<p>রাজশাহী নগরীর হাড়ুপুর ও নবগঙ্গা এলাকায় সম্প্রতি পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রায় ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে নদীতীর সংরক্ষণের কাজ সম্পন্ন করেছে। এর কাছাকাছি এলাকায় বাস্তবায়ন হচ্ছে আরো কয়েক শ কোটি টাকা ব্যয়ের মেগাপ্রকল্প, যার মধ্যে রয়েছে রাজশাহী বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক। অন্যদিকে পদ্মায় চলছে ড্রেজিংয়ের কাজ। কিন্তু জেলা প্রশাসন এসব এলাকায় বালুঘাট ইজারা দেওয়ায় বড় প্রকল্পগুলো হুমকির মুখে পড়েছে।</p> <p>পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, নগরীর হাড়ুপুর ও নবগঙ্গা এলাকায় বালুঘাট ইজারা না দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসনকে আগেই অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু জেলা প্রশাসন সম্প্রতি অন্যান্য পয়েন্টের সঙ্গে এই দুটি পয়েন্টের বালুঘাটও ইজারা দিয়েছে। ফলে পদ্মার তীরবর্তী এলাকায় নির্মাণাধীন মেগা প্রকল্পগুলো নদীভাঙনের কবলে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।</p> <p>সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জেলা বালুমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির উদ্যোগে গত ১৮ মার্চ পদ্মা নদীর ১১টি বালুঘাট ইজারা দেয়। এর মধ্যে নগরীর পশ্চিমের হাড়ুপুর ও নবগঙ্গা বালুমহাল এলাকা দুটি ইজারা দিয়ে পাঁচ কোটি দুই লাখ টাকা আয় করেছে জেলা প্রশাসন। এই দুটি বালুমহাল পদ্মা নদীর তীরবর্তী কয়েক শ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নাধীন মেগা প্রকল্প ‘রাজশাহী হাইটেক পার্ক’ এলাকায় অবস্থিত। এ ছাড়া আলোচিত বালুমহাল এলাকায় পদ্মার ভাঙনরোধে সম্প্রতি ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে নদীতীর সংরক্ষণের কাজ সম্পন্ন করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। একই সঙ্গে পদ্মার উজানে সোনাইকান্দি থেকে মাঝারদিয়াড় এলাকায় ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে নদীতে ড্রেজিংয়ের কাজও শুরু হয়েছে। এসব প্রকল্পের এলাকায় আবারও বালুঘাট ইজারা দেওয়ার ফলে এলাকাবাসীসহ রাজশাহীর সচেতন মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।</p> <p>সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, কারবারিরা পদ্মার বুক থেকে বড় বড় নৌকায় করে বালু আনছে। পরে ড্রেজার মেশিন লাগিয়ে নৌকা থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে এসব প্রকল্প এলাকার নদীতীরেই বালু জমা করছে। পাইপ ছিদ্র হয়ে দিন-রাত ভেজা বালু পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের ওপর দিয়ে চুয়ে আবার নদীতে পড়ছে। এতে শহর রক্ষা বাঁধের বিপুল ক্ষতি হচ্ছে।</p> <p>পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা আরো জানান, নগরীর হাড়ুপুর ও নবগঙ্গা এলাকায় শিগগিরই নদী ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হবে। এই এলাকায় বালু ব্যবসায়ীদের শত শত নৌকা আসা-যাওয়ার কারণে প্রকল্পের কাজ বিঘ্নিত হবে। সুষ্ঠুভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নের স্বার্থে হাড়ুপুর-নবগঙ্গা বালুঘাটের ইজারা বাতিল করা জরুরি বলে মনে করছেন তাঁরা। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, পাঁচ কোটি টাকা আয় করতে গিয়ে সরকারের জনস্বার্থমূলক শত শত কোটি টাকার প্রকল্পগুলো ঝুঁকির মুখে পড়েছে।</p> <p>স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, হাইটেক প্রকল্পের কোলঘেঁষে পর্বত সমান উঁচু করে সারা বছর বালু জমা করে রাখা হচ্ছে। সেখান থেকে প্রতিদিন শত শত ট্রাক আর ডাম্পার ভরে বালু পাঠানো হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। এসব ভারী ট্রাক আর ডাম্পারের কারণে প্রকল্প এলাকাসহ হাড়ুপুর ও নবগঙ্গা এলাকার শহর রক্ষা বাঁধ ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়েছে। নগরীর ভেতরে এভাবে উঁচু করে বালু জমা রাখার কারণে এলাকার পরিবেশও নষ্ট হচ্ছে। এলাকার বাসিন্দারা দরজা লাগিয়ে ঘরের ভেতরে থাকলেও অল্প সময়েই বালুতে নষ্ট হচ্ছে বিছানাপত্র।</p> <p>রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল আলম বলেন, ‘পাউবোর পক্ষ থেকে এসব মেগা প্রকল্প এলাকায় বালুঘাট ইজারা না দেওয়ার জন্য আগেও একাধিকবার জেলা প্রশাসনকে অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু তারা শোনেনি।’</p> <p>রাজশাহীর জেলা প্রশাসক ও জেলা বালুমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এস এম আব্দুল কাদের জানান, ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে এসব বালুমহাল ইজারা দেওয়ার নির্দেশ এসেছে। ফলে জেলা প্রশাসন শুধু নিয়মমাফিক দায়িত্ব পালন করেছে।</p> <p> </p>