স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন কিভাবে বাস্তবায়ন করা হবে—এ বিষয়ে প্রতিবেদনে কোনো রোডম্যাপ উল্লেখ করা হয়নি। এ ছাড়া বেশ কিছু সুপারিশ বাস্তবসম্মত নয়। প্রতিবেদনের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হচ্ছে, সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য সময়কাল নির্ধারণ না করা।
গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে করণীয়’ শীর্ষক আলোচনাসভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
আলোচনাসভার আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট এবং অ্যালায়েন্স ফর হেলথ রিফর্মস বাংলাদেশ (এএইচআরবি)।
আলোচনাসভায় স্বাগত বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. শাফিনুর নাহিন শিমুল। পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় প্রধান বক্তা ছিলেন স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ। তিনি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের মূল বিষয়গুলো তুলে ধরেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ ইকোনমিকস ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এবং সানেমের অনারারি পরিচালক ড. শাফিউন এন শিমুল বলেন, ৩২২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে ৩২টি সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। কোনটি মধ্য মেয়াদে, কোনটি দীর্ঘ মেয়াদে বাস্তবায়নযোগ্য তা বলা আছে, কিন্তু কোনটি আগে বাস্তবায়ন হবে সে বিষয়ে কোনো নির্দেশনা নেই।
ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশন তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে দিয়েছে। এখন আর তাদের কোনো কাজ নেই।
এখন প্রশ্ন হলো, সুপারিশ বাস্তবায়ন কিভাবে হবে?
সংস্কার কমিশনের সদস্য ডা. আবু মুহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, ‘ইউনিয়ন পর্যায়ে যেসব স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেগুলোর পুরোপুরি পরিবর্তন করতে হবে। সেখানে একজন ডাক্তার, দুজন নার্স ও প্যারামেডিক থাকতে হবে। আমাদের রেফারেল সিস্টেমের মূল কেন্দ্র হবে উপজেলা হাসপাতাল। এ জন্য উপজেলা পর্যায়ে জনস্বাস্থ্যকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।’
শিক্ষাবিদ ও চিকিৎসাবিজ্ঞানী এবং সংস্কার কমিশনের সদস্য ডা. লিয়াকত আলী বলেন, ‘আগে যেটি ছিল নীতিগত অধিকার, এখন তা সাংবিধানিক করা হচ্ছে।
এটি কিভাবে হবে সেটি নিয়ে কাজ করা দরকার। কারণ স্বাস্থ্য কেবল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একার কাজ নয়, এর সঙ্গে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ও জড়িত।’
সবার আগে এখন প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার অর্ডিন্যান্স জারি করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন সংস্কার কমিশনের ডা. সৈয়দ মো. আকরাম হোসেন। বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে সরকারের উচিত প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য অর্ডিন্যান্স জারি করা। একই সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের আন্ত মন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা। যারা সংস্কারের সুপারিশগুলো গুরুত্ব দিয়ে বাস্তবায়নের কাজ করবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. শারমিন মবিন ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে আলোচনাসভায় শতাধিক অংশীজন অংশ নেন।
হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘মানুষের জন্য স্বাস্থ্য খাতকে কিভাবে সাজানো হচ্ছে তা জানার জন্যই মূলত এমন আলোচনাসভা। সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবটা মাঠে আছে। এখন সোশ্যাল ভেলিডেশনের (সামাজিক বৈধতা) জন্য এমন আলোচনাসভা কাজ করে। সংস্কারের সুপারিশগুলো মানুষ কিভাবে নিচ্ছে তা দেখা উচিত। এতে যাঁরা নীতি নির্ধারণীতে আছেন বা বাস্তবায়ন করছেন তাঁদের সুবিধা হবে।’