বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সংসদগুলোর প্রধান লক্ষ্য সুস্থ ও শিল্পসম্মত চলচ্চিত্র সম্পর্কে মানুষকে জানানো। চলচ্চিত্রের দর্শক তৈরি করাও গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ভালো পাঠক থাকলে যেমন ভালো বই বিক্রি হবে, তেমনি ভালো দর্শক থাকলে ভালো সিনেমা নির্মাণ সম্ভব। এটাকে একটা অপ্রাতিষ্ঠানিক চলচ্চিত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বলতে পারি।
স্বাধীনতার আগে ১৯৬৩ সালের দিকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক এর যাত্রা শুরু হয়েছিল। কিন্তু পরিস্থিতির বাস্তবতায় সেটা বেশিদিন কার্যকর ছিল না। পরে ১৯৬৯ সালে আবার চেষ্টা করা হয়। সেটাও তো দেশের অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কার্যকর হতে পারেনি।
স্বাধীনতার পরে নতুন দেশ ও চলচ্চিত্র নিয়ে দেশ-বিদেশের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় চলচ্চিত্র আন্দোলন বেগবান হয়। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি জেলায় চলচ্চিত্র সংসদ গড়ে ওঠে। কিন্তু জিয়াউর রহমান সাহেব যখন রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করেন, তখন চলচ্চিত্র সংসদগুলোর আন্দোলনের ওপর এক ধরনের কালিমা লেপনের চেষ্টা করা হয়।
বলা হয়, এরা বিদেশি দূতাবাস থেকে ফিল্মের সঙ্গে অর্থও আনে, তাদের মাধ্যমে বিদেশি রাজনৈতিক ভাবাদর্শ প্রচারের চেষ্টা করে। এ ধরনের অপবাদ দিয়ে চলচ্চিত্র সংসদ রেগুলেশন অ্যাক্ট তৈরি করা হয়। এই আইনের পরে এমনও হয়েছে যে থানা সদস্যের নাম-ঠিকানা পর্যন্ত খোঁজখবর করে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। এসব কারণে সংসদ আন্দোলন পিছিয়ে পড়ে।
আমি এক বছর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি।
তবে এরপর মনে হলো, যে ধরনের দায়িত্বশীলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয় সেই মনমানসিকতা অনেক সদস্যেরই নেই। এমন নানা প্রতিবন্ধকতায় এগিয়ে চলে ফেডারেশন। এই সময়ে এসে মনে হয়, কেউ কেউ ফেডারেশনের ক্ষমতা কুক্ষিগত করার চেষ্টা করছে। নেতৃত্বে আছেন বছরের পর বছর ধরে। দলাদলি করে দ্বিধাবিভক্ত করা হচ্ছে ফেডারেশনকে। এমন দুর্বলতা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠছে। এক নেতৃত্ব বেশিদিন থাকলে যেটা হয়, সরকারের সঙ্গে সুযোগ-সুবিধার জন্য যোগাযোগ, লিয়াজোঁর চেষ্টা করা হয়। বর্তমান সময়ে দেশি-বিদেশি ছবি খুব সহজেই অনলাইনে পাওয়া যায়। এখন এই আন্দোলন কোন দিকে যাবে, সেটা নতুনভাবে নির্ধারণ করা উচিত। টেকনিক্যাল যে পরিবর্তন, সেটা কিভাবে ব্যবহার করা যায় তা ভাবতে হবে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের দর্শক দেশ-বিদেশের ছবি কিভাবে দেখতে পারে বা গুরুত্ব অনুধাবন করানো সম্ভব, সেটা নিয়ে ভাবতে হবে।
বর্তমানে কিছু সদস্য আছেন, যাঁরা অনেক দিন ধরে দায়িত্বে আছেন। গণতান্ত্রিক চর্চাটা হচ্ছে না। পছন্দের লোকদের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। এটা কোনো সুস্থ ব্যাপার নয়। যেকোনো সাংস্কৃতিক আন্দোলন সরকারের সমালোচনা করে। সরকার নিয়ন্ত্রিত সাংস্কৃতিকপ্রতিষ্ঠানগুলোর ভালো-মন্দ নিয়ে কথা বলে। প্রতিবাদী আন্দোলনই এ ধরনের সংগঠনের অন্যতম লক্ষ্য। সেদিক থেকে এখন সরকারের সঙ্গে এক ধরনের আপসকামিতা চলছে। এখান থেকে বের হতে গেলে নেতৃত্বের পরিবর্তন দরকার।