টারান্টিনোর প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘রিজার্ভয়ার ডগস’ মুক্তি পেয়েছিল ১৯৯২ সালে। চমকে উঠেছিল বলিউড। সংঘর্ষকে নগ্ন করে দিয়েছিলেন টারান্টিনো। সে ধারাবাহিকতা দেখা যায় ‘দ্য হেইটফুল এইট’, ‘জ্যাঙ্গো আনচেইনড’ বা ‘ইনগ্লোরিয়াস বাস্টার্ডস’ ছবিতেও।
পেছনের গল্প
সময়টা মাতাল ছিল
- ষাটের দশক। দিনবদলের ঢেউ উঠেছিল গোটা আমেরিকায়। হলিউডও বাইরে ছিল না। টারান্টিনোর নতুন ছবি ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন হলিউড’। বলছে ষাটের দশকের শেষ বছর উনসত্তরের গল্প। সত্য ঘটনার সঙ্গে যোগ আছে ছবিটির। টাইম সাময়িকী থেকে লিখেছেন আহনাফ সালেহীন
অন্যান্য

চার্লস ম্যানসন ও ম্যানসন পরিবার
চার্লস ম্যানসন একজন আধ্যাত্মিক গুরু।
ম্যানসন বড় সংগীতশিল্পী হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। ইন্ডাস্ট্রির অনেকের সঙ্গে বন্ধুত্বও পাতান। এর মধ্যে বিচ বয়েজ দলের ড্রামার উইলসন তাঁকে একটি অ্যালবাম রেকর্ড করতে সাহায্য করেন। তবে ম্যানসন স্থির থাকার পাত্র ছিলেন না। তিনি ছিলেন রেসিস্ট (বর্ণবৈষম্যবাদী)। পরিবারের সদস্য মানে শিষ্যাদের তিনি জাতিগত এক মহাযুদ্ধের কথা বলতেন। যুদ্ধটির নাম তিনি দিয়েছিলেন হেল্টার স্কেল্টার। উল্লেখ্য, এই নামে ইংলিশ ব্যান্ড বিটলসের একটি গান আছে। ম্যানসন বিটলসের গানে আসক্ত ছিলেন। ম্যানসন পরিবারের সদস্যরা বিশ্বাস করত, খুন মহাযুদ্ধকে ত্বরান্বিত করবে। ম্যানসন পরিবারের লিনেট নামের এক সদস্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ডকেও হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন।
উল্লেখ্য, ম্যানসনের জন্ম ১৯৩৪ সালে। শ্যারন টেট ও সঙ্গীদের হত্যার নকশাকারী (মাস্টারমাইন্ড) হিসেবে তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ২০১৭ সালে ৮৩ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যু হয় ক্যালিফোর্নিয়ার কোরকোরান কারাগারে। ম্যানসনকে নিয়ে অনেক প্রামাণ্যচিত্র ও টেলিভিশন চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। এর মধ্যে ‘দি ম্যানসন ফ্যামিলি’, ‘হাউস অব ম্যানসন’, ‘ইনসাইড দ্য ম্যানসন কাল্ট’, ‘লাইফ আফটার ম্যানসন’, ‘মাইন্ডহান্টার’, ‘দ্য ডেড সার্কাস’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
শ্যারন টেট
‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন হলিউড’ ছবিতে শ্যারন টেটের চরিত্রে অভিনয় করেছেন মারগট রবি। ডিক্যাপ্রিওর পাশের বাড়িতেই থাকেন টেট। তখন টেটের ক্যারিয়ারের ছিল শুরুর দিক।
টেট ১৯৬৯ সালের গ্রীষ্মে তাঁর স্বামী চলচ্চিত্রকার রোমান পোলানস্কিকে সঙ্গে নিয়ে লস অ্যাঞ্জেলেসের সিয়েলো ড্রাইভে একটি বাড়ি ভাড়া নেন। পোলানস্কি পরিচালিত ‘দ্য ফিয়ারলেস ভ্যাম্পায়ার কিলারস’ ছবিতে অভিনেত্রী ছিলেন টেট। তবে বেশি নাম করেছেন ‘ভ্যালি অব দ্য ডলস’ ছবির মাধ্যমে। পোলানস্কিও তত দিনে তাঁর ‘রোজমেরিজ বেবি’ ছবিটি শেষ করেছেন। পোলানস্কির সঙ্গে টেটের বিয়ে হয় ১৯৬৮ সালের ২০ জানুয়ারি।
উল্লেখ্য, শ্যারন টেটের জন্ম ১৯৪৩ সালে। মৃত্যুকালে টেট সাড়ে আট মাসের গর্ভবতী ছিলেন। টেটকে উনসত্তর সালের আগস্টের ১৩ তারিখে ক্যালিফোর্নিয়ার হলি ক্রস সিমেট্রিতে সমাহিত করা হয়।
ম্যানসনরা আসলে চেয়েছিল
ম্যানসন তাঁর অনুসারী সুসান অ্যাটকিনস, প্যাট্রিসিয়া ক্রেনউইংকেল, লিন্ডা কাসাবিয়ান প্রমুখকে আদেশ দেন সিয়েলো ড্রাইভের ১০০৫০ নম্বর বাড়িতে যেতে এবং যাকে পাবে তাকেই হত্যা করতে। বাড়িটিতে বাস করতেন টেরি মেলকার নামের একজন সংগীত প্রযোজক। ম্যানসনের অ্যালবাম প্রকাশে তিনি রাজি হননি। তাই টেরির ওপর রেগে ছিলেন ম্যানসন। তবে ম্যানসন জানতেন না ওই বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন টেরি। আর তত দিনে বাড়িটি টেট ও পোলানস্কি ভাড়া নিয়েছেন। হত্যাকাণ্ডের দিন (৮ আগস্ট) পোলানস্কি ছিলেন ইউরোপে, আর বাড়িটায় টেট ছাড়াও ছিলেন পোলানস্কির বন্ধু ফ্রিকোওস্কি ও তাঁর গার্লফ্রেন্ড অ্যাবিগেল এবং একজন হেয়ার স্টাইলিস্ট জে সাব্রিং। ম্যানসনের অনুসারীরা সবাইকে হত্যা করে। পরের রাত ৯ তারিখেও তারা আরেক বাড়িতে হত্যাকাণ্ড চালায়।
পুরো আমেরিকা ওই ঘটনায় চমকে উঠেছিল। ম্যানসন পরিবারের কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা হয়েছিল বিস্তর। প্রায় ১০০ অনুসারী ছিল চার্লস ম্যানসনের। হিপ্পিদের মতো জীবনযাপন করত তারা। ম্যানসন ভাবতেন তাঁর মধ্যে ঈশ্বর বাস করেন। একটি মহাযুদ্ধের নেতৃত্ব দিতে পৃথিবীতে এসেছেন তিনি। টেট হত্যাকাণ্ডকে উপজীব্য করে টারান্টিনো আসলে ষাটের দশকটাকেই তুলে ধরেছেন। আর চার্লস ম্যানসন সে সময়ের প্রতিনিধি।
সম্পর্কিত খবর