<p>এক বছরও পূর্ণ হয়নি উদ্বোধনের। ২০২৩ সালের পয়লা মার্চ মহান স্বাধীনতার মাসে কালের কণ্ঠ’র প্রধান সম্পাদক ও বরেণ্য কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন বগুড়ায় বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছিলেন। উদ্বোধনকালে স্কুলে শিক্ষার্থী ছিল ৩০ জন, এখন সেখানে শিক্ষার্থী বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮০ জনে। শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় বৃদ্ধি করা হয়েছে শিক্ষকও। এখন তিনজন শিক্ষক বগুড়ার বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুলে পাঠদান করছেন।<br /> দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে বগুড়ার নিভৃত পল্লী এরুলিয়া ইউনিয়নের হাপুনিয়া গ্রামে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছিলেন সহায়-সম্বলহীন নারী রত্না দেবনাথ। নিজ উদ্যোগে ওই অঞ্চলের শিশুদের অক্ষরজ্ঞান দানের পাশাপাশি শিশুদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির ব্যবস্থা করতেন এই নারী। এরপর আবার নতুন শিক্ষার্থী জোগাড় করে তাদের পাঠদানের উদ্যোগ নিতেন। নিজের আপনজন বলতে কেউ না থাকায় ওই এলাকার শিশুদেরই আপন করে নেন তিনি। একসময় তার এই পাঠদান কার্যক্রমে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও) সহযোগিতা করলেও ২০১৯ সালে সেই সহযোগিতা বন্ধ হয়ে যায়, কিন্তু বন্ধ হয়নি রত্না দেবনাথের পাঠদান কার্যক্রম। ২০২২ সালের ২০ আগস্ট কালের কণ্ঠ’র শেষ পাতায় ‘রত্নার পাঠে আলোর পথে’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। নিজের স্বামী-সন্তান, এমনকি কোনো সম্পদ না থাকার পরও শিশুদের শিক্ষার জন্য এমন নিবেদিত নারীর সংগ্রামের বিষয়টি বসুন্ধরা শুভসংঘের নজরে আসে। সে সময়ই রত্না দেবনাথের ওই পাঠশালার দায়িত্ব নেয় বসুন্ধরা গ্রুপ। বসুন্ধরা শুভসংঘ কেন্দ্রীয় পর্ষদ বিষয়টি নিয়ে আলোচনার পর রত্না দেবনাথের পাঠশালাকে ‘বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুল’ নামে পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়। এর পরই বরেণ্য কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন স্কুলের উদ্বোধন করেন। এরপর একাধিকবার সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শন করেছেন একুশে পদকপ্রাপ্ত এই কথাসাহিত্যিক। প্রত্যন্ত গ্রামের নিম্ন আয়ের পরিবারের সন্তানদের লেখাপড়ার প্রতি ঝোঁক, তাদের মেধা ও মননশীলতা দেখে বারবার মুগ্ধ হন তিনি। সর্বশেষ গত ১১ ডিসেম্বর আবারও স্কুলটি পরিদর্শনে এসেছিলেন তিনি। এ সময় তিনি উদ্বোধনকালে শিক্ষার্থীর চেয়ে প্রায় তিন গুণ শিক্ষার্থী দেখে সেখানে নতুন একজন শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি চূড়ান্ত করেন। রত্না দেবনাথের সঙ্গে আরো দুজন মিলে বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুলের এই খুদে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করবেন।<br /> ইমদাদুল হক মিলন বলেন, ‘বসুন্ধরা শুভসংঘের পৃষ্ঠপোষকতা করেন বসুন্ধরা গ্রুপের মাননীয় চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। তাঁর নির্দেশে বাংলাদেশের প্রতিটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে এমন একটি করে স্কুল করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি জেলায় একটি করে পাঠাগার করা হবে। আমরা শিশুদের হাতে বই তুলে দিতে চাই এবং শিশুদের সুশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে চাই। যে এলাকার শিশুরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত, যারা স্কুলে যেতে পারছে না, সে রকম জায়গায় শিশুদের একত্র করে আমরা স্কুল করতে চাই। আমরা এই শিশুদের লেখাপড়ার খরচসহ স্কুল ড্রেস, ব্যাগ, বই সব দিচ্ছি। শিক্ষকের বেতনসহ স্কুলের যা যা খরচ, সবই বহন করা হচ্ছে। এখানেই শুধু তাদের পড়ানো নয়, বরং যখন তারা হাই স্কুলে যাবে, তখন তাদের মাসিক বৃত্তি দেওয়া হবে। এরপর যত দূর সে পড়তে চায়, পড়ানোর খরচ দেওয়া হবে। অভাবে পড়ে কোনো শিশু যেন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয়, সেই কারণে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’</p>