আমাকে নিয়ে এখনো গীতিকার-সুরকাররা ভাবেন, প্লেব্যাকে ডাকেন, আমার আলাদা করে পরিকল্পনা করতে হয় না
ক্যারিয়ারের রজত জয়ন্তী কিভাবে উদযাপন করছেন?
আমি সব সময় সেলিব্রেশনের বিপক্ষে। ২০০৪ সালে শেরাটন হোটেলে বড় আয়োজনে কুমার বিশ্বজিত্দা গানের ২৫ বছর উদযাপন করেছেন। তখনই মনে মনে পরিকল্পনা করে রেখেছিলাম, আমার ক্যারিয়ারের যখন ২৫ বছর হবে তখন বিশ্বদার চেয়েও আরো জাঁকজমক আয়োজন করব। কিন্তু ভাগ্যের কী পরিহাস, বিশ্বদা আজ ছেলেকে নিয়ে জীবনযুদ্ধ করছেন।
উনার ছেলে এখনো কোমায়। আমার বন্ধুরাও বলছিল বড় আয়োজনে সেলিব্রেশন করতে, কিন্তু মন সায় দেয়নি। বন্ধুদের বললাম, যাঁর অনুষ্ঠান দেখে বিষয়টি আমার মাথায় এসেছে তাঁর এই দুঃসময়ে আমি উদযাপন করব না। আমি নিষেধ করলেও তো সবাইকে মানিয়ে রাখা যায় না। ‘হ্যালো সুপারস্টার’-এর কলিগরা অফিসে ছোট্ট একটা অ্যারেঞ্জমেন্ট করেছে। একদমই ঘরোয়া পরিবেশে ছোট পরিসরে এই গেট টুগেদার।
এই দিনে ‘প্রতিশোধ নেব না’ গানও প্রকাশ করেছেন। বিশেষ কোনো কারণে এই শিরোনাম?
না, না।
গানটি ঈদেই প্রকাশ করতে চেয়েছিলাম। গানটি বেশ ভালো হয়েছে, পরে চিন্তা করলাম রজত জয়ন্তীর দিনে প্রকাশ করি। গীতিকাররা গান লেখেন, তাঁরাই টাইটেল বের করেন। শুরুতে গানটির শিরোনাম ছিল ‘প্রতিশোধ’। এই নামে আমার আগের একটা গান আছে। পরে রাখা হয়েছে ‘প্রতিশোধ নেব না’। গানটির মূল উপজীব্য হলো প্রতিশোধ না নেওয়া। প্রেম শেষ, ধোঁকা খেয়েছি, তবু প্রতিশোধপরায়ণ না হওয়াই এই গানের বিষয়। গানটির কথা লিখেছেন আহমেদ রিজভী, সুর করেছেন বেলাল খান, সংগীত শোভন রায়।
শওকত আলী ইমনের হাত ধরে গানে এলেন, তাঁকে নিয়ে সব সময়ই আপনি শ্রদ্ধায় অবনত। এই দিনে তাঁকে নিয়ে কী বলবেন?
গান গাইতে হলে একটা লক্ষ্য থাকতে হয়। এভাবে গান শিখবেন, ওখানে গিয়ে শিখবেন, গানে কিভাবে সময় দেবেন—এগুলোর কিছুই আমার মধ্যে ছিল না। গানের জন্য কোনো ফাইটই করতে হয়নি আমার। ইমন ভাই আমার গানের গলা পছন্দ করলেন, বললেন তোমার গান শেখার দরকার নেই। তুমি বেটার বড় বড় আর্টিস্টরা কিভাবে গান করেন সেটা ফলো করো। মাইক্রোফোনবান্ধব হও। সিনিয়রদের প্রায় দেড় বছর ফলো করেছি। গানের মানুষের সঙ্গে এই থাকা, হাঁটাচলা—সব কিছুর সুযোগই ইমন ভাই করে দিয়েছেন। সেটা ‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’ থেকে অ্যাপ্লিকেবল হয়েছে। তাই আমার গানের জীবনে উনার অবদান তো আসলে বলে শেষ করা যাবে না। আমার যত পরিপূর্ণতা সবটাই শওকত আলী ইমনের শিক্ষা। শওকত আলী ইমন ভাই শুরু থেকেই ফিল্মের প্লেব্যাকের ট্রেনিং দিয়ে আসছিলেন। ওই ট্রেনিংটা আমার কাজে লেগেছিল ‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’ করতে এসে। এখন পর্যন্ত ওই ট্রেনিংয়েরই অ্যাপ্লাই করি।
প্লেব্যাকের সেই টোটকা যদি জানাতেন...
ফিল্মের গানে তো আমাদের কোনো অপশন থাকে না। সিকোয়েন্স অনুযায়ী গাইতে হয়। গাওয়ার আগে আমাদের নায়ক-নায়িকা হতে হবে। ইমন ভাই এটা এক দিনে আমাকে বোঝাতে পারেননি। প্রায় দুই বছর একনিষ্ঠ চেষ্টার পর আমাকে প্লেব্যাক সিঙ্গার বানাতে পেরেছেন।
আপনার ক্যারিয়ারে শওকত আলী ইমনের পর আর কার কার অবদান আছে বলে মনে করেন?
প্রথমেই বলতে হয় ইথুন বাবুর নাম। এ ছাড়া রাজেশ, প্রদীপ সাহা, শহীদুল্লাহ ফরায়েজি, পল্লব স্যান্যাল, আজমীর বাবু—এমন অনেক নামই বলতে হবে। অর্ধশতাধিক গীতিকার, সংগীত পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছি। কারো সঙ্গে হয়তো লম্বা সময়ের যুগলবন্দি ছিল। কিন্তু কখনোই গত্বাঁধা ছিলাম না। বিশ্বাস করতাম টিকে থাকতে হলে ভিন্নতার বিকল্প নেই। এ জন্য অনেক মানুষের সঙ্গে আমার কাজ হয়েছে। এখানে সাউন্ডটেকের অবদান অনস্বীকার্য। প্রতিষ্ঠানটি আমাকে যে স্বাধীনতা দিয়ে বেড়ে উঠতে সাহায্য করেছে, সেটা বলতেই হবে। ফিন্যানশিয়ালি, মেন্টালি যত রকম সুবিধা চেয়েছি পেয়েছি। প্রতিষ্ঠানটির এই ভরসাটা ছিল, আসিফ যা করবে তাই। সাউন্ডটেকের স্বাধীনতা আমার কনফিডেন্স লেভেল অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে।
গান নিয়ে এখনকার পরিকল্পনা কী?
আমার মতো করে তো গেয়ে যাচ্ছি। তবে গানের সংখ্যা কমিয়েছি। আগে ছোটখাটো ইউটিউব চ্যানেলের অফার এলে অনেক সময় গাইতামও। এসব বন্ধ করে দিয়েছি। এখন লিরিক ও সুর পছন্দ না হলে গাই না। আমি তো নিজেই প্রডাকশন করছি। বিদেশি কিছু কম্পানির সঙ্গে কাজ করছি। সেখানে কাজের স্বাধীনতা আছে। আমাকে নিয়ে এখনো গীতিকার-সুরকাররা ভাবেন, প্লেব্যাকে ডাকেন, আমার আলাদা করে পরিকল্পনা করতে হয় না। ২৫ বছর পরে এসে সমানতালে গাওয়াটাও অনেক বড় ব্যাপার।
পাওয়া-না পাওয়ার হিসাব করেন?
আমার পুরোটাই প্রাপ্তি। কখনো ভাবিনি গায়ক হব। এই প্রাপ্তিটাকে দেশ ও ইন্ডাস্ট্রির কাজে লাগাতে চাই।