যাত্রাবাড়ীর ব্রাইট স্কুলের গানের শিক্ষক ছিলেন। বেতন খুব বেশি পেতেন না। কিছু বাড়তি আয় হতো সংগীত পরিচালনা করে। সেদিন ছিল ৫ সেপ্টেম্বর।
যাত্রাবাড়ীর ব্রাইট স্কুলের গানের শিক্ষক ছিলেন। বেতন খুব বেশি পেতেন না। কিছু বাড়তি আয় হতো সংগীত পরিচালনা করে। সেদিন ছিল ৫ সেপ্টেম্বর।
পরে তুরাগ এলাকায় রবের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয়। খাটিয়ায় করে লাশ বহন করেছিলেন রব-রুমানা দম্পতির ছেলে ইয়াসির আলভী রব, আলভীর বন্ধু মেহেদী হাসান ছোটনসহ আরো কয়েকজন। সেখানে একটি মাঠে রবের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
দুদিন পর
আলভী ও তাঁর বন্ধু ছোটন জানাজার জন্য পারভেজ রবের লাশ বহন করে নিয়ে গিয়েছিলেন দুদিন আগে। ওই ভিক্টর পরিবহনেরই আরেকটি বাস দুদিন পরই তাঁদের চাপা দেয় উত্তরা স্লুইস গেট এলাকায়। ছোটন এতে মারা যান আর আলভী কোমর ভেঙে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে।
রব মারা যাওয়ার পর
স্বামী মারা যাওয়ার পর সব কিছুই থেমে গিয়েছিল রুমানার। পুরো পরিবার ছিল শোকগ্রস্ত। এ অবস্থায় পারিবারিকভাবেই সিদ্ধান্ত হয় চার দিনের মাথায় কুলখানি হবে। প্রস্তুতিও নিতে থাকে পরিবারটি। বাজারসদাই দরকার। আলভী নেন বাজার করার দায়িত্ব। বন্ধু ছোটনকে ফোন করে সঙ্গে যেতে রাজি করান। ছোটন দরিদ্র পরিবারের সন্তান। এসএসসি পাস করার পর অর্থাভাবে কলেজে ভর্তি হতে পারছিলেন না। যে রাতে (৭ সেপ্টেম্বর) বাসচাপায় তাঁর মৃত্যু হয়, সেদিনই সকালে তাঁর চাকরির ইন্টারভিউ ছিল। ইন্টারভিউ শেষে বিকেলে ফিরেছিলেন বাড়ি। মায়ের কাছ থেকে ১০ টাকা চেয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন আলভীদের বাড়ি। তারপর বাড়ি ফিরেছিলেন লাশ হয়ে। আর আলভীর কোমরের হাড় ভেঙে যায়। এমনভাবে ভেঙেছে যে চিকিৎসকরাই জানিয়েছিলেন তাঁর দীর্ঘ সময় লাগবে সুস্থ হতে।
তাঁকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হলো
আলভীকে প্রথম নেওয়া হয়েছিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয় শ্যামলীর ট্রমা সেন্টারে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে চার দিনের মাথায় আলভীকে ট্রমা সেন্টার থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। আরো অসহায় হয়ে পড়েন আলভীর মা রুমানা। এখন বিছানায় শুয়েই কাতরাচ্ছেন রুমানা। দুর্ঘটনায় আলভীর বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া আঙুলের ক্ষত স্থানও শুকায়নি এখনো। কোমরের মতো আঙুলের ক্ষত নিয়েও টেনশনে আছেন রুমানা সুলতানা।
একদিকে গুরুতর অসুস্থ ছেলে, অন্যদিকে রান্নাবান্না, সংসারের অন্যান্য কাজ—সব মিলিয়ে কী করবেন ভেবে দিশাহারা হয়ে পড়েন। এর মধ্যে অবশ্য গত সোমবার কোহিনূর কেমিক্যাল কম্পানি লিমিটেড আলভীকে চিকিৎসা করানোর দায়িত্ব নিয়েছে। ওই দিনই মগবাজারের আদ-দ্বীন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে আলভীকে। ঘোর অন্ধকারে এটাই রুমানার আশার আলো।
ছবি : লুৎফর রহমান
সম্পর্কিত খবর