দেশভাগের কাছাকাছি সময়ে ভারত থেকে বগুড়ায় আসেন গৌরগোপাল ঘোষ। ঠাঁই নেন শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে শেরপুরে। আগে থেকেই তাঁর আত্মীয়-স্বজনরা সেখানে থাকত। নতুন জায়গায় এসে অতিকষ্টে দিনাতিপাত করতে থাকেন।
বগুড়ার দই
- প্রায় ২০০ বছর বয়স হতে চলল। বগুড়ার নওয়াববাড়িতে বেড়াতে এসে ব্রিটিশরাও এর স্বাদ নিয়েছিল। বিলাতে ফিরে গিয়ে গল্পও বলেছে। বগুড়ার দইয়ের শুরুর দিনের কথা জানতে চেয়েছিলেন
- লিমন বাশার
অন্যান্য

বগুড়ার নওয়াব মোহাম্মদ আলীর পরিবার তাঁকে ডেকে প্যালেসের আমবাগানে জায়গা করে দেয়। ষাটের দশকের শেষ ভাগ পর্যন্ত সেই আমবাগানে গৌরগোপাল স্থায়ীভাবে বসবাস করেন।
লোকে বলে
ব্রিটেনের রানি এলিজাবেথও বগুড়ার দইয়ের স্বাদ নিয়েছেন। আরো শোনা যায়, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান বগুড়া বেড়াতে গিয়ে দই খান এবং উপঢৌকন পাঠান ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিদের কাছে। বগুড়ার দইয়ের খ্যাতি প্রথম ইংল্যান্ডে ছড়িয়ে পড়ে ১৯৩৮ সালে। তখন বাংলার গভর্নর ছিলেন স্যার জন এন্ডারসন। তিনি নওয়াববাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। তাঁকে কাচের বাটিতে দই খেতে দেওয়া হয়েছিল। তিনি মুগ্ধ হয়ে এ দই ইংল্যান্ডে রপ্তানির পরিকল্পনা করেছিলেন।
দইয়ের একাল
বগুড়া চেম্বার অব কমার্সের সহসভাপতি মাহফুজুর রহমান রাজ জানান, সম্প্রতি জলপাইগুড়ি জেলার একটি সভায় বগুড়ার দই নিয়ে খুব কথাবার্তা হয়। সেখানকার বাণিজ্য মেলায় বগুড়ার দইয়ের চাহিদা এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে ১০ মেট্রিক টন (৬০০ গ্রাম ওজনের ১৭ হাজারেরও বেশি সরা) দই সরবরাহের অনুরোধ জানানো হয়েছিল। অবশ্য অল্প সময়ের মধ্যে এত পরিমাণ দই পাঠানো সম্ভব হয়নি। তবে ৫০০ কেজি দই পাঠানো হয়েছিল। সেখানকার লোক লাইন ধরে কিনেছিল। নিমাই ঘোষ, লিটন ঘোষ প্রমুখ দই উত্পাদনকারী জানালেন, পাতলা দই তৈরির ক্ষেত্রে আগের পদ্ধতিই অনুসরণ করতে হয়। শুধু চিনির পরিবর্তে একই পরিমাণ দুধের মধ্যে দুই তোলা পরিমাণ স্যাকারিন ব্যবহার করতে হয়। শেরপুরের মতো সুস্বাদু ও মানসম্পন্ন দই দেশের আর কোথাও তৈরি হয় না। কারণ এখানকার আবহাওয়া দই তৈরির জন্য ভালো। এখানকার পানিও সুস্বাদু। তা ছাড়া এত দক্ষ কারিগরও অন্য কোথাও মিলবে না। এখন শেরপুরের বিখ্যাত দইয়ের দোকান সাউদিয়া, জলযোগ, বৈকালী, আলিবাবা, সম্পা ইত্যাদি। দই কয়েক রকম হয়ে থাকে—টক দই, সাদা দই, চিনিপাতা দই ও মিষ্টি দই। সাধারণত মাটির পাত্রে দই বাজারজাত করা হয়। সরা, পাতিল, বারকি, কাপ, বাটি ইত্যাদি নাম এসব পাত্রের।
বগুড়া শহরে বেশির ভাগ দইয়ের দোকান জিরো পয়েন্টের সাতমাথায়। দইয়ের দোকান আছে তিন শতাধিক। ছবি : লেখক