প্রকৃতির কন্যা খ্যাত হাওরবেষ্টিত উপজেলা সুনামগঞ্জের তাহিরপুর। বর্ষাকালে পূর্ণ যৌবন ফিরে পায় হাওর। বর্ষা শেষে অনেকটাই রংহীন হয়ে পড়ে এলাকাটা। এখানকার মানুষের জীবনটাও তখন বর্ণহীন হয়ে যায়।
হাওরপারের নারীদের স্বপ্ন পূরণ করল বসুন্ধরা গ্রুপ
মো. আবীর খান

গত ১৭ নভেম্বর বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে ৪০ নারীর হাতে সেলাই মেশিন তুলে দেন তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুপ্রভাত চাকমা। নতুন মেশিন হাতে পেয়ে তাৎক্ষণিক উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন অনেকেই। অনেকে আবার বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না, সত্যি তাঁরা সেলাই মেশিন পেয়েছেন। নতুন সেলাই মেশিনে নতুন জীবন গড়ার স্বপ্নের কথা জানালেন নারীরা।
উপজেলার সদর রায়পাড়ার বাসিন্দা অমি তালুকদার এইচএসসি পর্যন্ত পড়েছেন। পরিবারের ভাতের অভাব মেটাতে তাঁর এই লেখাপড়া কাজে লাগেনি। কোনো কাজও পাচ্ছেন না। অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে অভাব-অনটনে চলছে তাঁর সংসার। বসুন্ধরা গ্রুপের মাধ্যমে শুভসংঘ থেকে সেলাই প্রশিক্ষণ ও সেলাই মেশিন পেয়ে তিনি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছেন। এখন আর্থিকভাবে নিজের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবেন। অমি বলেন, ‘এইচএসসি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছি, কিন্তু পেটের ভাত জোগাড় করতে পারছি না। বসুন্ধরা গ্রুপ আমাকে সেলাই প্রশিক্ষণ দিয়ে সেলাই মেশিন দিয়েছে। এই প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছি।’ এইচএসসি পাস ঝর্ণা রাকসাম স্থানীয় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। হঠাৎ করে তাঁর চাকরি চলে যায়। পরিবারে আয়ের একমাত্র ব্যক্তির চাকরি চলে যাওয়ার খবর শুনে বসুন্ধরা শুভসংঘের স্থানীয় সদস্যরা তাঁকে বিনা মূল্যের সেলাই প্রশিক্ষণে ভর্তি করে নেন। তিন মাস প্রশিক্ষণ শেষে গত ১৭ নভেম্বর একটি সেলাই মেশিন পেয়েছেন। ঝর্ণা রাকসাম বলেন, ‘বড় ছেলে নার্সিং বিষয়ে পড়ালেখা করছে। কিন্তু হঠাৎ করেই আমার চাকরিটা চলে যাওয়ায় আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি। বসুন্ধরা শুভসংঘ থেকে সেলাই প্রশিক্ষণ ও সেলাই মেশিন পেয়ে আমি ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছি। সৃষ্টিকর্তা বসুন্ধরা গ্রুপের সবাইকে ভালো রাখুন।’
সম্পর্কিত খবর

বসুন্ধরা গ্রুপকে অনেক ধন্যবাদ
- মো. মিজানুর রহমান, ওসি, পাটগ্রাম থানা লালমনিরহাট

প্রান্তিক পর্যায়ের সীমান্ত এলাকার দারিদ্র্যপীড়িত, অসহায় নারীদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সাহায্য করার জন্য বসুন্ধরা গ্রুপকে অনেক ধন্যবাদ ও সাধুবাদ জানাই। তারা পিছিয়ে পড়া নারীদের জন্য যে কাজ করছে, সেটা প্রশংসাযোগ্য। আমি দাবি জানাই, আমাদের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ভাগ্যোন্নয়নে যেন বসুন্ধরার মতো অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও এগিয়ে আসে। যারা এ ধরনের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের জন্য কাজ করবে, তাদের সাহায্য করবে।

নিঃসন্দেহে মহৎ কাজ
- দীন মোহাম্মদ আসাদুল্লাহ্, ফিশারিজ কোয়ারেন্টাইন অফিসার, বুড়িমারী স্থলবন্দর লালমনিরহাট

গ্রামীণ দরিদ্র পরিবারের নারীদের স্বাবলম্বী করতে বসুন্ধরা গ্রুপ যে কাজগুলো করছে, এটা নিঃসন্দেহে অনেক মহৎ কার্যক্রম। কারণ ছিন্নমূল, অসহায়, দুস্থ নারীদের মধ্যে প্রশিক্ষণ শেষে উপহার হিসেবে সেলাই মেশিন বিতরণ ব্যতিক্রমী আইডিয়া। এই মেশিনই একদিন অসচ্ছল নারীদের বাঁচার অবলম্বন হয়ে দাঁড়াবে। এ ধরনের উদ্যোগ আমার দেখা সব ভালো কার্যক্রমের মধ্যে একটি।

মেশিনটি একটি পরিবারের বাঁচার অবলম্বন
- মো. মাহমুদুন-নবী, ওসি, হাতীবান্ধা থানা লালমনিরহাট

বিনামূল্যে তিন মাসের প্রশিক্ষণ শেষে সেলাই মেশিন বিতরণ আধুনিক ও টেকসই আইডিয়া। এর মাধ্যমে হাতীবান্ধা উপজেলার নারীদের, বিশেষ করে অনগ্রসর নারীদের জীবন ও জীবিকা এগিয়ে নেওয়ার জন্য বসুন্ধরা গ্রুপের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। এটি অত্যন্ত মহতী একটি উদ্যোগ। ভবিষ্যতেও এই শিল্পগোষ্ঠী তাদের মহৎ কাজগুলো আরো বেগবান করবে—এমনটাই আশা করি।

বসুন্ধরাকে দেখে অন্যরাও এগিয়ে আসুক
- মনোয়ার হোসেন লিটন, সেক্রেটারি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, পাটগ্রাম উপজেলা শাখা, লালমনিরহাট

সেলাই মেশিন প্রদানের মাধ্যমে বসুন্ধরা গ্রুপ ও বসুন্ধরা শুভসংঘ অসহায় সুবিধাবঞ্চিত নারীসমাজকে এগিয়ে নিতে যে সেবা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, এটা অনুকরণীয় ও অনুসরণীয়। তাদের সাধুবাদ জানাই। বসুন্ধরা তাদের সেবা কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে, এটাই কামনা করছি। পাশাপাশি সব স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসহ সবাইকে মানবকল্যাণে এগিয়ে আসার আহবান জানাই।