<p>রাজশাহী নগরীর তালাইমারী মোড় এলাকায় নির্মাণ হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধু চত্বর’। এর ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩০ কোটি টাকা। নানা অনিয়মের মাধ্যমে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজটি দেওয়া হয়েছে বলে শুরু থেকেই অভিযোগ। এ নিয়ে কালের কণ্ঠে দুটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে। এদিকে কাজ শুরুর পরপরই ঠিকাদারকে দেড় কোটি টাকা বিল পরিশোধ করা হয়েছে বলে আরেকটি অভিযোগ উঠেছে। আর এ নিয়ে প্রতিবাদ করায় প্রকল্প পরিচালককে হঠাৎ বদলি করে দেওয়া হয়েছে। আগের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) ও নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল তারিককে পরিবর্তন করে নতুন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দুর্নীতির মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামি সহকারী প্রকৌশলী শেখ কামরুজ্জামানকে। একটি বৃহৎ প্রকল্পের শুরুতেই এমন তুঘলকি কাণ্ড নিয়ে আরডিএজুড়ে চরম অস্থিরতা তৈরি হয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।</p> <p>সূত্র মতে, রাজশাহী নগরীর তালাইমারী এলাকায় ‘বঙ্গবন্ধু চত্বর’ নির্মাণের জন্য নানা শর্ত জুড়ে দিয়ে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দেওয়া হয়। হিসাব করে দেখা গেছে, ‘দি ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড আর্কিটেক’ নামের ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ায় সরকারের ক্ষতি হবে অন্তত তিন কোটি টাকা। কার্যাদেশ পাওয়ার পর গত জুন মাসের শেষের দিকে কাজ শুরু করেন ঠিকাদার। কিন্তু নামমাত্র কিছু কাজ করেই কয়েক দিনের মাথায় তিনি দেড় কোটি টাকার বিল দাখিল করেন আরডিএ কর্তৃপক্ষের কাছে। তবে তৎকালীন প্রকল্প পরিচালক আব্দুল্লাহ আল তারিক ওই বিল দিতে অস্বীকার করেন।</p> <p>রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) সূত্র মতে, ঠিকাদার এখন পর্যন্ত যে কাজ করেছেন তাতে এক কোটি টাকার কাজও হয়নি। কিন্তু গত জুন মাসেই দেড় কোটি টাকার বিল দাখিল করে তা উত্তোলনের জন্য প্রভাব খাটাতে থাকেন। কিন্তু সেই টাকা দিতে অস্বীকার করেন তৎকালীন প্রকল্প পরিচালক আব্দুল্লাহ আল তারিক। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মন্ত্রণালয়ে তদবির করে আব্দুল্লাহ আল তারিককেই বদলির ব্যবস্থা করেন প্রভাবশালী ঠিকাদার চঞ্চল চৌধুরী। চলতি মাসে নতুন প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব দেওয়া হয় আরডিএর সহকারী প্রকৌশলী শেখ কামরুজ্জামানকে। অথচ কামরুজ্জামানের নামে দুর্নীতির মামলা এখনো চলমান। তিনি মামলায় একজন চার্জশিটভুক্ত আসামি। নিয়ম অনুযায়ী চার্জশিটভুক্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার কথা। কিন্তু তা না করে তাঁকে বৃহত্তর এই প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। আর এ নিয়ে খোদ আরডিএর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে চরম অস্থিরতা।</p> <p>সূত্র মতে, ‘দি ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড আর্কিটেক’ নামের ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি পাওয়ার জন্য শুরু থেকেই নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করে চলেছিল। ফলে দরপত্রে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অমান্য করে বাড়তি অন্তত সাতটি শর্ত জুড়ে দেয় আরডিএ কর্তৃপক্ষ। এরপর কাজ শুরুর পরপরই অতিরিক্ত বিল উত্তোলন নিয়ে তৈরি হওয়া জটিলতার জেরে ঠিকাদারের চাপে প্রকল্পের পরিচালককে বদলির ঘটনায় আরো উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।</p> <p>প্রসঙ্গত, গত বছরের ২০ নভেম্বর আরডিএ ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চত্বর’ নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করে। ওই দরপত্রে পছন্দের ঠিকাদারের বাইরে যাতে অন্য কেউ অংশ নিতে না পারেন—সে কারণে অন্তত সাতটি শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়।</p> <p>প্রকল্প পরিচালক পরিবর্তন সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল তারিক কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে বর্তমান প্রকল্প পরিচালক (পিডি) শেখ কামরুজ্জামান বলেন, ‘মন্ত্রণালয় থেকে আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সেই হিসেবে আমি কাজটির তদারকি করছি। এরই মধ্যে ঠিকাদার গত জুন মাসে প্রায় দেড় কোটি টাকার বিল উত্তোলন করেছেন। তবে কাজটি চলমান রয়েছে।’</p>