৈল্পিক গুণের দিকে বেশি নজর দেওয়ার পরামর্শ দেন।

১৮৯৫ সালে লেখেন নাটক ‘সিগাল’, ১৮৯৭ সালে লেখেন ‘আঙ্কল ভানিয়া’, ১৯০০ সালে ‘তিন বোন’,  ১৯০৩ সালে লেখেন ‘চেরি বাগান’। তাঁর এ নাটকগুলো মঞ্চে জীবনের বাস্তব উপাদান ব্যবহারের উদাহরণ হয়ে আছে। মানুষ হিসেবে নিজেদের মূল্যায়ন করার সুযোগ তৈরি করে দেয় দর্শকদের। ১৯৮১ সালে মার্কিন নাট্যকার টেনেসি উইলিয়ামস চেখভের ‘সিগাল’-এর নাট্যরূপ দেন। উইলিয়াম বয়েড বলেন, চেখভের ছোটগল্প তাঁর সেরা অর্জন। অন্যদিকে ছোটগল্পকার রেমন্ড কারভার মনে করেন, চেখভ সেরা ছোটগল্প লেখকদের সেরা। মারা যাওয়ার কয়েক মাস আগে চেখভ ইভান বুনিনকে বলেন, তিনি মনে করেন, পাঠকরা তাঁর লেখা বড়জোর সাত বছর পড়বেন। বুনিন জিজ্ঞেস করেন, ‘সাত বছর কেন?’ চেখভ বলেন, ‘আচ্ছা ঠিক আছে, সাড়ে সাত বছর। সে-ও তো কম নয়। কারণ আমি আর ছয় বছর বাঁচতে পারি। ’

১৯০৪ সালের ১৫ জুলাই চেখভ মারা যান।

              ► দুলাল আল মনসুর

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

পিয়াস মজিদ

খুচরা আষাঢ়

শেয়ার
খুচরা আষাঢ়

আসকাল আজ

মেঘের মনের গায়ে

কেউ কাক

চুপচাপ।

ভিজে যেতে চেয়ে আমি

বহুকালের শুকনো সরোদ;

বাজনারা ঝরে গিয়ে

পাহাড়ের চুল চুইয়ে।

আকাশ বাজারের ব্যাগ হাতে ফিরবে ঘরে।

কেনাবেচার রিমঝিম শব্দে বধির মাটিতে

থেকে থেকে ঠিক তোমার মতো

প্রয়াত জ্বরেদের স্মৃতি মনে আসে!

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য
নাসির আহমেদ

পাঁচটি আঙুল

শেয়ার
পাঁচটি আঙুল

কিছুই বলোনি, শুধু রুপালি আঙুল, নখ-ছবি

পাঠিয়ে দিয়েছ এই লেখার সম্মানে। মুগ্ধ কবি!

অনামিকা থেকে কনিষ্ঠায় দ্যুতিময় রাঙা হাত

হঠাৎ জানাল যেন প্রথম দিনের সুপ্রভাত!

 

তীব্র, তীক্ষ এই মুগ্ধ মৌন অনুভব

কতটা প্রকাশযোগ্য! ভাষায় কতটা তাকে ধারণ সম্ভব!

 

বর্ষার বৃষ্টির মতো রুপালি সৌন্দর্যে রিমঝিম

সবুজ পাতায় জ্বলে পাঁচটি আঙুল। ব্যাখ্যাও সম্ভব নয় কবিতার থিম।

 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য
দিলারা মেসবাহ

পাথরে ফুটুক ফুল

শেয়ার
পাথরে ফুটুক ফুল

তুমি সেই প্রত্নপাথর!

মরমি সান্নিধ্যের সাধন ভজন

‘সুপ্রভাত’ বলার সাধুবাদ, শেখোনি কস্মিন।

তুমি এক অচিন পাথর

দেখো আজ অনামিকায় ওপাল ঝলক

খোঁপায় তারার ফুল!

তুমি সেই অন্ধ পাথর।

দেখো আজ জোড়া চোখ বিহ্বল বিজন

অপার মায়ার বশে বেদনাবিধুর।

তুমি সেই নির্বোধ পাথর,

শুনলে না কলকণ্ঠ পাখির গোপন।

তুমি এক পাইথন শীতনিদ্রা স্বভাব

তুমি সেই প্রত্নপাথর।

খোলস খসাও—

দেখাও ফণার সার্কাস!

চেয়ে দেখো হাত দুটো বিজন ব্যাকুল

জেগে ওঠো, পাথরে ফোটাও ফুল।

 

 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য
প্রদর্শনী

গ্যালারি কায়ায় মাস্টার শিল্পীদের কাজ

    মোহাম্মদ আসাদ
শেয়ার
গ্যালারি কায়ায় মাস্টার শিল্পীদের কাজ
শিরোনামহীন ২। শিল্পী : কামরুল হাসান

গ্যালারি কায়া মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে ২১ বছর ধরে। প্রতিনিয়ত উপহার দিচ্ছে বৈচিত্র্যময় শিল্পকলা প্রদর্শনীর। প্রায় আট দশকের দেশের শিল্পকলার সংগ্রহ নিয়ে এবারের প্রদর্শনী। দেশের চারুকলা শিক্ষার শুরুটা হয় ১৯৪৮ সালে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের হাত ধরে।

শিল্পাচার্য ও তাঁর সঙ্গে যাঁরা যোগ দিয়েছিলেন এই প্রতিষ্ঠানে, তাঁদের ধরে নেওয়া হয় প্রথম প্রজন্মের শিল্পী। প্রথম প্রজন্মের শিল্পী কামরুল হাসানের কাজ রয়েছে এই প্রদর্শনীতে। রয়েছে দ্বিতীয় প্রজন্মের শিল্পী মোহাম্মদ কিবরিয়া, মুর্তজা বশীর, কাইয়ুম চৌধুরী, দেবদাস চক্রবর্তী, কাজী আব্দুল বাসেতের কাজ। এই শিল্পীরাই দেশের শিল্পকলাকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়েছেন।

গ্যালারি কায়ায় মাস্টার শিল্পীদের কাজ

ঈদমেলা থেকে বাড়ি ফেরা।   শিল্পী : মুর্তজা বশীর

আরো আছে সমরজিৎ রায়চৌধুরী, হাশেম খান, রফিকুন নবী, হামিদুজ্জামান খান, আবদুস শাকুর শাহ, মাহমুদুল হক, আবুল বারক আলভী, মোহাম্মদ ইউনুস, জামাল আহমেদ, চন্দ্র শেখর দে, মোস্তাফিজুল হক, রণজিৎ দাস, রতন মজুমদার, ফরিদা জামান, কনক চাঁপা চাকমা, শেখ আফজাল, আহমেদ শামসুদ্দোহা, শিশির ভট্টাচার্য্য, মোহাম্মদ ইকবাল, গৌতম চক্রবর্তীর মতো গুরুত্বপূর্ণ শিল্পীদের কাজ। প্রদর্শনীতে রয়েছে প্রতিশ্রতিশীল শিল্পীদের কাজও। গৌতম চক্রবর্তী গ্যালারিটির প্রতিষ্ঠাতা।

দ্বিতীয় প্রজন্মের শিল্পী দেবদাস চক্রবর্তীর সুযোগ্য সন্তান তিনি। দেবদাস চক্রবর্তী এই দেশের শিল্পীদের কাছের মানুষ ছিলেন।

প্রদর্শনীতে গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ মুর্তজা বশীরের ‘ঈদমেলা থেকে বাড়ি ফেরা’। ১৯৫৬ সালে তিনি এই ছবিটি এঁকেছেন ছাত্রজীবনে। রাজধানীর চকবাজারের ঈদমেলার ঐতিহ্য আছে।

পুতুল-ঘোড়া কিনে আনা শিশুদের মধ্যে সম্ভ্রান্তর একটা ছাপ আছে। তাঁর আরেকটি ছবি ‘রক্তাক্ত একুশ’। এই লিনোকাট প্রিন্টটি বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের প্রথম ছবি।

কামরুল হাসানের প্রিন্ট দুটি দেখে ভালো লাগবে। কাইয়ুম চৌধুরীর একটি মিছিলের ছবি। ব্যানারে লেখা ‘নিপাত যাক’। কাজী আবদুল বাসেতের দুই বৃদ্ধার গল্প বলা। এই প্রদর্শনীতে একটি কাজ আছে মাহমুদুল হকের। মাহমুদুল হক গুরুত্বপূর্ণ শিল্পী। তিনি জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ২০২২ সালে তিনি নীরবে চলে যান আমাদের ছেড়ে।

২১ বছরের গ্যালারি কায়া দেখাচ্ছে প্রায় আট দশকের শিল্পকলা ইতিহাস। এই গুরুত্বপূর্ণ প্রদর্শনীতে শিল্পাচার্যের একটি কাজ থাকলে ষোলো কলা পূর্ণ হতো। আবার যা আছে তা-ও কম কিসের। প্রদর্শনী চলবে ১২ জুলাই পর্যন্ত।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ