পদ্মা, মেঘনা, ধলেশ্বরী আর ইছামতীর দেশ মুন্সীগঞ্জ। এ অঞ্চলের মানুষ ভোজনবিলাসী। অতিথি আপ্যায়নে তাদের জুড়ি মেলা ভার। এখানকার পাতক্ষীরের (পাতার ক্ষীর) সুনাম সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই।
মুন্সীগঞ্জের পাতক্ষীর
- মুন্সীগঞ্জের পাতক্ষীরের কথা অনেকেই জানবেন এত দিনে। এর বয়স দেড় শ বছর ছাড়িয়ে যেতে পারে। স্থানীয় লোকজন এ খাবার নিয়ে গর্ববোধ করেন। মো. মাসুদ খানও তার ব্যতিক্রম নন
অন্যান্য

রাজলক্ষ্মী মিষ্টান্ন ভাণ্ডার
সিরাজদিখান বাজারের রাজলক্ষ্মী মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের মালিক খোকনচন্দ্র ঘোষ। তাঁর ভাই প্রয়াত সুনীলচন্দ্র ঘোষ এটি চালু করেছিলেন। তিনি ছিলেন পাতক্ষীর তৈরির মশহুর কারিগর।
যেভাবে তৈরি হয়
খোকন ঘোষের কাছ থেকেই জানা গেল, প্রথম প্রথম এ পাতক্ষীর একটু পাতলা হতো; কিন্তু একসময় দেখা গেল আরো কিছুটা ঘন করলে এর স্বাদ বেড়ে যায়। মজাদার হয়। তাই ঘন করেই এখন তৈরি হচ্ছে। এক কেজি ক্ষীর তৈরিতে ছয় কেজি দুধ লাগে। প্রথমে দুধ একটি পাত্রে নিয়ে জ্বাল দিতে হয়। জ্বাল দিতে দিতে যথেষ্ট পরিমাণ ঘন হলে নামিয়ে আনা হয়। তবে নামিয়ে আনার কিছু আগে অল্প পরিমাণ চিনি মেশানো হয়। নামিয়ে আনার পরপরই ঢেলে দেওয়া হয় কলাপাতার ওপর। একটু ঠাণ্ডা হলে ধীরে ধীরে জমে দইয়ের আকার ধারণ করে। পাতার ওপর ঢালা হয় বলেই এটি পাতক্ষীর। সে আমলে ইংরেজরাও পাতক্ষীরের সমঝদার ছিল। বাবুদের পাতে তো প্রতি বেলায়ই পাতক্ষীর লাগত। এ ছাড়া বিশেষ অনুষ্ঠানে পাতক্ষীর অতিথি আপ্যায়নে এগিয়ে থাকত। এখনো কিন্তু ২৫ ডিসেম্বরের বড়দিনে বিদেশি কূটনীতিকদের আপ্যায়ন করতে বঙ্গভবনে পাতক্ষীর থাকে। প্রবাসীদের জন্য স্বজনরা এটি লোক মারফত বিদেশে পাঠিয়ে থাকেন।
পাতক্ষীর নিয়ে কথা হচ্ছিল সিরাজদিখানের সাংবাদিক ইমতিয়াজ বাবুলের সঙ্গে। তিনি বললেন, বিদেশ থেকে বন্ধুবান্ধব ফোন করলে তারা পাতক্ষীর পাঠাতে বলে। মুন্সীগঞ্জের মানুষ অতিথিপরায়ণ। নিজেরাও খেতে ভালোবাসে। খাওয়ার ব্যাপারে টাকার কথা হিসাব করে না। নতুন জামাই বাড়ি এলে পাতক্ষীরের পাটিসাপটা তারা বানাবেই। এখানে পাতক্ষীর কয়েক দোকানেই পাওয়া যায়; কিন্তু রাজলক্ষ্মী অতুলনীয়। এখানে একসময় প্রতি বাড়িতেই ছিল গাভি। গাভির দুধে উপচে পড়ত বালতি। এত দুধ এমনি এমনি খাওয়া তো সহজ নয়। তাই দুধ জ্বাল দিয়ে ঘন করে খেয়ে বিশেষ স্বাদ পাওয়ায় ঘোষরা ক্ষীর তৈরির উপায় বের করে ফেলে। আবিষ্কৃত হয় নতুন এক সুস্বাদু খাবার। এটা ঠিক মিষ্টি নয়, এর স্বাদ বিশেষ রকমের। শুধু খেলেই টের পাওয়া যায়।
ছবি : লেখক