ঢাকা, শনিবার ১৯ জুলাই ২০২৫
৪ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৩ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, শনিবার ১৯ জুলাই ২০২৫
৪ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৩ মহররম ১৪৪৭

যখন বন্দি ছিলাম

  • একাত্তরে চার মাস যশোর ও ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে যুদ্ধবন্দি থাকার পর অর্ধমৃত অবস্থায় মুক্তি পান মঈনুদ্দিন মিয়াজী। তাঁর সেসব দুঃসহ দিনের কথা শুনে এসেছেন ফখরে আলম
অন্যান্য
অন্যান্য
শেয়ার
যখন বন্দি ছিলাম
স্বাধীন বাংলাদেশের মুক্ত আকাশ দেখছেন মিয়াজী

মঈনুদ্দিন মিয়াজী বঙ্গবন্ধুর একান্ত সহচর ছিলেন। একাত্তরে তিনি স্বাধীনতাযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য তরুণ যুবকদের সংগঠিত করেছেন। বিভিন্ন জনসমাবেশে বক্তব্য দিয়েছেন। এ কারণে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাঁকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায়।

তাঁর ওপর চালায় নির্মম অত্যাচার।

 

বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন

অ্যাডভোকেট মঈনুদ্দিন মিয়াজী ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকিটে বিপুল ভোটে বৃহত্তর যশোর জেলার ঝিনাইদহ-মহেশপুর আসন থেকে সংসদ সদস্য (এমপিএ) নির্বাচিত হন। তিনি যশোর শহরের রেলগেট এলাকায় বাস করতেন। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ রেডিওতে মিয়াজী বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শোনেন।

৮ মার্চ তিনি মহেশপুর ও কোটচাঁদপুর থানায় বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা উত্তোলন করেন। এই পতাকা তিনি আওয়ামী লীগের একজন একনিষ্ঠ কর্মী আ. রহিমের মাধ্যমে ঢাকা থেকে সংগ্রহ করেছিলেন। এরপর তিনি যশোর শহরে এসে বেনাপোলসহ বিভিন্ন স্থানে স্বাধীনতার পক্ষে বিভিন্ন জনসভায় বক্তব্য দেন। ছাত্র-জনতাকে সংগঠিত করেন।
যশোরের বিক্ষুব্ধ মানুষ ক্যান্টনমেন্টের পানি ও খাবার সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। ২৬ মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী মঈনুদ্দিন মিয়াজীকে বাসা থেকে যশোর ক্যান্টনমেন্টে ধরে নিয়ে যায়। তাঁর ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। তাঁরই বুকে মাথা রেখে নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রাণ হারান আরেক যুদ্ধবন্দি অ্যাডভোকেট মশিয়ূর রহমান (এমএনএ)। মিয়াজীর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী চাঁদ সুলতানাও বিহারি আর পাকিস্তানিদের নির্যাতনে ২৩ এপ্রিল দুটি শিশুসন্তান রেখে মারা যান।
মিয়াজীর শরীর থেকেও রক্ত ঝরেছে, পুঁজও পড়েছে। হাজার ওয়াটের আলো তাঁর চোখে ধরে দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা করে দেওয়া হয়।

এখন তাঁর বয়স ৮৪ বছর। দুঃসহ সেই দিনগুলোর স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে মঈনুদ্দিন মিয়াজী ভারী চশমা খুলে চোখ মুছলেন। কাঁদলেনও। বললেন, ‘২৬শে মার্চ ভোর ৫টার দিকে যশোর ক্যান্টনমেন্টের কর্নেল তোফায়েলের নেতৃত্বে কয়েক গাড়ি পাকিস্তানি সেনা আমার বাড়ি ঘিরে ফেলে। কোনো সময় না দিয়ে চোখ বেঁধে আমাকে গাড়িতে তোলে। আমার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী চাঁদ সুলতানা গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েন। আমার পাঁচ বছরের শিশুকন্যা মেরী, সাত বছরের ছেলে সালাউদ্দিন খুবই কান্নাকাটি করে। কিন্তু কোনো কান্নায়ই হানাদারদের মন গলেনি। গাড়ির সামনে শুয়ে থাকা আমার স্ত্রীকে টেনে-হিঁচড়ে রাস্তার পাশে ফেলে দিয়ে আমাকে ষষ্ঠীতলা পাড়ায় নিয়ে যায়। সেখান থেকে অ্যাডভোকেট আব্দুল মালেককে আটক করে আমার মতো তাঁরও চোখ বেঁধে গাড়িতে তোলা হয়। এরপর আমাদের দুজনকেই ক্যান্টনমেন্টের দাউদ পাবলিক স্কুলের ছাত্রাবাসের একটি কক্ষে রাখা হয়। এই বন্দিশালায় আমার সঙ্গে অ্যাডভোকেট মশিয়ূর রহমানের দেখা হয়। মশিয়ূর ভাই বলেন, রাত সাড়ে ৩টায় ওরা আমাকে জজ কোর্টের পাশে আমার বাসা থেকে ধরে এনেছে।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ