<p>গতকাল ছিল ছিটমহল বিনিময়ের চার বছর। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্বাক্ষরিত স্থলসীমান্ত চুক্তি অনুযায়ী ২০১৫ সালের ১ আগস্ট থেকে বিলুপ্ত হয় ছিটমহল। এতে ৬৮ বছর পর বাংলাদেশের লালমনিরহাট, নীলফামারী, পঞ্চগড় ও কুড়িগ্রামের অভ্যন্তরে থাকা ১১১টি ভারতীয় ছিটমহল যুক্ত হয় এ দেশের ভূখণ্ডের সঙ্গে। বিলুপ্ত ছিটমহলবাসী এ দিনটিকে ‘ছিটমহল দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে ছিটমহলগুলোতে ছিটমহল বিনিময়ের চার বছর পূর্তি উপলক্ষে নানা কর্মসূচি পালন ও প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির বিস্তারিত তুলে ধরা হলো—</p> <p>বাংলাদেশের ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হওয়া ১১১ ছিটমহলের মধ্যে পঞ্চগড়ের রয়েছে ৩৬ ছিটমহল। ছিটমহল বিনিময়ের দিনটিকে প্রতিবছর ‘ছিটমহল দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে বিলুপ্ত ছিটমহলের বাসিন্দারা। এবার তারা ছিটমহল বিনিময়ের দিনটিকে ‘ছিটমহল স্বাধীনতা দিবস’ কিংবা ‘ছিটমহল বিনিময় দিবস’ নামে জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণার দাবি তুলেছে। ছিটমহলে গড়ে ওঠা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এনটিআরসিএর শর্ত শিথিল করে এমপিওভুক্তকরণ এবং ছিটমহল আন্দোলনকারীদের তালিকা মুক্তিযোদ্ধাদের মতো গেজেটভুক্ত করার দাবি জানিয়েছে তারা। এসব দাবিতে গতকাল দুপুরে তারা পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করে। এর আগে বিলুপ্ত ছিটমহলের সহস্রাধিক নতুন বাংলাদেশি পঞ্চগড় জেলা শহরের শের-ই-বাংলা পার্ক এলাকায় জড়ো হয়। পরে সেখান থেকে একটি আনন্দ শোভাযাত্রা বের করা হয়।</p> <p>উন্নয়নে বদলে গেছে দাশিয়ারছড়া : এদিকে মাত্র চার বছরে ঘুচে গেছে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার দাশিয়ারছড়া ছিটমহলবাসীদের ৬৮ বছরের বঞ্চনা। ঘরে ঘরে বিদ্যুতের আলো, প্রশস্ত মসৃন পাকা রাস্তা, ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, সরকারি উদ্যোগে নির্মিত সুদৃশ্য মসজিদ-মন্দির, বিটিসিএল অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে টেলিফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ, ডিজিটাল সেন্টার, স্কুল-কলেজ নির্মাণসহ নানা উন্নয়নে বদলে গেছে এক নতুন জনপদ দাশিয়ারছড়া। কালীরহাটের বাসিন্দা মনির হোসেন বলেন, ‘এত অল্প সময়ে এত উন্নয়ন হইবে হামরা স্বপ্নেও ভাবি নাই।’ তবে আক্ষেপের জায়গাও আছে, দাশিয়ারছড়ায় প্রায় সাত হাজার লোক বাস করলেও পৃথক ইউনিয়নের দাবি উপেক্ষিত থেকেছে।</p> <p>লালমনিরহাটের ছিটমহলবাসীর বেড়েছে জীবনমান : লালমনিরহাট সদর, হাতীবান্ধা ও পাটগ্রামে ছিল ৫৯টি ভারতীয় ছিটমহল। এর মধ্যে পাটগ্রামে সর্বোচ্চ ৫৪টি এবং বাকি দুটি উপজেলায় দুটি করে ছিটমহল ছিল। যা এখন বিলুপ্ত হয়ে জেলার বিভিন্ন গ্রামের সঙ্গে মিশে গেছে। আর এগুলোতে বসবাসকারী এক সময়ের ‘ভারতীয়দের’  বেশির ভাগই বাংলাদেশি নাগরিকত্ব বেছে নিয়ে থেকে গেছে এ দেশে।</p> <p>সেখানকার বাসিন্দারা জানায়, নাগরিকসেবা তো দূরের কথা, নাগরিকত্বই ছিল না তাদের। তারা এখন বাংলাদেশি প্রায় সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। ছিটমহল বিনিময়ের চার বছরের মধ্যে বদলে গেছে সব কিছু। ঘরে ঘরে বিদ্যুতের আলো। কাঁচা ভাঙাচোরা রাস্তাগুলো এখন পাকা হয়েছে। সরকারি উদ্যোগে হয়েছে কমিনিউটি ক্লিনিক ও কমিনিউটি সেন্টার। সরকারিভাবে বাড়ি বাড়ি দেওয়া হয়েছে সোলার প্যানেল, নলকূপ ও টয়লেট। (প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন নীলফামারীর ভূবন রায় নিখিল, পঞ্চগড়ের লুৎফর রহমান, কুড়িগ্রামের আব্দুল খালেক ফারুক, লালমানিরহাটের হায়দার আলী বাবু ও হাসান মাহমুদ।)</p> <p> </p>