ঢাকা, রবিবার ১৩ জুলাই ২০২৫
২৯ আষাঢ় ১৪৩২, ১৭ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, রবিবার ১৩ জুলাই ২০২৫
২৯ আষাঢ় ১৪৩২, ১৭ মহররম ১৪৪৭
রাজবাড়ীতে তিন ছাত্রের উদ্ভাবন

রোবট খুঁজবে মানুষ

জাহাঙ্গীর হোসেন, রাজবাড়ী
জাহাঙ্গীর হোসেন, রাজবাড়ী
শেয়ার
রোবট খুঁজবে মানুষ
রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র সুদীপ্ত মণ্ডল (ডানে) ও মেহেরাব চৌধুরী দেখাচ্ছে তাদের তৈরি দুর্যোগকালীন রোবট কার। ছবি : কালের কণ্ঠ

ভূমিকম্পসহ নানা কারণে ধসে পড়া ভবনে আটকে থাকা জীবিত অথবা মৃত মানুষ খুঁজবে রোবট। শুধু তা-ই না, সেখানে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক কোনো গ্যাসের উপস্থিতি রয়েছে কি না তা মুহূর্তের মধ্যে জানাবে। যন্ত্রটির নাম ‘দুর্যোগকালীন রোবট কার’। এটি উদ্ভাবন করেছে রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের তিন ছাত্র।

তারা হচ্ছে সুদীপ্ত মণ্ডল, মেহেরাব চৌধুরী ও গোলাম মোর্তুজা। তারা যন্ত্রটি সহজে চালানোর জন্য একটি অ্যাপ্লিকেশনস (অ্যাপস) বানিয়েছে। সাধারণ মানুষ মোবাইল ফোনে এই অ্যাপসের সাহায্যে রোবটটি ব্যবহার করতে পারবে।

সুদীপ্তর গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুরে।

তার বাবা নির্মল কুমার মণ্ডল রাঙামাটি বন বিভাগের কর্মকর্তা এবং মা শষ্ঠি রানী মণ্ডল গৃহিণী। তারা জেলা শহরের ৩ নম্বর বেড়াডাঙ্গায় ভাড়া বাসায় থাকে। অন্যদিকে মেহেরাব জেলা শহরের ২ নম্বর বেড়াডাঙ্গার বাসিন্দা ঠিকাদার আতিকুল ইসলাম ও গৃহিণী রেশমা চৌধুরীর ছেলে। এ ছাড়া মোর্তুজার বাবা আব্দুর রাজ্জাক মিয়া বরগুনা জেলা সমবায় কর্মকর্তা ও মা মনিরা নাহার গৃহিণী।
তারা জেলা শহরের ৩ নম্বর বেড়াডাঙ্গার স্থায়ী বাসিন্দা।

সুদীপ্ত মণ্ডল ও মেহেরাব চৌধুরী জানায়, সাভারের রানা প্লাজার ধসে হতাহত দেখে তারা কেঁদেছে। তখনই তাদের মাথায় আসে ভবনধস বা দুর্যোগে আটকে পড়া মানুষের উদ্ধারে কিছু করা যায় কি না। দিনের পর দিন বিষয়টি নিয়ে তারা আলোচনা করেছে। অনলাইনে পড়াশোনা করেছে।

একপর্যায়ে তারা একটি রোবট তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়। এটি যেমন চলতে পারবে, তেমনি তথ্যও দিতে পারবে। উঁচু-নিচু, ভাঙাচোরা, দুর্গম পথে এগিয়ে যাবে এবং খুঁজে বের করবে মৃত ও জীবিত ব্যক্তিকে। সেই সঙ্গে যদি সেখানে কোনো বিষাক্ত গ্যাস থাকে, তবে তার মাত্রাও বলে দেবে। একই সঙ্গে আহত ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলা যাবে। চলাচলের সুবিধার্থে তারা এটিকে গাড়িতে রূপ দিয়েছে।

গতকাল রবিবার সকালে সুদীপ্ত মণ্ডলের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, তার পড়ার কক্ষটি ছোটখাটো একটি ইলেকট্রনিকস সরঞ্জাম মেরামতের কারখানার মতো। মেঝে, পড়ার টেবিল, চেয়ার, খাট, বইয়ের তাক সব জায়গায় ছড়ানো-ছিটানো রয়েছে নানা রকম সরঞ্জাম। কক্ষের এমন অবস্থা কেন? প্রশ্ন করলে সে বলে, ‘আমি ছোট থেকেই এমন। পড়াশোনার পাশাপাশি নানা রকম সামগ্রী বানাতে ভালোবাসি। প্রথম প্রথম মা-বাবা বকাঝকা করতেন। এখন তা করেন না। বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও অনেক খুশি। তাঁরা আমাকে উৎসাহ দিচ্ছেন। যার অংশ হিসেবে এর আগে আমরা ড্রোন বানিয়ে বিদ্যালয়ে আকাশে উড়িয়েছি।’

কিভাবে তৈরি হলো দুর্যোগকালীন রোবট? সুদীপ্ত জানায়, তারা প্রথমে চার চাকার একটি বড় খেলনা গাড়ি সংগ্রহ করে। গাড়িটিতে তিনটি মাইক্রোকন্ট্রোলার, পাঁচটি মোটর, একটি স্ক্রিন, দুটি টু সেল লিপো (ব্যাটারি), একটি ক্যামেরা, একটি স্পিকার, একটি মাউথ, শোনার সেন্সর, হিউম্যান ডিটেকশন (মানব শনাক্তকারী), পি সেন্সর (বস্তু শনাক্তকারী), স্মোক সেন্সর (ধোঁয়া শনাক্তকারী), মেটাল ডিটেক্টর (ধাতু শনাক্তকারী) লাগানো হয়। বর্তমানে গাড়িটি পাঁচ মিটার এলাকার মধ্যে চলাচল করতে পারে। যা ব্লুটুথের মাধ্যমে তার ছাড়া নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তাদের তৈরি অ্যাপস যেকোনো অ্যানড্রয়েট মোবাইল ফোনে ডাউনলোড করে যন্ত্রটি ব্যবহার করা সম্ভব। এটা অনেকটা ভিডিও গেম খেলার মতো। মোবাইল ফোন ডানে-বাঁয়ে ঘোরালে গাড়িটিও দিক পরিবর্তন করে চলে। তবে দুটি অ্যানড্রয়েট মোবাইল ফোন হলে রোবটের নিয়ন্ত্রণ আরো ভালোভাবে করা যায়। কারণ একজন গাড়িটি পরিচালনা করবে, আরেকজন নির্দিষ্ট সংকেতগুলো প্রয়োগ করবে। এতে সুষ্ঠুভাবে কাজ সম্পাদন করা যাবে। এটি তৈরি করতে তাদের ব্যয় হয়েছে মাত্র ১০ হাজার টাকা।

সুদীপ্ত বলে, গাড়িটি যেকোনো ধ্বংসস্তূপে প্রবেশ করালে সে তাৎক্ষণিক ছবিসহ ভেতরের পরিস্থিতি জানাতে শুরু করবে। সেই সঙ্গে ওই স্থানে কোনো মৃত ও জীবিত ব্যক্তি এবং গ্যাসের ঘনত্ব ও মানবদেহের জন্য ক্ষতির দিক জানাবে। আহত ব্যক্তি যদি কথা বলে, তবে তা নিয়ন্ত্রকের কাছে পৌঁছে দেবে। নিয়ন্ত্রক কথা বললে তাও আহত ব্যক্তি শুনতে পারবে।

সহ-উদ্ভাবক মেহেরাব বলে, ‘গাড়িটিকে আমরা চার চাকার পরিবর্তে আট চাকায় রূপান্তরের চেষ্টা করছি। এর সামনের অংশে লেজার সিস্টেমও লাগানো যাবে। যাতে এটি সামনে থাকা লোহার দ্রব্য কেটে পথ চলতে পারে। এ সিস্টেমটি সাবমেরিনেযুক্ত করা হলে লঞ্চডুবিতে নিহত ব্যক্তির লাশ দ্রুত উদ্ধার করা সম্ভব। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দেশ ও দেশের বাইরের যেকোনো স্থান থেকে এই রোবট নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।’

সুদীপ্তর মা শষ্ঠি রানী মণ্ডল বলেন, ‘ছেলেবেলায় বকাঝকা করতাম। এখন বুঝতে পারছি আমার ছেলে অসম্ভব মেধাবী। নিত্যনতুন সামগ্রী তৈরি করাই তার নেশা। সারাদিন ওই সব সরঞ্জাম নিয়ে থাকে। অনেক সময় নাওয়া-খাওয়া ভুলে যায়। আমার আশা, সুদীপ্ত একদিন বড় বিজ্ঞানী হবে। দেশ ও বিদেশে তার নাম ছড়িয়ে পড়বে।’

রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী শিক্ষক রেজাউল করিম বলেন, ‘ওরা আমার মেধাবী ছাত্র। ওদের প্রতিটি কাজের সঙ্গে থাকছি। ব্যক্তিগতভাগে এবং বিদ্যালয় থেকে আর্থিক সহযোগিতার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। দুর্যোগকালীন রোবট উন্নয়নে সরকারি বা বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ওরা অনেক দূর এগিয়ে যাবে।’

এ বিষয়ে গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের সভাপতি আক্কাস আলী বলেন, ‘যেহেতু ওরা মোবাইল ফোনের অ্যাপস তৈরি করেছে, এটা খুশির খবর। আর এটা দিয়ে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করছে, এটা আরো খুশির খবর। এই উদ্ভাবন দেশের কাজে লাগবে। দেশ উপকৃত হবে। তাদের উদ্ভাবনে আমি উচ্ছ্বসিত। তাদেরকে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।’

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ফেরিওয়ালা

শেয়ার
ফেরিওয়ালা
গ্রামীণ জনপদে গৃহস্থালি কাজে বাঁশের তৈরি নানা সামগ্রীর চাহিদা থাকায় হাট-বাজারের পাশাপাশি গ্রামে গ্রামে ফেরি করেও বিক্রি হয়। বাঁশের তৈরি নানা সামগ্রী নিয়ে সাইকেলে চেপে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে ছুটছেন ফেরিওয়ালা জীবন কৃষ্ণ। বৃহস্পতিবার বগুড়ার নন্দীগ্রামে। ছবি : ঠাণ্ডা আজাদ
মন্তব্য

বিদ্যুৎস্পৃষ্টে বিদ্যুতের লাইনম্যানের মৃত্যু

জামালপুর প্রতিনিধি
জামালপুর প্রতিনিধি
শেয়ার
বিদ্যুৎস্পৃষ্টে বিদ্যুতের লাইনম্যানের মৃত্যু

জামালপুরের মেলান্দহে কর্মরত অবস্থায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে কাওসার আলী (৩৫) নামে এক পল্লী বিদ্যুতের লাইনম্যানের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুরে উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নের আদবারিয়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত কাওসার আলী নেত্রকোনা জেলার শ্যামগঞ্জ এলাকার আবুল হাদির ছেলে। তিনি মেলান্দহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে লাইনম্যান পদে কর্মরত ছিলেন।

জানা গেছে, কাওসার উপজেলা মাহমুদপুর এলাকায় একটি বাড়িতে বৈদ্যুতিক মিটারের লাইন মেরামতের কাজ করার সময় হঠাৎ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। পরে তাঁর সহকর্মী তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথেই মৃত্যু হয়।

 

মন্তব্য
সংক্ষিপ্ত

চাকরি মেলায় তরুণ তরুণীর ভিড়

রংপুর অফিস
রংপুর অফিস
শেয়ার
চাকরি মেলায় তরুণ তরুণীর ভিড়

রোদে ঝলসে যাওয়া মুখ, ঘাম আর ক্লান্তি। কাঁধে ব্যাগ, হাতে সিভি। দীর্ঘ লাইন। শত শত চাকরিপ্রত্যাশীকে ডিঙিয়ে নিজের যোগ্যতা প্রমাণে এগিয়ে আসছেন হাজারো তরুণ-তরুণী।

গতকাল শনিবার সকালে রংপুর পুলিশ লাইনস মাঠে ইউসেফ আয়োজিত চাকরি মেলায় এই দৃশ্য দেখা যায়। দেশের ২৪টি বেসরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান জনবল নিয়োগ দিতে চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে সিভি সংগ্রহ করেছিল।  অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রংপুর জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সাল। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এনজিও ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. দাউদ মিয়া প্রধান অতিথি ছিলেন।
অনুষ্ঠানে অংশ নেন ইউসেফ, বাংলাদেশের প্রোগ্রাম অ্যান্ড ইনোভেশনের পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. আব্দুল মান্নান। সরেজমিনে দেখা গেছে, ২৪টি প্রতিষ্ঠান এই মেলায় অংশ নিলেও তাতে এক হাজারের বেশি জনবল নিয়োগ দেবে প্রতিষ্ঠানগুলো। এ জন্য রংপুর বিভাগের আট জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে চাকরিপ্রত্যাশীরা এখানে এসে সরাসরি সিভি জমা দিয়েছেন।  এনজিও ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. দাউদ মিয়া বলেন, এই মেলার
মাধ্যমে চাকরিপ্রত্যাশীদের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলো যোগ্য লোক পাবে।

 

মন্তব্য
রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু

চাঁদাবাজের স্থান বিএনপিতে হবে না

নাটোর প্রতিনিধি
নাটোর প্রতিনিধি
শেয়ার
চাঁদাবাজের স্থান বিএনপিতে হবে না

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক উপমন্ত্রী অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেছেন, বিএনপির ভাবমূর্তি ও সুনাম নষ্ট করতে একটি রাজনৈতিক দল উঠেপড়ে লেগেছে। গত ১৮ বছর বিএনপির নেতাকর্মী নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ৫ আগস্টের পর এখনো একইভাবে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। কিন্তু কোনো সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজের স্থান বিএনপিতে হবে না।

গতকাল শনিবার দুপুরে নাটোর জেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে আয়োজিত শ্রমিক দলের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দুলু এসব কথা বলেন।

রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, গত ১৮ বছর বিএনপিকে ধ্বংস করতে নেতাকর্মীদের ওপর নিপীড়ন ও নির্যাতন করা হয়েছে, যেন বিএনপি দেশ থেকে চিরতরে নিঃশেষ হয়ে যায়। বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মীর ওপর হামলা করে পুঙ্গ করা হয়েছে। বর্তমানে বিএনপিকে নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত করা হচ্ছে।

খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ এমন কোনো নেতাকর্মী নেই, যাঁরা নির্যাতনের শিকার হননি। বর্তমানে বিএনপির ভাবমূর্তি ও সুনাম নষ্ট করতে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। বিএনপি যাতে ক্ষমতায় না যেতে পারে, তার জন্য নানা চক্রান্ত করা হচ্ছে।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ