ঢাকা, বুধবার ২৩ জুলাই ২০২৫
৮ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৭ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, বুধবার ২৩ জুলাই ২০২৫
৮ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৭ মহররম ১৪৪৭
বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে শুভসংঘ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র

আত্মনির্ভরশীল হতে চান অসচ্ছল নারীরা

সাহাদত জামান
সাহাদত জামান
শেয়ার
আত্মনির্ভরশীল হতে চান অসচ্ছল নারীরা
বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে চালু হয়েছে ‘শুভসংঘ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’

বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে চালু হয়েছে শুভসংঘ ্রপ্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এখানে তৃণমূল পর্যায়ের অসচ্ছল ও অবহেলিত নারীদের স্বাবলম্বী ও আত্মনির্ভরশীল করতে বিনা মূল্যে সেলাই প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। প্রথম ধাপে ১০ জন প্রশিক্ষণার্থী নিয়ে শুরু হয়েছে এই কার্যক্রম। প্রশিক্ষণ শেষে তাঁদের প্রত্যেককে বিনা মূল্যে সেলাই মেশিন প্রদান করবে বসুন্ধরা গ্রুপ।

আত্মনির্ভরশীল হওয়ার স্বপ্নে দিন গুনছেন গ্রামের এই অবহেলিত নারীরা।

তাঁদেরই একজন উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী মুক্তি আক্তার। পাঁচ বছর বয়সে মা-বাবার বিবাহবিচ্ছেদ হয়। বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন।

সত্মায়ের সংসারে টিকতে না পেরে মুক্তির ঠাঁই হয় দিনমজুর দাদার সংসারে। চেষ্টা করেও মায়ের আর কোনো খোঁজ পায়নি সে। অভাবের মাঝেও দাদা অনেক কষ্টে তাকে পড়ালেখা করিয়েছেন। বার্ধক্যজনিত কারণে এখন শয্যাশায়ী মুক্তির দাদা।
নিজেদের জমি বলতে কিছুই নেই। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধের সরকারি জমিতে থাকে। কলেজে ভর্তি হওয়ার কিছুদিন পরেই অর্থাভাবে মুক্তির পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। সংসার চালানোর দায়িত্বভার তার ওপর এসে পড়ে। অসুস্থ দাদার চিকিৎসা ও সংসারের খরচ চালানোর জন্য সে কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছিল না।
তখনই জানতে পারে শুভসংঘের বিনা মূল্যে সেলাই প্রশিক্ষণের কথা। ভর্তি হয় প্রশিক্ষণকেন্দ্রে। এখন সে স্বপ্ন দেখছে স্বাবলম্বী হওয়ার। প্রশিক্ষণ শেষ করে বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় সেলাই মেশিন পেয়ে কাজ করে অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে অভাবের বেড়াজাল থেকে মুক্তি পেতে চায় মুক্তি।

শুভসংঘ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন বাকপ্রতিবন্ধী নারী বেদেনা আক্তার। বয়স প্রায় ২৫ বছর। তাঁর বাবা একজন দিনমজুর। নদীভাঙনের কবলে পড়ে নিঃস্ব হয়েছেন তাঁরা। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধে একটি ছাপরাঘর বানিয়ে সেখানে কোনো রকমে দিন যাপন করছেন। প্রতিবন্ধী হওয়ায় বেদেনার বিয়ে হয়নি। সারা জীবন তাঁকে মা-বাবার সংসারে বোঝা হয়ে থাকতে হবেএই ভাবনায় সব সময়ই মন খারাপ থাকত তাঁর। এখন তিনি স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। কথা বলতে না পারলেও উচ্ছ্বসিত বেদেনা ইশারায় বোঝান, প্রশিক্ষণ শেষে সেলাই মেশিন পেয়ে নিজের ও পরিবারের ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে পারবেন। এখন সব সময় আনন্দে থাকেন।

৩০ বছরেরও বেশি সময় আগে সাহেনা বেগমের বিয়ে হয় উপজেলার সদর ইউনিয়নের তিতপরল গ্রামে। একসময় তাঁর স্বামীর জমিজমা ছিল, পুকুরে মাছ ছিল। মৌসুমের সময় সোনালি ধানে ভরে উঠত পুরো উঠান। ১৯৯৩ সালে যমুনা নদীর ভাঙনে ভিটামাটি হারায় সাহেনার পরিবার। সব কিছু হারিয়ে আশ্রয় নেন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধে। এরপর শুরু হয় তাঁদের সংগ্রামের জীবন। ঋণ করে তাঁর স্বামী স্থানীয় বাজারে কাপড়ের দোকান দেন। তার পর থেকে এই দোকানের আয়ে কোনোমতে সংসার চলছিল। তিন বছর আগে হঠাৎ তাঁর স্বামীর মৃত্যু হয়। এরপর অন্ধকার নেমে আসে সাহেনার জীবনে। সংসারের আয় একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। অর্থাভাবে একমাত্র ছেলের পড়ালেখাও বন্ধ করে দিতে হয়। মানুষের সাহায্য-সহযোগিতায় এখন তাঁরা কোনো রকমে জীবনধারণ করছেন। স্বামী মারা যাওয়ার পর এক দিনও তিন বেলা পর্যাপ্ত খাবার খাওয়ার সামর্থ্য হয়নি। তিনি এখন শুভসংঘ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে সেলাই প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় বিনা মূল্যে সেলাই মেশিন পেয়ে সেলাইয়ের কাজ করে তিন বেলা খাবারের স্বপ্ন দেখছেন।

নবম শ্রেণিতে পড়ার সময়ই বিয়ে হয় শাকিলা বেগমের। ঘটকের মুখরোচক কথায় প্রভাবিত হয়ে একই উপজেলার বেকার যুবকের সঙ্গে তাঁকে বিয়ে দেন তাঁর দরিদ্র বাবা। বিয়ের পর পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। বেকার স্বামীকে একটা চাকরি নিয়ে দিতে তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। চাকরির আশায় কয়েক বছর স্বামীকে নিয়ে ঢাকায়ও বসবাস করেছেন। চাকরি তাঁর স্বামীর কপালে জোটেনি। ঢাকায় থাকতে গিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। এখন বাড়িতে এসে অন্যের জমি বর্গা নিয়ে তাঁর স্বামী কৃষিকাজ শুরু করেছেন। স্বামীকে সহযোগিতা করতে তিনিও মাঠে কৃষিকাজ করেন। দুই সন্তানের মধ্যে মেয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে, ছেলের বয়স মাত্র এক বছর। মেয়ের লেখাপড়ার খরচ নিয়ে প্রতিনিয়ত দুশ্চিন্তায় ভোগেন। সংসারে সচ্ছলতা আনতে শুভসংঘ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে সেলাই প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। প্রশিক্ষণ শেষে বিনা মূল্যে সেলাই মেশিন পেয়ে সচ্ছল সংসার গড়তে প্রতিনিয়ত স্বপ্ন দেখছেন শাকিলা বেগম।

এমনই ১০ জন নারীকে শুভসংঘ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে সেলাইয়ের কাজ শেখানো হচ্ছে। কাজ শিখলেই তাঁরা বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে একটি করে সেলাই মেশিন পাবেন। সেলাইয়ের কাজ করে নিজেদের ভাগ্য বদল করার দৃঢ় প্রত্যয় তাঁদের সবার।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

বসুন্ধরা গ্রুপকে অনেক ধন্যবাদ

    মো. মিজানুর রহমান, ওসি, পাটগ্রাম থানা লালমনিরহাট
শেয়ার
বসুন্ধরা গ্রুপকে অনেক ধন্যবাদ

প্রান্তিক পর্যায়ের সীমান্ত এলাকার দারিদ্র্যপীড়িত, অসহায় নারীদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সাহায্য করার জন্য বসুন্ধরা গ্রুপকে অনেক ধন্যবাদ ও সাধুবাদ জানাই। তারা পিছিয়ে পড়া নারীদের জন্য যে কাজ করছে, সেটা প্রশংসাযোগ্য। আমি দাবি জানাই, আমাদের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ভাগ্যোন্নয়নে যেন বসুন্ধরার মতো অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও এগিয়ে আসে। যারা এ ধরনের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের জন্য কাজ করবে, তাদের সাহায্য করবে।

এ ধরনের কাজের মাধ্যমে মানুষ স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে, তাদের পরিবারে ফিরবে সচ্ছলতা। এর মাধ্যমে সমাজের পাশাপাশি উপকৃত হবে আমাদের দেশ। পাটগ্রামে যে অসচ্ছল নারীরা সেলাইয়ে দক্ষ হয়ে উঠে মেশিন পেলেন, তাঁদের মাধ্যমে উপকৃত হবে আরো অনেকে। তাঁরা এখন আশপাশের অনেক নারীকে কাজ শেখাতে পারবেন।
বসুন্ধরার এই কার্যক্রম আরো ব্যাপকভাবে চলতে থাকুক, তাদের সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ুক।

মন্তব্য

নিঃসন্দেহে মহৎ কাজ

    দীন মোহাম্মদ আসাদুল্লাহ্, ফিশারিজ কোয়ারেন্টাইন অফিসার, বুড়িমারী স্থলবন্দর লালমনিরহাট
শেয়ার
নিঃসন্দেহে মহৎ কাজ

গ্রামীণ দরিদ্র পরিবারের নারীদের স্বাবলম্বী করতে বসুন্ধরা গ্রুপ যে কাজগুলো করছে, এটা নিঃসন্দেহে অনেক মহৎ কার্যক্রম। কারণ ছিন্নমূল, অসহায়, দুস্থ নারীদের মধ্যে প্রশিক্ষণ শেষে উপহার হিসেবে সেলাই মেশিন বিতরণ ব্যতিক্রমী আইডিয়া। এই মেশিনই একদিন অসচ্ছল নারীদের বাঁচার অবলম্বন হয়ে দাঁড়াবে। এ ধরনের উদ্যোগ আমার দেখা সব ভালো কার্যক্রমের মধ্যে একটি।

এমন কাজের উদ্যোক্তারা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখেন। সমাজের তথা দেশের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে এমন কাজের জন্য বসুন্ধরা গ্রুপকে অনেক ধন্যবাদ জানাই। বিশেষ করে ধন্যবাদ জানাই দেশের শেষ প্রান্তের সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোর একটি পাটগ্রামকে বেছে নেওয়ার জন্য। আমরা আশা করব, বসুন্ধরা শুভসংঘের মাধ্যমে বসুন্ধরা গ্রুপ পিছিয়ে পড়া এ ধরনের এলাকার আরো বেশিসংখ্যক অসচ্ছল-অসহায় নারীকে স্বাবলম্বী করার উদ্যোগ নেবে।
শুভ কামনা বসুন্ধরা গ্রুপের জন্য।

মন্তব্য

মেশিনটি একটি পরিবারের বাঁচার অবলম্বন

    মো. মাহমুদুন-নবী, ওসি, হাতীবান্ধা থানা লালমনিরহাট
শেয়ার
মেশিনটি একটি পরিবারের বাঁচার অবলম্বন

বিনামূল্যে তিন মাসের প্রশিক্ষণ শেষে সেলাই মেশিন বিতরণ আধুনিক ও টেকসই আইডিয়া। এর মাধ্যমে হাতীবান্ধা উপজেলার নারীদের, বিশেষ করে অনগ্রসর নারীদের জীবন ও জীবিকা এগিয়ে নেওয়ার জন্য বসুন্ধরা গ্রুপের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। এটি অত্যন্ত মহতী একটি উদ্যোগ। ভবিষ্যতেও এই শিল্পগোষ্ঠী তাদের মহৎ কাজগুলো আরো বেগবান করবেএমনটাই আশা করি।

তাদের এই ভালো কাজের মাধ্যমে যেন অনগ্রসর মানুষগুলো এগিয়ে যায়। একেকটি সেলাই মেশিন একেকটি পরিবারের বাঁচার অবলম্বন হতে পারে। এই মেশিন চালিয়ে অসচ্ছল এসব নারী ধনাঢ্য হয়ে না উঠলেও তাঁদের পরিবারগুলোতে সচ্ছলতা ফিরবে। কর্মহীন মানুষকে এভাবে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে গড়ে তুলে কর্মসংস্থান সৃষ্টির এই প্রক্রিয়া দেশ থেকে দারিদ্র্য দূর করার একটি পথ হতে পারে।
বসুন্ধরা গ্রুপ ও বসুন্ধরা শুভসংঘ তাদের এমন কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখুক। তাদের জন্য শুভ কামনা।

মন্তব্য

বসুন্ধরাকে দেখে অন্যরাও এগিয়ে আসুক

    মনোয়ার হোসেন লিটন, সেক্রেটারি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, পাটগ্রাম উপজেলা শাখা, লালমনিরহাট
শেয়ার
বসুন্ধরাকে দেখে অন্যরাও এগিয়ে আসুক

সেলাই মেশিন প্রদানের মাধ্যমে বসুন্ধরা গ্রুপ ও বসুন্ধরা শুভসংঘ অসহায় সুবিধাবঞ্চিত নারীসমাজকে এগিয়ে নিতে যে সেবা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, এটা অনুকরণীয় ও অনুসরণীয়। তাদের সাধুবাদ জানাই। বসুন্ধরা তাদের সেবা কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে, এটাই কামনা করছি। পাশাপাশি সব স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসহ সবাইকে মানবকল্যাণে এগিয়ে আসার আহবান জানাই।

অসহায় বা আর্থিকভাবে অসচ্ছল কিংবা কর্মহীন নারী-পুরুষের জন্য আমাদের সবাইকে সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে। প্রশিক্ষণ বা বিভিন্নভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষকে কর্মক্ষম করে গড়ে তুলতে পারলে সমাজ থেকে অভাব বিতাড়িত হবে। আবার এসব মানুষের জীবনে চলার কষ্টও দূর হবে। এ ধরনের কাজের মাধ্যমে মানুষ হিসেবে আমরাও আমাদের সামাজিক দায়িত্ব পালন করতে পারব, যা দেখে শিখবে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম।
বসুন্ধরা গ্রুপকে অনুসরণ করে অন্যরাও ভালো কাজে এগিয়ে আসুক।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ