ঢাকা, মঙ্গলবার ২২ জুলাই ২০২৫
৬ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৬ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, মঙ্গলবার ২২ জুলাই ২০২৫
৬ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৬ মহররম ১৪৪৭

হাওরপারের নারীদের স্বপ্ন পূরণ করল বসুন্ধরা গ্রুপ

মো. আবীর খান
মো. আবীর খান
শেয়ার
হাওরপারের নারীদের স্বপ্ন পূরণ করল বসুন্ধরা গ্রুপ
বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে সেলাই মেশিন পাওয়া হাওরাঞ্চলের অসচ্ছল নারীরা

প্রকৃতির কন্যা খ্যাত হাওরবেষ্টিত উপজেলা সুনামগঞ্জের তাহিরপুর। বর্ষাকালে পূর্ণ যৌবন ফিরে পায় হাওর। বর্ষা শেষে অনেকটাই রংহীন হয়ে পড়ে এলাকাটা। এখানকার মানুষের জীবনটাও তখন বর্ণহীন হয়ে যায়।

ছয় মাস কাজ থাকে আর ছয় মাস বসে খেতে হয়। কৃষি ও মাছ ধরা নির্ভর এই মানুষগুলো নিত্য অভাবের সঙ্গে যুদ্ধ করে। আবার বালু ও পাথর শ্রমিক আছে অনেক। তাদেরও সব সময় কাজ থাকে না।
অভাবের সংসারে ছেলেমেয়েকে পড়াশোনা করাতে হিমশিম খেতে হয়। অনেকে আবার খরচের ভয়ে পড়াতেই চান না সন্তানদের। তাহিরপুর সদরের হাওরপারের ও বারিকটিলার আদিবাসী শিক্ষার্থী, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা নারীদের খুঁজে বের করে তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছে দেশের শীর্ষ শিল্প পরিবার বসুন্ধরা গ্রুপ। বিনা মূল্যে তিন মাসের সেলাই প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রত্যেককে সেলাই মেশিন তুলে দিয়েছে বসুন্ধরা শুভসংঘ।
বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণ ও সেলাই মেশিন পেয়ে তাঁদের মলিন মুখে ফুটেছে সচ্ছলতার হাসি।
গত ১৭ নভেম্বর বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে ৪০ নারীর হাতে সেলাই মেশিন তুলে দেন তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুপ্রভাত চাকমা। নতুন মেশিন হাতে পেয়ে তাৎক্ষণিক উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন অনেকেই। অনেকে আবার বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না, সত্যি তাঁরা সেলাই মেশিন পেয়েছেন। নতুন সেলাই মেশিনে নতুন জীবন গড়ার স্বপ্নের কথা জানালেন নারীরা।
তাঁদেরই একজন উম্মে জাহান ইভা। আট বছর আগে বাবাকে হারিয়েছে। মা ও চার ভাই-বোনের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। পাশে দাঁড়ানোর মতো কাউকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না ইভার মা। মেয়েরা পড়াশোনা করে। কেমন করে তাদের পড়াবেন? পাশে দাঁড়ান ইভার এক ফুফাতো ভাই। মধ্য তাহিরপুর গ্রামের ইভাদের সংসারে তখন অভাব নিত্যদিনের সঙ্গী। দুই বোন উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে অনার্সে পড়ছেন। ইভাও এবার এইচএসসি দিয়েছে তাহিরপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে। পরীক্ষা শেষে বসে না থেকে বসুন্ধরা শুভসংঘ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে বিনা মূল্যে সেলাই প্রশিক্ষণ নিয়েছে। তিন মাসে অনেক কাজ শিখেছে। এবার বাকি ছিল একটা সেলাই মেশিন। সেটাও পেয়ে যেন হাতে আকাশের নাগাল পেয়েছে ইভা। আবেগ আর আনন্দে তখন তার দুচোখ বেয়ে অশ্রুর ধারা বইছিল। ইভা বলে, ‘আল্লাহ মুখ তুলে আমাদের দিকে চেয়েছেন। বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে আমি একটা সেলাই মেশিন পেয়েছি। বহুদিনের স্বপ্ন ছিল সংসারে কিছুটা হলেও সহযোগিতা করার। আজ সেই স্বপ্ন পূরণ করল বসুন্ধরা গ্রুপ। এখন নিজেদের পরিবারের সবার জামা বানাতে পারলেও অনেক টাকা বেঁচে যাবে। যেভাবে কাজ শিখেছি, অন্যের কিছু জামা বানানোর কাজ করতে পারলে ভালোই আয় হবে। নিজের পড়ার খরচটা অন্তত চালাতে পারব। বসুন্ধরা গ্রুপ এবং গ্রুপের মালিকদের জন্য অনেক দোয়া করি। আল্লাহ তাঁদের দীর্ঘজীবী করুন।’ সেলাই মেশিন পেয়ে রাজাই গ্রামের তানজিলা বেগম বলেন, ‘অভাবের সংসার, অল্প বয়সে বিয়ে হয়েছে। কোনো কাজের সুযোগ পাইনি। সেলাই  মেশিন পেয়ে এখন স্বপ্ন বুনছি নিজের পায়ে দাঁড়ানোর।’
উপজেলার সদর রায়পাড়ার বাসিন্দা অমি তালুকদার এইচএসসি পর্যন্ত পড়েছেন। পরিবারের ভাতের অভাব মেটাতে তাঁর এই লেখাপড়া কাজে লাগেনি। কোনো কাজও পাচ্ছেন না। অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে অভাব-অনটনে চলছে তাঁর সংসার। বসুন্ধরা গ্রুপের মাধ্যমে শুভসংঘ থেকে সেলাই প্রশিক্ষণ ও সেলাই মেশিন পেয়ে তিনি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছেন। এখন আর্থিকভাবে নিজের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবেন। অমি বলেন, ‘এইচএসসি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছি, কিন্তু পেটের ভাত জোগাড় করতে পারছি না। বসুন্ধরা গ্রুপ আমাকে সেলাই প্রশিক্ষণ দিয়ে সেলাই মেশিন দিয়েছে। এই প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছি।’ এইচএসসি পাস ঝর্ণা রাকসাম স্থানীয় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। হঠাৎ করে তাঁর চাকরি চলে যায়। পরিবারে আয়ের একমাত্র ব্যক্তির চাকরি চলে যাওয়ার খবর শুনে বসুন্ধরা শুভসংঘের স্থানীয় সদস্যরা তাঁকে বিনা মূল্যের সেলাই প্রশিক্ষণে ভর্তি করে নেন। তিন মাস প্রশিক্ষণ শেষে গত ১৭ নভেম্বর একটি সেলাই মেশিন পেয়েছেন। ঝর্ণা রাকসাম বলেন, ‘বড় ছেলে নার্সিং বিষয়ে পড়ালেখা করছে। কিন্তু হঠাৎ করেই আমার চাকরিটা চলে যাওয়ায় আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি। বসুন্ধরা শুভসংঘ থেকে সেলাই প্রশিক্ষণ ও সেলাই মেশিন পেয়ে আমি ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছি। সৃষ্টিকর্তা বসুন্ধরা গ্রুপের সবাইকে ভালো রাখুন।’

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

বসুন্ধরা গ্রুপকে অনেক ধন্যবাদ

    মো. মিজানুর রহমান, ওসি, পাটগ্রাম থানা লালমনিরহাট
শেয়ার
বসুন্ধরা গ্রুপকে অনেক ধন্যবাদ

প্রান্তিক পর্যায়ের সীমান্ত এলাকার দারিদ্র্যপীড়িত, অসহায় নারীদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সাহায্য করার জন্য বসুন্ধরা গ্রুপকে অনেক ধন্যবাদ ও সাধুবাদ জানাই। তারা পিছিয়ে পড়া নারীদের জন্য যে কাজ করছে, সেটা প্রশংসাযোগ্য। আমি দাবি জানাই, আমাদের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ভাগ্যোন্নয়নে যেন বসুন্ধরার মতো অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও এগিয়ে আসে। যারা এ ধরনের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের জন্য কাজ করবে, তাদের সাহায্য করবে।

এ ধরনের কাজের মাধ্যমে মানুষ স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে, তাদের পরিবারে ফিরবে সচ্ছলতা। এর মাধ্যমে সমাজের পাশাপাশি উপকৃত হবে আমাদের দেশ। পাটগ্রামে যে অসচ্ছল নারীরা সেলাইয়ে দক্ষ হয়ে উঠে মেশিন পেলেন, তাঁদের মাধ্যমে উপকৃত হবে আরো অনেকে। তাঁরা এখন আশপাশের অনেক নারীকে কাজ শেখাতে পারবেন।
বসুন্ধরার এই কার্যক্রম আরো ব্যাপকভাবে চলতে থাকুক, তাদের সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ুক।

মন্তব্য

নিঃসন্দেহে মহৎ কাজ

    দীন মোহাম্মদ আসাদুল্লাহ্, ফিশারিজ কোয়ারেন্টাইন অফিসার, বুড়িমারী স্থলবন্দর লালমনিরহাট
শেয়ার
নিঃসন্দেহে মহৎ কাজ

গ্রামীণ দরিদ্র পরিবারের নারীদের স্বাবলম্বী করতে বসুন্ধরা গ্রুপ যে কাজগুলো করছে, এটা নিঃসন্দেহে অনেক মহৎ কার্যক্রম। কারণ ছিন্নমূল, অসহায়, দুস্থ নারীদের মধ্যে প্রশিক্ষণ শেষে উপহার হিসেবে সেলাই মেশিন বিতরণ ব্যতিক্রমী আইডিয়া। এই মেশিনই একদিন অসচ্ছল নারীদের বাঁচার অবলম্বন হয়ে দাঁড়াবে। এ ধরনের উদ্যোগ আমার দেখা সব ভালো কার্যক্রমের মধ্যে একটি।

এমন কাজের উদ্যোক্তারা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখেন। সমাজের তথা দেশের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে এমন কাজের জন্য বসুন্ধরা গ্রুপকে অনেক ধন্যবাদ জানাই। বিশেষ করে ধন্যবাদ জানাই দেশের শেষ প্রান্তের সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোর একটি পাটগ্রামকে বেছে নেওয়ার জন্য। আমরা আশা করব, বসুন্ধরা শুভসংঘের মাধ্যমে বসুন্ধরা গ্রুপ পিছিয়ে পড়া এ ধরনের এলাকার আরো বেশিসংখ্যক অসচ্ছল-অসহায় নারীকে স্বাবলম্বী করার উদ্যোগ নেবে।
শুভ কামনা বসুন্ধরা গ্রুপের জন্য।

মন্তব্য

মেশিনটি একটি পরিবারের বাঁচার অবলম্বন

    মো. মাহমুদুন-নবী, ওসি, হাতীবান্ধা থানা লালমনিরহাট
শেয়ার
মেশিনটি একটি পরিবারের বাঁচার অবলম্বন

বিনামূল্যে তিন মাসের প্রশিক্ষণ শেষে সেলাই মেশিন বিতরণ আধুনিক ও টেকসই আইডিয়া। এর মাধ্যমে হাতীবান্ধা উপজেলার নারীদের, বিশেষ করে অনগ্রসর নারীদের জীবন ও জীবিকা এগিয়ে নেওয়ার জন্য বসুন্ধরা গ্রুপের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। এটি অত্যন্ত মহতী একটি উদ্যোগ। ভবিষ্যতেও এই শিল্পগোষ্ঠী তাদের মহৎ কাজগুলো আরো বেগবান করবেএমনটাই আশা করি।

তাদের এই ভালো কাজের মাধ্যমে যেন অনগ্রসর মানুষগুলো এগিয়ে যায়। একেকটি সেলাই মেশিন একেকটি পরিবারের বাঁচার অবলম্বন হতে পারে। এই মেশিন চালিয়ে অসচ্ছল এসব নারী ধনাঢ্য হয়ে না উঠলেও তাঁদের পরিবারগুলোতে সচ্ছলতা ফিরবে। কর্মহীন মানুষকে এভাবে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে গড়ে তুলে কর্মসংস্থান সৃষ্টির এই প্রক্রিয়া দেশ থেকে দারিদ্র্য দূর করার একটি পথ হতে পারে।
বসুন্ধরা গ্রুপ ও বসুন্ধরা শুভসংঘ তাদের এমন কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখুক। তাদের জন্য শুভ কামনা।

মন্তব্য

বসুন্ধরাকে দেখে অন্যরাও এগিয়ে আসুক

    মনোয়ার হোসেন লিটন, সেক্রেটারি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, পাটগ্রাম উপজেলা শাখা, লালমনিরহাট
শেয়ার
বসুন্ধরাকে দেখে অন্যরাও এগিয়ে আসুক

সেলাই মেশিন প্রদানের মাধ্যমে বসুন্ধরা গ্রুপ ও বসুন্ধরা শুভসংঘ অসহায় সুবিধাবঞ্চিত নারীসমাজকে এগিয়ে নিতে যে সেবা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, এটা অনুকরণীয় ও অনুসরণীয়। তাদের সাধুবাদ জানাই। বসুন্ধরা তাদের সেবা কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে, এটাই কামনা করছি। পাশাপাশি সব স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসহ সবাইকে মানবকল্যাণে এগিয়ে আসার আহবান জানাই।

অসহায় বা আর্থিকভাবে অসচ্ছল কিংবা কর্মহীন নারী-পুরুষের জন্য আমাদের সবাইকে সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে। প্রশিক্ষণ বা বিভিন্নভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষকে কর্মক্ষম করে গড়ে তুলতে পারলে সমাজ থেকে অভাব বিতাড়িত হবে। আবার এসব মানুষের জীবনে চলার কষ্টও দূর হবে। এ ধরনের কাজের মাধ্যমে মানুষ হিসেবে আমরাও আমাদের সামাজিক দায়িত্ব পালন করতে পারব, যা দেখে শিখবে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম।
বসুন্ধরা গ্রুপকে অনুসরণ করে অন্যরাও ভালো কাজে এগিয়ে আসুক।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ